![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
০১
গত দুই বছর ধরে বাংলাদেশ এক মহাশক্তিশালী বাম্যোতে আক্রান্ত । যার ধারাবাহিকতা এ পর্যন্ত অব্যাহত। আর তা হল ব্লগ কিংবা ব্লগারদের উপর অযাচিত আক্রমণ । আসলে এই আক্রমণ শুরু হয়েছে খুব বেশিদিন থেকে নয় । বছর দুইয়েক হবে । যার উপলক্ষে রয়েছে ধর্মের উপর বিতর্কিত আলোচনা সমালোচনা । বিশেষত ইসলাম ধর্মের উপর।
০২
বর্তমান বাংলাদেশে প্রায় ৫২/৫৩ টি ব্লগ রয়েছে যার বেশিরভাগ গুলো মুক্তচিন্তা ও মুক্তবুদ্ধির উপর প্রতিষ্টিত । যাতে বেশিরভাগই প্রাধান্য পেয়ে থাকে মুক্তিযুদ্ধ, ধর্মীয় কুসংঙ্কার,সমাজ,রাষ্ট্র,নারী,অর্থনীতি প্রভৃতি । এসব ব্লগের লেখকগণও স্বভাবত হয় মুক্তচিন্তক ও পূজক। তাদের লেখায় খুঁজে পাওয়া যায় বাক্যের বিশেষ ক্ষুরধার, যুক্তির বিস্তর অবতারণা, ইতিহাস ও বিজ্ঞানের অজস্র রাশিমেলা । তারা তাদের লেখনির দ্বারা চেষ্টা করেন মানব বিবেককে সকল কুসংঙ্কার থেকে মুক্ত রাখতে ও উন্নত করতে ।
০৩
কিছু ব্লগার আছে যারা ধর্ম নিয়ে লেখালেখি করতে বেশ ভালবাসেন । এমনকি ভাল লেখেনও। তবে মাঝে মাঝে ভাল লিখতে লিখতে এমন সব অযাচিত বাক্যের অবতারণা করে ফেলেন তাতে হিতের বিপরীত হয়ে যায় । যা মোটেও কাম্য নয় । তাদের এই ধর্ম লেখালেখি কেবল ইসলাম ধর্মেই ক্ষ্যান্ত নয় বরং অনন্য সকল ধর্মেও বিস্তৃত ।
০৪
ব্লগারদের ধর্মীয় সমালোচনায় কাতর মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের কিছুসকল নামসমস্ত অস্থির মুসলমান ইতোমধ্যে গুটিকয়েক ব্লগারকে হনন করার ভেতর দিয়ে ধর্মবিরোধী বাক্যের অসমুচিত জবাব দিয়েছে । যা অত্যন্ত জঘন্য ও কাপুরুষোচিত । যা অত্যধিক অজ্ঞতা ও হীনতার পরিচায়কও বটে ।
০৫
কিছুসকল ব্লগাররা ধর্মকে নিয়ে যেভাবে নড়াচড়া করেছেন সেগুলোও অত্যন্ত নিন্দনীয় । মাঝে মাঝে মনে হয় এগুলো উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও স্বার্থযুক্ত। আবার কখনো এগুলো ইচ্ছাপূর্বক বলেও মনে হয় । যা উচিত নয় । ধর্ম মানি আর না মানি সত্যকে পূজা করা শিখতে হবে শিখাতেও হবে । তাতে নিজ স্বার্থ থাকুক আর না থাকুক। ধর্মেরও যেমন কিছু সত্য আছে তেমনি কিছু গলদও আছে । যদি ধর্মীয় গলদকে ধর্মের ভেতর দিয়ে সংস্কার করা যায় তাহলে তা হবে অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর ও বুদ্ধিমানের কাজ । এমনকি স্থায়ীযুক্ত ।
০৬
আপনারা যারা মুসলমান নাম ধারণ করে ইসলামের নামে এইসব ব্লগারদের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছেন তারা কতটুকু শরীয়তসম্মত কাজ করছেন তা প্রশ্নযুক্ত । এতে আপনারা যাদেরকে ধ্বংস করতে চাচ্ছেন তারা তো ধ্বংস হচ্ছেই না বরং আরও উপরে উঠছে । ফলশ্রুতিতে আপনারা শুধু নিজেকে ডুবাচ্ছেন না সাথে আপনার ধর্মকেও সমূলে ডুবিয়ে দিচ্ছেন।
আপনারা কিন্তু নিজেরাও জানেন যে ,ইসলাম মানে শান্তি । সকল নবীই এই শান্তি প্রতিষ্টার চেষ্টাই করে গেছেন । যদি আপনাদের কাছে একটা প্রশ্ন করি ? বলুন তো আজ যদি কোন নবী বেঁচে থাকতেন তাহলে কি তিনি নির্দেশ দিতেন যে ‘ যাও তোমরা নাস্তিক ব্লগারদের হত্যা করিয়া আস ‘। কখনোই না । বরং তিনি তাদেরকে হেদায়েতের দাওয়াত দিতেন নতূবা হেদায়েতের জন্যে দোয়া করতেন । আর এজন্যই নবীদেরকে মানুষ মান্য করেছিল । কারণ তাতে ছিলা শান্তি সম্প্রীতি । আর আপনারা করছেনটা কি । স্বর্গও তো কখনোই পাবেন না মানুষকে এই অশান্তি দিয়ে ।
এ প্রসঙ্গে একটা গল্প মনে পড়লো তখন আমি রংপুরে ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়তাম । আমাদের বাংলা পড়াতেন শ্রদ্ধেয় জাহিদুল স্যার । তিনি একটা গল্প বলেছিলেন “ গ্রামে কছির নামে এক ডাকাত ছিল । সে সবাইকে খুব জ্বালাতন করতো গ্রামের মানুষও খুব বিরক্ত ছিল । তো একদিন কছির ডাকাত বলল ,গ্রামবাসী আমি তো সারাজীবন,আপনাদের অনেক জ্বালাতন করেছি, খারাপ কাজ করেছি তো আমি মারা যাওয়ার পর আপনারা আমার শাস্তি হিসেবে আমার পেছনে বাঁশ ঢুকিয়ে আমাকে ঝুলিয়ে রাখবেন । গ্রামবাসীও তাই করলো । কিন্তু পুলিশ এসে গ্রামের সবাইকে ধরে নিয়ে গেল । করণ একজন মৃত মানুষকে এভাবে ঝুলিয়ে রাখাটা অপরাধ । তখন গ্রামের মানুষ বলতে লাগলো হায়রে কছির ডাকাত তুই বেঁচে থেকে জ্বালাইলি মরে যেয়েও জ্বালাইলি । তো আপনারা যারা মুসলমান নাম ধারণ করে ব্লগারদের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছেন তারা এই কছির ডাকাত থেকে কোন অংশে কম না । আপনাদের যদি সামর্থ্য থাকে তো কলম চালিয়ে দেন ছুরি চালিয়ে দিচ্ছেন কেন । আপনারা জানেন না পৃথীবীর সবচেয়ে জঘন্য নীচু মানের বীরত্ব হল ছুরি চালানো । এটা কি মানায় আপনাদের জাত কিংবা ধর্মের সাথে ? কখনই না ।
০৭
ব্লগাররা ধর্ম নিয়ে লিখবেন না কেন ? অবশ্যই লিখবেন। ওটা কি মানব সমাজ বহির্ভূত কোন জিনিস নাকি ? কখনই না বরং তা মানবের নিমিত্তেই তৈরী জিনিস । তা নিয়ে স্থবির থাকাটা কি পাপের সমতূল্য নয় ? তবে হ্যাঁ সেই ধর্মালোচনা হতে হবে অবশ্যই গঠন ও সংস্কারমূলক । আর আপনারা যারা মুসলমান নাম ধারণ করে ইসলামের নামে এইসব ব্লগারদের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছেন তারা কলম কিনে কিছু লেখালেখি করার চেষ্টা করেন না কেন ? নচেৎ লোকে তো আপনাদের অপাঙক্তেয় বলবে ।
০৮
প্রতিদিন খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে আপন হাতে উত্তরদিককার বাতায়ন খুলে শহরতলীর সুবিশাল দালান ভেদ করে যখন সকালের শুভ্র স্নিগ্ধ আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকি তখন ভাবি কবে হবে সেই দিন যেদিন থাকবে না কোন দ্বেষ থাকবে না কোন রেশ । হবে না কোন দেহাবশেষ । পরক্ষণেই মনে হয় প্রকৃতি বোধহয় বলছে ‘ হবে রে এবার শেষ ‘...........................।
পুনশ্চ :
ক. ব্লগাররা ধর্মহীন নয় কারণ তাদেরও ধর্মের ভেতর দিক দিয়েই জন্ম ।
খ. আক্রমণ মঞ্চের কুশীলব উদ্ঘাটন কিংবা দোষ চাপানো আমার এ লেখার উদ্দেশ্য নয় বরং রঙ্গমঞ্চে কুশীলবদের সাথে নৃত্য করতে করতে তাদের বস্ত্রখসানোই আমার উদ্দেশ্য ।
©somewhere in net ltd.