![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নেশা বই পড়া (তবে পাঠ্যবই না) । নিরিবিলি পছন্দ করি। অনুকরণপ্রিয়। গুরুবাদী ঝোঁক আছে। আমার সবচেয়ে বড় দক্ষতা যে, আমি জানি আমি কী জানি না। ঘুরতে পছন্দ করি। বিশ্বজয়ের নেশা থাকলেও টাকা এবং সামর্থ্যের অভাবে মনে করি তা সম্ভব হবে না! নেশাগত কারণে গণমাধ্যমে কাজ করছি।
আয়রে সবে কাস্তে হাতে কাটি ধান, আয়রে আয়রে আয়রে সবি কাটি ধান, সোনালি ধান..... এবার ধান কাটিব চাচাগ...নাচবে যখন ঢুলি ঢুলি...বুঝবে মনে...মজা ল..
সম্মিলিত কণ্ঠে এভাবে গান গাইতে গাইতে রমনার বটমূলে নবান্ন উৎসবের আয়োজন করা হলেও চট্টগ্রামের গ্রামীণ জনপদগুলোতে এখন আর আগের মতো নবান্ন উৎসব পালন করা হয় না।
নবান্ন উৎসব হলো নতুন আমন ধান কাটার পর সে ধান থেকে পাওয়া চালে প্রথম রান্না উপলক্ষে আয়োজিত উৎসব। সাধারণত অগ্রহায়ণ মাসে আমন ধান পাকার পর এই উৎসব শুরু হয়। কোনো কোনো অঞ্চলে ফসল কাটার আগে বিজোড় সংখ্যক ধানের ছড়া কেটে ঘরের চালে বেঁধে রাখা হয়। বাকি অংশ চাল করে সে চালে পায়েস রান্না করা হয়। এভাবে নানা আয়োজনে পালিত হত নবান্ন উৎসব।
অমুসলিম রীতিতে, নবান্ন অনুষ্ঠানে নতুন অন্ন পিতৃপুরুষ, দেবতা, কাক ইত্যাদি প্রাণীকে উৎসর্গ করে এবং আত্মীয়-স্বজনকে পরিবেশন করার পর গৃহকর্তা ও পরিবারের সদস্যবর্গ নতুন গুড়সহ নতুন অন্ন গ্রহণ করেন। বাংলাপিডিয়ার মতে, নতুন চালের তৈরি খাদ্যসামগ্রী কাককে নিবেদন করা বিশেষ লৌকিক প্রথা। লোকবিশ্বাস অনুযায়ী, কাকের মাধ্যমে ওই খাদ্য ‘মৃতের আত্মা’র কাছে পৌঁছে যায়। এই নৈবেদ্যকে বলে ‘কাকবলি।’ অতীতে পৌষসংক্রান্তির দিনও গৃহদেবতাকে নবান্ন নিবেদন করার প্রথা ছিল বলে জানা যায়।
তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যাচ্ছে অনেক কিছু। শহুরে মানসিকতার কাছে মার খাচ্ছে গ্রামীণ মূল্যবোধ। তাই নবান্নের অনেক আচার-অনুষ্ঠান এখন আর দেখা যায় না কিংবা যেটুকু দেখা যায় সেখানে ঐতিহ্যের অনেক উপাদান থাকে অনুপস্থিত।
সাতকানিয়ার খাগরিয়ায় বসবাস করেন এবং ধান চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করেন এমন একজন কৃষক হাসমত আলী। চট্টগ্রাম অঞ্চলে নবান্ন উৎসবে ভাটা পড়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিভিন্ন জাতের উচ্চ ফলনশীল ধান বাজারে আসায় নতুন ধানের গন্ধ হারিয়ে যাচ্ছে এবং স্বল্প সময়ে ওইসব ধান উৎপন্ন হওয়ায় গ্রামবাংলার ঐত্যিবাহী নবান্ন উৎসব হারিয়ে যেতে বসেছে।
পটিয়ার রতনপুর এলাকার নবার আলী নামের আরেক কৃষক বলেন, ধানের বীজ থেকে চাল উৎপাদন হওয়া পর্যন্ত সব কাজই এখন যান্ত্রিক পদ্ধতিতে হচ্ছে। এখন ধান উৎপাদনে আগের সেই পরিশ্রমও যেমন নেই, তেমনি চালের মজাও নেই।
তিনি আরো বলেন, আমরা যখন ছোট ছিলাম, তখন আমাদের বাপ-দাদারা গরু-নাঙ্গল দিয়ে চাষ করে আবার গরু দিয়ে ধান মাড়াই করে অনেক কষ্টে নতুন ধান উৎপন্ন করতেন, তখন তারা এই আনন্দে পিঠাপুলির আয়োজন করত। এখন সেই কষ্টও নেই, সেই আনন্দও নেই।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সাইফুল আজম এর মতে, আজকের গ্রামবাংলার শিশুরা যেন স্বপ্নের মধ্যে নবান্নের উৎসবের ইতিকথা বাবা-মায়েদের মুখে মুখে শুনে। বিশ্বায়নের এই যুগে বাংলার ঐতিহ্যগুলো ক্রমশ হারিয়ে যেতে বসেছে।
©somewhere in net ltd.