![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কিছু আলো কিছু বাতাস আর কিছু ছবির সমন্বয়ে এই পৃথিবীর জীবন কেটে যায় । জীবন কখনোই থমকে দাড়ায় না একমাত্র মৃত্যু ছাড়া বরং আশার বাণী শুনিয়ে যায় ।
ট্রেনের ক্যাবিনে এসে মাত্র ঢুকলাম । হাতে মাঝারি সাইজের দুটো সুটকেস । একটা আমার আর একটা পল্লবীর । আমার নামটা বলে নেই – আমি সুমন । পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার । কাজ করছি একটা সফটওয়্যার কোম্পানিতে । পল্লবী ও আমি একই কোম্পানিতে আছি । গত পরশু আমাদের বিয়ে হল । এখন যাচ্ছি হানিমুনে । কক্সবাজারে যাওয়া হচ্ছে । আরো অনেক জায়গায় যাওয়ার পরিকল্পনা আছে আমাদের । পল্লবী ও আমার কারোরই ট্রেনে জার্নি করা হয় নি , তাই দুজনেই ঠিক করলাম ট্রেনে করে যাব । তাই ট্রেনের ক্যাবিন ভাড়া করা । দুজনে একান্তে সময় কাটাতে এই ব্যবস্থা করা । ট্রেনের ক্যাবিনে পৌঁছে সব জিনিস ঠিকঠাক মতো রেখে শান্তি মতো বসলাম । জানালা খুলে দিতেই ঠাণ্ডা বাতাস এসে আমাদের গায়ে লাগল । মনকে একটা রোমান্টিক আবহাওয়ায় এনে দেয় এই ঠাণ্ডা বাতাস ।
আমি পল্লবীকে বললাম , “ আসো না এখানে আমার কাছে । দেখ কি ঠাণ্ডা বাতাস । মনটা জুড়িয়ে যাচ্ছে ।”
পল্লবী বলল , “ আসছি ।”
সুটকেসটা সরিয়ে আমার পাশে এসে বসল পল্লবী । বলল , “ কি দারুণ ঠাণ্ডা বাতাস । ”
ঠাণ্ডা বাতাসে পল্লবীর চুল গুলো উড়ছিল । আমি ওকে চুমু খেতে খেলাম – আমাকে থামিয়ে দিল ।
আমি বললাম, “কি হল ?” ও বলল , “ কাল পরশু মন ভরেনি , এই ট্রেনের মাঝে আবার । এখন নয় । আর জানালা খোলা । সবাই দেখছে ।”
“ দেখলে দেখুক আমরা তো স্বামী – স্ত্রী । কোন অসুবিধা আছে ?”
“ আছে অসুবিধা আছে । বোঝ না মনে হয় ন্যাকা কোথাকার ।”
“ জানালা বন্ধ করে দিলে তো সমস্যা নাই । ”
“ এখন নয় । হোটেলে গিয়ে তারপর । বেশি জমে গেছে মনে হয় । পাগল হয়ে গেছো একেবারে । সবুরে মেওয়া ফলে !!! ”
এই কথা বলে পল্লবী হেসে দিল আমিও হাসিতে যোগ দিলাম । বললাম , “ আচ্ছা । সবুর করি । দেখি কি ফলে !!!”
এমন সময় মনে হল আমাদের দরজায় থাক্কা লাগার মতো শব্দ হল । দেখে মনে হচ্ছে দরজা কেউ খোলার চেষ্টা করছে । দুজনে একটু ভয় পেয়ে গেলাম । ডাকাত তাকাত নয়তো । কারণ ইদানীং ট্রেনে ডাকাতির খবর প্রায় সময়ই শুনি । আমি দরজা খুলে দেখতে চাইলাম । পল্লবী আমায় থামিয়ে দিল । আমি বললাম , “ কিছু হবে না । দেখি কিসের শব্দ । ”
ক্যাবিনের দরজা খুলে প্রথমে বামে তাকালাম দেখি কিছুই নেই তারপর ডানে তাকালাম দেখি সুন্দর বেনারসি শাড়ী পড়া এক মেয়ে এক ছেলের সাথে দৌড়াচ্ছে আর অন্য ক্যাবিনের দরজা গুলো খোলার চেষ্টা করছে । বেশি দূর যায়নি । দু একটা ক্যাবিন পার করেছে । আমাকে ক্যাবিনের দরজা খুলতে দেখে তারা আবার দৌড়ে এদিকে আসছে । কি হচ্ছে দেখার জন্য আমার সাথে পল্লবীও এসে পাশে দাঁড়ালো । দুজনেই দৌড়ে এসে আমাদের ক্যাবিনের সামনে দাঁড়ালো । আমি তাঁদের বললাম , “ কি চাই ?”
ছেলেটি বলল , “ কিছু সময়ের জন্য আমাদের লুকাতে হবে ! আপনাদের ক্যাবিনে একটু জায়গা দিবেন । বেশি সময়ের জন্য নয় । দুই এক ষ্টেশন পরে আমরা নেমে যাব । প্লিজ আমাদের একটু সাহায্য করুন ।”
মেয়েটিও বলল , “ প্লিজ । আপনাদের কাছে হাত জোর করছি ।”
এর মাঝে ট্রেন চলতে শুরু করেছে । ট্রেন চলতে শুরু করায় ছেলে মেয়ে দুজন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল । তাঁদের মাঝে যে টেনশন ছিল তা কিছুটা হলেও কমেছে ।
আমি তাঁদের বললাম , “ চিনি না জানি না আপনাদের কেন জায়গা দেব ? আপনারা তো ক্ষতিও করতে পারেন আমাদের । ডাকাত দলের সদস্য ননতো আপনারা ।”
বেনারসি পরা মেয়েটি বলল , “ আমরা ডাকাত নই । ওকে আমি ভালোবাসি , ছেলেটিকে দেখিয়ে বলল । ও আমাকে আমার বিয়ের আসর থেকে নিয়ে পালিয়েছে । আর আমাকে খোঁজার জন্য বাবা বিশাল গুন্ডা বাহিনী পাঠিয়েছে । তাঁদের হাত থেকে বাঁচার জন্যই আপনাদের কাছে সাহায্য চাচ্ছি । এর বেশি কিছু নয় ।”
আমি ও পল্লবী একে অপরের দিকে তাকালাম । চোখের ইশারায় পল্লবীকে জিজ্ঞেস করলাম, “ কি করব?” পল্লবীও চোখের ইশারায় বলল , “ দাও ।”
আমি তাঁদের বললাম , “ আসুন , ভেতরে আসুন ।”
এই কথা শুনে তাঁদের মুখে একধরণের স্বস্তির আবহাওয়া এলো । তারা ভিতরে প্রবেশ করল । দরজা বন্ধ করে দিলাম আমি ।
আমি ও পল্লবী একপাশে বসলাম । তাঁদের অন্যপাশে বসতে বললাম । দুজনে বসেই চুপচাপ ছিল ।
বললাম , “ আমি সুমন আর ও আমার স্ত্রী পল্লবী । হানিমুনে যাচ্ছি ।
ওরা বলল , “ ও আচ্ছা । কনগ্রেচুলেশান ।”
ছেলেটি বলল , “ আমি সাজন আর ও আমার প্রেমিকা নিতু । বিয়ে করার উদ্দেশে বাড়ি থেকে পালিয়েছি । ”
পল্লবী জিজ্ঞেস করল , “ কি করেন আপনারা ? মানে চাকরি টাকরি আর কি ?
সাজন বলল , “ আমি ইন্টারনেটে ফ্রিল্যানসে কাজ করি ।”
নিতু বলল , “ আমি একজন উদ্যোক্তা । গ্রামের মানুষের হাতের কাজগুলো একত্র করে ঢাকার বিভিন্ন সুপার সপে সাপ্লাই দেই । আমার চলে যায় আর গ্রামের মানুষ গুলো তাঁদের পরিশ্রমের ন্যায্য মূল্য পায় ।”
পল্লবী বলল , “ দারুন । নিতু আপনি খুব ভালো একটি কাজ করছেন । সবারই এরকম কাজ করা উচিত । যাতে মানুষ তার পরিশ্রমের ন্যায্য মূল্যটুকু পায় ।”
নিতু বলল , “ আপনারা কি করেন ? ”
পল্লবী বলল , “ আমি ও সুমন দুজনেই সফটওয়্যার কোম্পানিতে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত আছি ।”
নিতু বলল , “ ও আচ্ছা । ”
পল্লবী বলল , “ যদি কিছু মনে না করেন তবে একটা প্রশ্ন করি ?”
সাজন বলল , “ হ্যাঁ করুন । ”
“ বাড়ি থেকে পালালেন কেন ?”
নিতু বলতে শুরু করল তাঁদের গল্প । এভাবে – “ আমার আর সাজনের পরিচয় হয় একটি সুপার সপে মালামাল ডেলিভারি দেয়ার সময় । সেখানে কথাবার্তা , মোবাইল নাম্বার আদান প্রদান । রাত জেগে কথা বলা । একে অপরের আরও কাছে আসা । একদিন রাত জেগে কথা বলার সময় মা’র কাছে ধরা পরে যাই । মা গিয়ে বাবাকে বলে যে তার মেয়ে রাত জেগে প্রেম করছে । বাবা এসে আমার কাছে জানতে চায় সাজন সম্পর্কে । সাজনকে বাবা তার সাথে দেখা করতে বলে । সাজন এসে বাবার সাথে দেখা করে । বাবা জানতে চান সাজন কি করে । কোথায় থাকে কি করে ইত্যাদি । সাজন বলে সে ইন্টারনেটে ফ্রিল্যানসে কাজ করে । বাবা তখন কিছু না বলে সাজনকে চলে যেতে বলে । বাবা যেহেতু গ্রামেই থাকে তো গ্রামের মাতব্বরের কাছে জানতে চায় ফ্রিলানস জিনিস কি ? তারা তো এটা জানে না । বাবাকে বুঝায় যে ছেলে ইন্টারনেটে খারাপ কাজ করে । বাবা বেঁকে যায় । আর বলে দেয় যে ওর সাথে বিয়ে হবে না আমার । তাঁদের পছন্দ করা পাত্রের সাথে বিয়ে হবে ।
তাই আজ বিয়ের আসর থেকে পালালাম সাজনের সংগে ।
আমি বললাম , “ ইন্টাররেসটিং । ”
সাজন বলল , “ আপনাদের পরিচয় কিভাবে ?”
“ এক সাথে কাজ করতে করতে একদিন দেখলাম দুজনই পছন্দ করি দুজনকে । তাই একসাথে আটকে গেলাম চিরদিনের জন্য । ”
সাজন বলল , “ সামনের স্টেশনে আমরা নেমে যাব । আপনাদের ধন্যবাদ । কাল আমাদের বিয়ে । দোয়া করবেন ।”
“অবশ্যই”
পরের স্টেশনে ওরা নেমে যায় । আর কিছু সুন্দর মুহূর্ত কাটে আমাদের দুজনের ।
২| ১৩ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ২:১১
আশিক - ই - মুস্তফা বলেছেন: আমি গল্পটি লিখেছিলাম বৈশাখী টেলিভিশন এর জন্য । হয়ত আরো আকর্ষণীয় করতে পারতাম শেষটা । তবে আমি মনে করি ওটাই সবচেয়ে ভালো । পড়া শেষ হয়ে যাবে তবে এর রেশ থেকে যাবে ।
৩| ১৩ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ২:১৬
ইকরাম বাপ্পী বলেছেন: সাদামাটা সাবলীল লেখা সাদামাটা ভাবে শেষ হবে এটাই স্বাভাবিক । আমার কাছে ভালোই লেগেছে।
৪| ১৩ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ২:২১
আশিক - ই - মুস্তফা বলেছেন: আমাদের জীবনটাই সাদামাটা , জীবনের গল্পটাও সাদামাটা - তবে সাদামাটা জীবনটার মাঝে রং লাগানো উচিত । সেই রং হবে জীবনের রং - যে ভালবাসতে শেখাবে জীবনটাকে সুন্দর করে এই পৃথিবীতে ।
৫| ১৩ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ২:৪৭
শিব্বির আহমেদ বলেছেন: ১ম প্লাসটা আমার
৬| ১৩ ই আগস্ট, ২০১৩ ভোর ৫:২৪
কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: বেশ প্রাঞ্জল এবং সাবলীল একটা লেখা! ভালো লাগল।
প্রিয় ব্লগার, আপনি যদি মোবাইল থেকে রিপ্লে না দিয়ে থাকেন তাহলে বলতে চাই, যখন কোন মন্তব্য পাবেন, সেটার উপরে মাউস কার্সার আনলে উপরের দিকে একটা সবুজ চিহ্ন দেখতে পাবেন। সেটা প্রেস করে আপনি মন্তব্যের জবাব দিতে পারেন।
ভালো থাকবেন। শুভেচ্ছা রইল।
©somewhere in net ltd.
১|
১৩ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ২:০৩
অর্থনীতিবিদ বলেছেন: ব্লগটির ভাষা এত সাবলীল যে গল্প না সত্যি ঘটনা বুঝতে পারছি না। লেখনীর ভাষা আসলে এমনই হওয়া উচিত। তবে শেষটা অনেক সাদামাঠা হয়ে গেছে। কোন চমক থাকলে ভালো হতো।