নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মায়াবী বাঁধন

আশিক - ই - মুস্তফা

কিছু আলো কিছু বাতাস আর কিছু ছবির সমন্বয়ে এই পৃথিবীর জীবন কেটে যায় । জীবন কখনোই থমকে দাড়ায় না একমাত্র মৃত্যু ছাড়া বরং আশার বাণী শুনিয়ে যায় ।

আশিক - ই - মুস্তফা › বিস্তারিত পোস্টঃ

সাদা কাগজ - পর্ব ৩

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১:১১



স্কুল ,কলেজ বা ইউনিভার্সিটি লাইফে অনেক মজার ঘটনা ঘটে থাকে । কিছু কিছু ঘটনা এতোই মজার থাকে যা সারাজীবন মনে থাকে । যখন সেসব কথা মনে পরে যায় অজান্তেই মন ভালো হয়ে যায় । স্কুল কলেজে স্যারদের হাতে মার খাওয়ার কথা অবশ্য আলাদা । সেটা মজার কোন ঘটনা না । সেটা সবাই ভুলেই থাকতে চায় । অথবা টিফিন পালানোর কথা । টিফিন পালিয়ে পরেরদিন ধরা খাওয়া এরকম অনেক ঘটনাই তো ঘটে থাকে সবারই কিছু না কিছু । যা বলছিলাম , মজার ঘটনা । স্কুল লাইফে এমন কিছু মজার ঘটনা ঘটেছিল যা মনে পরলে এখনো হাসি পায় । সেই রকম একটি ঘটনা হয়েছিল ‘ জরিনা স্যার ’ কে নিয়ে । নাম শুনে অবাক হওয়ার কিছু নেই । ঘটনা আসলেই সত্য । নাম নিয়ে এখানে বিভ্রান্তির কোন সুযোগ নেই । ঘটনা যখন ঘটেছিল তখন আমি বৃত্তি কোচিং করি । ক্লাস ফাইভের অথবা এইটের । ঠিক মনে নেই । ছেলে এবং মেয়েরা একসাথেই । স্কুলের স্যাররা এখানে ছেঁকে ছেঁকে ভালো ছাত্রছাত্রী দের এখানে তখন পাঠাতেন । অতো ভালো ছাত্র ছিলাম কিনা বলতে পারি না আমাকেও সেখানে পাঠানো হল । ক্লাস করি । শেষ করে বাসায় যাই । আবার পরেরদিন আসি । এভাবেই চলছিল । মাঝে মাঝে ক্লাস না থাকলে একটু হৈচৈ হতো । অথবা কোন খেলায় মেতে যেতাম । যেদিনের ঘটনার কথা বলছি সেইদিন সম্ভবত কোন কারণে ক্লাস হয়নি । তাই সবাই বাইরে ঘুরাঘুরি করছিল । যদিও ক্লাসের সময়ে কাউকে বাইরে দেখা গেলে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছিল । কেউ সেটা অতো মেনে চলত না ! এমনকি আমিও । যদিও স্কুলে অতি ভদ্র ছেলে বলা হতো আমাকে । তখন স্কুল ছুটি হয়েছে সকাল শিফটের । ছাত্রীরা বাইরে যাচ্ছে । বাইরে ছাত্ররা অপেক্ষা করছে ভিতরে ঢোকার । স্কুলের পিটি স্যার বের হওয়া আর ঢোকার দেখভাল করছিলেন । প্রায় শেষের দিকে ছাত্রদের ঢোকা । এমন সময় আমার এক বন্ধু আমিনুল স্কুলের পশ্চিম দিকের টিনশেডের একদম কোনার রুমে যেখানে ক্লাস করতাম সেই রুমের জানালা দিয়ে বেশ জোরেই ‘ জরিনা ’ বলে ডাক দেয় । কাকতালীয় ভাবে তখন পিটি স্যার এদিকেই আসছিলেন । তার ডাক শুনে বেচারা স্যার এদিকে এলেন কি হচ্ছে দেখতে । স্যারকে আসতে দেখে সবাই দৌড়ে রুমে ঢুকে গেলাম । স্যার ভিতরে ঢুকে বেশ হম্বিতম্বি করতে লাগলেন কেন আমরা বাইরে ঘুরাঘুরি করছি । আমিনুলকে সামনে পেয়ে তাকেও জিজ্ঞাসা করতে লাগলেন কে চিল্লাচিল্লি করছে তাকে বলার জন্য । সেই কথা আর কে বলে তাকে । স্যার চলে গেলেন । স্যার বের হওয়া মাত্রই হাসির রোল উঠে গেল সবার মাঝে । তারপর থেকেই সেই পিটি স্যার এর নাম হয়ে গেল ‘ জরিনা স্যার ’ । কথাটা শুধু আমাদের ব্যাচেই কয়েকজন শুধু জানতাম । এরপর থেকে আড়ালে তাকে ‘ জরিনা স্যার ’ ই বলা হত বেশিরভাগ সময় । এই স্যারের আরো কিছু ডাক নাম ছিল । তবে স্যার আরো কিছু নাম কামিয়েছিলেন বিভিন্ন খেলায় অংশগ্রহণ করতে গিয়ে । একবার অন্য এক স্কুলের ছাত্র বলেই বসেছিল যে এই স্যার মিনিটে একবার করে আমেরিকায় , একবার করে লন্ডনে , একবার করে দুবাই ঘুরে বাংলাদেশে ল্যান্ড করেন । এটা বলার একমাত্র কারণ ছিল স্যারের নাকের আশেপাশে বেশ অ্যালার্জি ছিল । তাই প্রায় সময়ই তিনি নাক চুলকাতেন । নাক চুলকাতে গিয়ে তিনি এই উপাধি পেয়েছিলেন ।

এরপরে যে মজার ঘটনা বলতে যাচ্ছি সেটাও বৃত্তি কোচিং কেন্দ্রিক । ঘটনা ঘটেছিল সমাজ ক্লাসে । এই ক্লাসটা নিতেন জাহিদ স্যার । স্যার বেশিরভাগ সময় পড়া ধরতেন আর পড়া না পারলে তার বিখ্যাত এক মার ছিল সেটা দিতেন । সেটাকে তিনি নাম দিয়েছিলেন গাম্বেল । আবার মাঝে মাঝে হাতটাকে সোজা করে স্টিলের স্কেল দিয়ে লাগিয়ে দিতেন জোরে । হাতে সুন্দর করে স্কেলের ছাপ বসে যেত । দু একবার খেয়েছিও । যেদিনের ঘটনা বলতে চাচ্ছি সেদিন কোচিং এ স্যার আগেরদিন যা হোমওয়ার্ক দেয়া হয়েছিল তা সবাইকে দেখাতে বললেন । হোমওয়ার্ক যদি কেউ না আনে তার জন্য স্যার এবার অভিনব এক শাস্তির ব্যবস্থা করলেন । শাস্তিটা হল এরকম যদি কোন ছেলে হোমওয়ার্ক না আনে তবে তার কান মলে দেবে যে কোন একজন মেয়ে । এবং উল্টোটা । আগেরদিন সুন্দর মতো হোমওয়ার্ক করেছি । তাই কোন চিন্তা ছিলনা আমার । স্যার সবাইকে খাতা বের করে সামনে রাখতে বললেন । সবাই ঐ শাস্তির ভয়েই হোক বা অপমানের হাত থেকে বাঁচতেই হোক হোমওয়ার্ক করে এনেছিল । আমি তখনও আমার হোমওয়ার্ক বের করিনি । ব্যাগ খুলে সেটা বের করতে গিয়ে আমার চোখ ছানাবড়া । আমার ব্যাগে হোমওয়ার্কের খাতা নেই । আমার মাথা গেছে গরম হয়ে । আমি বেশ ভালো করেই খুঁজলাম । কিন্তু পেলাম না সেটা । স্যার এর মধ্যে যারা যারা হোমওয়ার্ক আনে নাই তাঁদের দাড়াতে বললেন । আমি চারপাশ দেখি । কেউ দাঁড়ায় না । মানে সবাই এনেছে আজ । অগত্যা বাধ্য হয়ে আমি দাঁড়ালাম । আমাকে দাঁড়াতে দেখে ক্লাসের সবার মাঝে হাসির রোল উঠে গেল । এদিকে আমার কান দিয়ে ধোঁয়া বের হবার উপক্রম হল । স্যার আমাকে দাঁড়াতে দেখে হেসে দিলেন । আমি আবারো চারপাশ দেখি । কেউ দাঁড়ায়নি । একমাত্র আমি । স্যার নিয়ম অনুযায়ী একজন মেয়েকে ডাক দিলেন । আমি আমতা আমতা করছিলাম বাঁচার জন্য । বলেওছিলাম এরপর থেকে প্রতিদিন হোমওয়ার্ক নিয়ে আসব । কিন্তু কোন কাজ হচ্ছিল না । যাকে ডাকা হয়েছিল সেও আমার কান মলে দেবার জন্য সামনে এসে হাজির । সেদিন প্রথম বার ছিল বলেই স্যার আবার জিজ্ঞেস করলেন আমি এরপর থেকে ঠিকমতো কাজ করব কিনা । আমি হ্যাঁ বলার পর স্যার সেদিনের মতো ছেড়ে দিলেন আমাকে । আমিও কোন মেয়ের হাত থেকে কান মলা খাওয়া থেকে বেচে গেলাম । ঘটনা অনেক আগের । কিন্তু মনে এখনো গেঁথে আছে । আজীবন সম্ভবত থাকবে । সেদিন ক্লাস শেষ হওয়ার পর কয়েকজন মেয়ে বলে বসেছিল আজকের মতো ছেড়ে দিলাম । এই কথা তো ভুলে যাবার নয় কখনোই ।

এবারে যে ঘটনা বলতে যাচ্ছি সেটা ঘটেছিল ঐ কোচিং কে কেন্দ্র করেই । তবে বৃত্তি কোচিং নয় । এসএসসি পরীক্ষার আগে যে কোচিং হতো সেখানে ঘটেছিল । আগের ঘটনা গুলোতে মার না খাওয়ার ঘটনা ঘটলেও এখানে ঘটেছিল । এবং সেটা হেডস্যার এর হাতেই । হেডস্যার আমাদের ইংরেজি ক্লাস নিতেন । দ্বিতীয় পত্র । যেদিনের ঘটনা বলছি সেদিন স্যার ক্লাসে এসে আর্টিকেল করতে দিলেন । করতে দেয়ার সময় বলে দিয়েছিলেন ‘ সহজ নিয়মের কিছু আর্টিকেল দিলাম । আশা করি সবাই পারবে । না পারলে কিন্তু বেতের বারি খেতে হবে । সেটা সবার জন্যই ।’ সবাই বলতে ছেলেমেয়ে সবাইকেই মার খাওয়ার জন্য রেডি থাকতে বললেন । সবাই মহা আনন্দে কাজ করে স্যার এর হাতে জমা দিলাম ! কিন্তু ঐ যে সহজ নিয়ম । সেখানেই ধরা খেলাম । সবাই একই ভুল করল । দুই একজন বাদে । স্যার প্রথমে মেয়েদের খাতা দেখলেন । সেখানে যাদের ভুল হয়েছে তাদের মার খাবার জন্য রেডি থাকতে বললেন । তারপর ছেলেদের খাতা দেখলেন । সেখানে একই কাজ করলেন । আমি আর সাইফুল একই ভুল করেছিলাম । ওর রোল এক আর আমার দুই । দুজনকে দিয়েই শুরু করলেন । ভালো ছাত্র বলে আদর করেই ডাবল বেত দিয়ে দুটো লাগিয়ে দিলেন যেখানে দেখানো যায় না সেখানে ! সবার সামনেই । দুজনকে দুটো করে চারটি বারি দিয়ে ছেড়ে দিলেন । তবে আর কাউকে কিছু করলেন না । যা যাওয়ার আমাদের দুজনের উপর দিয়েই গিয়েছিল । বেঞ্চে গিয়ে বসার পর স্যার হাসতে হাসতে বললেন , ‘ বেশি লেগেছে নাকি ? যদি বেশি লেগে থাকে তবে মনে রাখবি কেন মার খেয়েছিলি । তাহলে সারাজীবন আর এই ভুল করবি না । ’

আসলেই এখনো মনে আছে ।

এরপর আরো বললেন , ‘ আমরা ছোটবেলায় এর থেকে বেশি মার খেয়েছি । আমাদের এক ইংরেজি স্যার ছিল যিনি কথায় কথায় পড়া না পারলে মাথায় বেত দিয়ে বারি দিতেন । সেই জন্যই বোধহয় চুল এতো তাড়াতাড়ি পেকে গেছে । তাই আজকে দুজনকে মারলাম । এরপর থেকে যেন এই ভুল না হয় । এরপরের বার সবাইকে কিন্তু মার খেতে হবে ভুল করলে । কোন ছাড় নেই কিন্তু । ’

ক্লাস নাইনে থাকার সময় একটা মধুর বিপদে পরেছিলাম । সেই সময় ছেলেদের শিফটে মানে আমাদের ক্লাসে আব্বু ক্লাস টিচার হয়ে আসল । ক্লাস টিচারদের আবার নাম ডাকা রুটিন কাজ । প্রথমদিন যেদিন আব্বু ক্লাস নিতে আসল সেদিন আমি প্রেজেন্ট দেয়ার সময় কি বলব সেটা নিয়ে চিন্তিত ছিলাম । কিন্তু ক্লাস শুরু করার পর দেখা গেল প্রথম তিনজনের নাম না ডেকেই আব্বু চার থেকে ডাকা শুরু করল । যেহেতু এক , দুই , তিন এর মধ্যে আমি দুই নাম্বার , আর বসতাম একই সাথে তাই আর ডাকার প্রয়োজন বোধ করে নাই আব্বু । আমিও হাফ ছেড়ে বাঁচলাম । কিন্তু বেশিদিন আব্বু ক্লাস নেয় নাই । কোন এক অজ্ঞাত কারণে ক্লাসের বাকীরা আব্বুকে ক্লাস টিচার হিসেবে চাচ্ছিল না । তাই আব্বু সেখান থেকে সরে আসে । এমনকি আমার স্কুল পরিবর্তন করা নিয়েও কথা হয়েছিল । কিন্তু আমি সেই দিনের ঘটনার পর স্কুল ছাড়তে রাজি হইনি । কেন সেই ঘটনা ঘটেছিল আমি জানি না । তবে বুঝতে পেরেছিলাম আব্বু বাকিদের আচরণে কষ্ট পেয়েছিল । না হলে স্কুল পরিবর্তন করার কথা উঠত না সেদিন ।

আরেকটা ঘটনা না বললেই নয় । কোন ক্লাসের ঘটনা সেটা মনে নেই । প্রথম সেমিস্টার শেষ হয়েছে । বাসায় আব্বু ম্যাথ খাতা নিয়ে আসছে । তাও আবার আমাদের ক্লাসের । টিউটোরিয়ালে ৩০ ছিল । ফাইনালে ৭০ মার্কের পরীক্ষা । রোল এক ৩০ এ তিরিশ । কিন্তু ও ফাইনালে একটা ম্যাথ ভুল করে ৬৫ পেল । আমার খাতা দেখার সময় আব্বু আমাকে ডাকল । আমি আমার খাতা দেখছিলাম । আমি কোন ম্যাথ ভুল করিনি । কিন্তু তাও আব্বু আমাকে ৭০ এ ৭০ দেয় নাই । তিন নাম্বার ছোট ছোট জায়গা থেকে কেটে রেখেছিল । ইচ্ছা করলে দিতে পারত । কিন্তু দেয় নাই । তাই আমার ১০০ তে ১০০ পাওয়া আর হয়নি । খাতা দেখে আব্বু শুধু এটুকু বলেছিল , ‘ আমি চাই না কেউ এটা বলুক , আমি খাতা দেখেছি বলে তুমি ১০০ তে ১০০ পেয়েছ । ’



( চলবে )

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.