নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মায়াবী বাঁধন

আশিক - ই - মুস্তফা

কিছু আলো কিছু বাতাস আর কিছু ছবির সমন্বয়ে এই পৃথিবীর জীবন কেটে যায় । জীবন কখনোই থমকে দাড়ায় না একমাত্র মৃত্যু ছাড়া বরং আশার বাণী শুনিয়ে যায় ।

আশিক - ই - মুস্তফা › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফুল

১২ ই নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:০০



প্রিয়া আজ সোহেলের সাথে ঘুরতে বেরিয়েছে । অনেক দিন পর তারা আজ একসাথে ঘুরতে বের হল । ঘুরতে ঘুরতে তারা এখন পার্কের সামনে চলে এসেছে । সোহেলের হাত ধরে রেখেছে প্রিয়া । একদম কাছাকাছি । একজন নিঃশ্বাস ফেললে আরেকজন শুনতে পারবে এমনভাবে হাঁটছে তারা ।

সোহেল বলল , “ পার্কে যাবা ”

“ যাওয়া যায় । অনেক দিন যায়নি তোমার সাথে । চলো আজ যাই । ”

“ তবে চলো । ”

“ হ্যাঁ চলো । ”

এরপর তারা পার্কের ভিতরে প্রবেশ করে । হাঁটতে হাঁটতে তারা একটা গাছের সামনে এসে দাঁড়িয়ে পরে । গাছটি বেশ বড় । ছায়া অনেকটুকু বিস্তৃত ।

সোহেল বলল , “ চলো এখানে একটু বসি । ”

“ এখনই কেন ? ক্লান্ত হয়ে গেছো নাকি ? ”

“ আরে না । এমনি বললাম আরকি । ”

“ বসলে ভালোই হয় । অনেকক্ষণ ধরেই তো হাঁটছি । এবার বসি চলো তাহলে ।”

“ এখানেই বসবে নাকি অন্য কোথাও যাবা । ”

“ এখানেই বসি । ”

দুজনে বসে পরে গাছের নিচে । গল্প চলতে থাকে দুজনের মাঝে । অনেক না বলা কথা যে জমে রয়েছে তাঁদের । তারা নিজেদের মাঝে বলতেই থাকে একেরপর এক । এ গল্প বা কথা যেন শেষ হবার নয় । এরই মাঝে বাদাম ওয়ালার কাছ থেকে বাদাম কিনে খেয়েছে । তারপর চা আর সাথে বিস্কিট । গল্প কিন্তু চলতেই থাকে দুজনের । এমন সময় একটি গলার আওয়াজ তাঁদের মনোযোগ অন্যদিকে নিয়ে যায় । মানে আওয়াজটির দিকে ।

“ আফা ফুল নিবেন । ফুল । অনেক সুন্দর ফুল । ”

দুজনেই মেয়েটির দিকে তাকাল । বয়স ১২ কি ১৩ হবে । ফুল বিক্রেতা । ফুল বিক্রি করে জীবন চলে এদের ।

“ আফা ফুল নিবেন । ফুল । অনেক সুন্দর ফুল । ”

মেয়েটির হাতে ছিল কয়েকটি লাল গোলাপ । আর দুটি মালা । বিক্রি মনে হয় শেষের দিকে । এই কয়টি ফুল আর মালা বাকি আছে মেয়েটির কাছে ।

সোহেল বলল , “ কত করে রে ফুল ? ”

মেয়েটি বলল , “ মালা ৫ টাকা আর গোলাপ একটা ১০ টাকা । ”

সোহেল বলল , “ মালা কয়টা আছে ? যদিও হাতে মালা দুটি দেখা যাচ্ছে তবুও সোহেল প্রশ্নটি করল । ”

মেয়েটি বলল , “ এই দুইটাই আছে মালা । ”

সোহেল বলল , “ আর গোলাপ ? ”

“ দশটা । ”

সোহেল প্রিয়াকে বলে, “ কোনটা নিবা , মালা না গোলাপ ?”

“ একটা মালা নাও আর দুটা গোলাপ নাও । ”

“ বেশি করে নেই । তোমার জন্যই তো !”

“ তোমার ইচ্ছা ।”

সোহেল মেয়েটিকে বলে সবগুলো মালা আর ফুল দিতে । মেয়েটি প্রিয়ার হাতে সবগুলো দিয়ে দেয় । ফুল নেয়ার সময় প্রিয়া মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করে ,

“ নাম কি তোর ? “

“ আফা আমার নাম লাইলি । ”

সোহেল আর প্রিয়া হাসে । প্রিয়া জিজ্ঞেস করে ,

“ তোর মজনু কই ? “

লাইলি হেসে দিয়ে বলে , “ আফা মজনু তো নাই । “

প্রিয়া বলে , “ চিন্তা করিস না হয়ে যাবে !! ”

লাইলি হাসে , সাথে প্রিয়া ও সোহেল হাসে । হাসির রাজ্যের বাসিন্দা আজ এখন তারা তিনজন । তারা হাসতেই থাকে ।



প্রতি মাসে একবার না একবার তাঁদের দেখা হতোই । কোন কোন মাসে দুই বা এরও অধিক বার দেখা করত তারা । বৃষ্টি বা রোঁদ তাঁদের বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারত না কখনোই । দেখা তারা করতই । বিশেষ করে বৃষ্টি পরলে তারা একসাথে বৃষ্টিতে ভিজত । আর গুনগুণ করে বৃষ্টির গান গাইত দুজনে । উল্লাসে মেতে উঠত তারা যে কোন উৎসব এলেই । তেমনি এক বিকেল বেলায় , সোহেলের সাথে প্রিয়ার কথা হচ্ছে ,

“ একটা সারপ্রাইজ আসে তোমার জন্য ” – সোহেল বলল

“ কি ?”

“ আমার স্কলারশিপ হয়েছে । আমি চার বছরের জন্য জার্মানি যাচ্ছি ।”

“ ও তাই । কিছুটা বিমর্ষ দেখায় প্রিয়াকে । ”

“ তুমি খুশি হও নি । ”

“ হ্যাঁ , খুশি তো অবশ্যই হয়েছি ।”

“ তাহলে মনমরা কেন তুমি?”

“ কই নাতো । মনমরা নাতো আমি । বাজে কথা । “

“ আমি আগামী মাসে যাচ্ছি । আজই ঠিক হল সবকিছু । তোমাকে তাই আজই জানালাম ।”

“ ও আচ্ছা । ”

“ তোমার কি কষ্ট হবে একা থাকতে ? ”

“ আরে না । কষ্ট হবে কেন । আমি ভালো থাকব । ”

“ সত্যি বলছ তো ? আমার কিন্তু মোটেই ভালো লাগবে না তোমাকে ছাড়া । ”

সোহেলের সাথে বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটায় প্রিয়া সেদিন । যদিও সোহেলকে বলেছিল ভালো থাকবে সে , কিন্তু সে আসলে ভালো নেই । সোহেলকে ছাড়া কিভাবে থাকবে সে এই চার বছর ? কল্পনাই করতে পারছে না সে এই সময়টার কথা । সোহেল পরের মাসে চলে যায় জার্মানিতে । চার বছরের জন্য । প্রিয়ার একাকীত্ব শুরু হয় সেদিন থেকে ।



“ ভাই বন্দুক দিয়া কি করবেন ? আপনার হাতে বন্দুক মানায় না । ”

“ ফুল মারব । গুলি করে ফুল মারব । ”

“ ভাই কি মশকরা করলেন নাকি ? গুলি করে ফুল মারে নাকি কেউ , ওটাতো গাছ থেকে ছিঁড়লেই হয় । ”

“ আমি গুলি করে ফুল মারব । গাছ থেকে । ”

“ আপনার যা ইচ্ছা । এই নেন বন্দুক । যা খুশি তাই করেন । তবে সাবধানে কইরেন । ”



প্রিয়া আজ বেশ খুশি । চারটা বছর যে কিভাবে কেটেছে বলার মতো না । ভার্চুয়াল যোগাযোগ ছিল সোহেলের সাথে । কিন্তু সেটা তো আর আগের অনুভূতি দেয়নি । আজ সেই বাঁধা দূর হচ্ছে । সোহেল দেশে এসেছে ডিগ্রি নিয়ে । প্রিয়ার ও পড়া লেখা শেষ । এখন বিয়ের কথা হচ্ছে তার । বাবা মাকে বলেনি সোহেলের কথা । আজ দেখা করে সোহেলকে বলবে তার বাবা মাকে পাঠাতে । বিয়ের কথাবার্তা বলার জন্য । আজ সন্ধ্যায় দেখা করবে সোহেলের সাথে টিএসসিতে । তারপর নানান জায়গায় যাবার পরিকল্পনা আছে তার । তাই সন্ধ্যের আগেই সে সোহেলের সাথে দেখা করতে টিএসসি চলে এসেছে । সোহেলও এলো কিছুক্ষণের মাঝেই । দুজনের দেখা হওয়ার দৃশ্যটা ছিল সেরকম রোমান্টিক । কতদিন পর সামনাসামনি দেখা । আবেগ ধরে রাখতে পারেনি কেউই । পারার কথাও না । কতদিন পর সেই পুরনো গন্ধের স্বাদ পাওয়া ! একে অপরকে জড়িয়ে ধরে রাখার মাঝে সেই গন্ধের স্বাদ পাওয়া কি ভুলা যায় ।

“ কেমন আছো প্রিয়া ?

“ ভালো । তুমি । “

“ ভালো ছিলাম না । কিন্তু এখন আছি । ”

“ আমিও । ”

“ তোমাকে প্রতিটা মুহূর্ত অনুভব করেছি এই চারবছর । কত যে কষ্ট হয়েছে আমার তোমাকে ছাড়া থাকতে ।”

“ আমারও ।” – প্রিয়া বলে

“ আজ এই সন্ধ্যা শুধু তোমার আর আমার । চলো আগের মতো ঘুরি । বাঁধনহারা উল্লাসে মেতে উঠি । ”

“ চলো । আমি আর অপেক্ষা করতে পারছি না । ”

দুজনে চলতে থাকে একসাথে এই সন্ধ্যায় । কিন্তু কেউই খেয়াল করেনি যে তাঁদের পিছন পিছন কেউ আসছে । দুজনে সেই পার্কের সামনে এসে দাঁড়ালো । অনেক কথা মনে পরে গেল । একে অপরকে জড়িয়ে ধরে রাখল তারা । মোটামুটি ভিড় ছিল সেখানে । কিছুক্ষণ পরে চার রাউন্ড গুলি আওয়াজ পাওয়া গেল । আশপাশ ফাকা হয়ে গেল । শুধু দেখা গেল প্রিয়া রাস্তায় পরে আছে । মাথা বরাবর গুলি লেগেছে একটা , আর একটা বাম দিক থেকে এসে সোহেলের ডানে বুকের মাঝে লেগেছে । সোহেলের গায়ে গুলি লেগেছে আরো একটি কিন্তু সোহেল সাহায্যের জন্য চিল্লাচ্ছে । কেউ আসছে না । হঠাৎ এগিয়ে আসল এক সিএনঞ্জি চালক । সাথে আরো অনেকে । মেডিক্যালে নেয়া হল । প্রিয়া কে বাঁচানো যায় নি । সোহেল কোমায় ছিল এক মাসের মতো ।



সোহেল কোমা থেকে ফিরে এসে আর স্বাভাবিক হতে পারেনি । মানসিক ভারসাম্য হারায় প্রিয়ার মৃত্যুর খবর শুনে । জানা যায় প্রিয়াকে একটি ছেলে বিরক্ত করত , প্রিয়া পাত্তা দেয়নি কখনোই ছেলেটিকে । প্রেম নিবেদনে ব্যর্থ হয়ে প্রিয়াকে গুলি করে মারার সিদ্ধান্ত নেয় ছেলেটি । সে জন্যই সেদিন ছেলেটি গুলি করেছিল প্রিয়া কে । সোহেলকেও মারার পরিকল্পনা ছিল । কিন্তু লোকজন এসে পরায় সেটা করতে পারেনি । তাকে ধরা যায়নি । পালিয়ে গেছিল সেখান থেকে । আর সোহেল এখন নিজ বাসায় বন্দি জীবন কাটাচ্ছে । চুপচাপ থাকে সে । কিন্তু ভায়োলেনন্ট হয়ে গেলে তাকে সামলানো মুশকিল হয়ে যায় । গোলাপ ফুল দেখলেই সে এরকম করে । আর বিড়বিড় করে বলতে থাকে ,

“ ফুল ফুটে পাতা নড়ে ,

ফুল মরে গাছ মরে ।

ফুল ফুটে পাতা নড়ে ,

ফুল মরে গাছ মরে ।

ফুল ফুটে পাতা নড়ে ,

ফুল মরে গাছ মরে । ”

বলতেই থাকে , বলতেই থাকে । আর চোখ দিয়ে পানি পরে ।



মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:২৩

চারশবিশ বলেছেন: খুব ভাল লাগল

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.