নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার ব্লগ বাড়ীতে সু-স্বাগতম।

যারা বলে অসম্ভব, অসম্ভব তাদের দুয়ারেই বেশি হানা দেয়।

আদিত শরীফুল

নেশা বই পড়া (তবে পাঠ্যবই না) । নিরিবিলি পছন্দ করি। অনুকরণপ্রিয়। গুরুবাদী ঝোঁক আছে। আমার সবচেয়ে বড় দক্ষতা যে, আমি জানি আমি কী জানি না। ঘুরতে পছন্দ করি। বিশ্বজয়ের নেশা থাকলেও টাকা এবং সামর্থ্যের অভাবে মনে করি তা সম্ভব হবে না! নেশাগত কারণে গণমাধ্যমে কাজ করছি।

আদিত শরীফুল › বিস্তারিত পোস্টঃ

টোকেন ছাড়া ট্রলার ভাসে না সাগরে!

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:২৪

জলদস্যুদের দেয়া টোকেন (টাকার বিনিময়ে জলদস্যুদের দেয়া বিশেষ পাশ) ছাড়া বঙ্গোসাগরে জেলেরা মাছ ধরার ট্রলার ভাসাতে পারেন না। টোকেন ছাড়া কোন জেলে দল সাগরে গেলে ওৎ পেতে থাকা জলদস্যুদের হিংস্র থাবায় পড়তে হয় তাদের। এসময় জলদস্যুরা জেলেদের উপর হামলা চালিয়ে অপহরন, ট্রলার, মাছ ধরার জালসহ সবকিছু লুটে নেয়। আর অপহৃত জেলেদের উপর মুক্তিপনের দাবীতে চালায় নির্যাতন। দাবীকৃত মুক্তিপণ পরিশোধ করতে না পারলে কিছুদিন পরেই সাগরে ভাসে হতভাগ্য এসব জেলেদের খন্ডিত লাশ।

বঙ্গোপসাগর উপকুলের বাঁশখালী ও আনোয়ারার বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী জেলে ও ট্রলার মালিকের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জেলে ও ট্রলার মালিক বলেন, অক্টোবর থেকে ফ্রেব্র“য়ারী শীতকালীন মৌসুমে গভীর সমুদ্রগামী জেলেদের উপর জলদস্যুদের বেপরোয়া তান্ডবের মূলে রয়েছে জলদস্যুদের দেওয়া টোকেন কার্ড। এই টোকেন কার্ডের নাম করে জলদস্যুরা উপকূলীয় এলাকার জেলেদেরকে সাগরে কথিত নিরাপত্তা দেয়।

যেসব জেলেরা দস্যুদের দেয়া এ টোকেন না নিয়ে মাছ ধরতে যায় তাদেরকে আটকে রেখে মুক্তিপণের নামে আদায় করছে বড় অংকের টাকা। কোন কোন সময় দস্যুরা জেলেদের হত্যা করে ট্রলার ছিনিয়ে নেয়। টোকেনে হরিণ, ইলিশ, পাখি, সিংহসহ বিভিন্ন জীবজন্তুর ছবি ও তাঁদের সিলমোহর থাকে বলে জানা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জেলে জানান, নিজাম ডাকাতের হাতে জিম্মি ছিল নোয়াখালীর হাতিয়ার চর ও উপকূলীয় এলাকার হাজার হাজার মানুষ। সে ছিল ওই এলাকার এক আতঙ্ক। সম্প্রতি র‌্যাবের সাথে ‘বন্ধুকযুদ্ধে’ নিজাম ডাকাত নিহত হওয়ার পরে জেলেদের মাঝে আতঙ্ক কিছুটা কেটেছিল। নিরাপদে মাছ শিকার করে ফিরবে এমন আশায় বুক বেধে কিছু কিছু জেলে এবার টোকেন (টাকার বিনিময়ে জলদস্যুদের দেয়া বিশেষ পাস) না নিয়ে সাগরে যায়। কিন্তু তাঁদের সিন্ধান্তকে ভুল প্রমাণ করে দস্যুরা আবারো জেলেদের উপর হামলা করে।

কক্সবাজার জেলা ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মাস্টার মোস্তাক আহমদ জানান, কক্সবাজার শহরের নিকটবর্তী বঙ্গোপসাগরে গত রোববার একদিনেই ১৩টি মাছধরা ট্রলারে ডাকাতি হয়েছে। জলদস্যুরা ২০৩ জন জেলেসহ ১২টি ট্রলার অপহরণ করে নিয়ে যায়। এরমধ্যে গতকাল সোমবার পর্যন্ত গুলিবিদ্ধ ১৩ জেলেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদের কয়েকজনের অবস্থা আশংকাজনক।

তিনি বলেন, চলতি জানুয়ারি মাসের ২৭ দিনে কক্সবাজারের আশেপাশে বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন এলাকায় কমপক্ষে ৫৩টি ফিশিং ট্রলার ডাকাতি ও অপহরণের শিকার হয়েছে। গত রোববার জলদস্যু আক্রান্তদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ ১৩ জেলেকে উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে এবং মহেশখালী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। জলদস্যুদের হাতে অপহরণের শিকার ট্রলারসমূহের কমপক্ষে ১৯০ জন জেলে এখনও পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছে।

সামুদ্রিক মৎস্য আহরণকারী বোট মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে গত এক বছরে প্রাণ হারিয়েছে প্রায় ৬০ জন জেলে। আহত হয়েছেন দুইশ’রও বেশি জেলে। জলদস্যুদের সাম্প্রতিক আগ্রাসী তান্ডবে অসহায় ও আতঙ্কিত জেলেরা গত দুই মাস ধরে সমুদ্রে মাছ ধরা বন্ধ রেখেছে। প্রায় ৫-৬টি জলদস্যু বাহিনীর হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে সমুদ্রে মৎস্য আহরণকারী ১০ লাখ জেলে। গত এক মাসে জলদস্যুদের ডাকাতির কবলে পড়েছে ৫০টির বেশি বোট।

এসব ঘটনায় সীমানা সংক্রান্ত কারণ দেখিয়ে মামলা নিতে আগ্রহ দেখায় না থানাগুলো। তবে সম্প্রতি কয়েকটি ঘটনায় কক্সবাজারের তিন থানায় কমপক্ষে আটটি মামলা হয়েছে বলে জানা গেছে।

সাগরে নিরাপত্তা দাবি করে সামুদ্রিক মৎস্য আহরণকারী বোট মালিক সমিতি গত ২৪জানুয়ারি চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে।

সংবাদ সম্মেলনে মালিক সমিতির নেতারা বলেন, আগামী এক মাসের মধ্যে সমুদ্রে মৎস্য আহরণে পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। না করলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, সমুদ্রে মাছ ধরার উপযোগী প্রায় ৪০ হাজার বোট রয়েছে। এদের মধ্যে নিবন্ধন রয়েছে ১০ হাজার বোটের। সমুদ্রে মাছ ধরার সময় এসব বোটের প্রত্যেকটিতে ২২ থেকে ২৫ জন জেলে থাকে। সমুদ্রে মাছ ধরতে একেকটি বোটের খরচ পড়ে প্রায় দুই লাখ টাকা। জলদস্যুদের কবলে পড়লে ওই দুই লাখ টাকাসহ প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।

সামুদ্রিক মৎস্য আহরণকারী বোট মালিক সমিতির মহাসচিব আমিনুল হক বাবুল বাংলামেইলকে বলেন, ২০১১সালের ১৬ মার্চ সকালে বাড়ি ফেরার পথে জলদস্যুরা ট্রলারসহ বাঁশখালীর ১১ মাঝি মাল্লাদের অস্ত্রের মুখে ধরে নিয়ে নির্মমভাবে তাদের হত্যা করে লাশ সাগরে ভাসিয়ে দেয়। এরপর তাঁদের লাশ আর পাওয়া যায়নি। প্রায় সময় এসব ঘটনা ঘটে আসছে।

তিনি আরো জানান, বর্তমানে সোনাদিয়া, কুতুবদিয়া ও মহেশখালী এলাকায় জলদস্যুদের উৎপাত বৃদ্ধি পেয়েছে।

মালিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নূর হোসেন বলেন, সমুদ্র উপকূলীয় এলাকার মধ্যে সোনাদিয়ায় জাম্বু বাহিনী, মহেশখালীতে সারোয়ার বাহিনী, বাঁশখালীতে রবি বাহিনী, সন্দ্বীপে রমিজ বাহিনীর দাপটে অসহায় হয়ে পড়েছে জেলেরা। এসব বাহিনীর হাতে জেলেরা বর্তমানে জিম্মি।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড পূর্ব জোনের স্টাফ অফিসার (অপারেশন) মেজর মো. ইউসুফ বাংলামেইলকে বলেন, সীমিত জনবল নিয়ে জলদস্যু দমনে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। আমাদের যে ¯পীড বোট আছে সেগুলো দিয়ে গভীর সমুদ্রে গিয়ে জলদস্যু আটক করা সম্ভব হয় না। এরপরো জলদস্যুদের ধরার জন্য সাগরে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।

সাগরে অপতৎপরতা চালানো বিভিন্ন বাহিনীর বিরুদ্ধে কোস্টগার্ডের ভ’মিকা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাগরে কোস্টগার্ডের অভিযানের সময় জলদস্যুরা নিজেদের অস্ত্রশস্ত্র পানিতে ফেলে সাধারণ জেলেদের বেশ নেয়। এ কারণে তাঁদেরকে গ্রেপ্তার করা কঠিন হয়ে পড়ে। স্পটে কিছু না পেলে আমরা তাঁদেরকে আটক করতে পারি না। জলদস্যুদের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট থানাগুলো কার্যকরী ভ’মিকা রাখতে পারে। গতকাল রবিবার কক্সবাজারে এ সংক্রান্ত এক বৈঠকে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার বলেছিলেন, এসব জলদস্যুদের তালিকা পুলিশের হাতে আছে। খুব শীঘ্রই সাডাঁশি অভিযান পরিচালনা করা হবে।



প্রতিবেদন: শরীফুল ইসলাম রুকন, দক্ষিণ চট্টগ্রাম করেসপন্ডেন্ট, বাংলামেইল২৪ডটকম

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.