![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লেখকঃইমাম জাফর সাদিক(আঃ)
পরিচ্ছেদ-১
দাসত্ব (উবুদিয়্যাহ)
আচরণের মূলে চারটি ভাগ রয়েছেঃ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সাথে আচরণ, নিজের সাথে আচরণ, সৃষ্টির সাথে (যেমন, জনগণ) আচরণ এবং এই পৃথিবীর সাথে আচরণ। এর প্রত্যেকটি আবার সাতটি নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত, ঠিক যেভাবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সাথে আচরণের সাতটি নীতি রয়েছেঃ তাঁকে তাঁর প্রাপ্য দেয়া, তাঁর (আদেশ নিষেধের) সীমানা রক্ষা করা, তাঁর নেয়ামতের জন্য কৃতজ্ঞ থাকা, তাঁর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকা, তাঁর পরীক্ষায় ধৈর্যশীল হওয়া, তাঁর পবিত্রতার তাসবীহ করা এবং তাঁকে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা করা।
নিজের সাথে আচরণের সাতটি নীতি হচ্ছেঃ ভয়, সংগ্রাম, ক্ষতি সহ্য করা, আধ্যাত্মিক শৃংখলা, সত্যবাদীতা ও ইখলাস (আন্তরিকত্য) সন্ধান করা, নফস যা ভালোবাসে তা থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখা এবং একে দারিদ্রের (ফাকর) সাথে বেঁধে ফেলা।
সৃষ্টির সাথে আচরণের সাতটি নীতি হলোঃ ক্ষমাশীলতা, বিনয়, উদারতা, দয়ামায়া, সৎ উপদেশ, ন্যায়বিচার ও সাম্যতা।
এ পৃথিবীর সাথে আচরণের সাতটি নীতি হচ্ছেঃ হাতে যা আছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা, যা নেই তার চাইতে যা আছে তাকে অগ্রাধিকার দেয়া, যা ধরা দেয় না তা পাওয়ার প্রচেষ্টা পরিত্যাগ করা, অতিরিক্ত প্রাচুর্য ঘৃণা করা, অল্পতে তুষ্টি বেছে নেয়া, এ পৃথিবীর খারাপকে জানা এবং তা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষাকে পরিত্যাগ করা এবং এর আধিপত্যকে অগ্রাহ্য করা।
যখন এই সবগুলো গুণাবলী কোন ব্যক্তির মাঝে পাওয়া যায় তাহলে সে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার উচ্চস্থানীয় ও তাঁর ঘনিষ্ট দাস এবং বন্ধুদের (আউলিয়া) একজন।
দাসত্বের বিষয়ে আরো কিছু কথা
দাসত্ব হলো সারবস্ত্ত, যার অর্ন্তনিহিত প্রকৃতি হচ্ছে প্রভুত্ব (রুবুবিয়াহ)। দাসত্বে যা অনুপস্থিত তা প্রভুত্বে পাওয়া যায় এবং যা প্রভুত্ব থেকে পর্দার আড়ালে থাকে তা দাসত্বে পাওয়া যায়। যেমন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেনঃ
سَنُرِيهِمْ آيَاتِنَا فِي الْآفَاقِ وَفِي أَنفُسِهِمْ حَتَّىٰ يَتَبَيَّنَ لَهُمْ أَنَّهُ الْحَقُّ ۗ أَوَلَمْ يَكْفِ بِرَبِّكَ أَنَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ شَهِيدٌ ﴿٥٣﴾
‘‘আমরা শীঘ্রই তাদেরকে দেখাবো আমাদের নিদর্শনগুলো দিগন্তে এবং তাদের সত্তার ভিতরে । ঐক্ষণ পর্যন্ত যখন তাদের কাছে তা পরিস্কার হয়ে যাবে যে তা সত্য। তোমার রবের বিষয়ে এটি কি যথেষ্ট নয় যে তিনি সব কিছুর উপরে সাক্ষী?’’ (৪১: ৫৩)
এর অর্থ তিনি অস্তিত্ববান তোমার অনুপস্থিতিতে এবং তোমার উপস্থিতিতেও। দাসত্ব অর্থ নিজেকে সবকিছু থেকে মুক্ত করে ফেলা এবং তা অর্জনের পথ হচ্ছে নিজের সত্তা যা পেতে চায় তা তাকে দিতে অস্বীকার করা এবং তা যা অপছন্দ করে তা তাকে বহন করতে বাধ্য করা। এর চাবি হচ্ছে বিশ্রাম পরিত্যাগ করা। একাকীত্বকে ভালোবাসা এবং ‘‘আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে প্রয়োজন’’ এই স্বীকৃতির পথকে অনুসরণ করা।
পবিত্র নবী (তাঁর ও তার পরিবারের উপর শান্তি বর্ষিত হোক) বলেছেনঃ ‘‘আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার ইবাদাত করো যেন তুমি তাঁকে দেখতে পাচ্ছো। এমনকি যদি তুমি তাঁকে দেখতে না পাও, তিনি তোমাকে দেখছেন।’’
عبد (আব্দ বা দাস) শব্দটিতে তিনটি অক্ষর আছেঃ ع, ب, ও د । ع হচ্ছে علم (ইলম) বা আল্লাহ সম্পর্কে একজনের জ্ঞান এবং ب হচ্ছে بون যার অর্থ হলো আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছু থেকে কোন ব্যক্তির দূরত্ব এবং د হচ্ছে دنو (দুনু) বা আল্লাহর সাথে ব্যক্তির নৈকট্য, কোন গুণাবলী ও পর্দার বাঁধা ছাড়া।
আচরণের মূলনীতি চারটি, যেভাবে আমরা এ অধ্যায়ের শুরুতে বলেছি।
দৃষ্টি নামিয়ে রাখার বিষয়ে
ব্যক্তি তার দৃষ্টিকে নামিয়ে রাখবে- এর চেয়ে লাভজনক আর কিছু নেই, কারণ দৃষ্টি সে বিষয়ের উপর থেকে নিজেকে নামিয়ে রাখেনা যা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা হারাম করেছেন, যদি না ইতিমধ্যেই (আল্লাহর) মর্যাদা ও গৌরব ‘প্রত্যক্ষ করা’ তার অন্তরে উপস্থিত হয়েছে। বিশ্বাসীদের আমীরকে (ইমাম আলী-আঃ) জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলোঃ কী দৃষ্টিকে নামিয়ে রাখতে সাহায্য করে? তিনি বলেছিলেনঃ ‘‘তাঁর শক্তির কাছে আত্মসমর্পন করা যিনি তোমার গোপন বিষয় জানেন। চোখ হচ্ছে অন্তরের গুপ্তচর এবং বুদ্ধির দূত; তাই তোমার দৃষ্টিকে তা থেকে নামিয়ে রাখো যা তোমার বিশ্বাসের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়, যা তোমার অন্তর অপছন্দ করে এবং যা তোমার বুদ্ধির কাছে ঘৃন্য মনে হয়।’’
পবিত্র নবী (তাঁর ও তাঁর পরিবারের উপর শান্তি বর্ষিত হোক) বলেছেনঃ ‘‘তোমাদের চোখকে নামিয়ে রাখো- তোমরা বিষ্ময়কর জিনিস দেখবে।’’
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেনঃ
قُل لِّلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ۚ
‘‘বিশ্বাসীদের বলো যেন তারা তাদের দৃষ্টিকে নামিয়ে রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থান হেফাযত করে।’’ (২৪:৩০)
ঈসা (আঃ) তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেনঃ ‘‘নিষিদ্ধ জিনিসের দিকে তাকানো থেকে সতর্ক হও, কারণ তা আকাঙ্ক্ষার বীজ এবং তা পথভ্রষ্ট আচরণের দিকে নিয়ে যায়।’’
ইয়াহইয়া (আঃ) বলেছেনঃ ‘‘আমি অপ্রয়োজনীয় দৃষ্টিপাতের চাইতে মৃত্যুকে শ্রেয় মনে করি।’’
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ এক ব্যক্তিকে বলেছিলেন যে এক অসুস্থ মহিলাকে দেখতে গিয়েছিলোঃ ‘‘অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার চাইতে তোমার চোখ দু’টো হারানো উচিত ছিলো।’’
যখনই চোখ কোন নিষিদ্ধ জিনিসের দিকে তাকায়, আকাঙ্ক্ষার একটি গিট সে ব্যক্তির অন্তরে বেঁধে যায় এবং সেই গিট খুলবে শুধু দুই শর্তেঃ হয় প্রকৃত তওবায় সে দুঃখে কাঁদবে অথবা যে দিকে সে তাকিয়েছিলো এবং যার আকাঙ্ক্ষা করেছিলো তার দখল নিবে। আর যদি কোন ব্যক্তি তার দখল নেয় অন্যায়ভাবে, তওবা ছাড়া, তাহলে তা তাকে আগুনে (জাহান্নামে) নিয়ে যাবে।
আর যে ব্যক্তি দুঃখ ও অনুতাপের সাথে তওবা করে, তার বাসস্থান হচ্ছে জান্নাতে এবং তার গন্তব্য হচ্ছে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার অনুগ্রহ।
হাঁটার বিষয়ে
যদি তুমি বুদ্ধিমান হয়ে থাকো তাহলে যে কোন স্থান থেকে রওনা দেয়ার আগে তোমার উচিত দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হওয়া এবং সৎ নিয়ত রাখা, কারণ সত্তার প্রকৃতি হচ্ছে সীমালংঘন করা এবং নিষিদ্ধ জিনিসে অবৈধ হাত প্রসারিত করা। যখন তুমি হাঁটো তখন তোমার উচিত গভীরভাবে ভাবা এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার বিস্ময়কর কাজগুলো লক্ষ্য করা- যেখানেই তুমি যাও। টিটকারী করো না অথবা দম্ভভরে হেঁটো না যখন হাঁটো; আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেনঃ
وَلَا تَمْشِ فِي الْأَرْضِ مَرَحًا ۖ
‘‘ গর্বভরে যমীনে হাঁটাচলা করো না ।’’ (৩১: ১৮)
তোমার চোখ নামিয়ে রাখো তা থেকে যা তোমার বিশ্বাসের প্রতি সঙ্গতিপূর্ণ নয় এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে বার বার স্বরণ করো। একটি হাদীস রয়েছে যে, যেসব স্থানে এবং যার সাথে আল্লাহর স্মরণ-এর সম্পর্ক আছে সেগুলো বিচার দিনে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সামনে সাক্ষ্য দিবে এবং সেসব মানুষের জন্য ক্ষমা ভিক্ষা চাইবে যেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করতে দেন।
পথ চলার সময় লোকজনের সাথে অতিরিক্ত কথা বলো না, কারণ তা বাজে আচরণ। বেশীরভাগ রাস্তা হচ্ছে শয়তানের ফাঁদ ও বাজার , তাই তার ধোঁকা থেকে নিজেকে নিরাপদ ভেবো না। তোমার আসা ও যাওয়াকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার আনুগত্য বানাও – তাঁর সন্তুষ্টির জন্য সংগ্রাম করে, কারণ তোমার সব চলাফেরা বইতে লিপিবদ্ধ হবে। যেভাবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেনঃ
يَوْمَ تَشْهَدُ عَلَيْهِمْ أَلْسِنَتُهُمْ وَأَيْدِيهِمْ وَأَرْجُلُهُم بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ ﴿٢٤﴾
‘‘সেদিন তাদের জিহবা এবং তাদের হাতগুলো ও পাগুলো সাক্ষী দিবে তাদের বিরুদ্ধে- তারা যা করেছিলো সে সম্পর্কে।’’ (২৪:২৪)
وَكُلَّ إِنسَانٍ أَلْزَمْنَاهُ طَائِرَهُ فِي عُنُقِهِ ۖ
‘‘আমরা প্রত্যেক ব্যক্তির কর্মকে তার ঘাড়ে ঝুলিয়ে দেই।’’ (১৭:১৩)
পরিচ্ছেদ-২
জ্ঞানের বিষয়ে
জ্ঞান হচ্ছে প্রত্যেক উন্নত আধ্যাত্মিক অবস্থার ভিত্তি এবং প্রত্যেক উচুঁ মাক্বামের পূর্ণতা। এ কারণে পবিত্র রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ ‘‘প্রত্যেক মুসলিম নর ও নারীর জন্য জ্ঞান সন্ধান করা বাধ্যতামূলক- তাহলো তাক্বওয়া (সতর্কতা) অবলম্বনের জন্য জ্ঞান এবং ইয়াক্বিন (নিশ্চিত জ্ঞান)। ইমাম আলী (আঃ) বলেছেনঃ ‘‘জ্ঞান সন্ধান কর যদি তা চীনেও হয়।’’ অর্থাৎ নিজের সত্তা সম্পর্কে আধ্যাত্মিক জ্ঞান,এর ভিতরেই লুকায়িত আছে মহান প্রভু সম্পর্কে জ্ঞান। পবিত্র রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ ‘‘যে ব্যক্তি তার নিজ সম্পর্কে জানে সে তার রবকে জানে,’’ এছাড়া তোমাদের উচিত সে জ্ঞান অর্জন করা যা ছাড়া কোন কাজই সঠিক নয় এবং তা হচ্ছে (ইখলাস) আন্তরিকতা । আমরা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে আশ্রয় নেই সেই জ্ঞান থেকে যার কোন উপকারিতা নেই- তাহলো সেই জ্ঞান যা ইখলাসের সাথে কৃত কাজের পরিপন্থী।
জেনে রাখো সামান্য পরিমাণ জ্ঞানের জন্য বিরাট পরিমাণ কাজ দরকার, কারণ ক্বিয়ামত সম্পর্কে জ্ঞানের জন্য- যে ব্যক্তির এ জ্ঞান রয়েছে- তার সারা জীবন সে অনুযায়ী কাজ করে যেতে হয়। ঈসা (আঃ) বলেছেনঃ ‘‘আমি একটি পাথর দেখলাম যাতে লিখা ছিলো ‘আমাকে উল্টিয়ে দাও’ তাই আমি তা উল্টে দিলাম। অন্য পিঠে লিখা ছিলোঃ ‘যে ব্যক্তি- সে যা জানে তা অনুযায়ী কাজ করে না, সে ধ্বংস হয়ে যাবে- সে যা জানে না তা খুজঁতে গিয়ে এবং তার নিজের জ্ঞান তার বিরুদ্ধে যাবে।’’
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা দাউদ (আঃ)-কে সংবাদ পাঠালেনঃ ‘‘যে ব্যক্তির জ্ঞান আছে কিন্তু সে তার জ্ঞান অনুযায়ী কাজ করে না তার সাথে আমি নূন্যতম আচরণ যা করবো তা সত্তরটি বাতেনী শাস্তির চেয়েও খারাপ, তাহলো তার অন্তর থেকে আমার স্মরণের মিষ্টতা দূর করে দিবো।’’ জ্ঞানের মাধ্যম ছাড়া আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার দিকে কোন পথ নেই এবং জ্ঞান হচ্ছে একজন মানুষের সাজপোষাক-এই পৃথিবীতে ও আখেরাতে, বেহেশতের দিকে তার চালক এবং এর মাধ্যমে সে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করে।
সেই সত্যিকারভাবে জানে-যার ভেতরে পরিশুদ্ধ আচরণ, বিশুদ্ধ দোয়া, সত্যবাদিতা এবং তাক্বওয়া (সতর্কতা) কথা বলে; তার জিহবা, তার বিতর্ক, তার তুলনা এবং দাবীগুলো নয়। এছাড়া, অন্য সময়ে যারা জ্ঞান সন্ধান করেছে তাদের ছিলো বুদ্ধি, ধার্মিকতা, প্রজ্ঞা, বিনয়, তাক্বওয়া ও সতর্কতা, কিন্তু আজকাল আমরা দেখি যারা তা সন্ধান করে তাদের মধ্যে এ ধরনের কোন গুণাবলী নেই। জ্ঞানী ব্যক্তির প্রয়োজন বুদ্ধি, দয়া মায়া, সৎ উপদেশ, সহ্যশক্তি, ধৈর্য, সন্তুষ্টি এবং উদারতা। যে জানতে চায় তার প্রয়োজন জ্ঞানের জন্য আকাঙ্ক্ষা, দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি, আত্মনিয়োগ (তাঁর সময় ও কর্মশক্তি), ধার্মিকতা, তাক্বওয়া (সতর্কতা), স্মরণশক্তি এবং দৃঢ়তা।
বিচারিক রায় দেয়া
বিচারিক রায় দেয়া তার জন্য অনুমোদিত নয় যাকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বাতেনী পবিত্রতা, তার গোপন ও প্রকাশ্য কাজে ইখলাস ও প্রত্যেক হালে (অবস্থায়) একটি প্রমাণ দান করেন নি। তা এ কারণে- যে ব্যক্তি বিচারিক রায় দিলো সে আইনগত সিদ্ধান্ত দিলো এবং আইনগত সিদ্ধান্ত শুধু তখনই সিদ্ধ যখন তা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার অনুমতিতে এবং তাঁর প্রমাণের মাধ্যমে হয়। যে তার বিচারিক রায়তে যথাযথ পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়াই উদার, সে অজ্ঞ মূর্খ এবং তাকে তার মূর্খতার জন্য শাস্তি দেয়া হবে এবং তার বিচারিক রায় তার জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবে- যেভাবে হাদীসে এর ইঙ্গিত রয়েছে। জ্ঞান হচ্ছে একটি আলো (নূর) যা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা যাকে তাঁর ইচ্ছা তার হৃদয়ে দান করেন।
পবিত্র রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ ‘‘যে তোমাদের মধ্যে বিচারিক রায় দেয়ার বিষয়ে সবচেয়ে দুঃসাহসী সে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার প্রতি সবচেয়ে বেআদব।’’ বিচারক কি জানে না যে সে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা ও তাঁর দাসদের মাঝে হস্তক্ষেপ করেছে এবং সে জান্নাত ও আগুনের মাঝে দুলছে? সুফিয়ান ইবনে উইয়াইনাহ বলেছিলোঃ ‘‘কীভাবে অন্য কেউ আমার জ্ঞান থেকে লাভবান হতে পারে যদি আমি নিজেকে তার উপকারিতা থেকে বঞ্চিত রাখি?’’ কোন ব্যক্তির জন্য সঠিক নয় যে সে সৃষ্টির মধ্যে হালাল ও হারাম সম্পর্কে বিচারিক রায় দিবে, শুধু সেই ব্যক্তি ছাড়া যে তার সময়ের জনগণকে, তার গ্রাম, তার শহরকে রাসূল (সঃ)-এর আনুগত্যের মাধ্যমে সত্যের অনুসারী করে এবং যে জানে তার বিচারিক রায়ের কোন বিষয়টি প্রয়োগযোগ্য। রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ ‘‘বিচারিক রায় দেয়া এমন বিরাট একটি বিষয় যে সেখানে, ‘আশা করা যায়’, ‘সম্ভবত’ এবং ‘হয়তোবা’-র কোন স্থান নেই।
বিশ্বাসীদের আমির (আলী-আঃ) একজন বিচারককে বলেছিলেনঃ ‘‘তুমি কি কোরআনের কোন্ আয়াত ‘রহিতকারী’ এবং কোন্ আয়াত ‘রহিত হয়েছে’ তার মধ্যে পার্থক্য জানো?’’
-‘না’
-‘‘কোরআনের উদাহরণগুলোর মধ্যে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার উদ্দেশ্য সম্পর্কে তোমার ভালো দখল আছে?’’
-‘না’
-‘‘তাহলে তুমি ধ্বংস হয়ে গেছো এবং অন্যদের ধ্বংস করেছো’’।
একজন বিচারকের জন্য জানা প্রয়োজন কোরআনের বিভিন্ন অর্থ, রাসূল (সাঃ)-এর পথের সত্য, বাতেনী ইঙ্গিত, ভদ্রতা, ঐক্যমত ও ভিন্নমত এবং তারা যে বিষয়ে একমত ও ভিন্নমত সে সম্পর্কে পরিচিত থাকা। এরপর তার থাকা উচিত সূক্ষ পার্থক্য বুঝার ক্ষমতা, শুদ্ধ আচরণ, প্রজ্ঞা এবং সতর্কতা। যদি তার এগুলো থাকে, তাহলে তাকে বিচার করতে দাও।
ভালোর আদেশ করা ও খারাপকে নিষেধ করা
যে ব্যক্তি তার দুঃচিন্তা ছুঁড়ে ফেলে নি, তার নিজের সত্তার খারাপ ও তার ক্ষুধা থেকে পবিত্র হয় নি, শয়তানকে পরাজিত করে নি এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার বেলায়েতের অধীনে এবং তাঁর নিরাপত্তার ভেতর প্রবেশ করে নি সে যথাযথভাবে ভালোর আদেশ এবং খারাপকে যথাযথভাবে নিষেধ করতে অক্ষম এবং যেহেতু সে উল্লেখিত গুণাবলী অর্জন করতে পারে নি, সে ভালোর আদেশ ও খারাপকে নিষেধ করার জন্য যে পদক্ষেপই গ্রহণ করুক তা তার বিরুদ্ধেই যাবে এবং জনগণ তা থেকে কোন উপকার লাভ করবে না। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেনঃ
أَتَأْمُرُونَ النَّاسَ بِالْبِرِّ وَتَنسَوْنَ أَنفُسَكُمْ وَأَنتُمْ تَتْلُونَ الْكِتَابَ ۚ أَفَلَا تَعْقِلُونَ ﴿٤٤﴾
‘‘কী? তোমরা কি জনগণকে ভালো হওয়ার আদেশ দাও এবং নিজেদের সত্তাকে অবহেলা কর অথচ তোমরা কোরআন পড়ছো, তোমরা কি বুঝ না?’’ (২:৪৪)
যে তা করে তাকে ডেকে বলা হয়ঃ ‘‘হে বিশ্বাসঘাতক, তুমি কি আমার সৃষ্টি থেকে তা দাবী কর যা তুমি নিজে প্রত্যাখ্যান করেছো এবং নিজের উপর লাগামকে (এই বিষয়ে) ঢিল দিয়েছো?’’
বর্ণিত আছে যে আলাবা আল আসাদি রাসূলুল্লাহকে (সাঃ) এ আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেঃ
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا عَلَيْكُمْ أَنفُسَكُمْ ۖ لَا يَضُرُّكُم مَّن ضَلَّ إِذَا اهْتَدَيْتُمْ ۚ
‘‘হে যারা বিশ্বাস কর, নিজেদের সত্তার যত্ন নাও; যে ভুল করে সে তোমাদের কোন ক্ষতি করতে পারে না যখন তোমরা সঠিক পথে আছো।’’ (৫:১০৫)
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ ‘‘ভালোর আদেশ দাও এবং খারাপকে নিষেধ করো এবং যে ক্ষতি তোমাদের স্পর্শ করে তা সহ্য কর, ঐ সময় পর্যন্ত যখন তোমরা দেখতে পাও নীচতাকে মেনে চলা হচ্ছে, আবেগকে অনুসরণ করা হচ্ছে এবং যখন প্রত্যেকেই তার নিজের মতামতকে বড় করে দেখবে, তখন তোমরা শুধু নিজেদের বিষয়ে মনোযোগ দাও এবং সাধারণ জনগণের বিষয়গুলো উপেক্ষা করে যাও।’’
যে ব্যক্তি ভালোর আদেশ দেয় তার জানা দরকার কী অনুমোদিত এবং কী নিষিদ্ধ; অবশ্যই সে যেন সে বিষয়ে নিজের পছন্দ-অপছন্দ থেকে মুক্ত থাকে যখন সে ভালোর আদেশ দেয়, জনগনকে ভালো উপদেশ দেয়, যেন তাদের প্রতি ক্ষমাশীল ও দয়ালু হয় এবং তাদের নরমভাবে ও পরিষ্কারভাবে আহবান করে এবং সেইসাথে তাদের বিভিন্ন চরিত্র সম্পর্কেও খেয়াল রাখে, যেন সে প্রত্যেককে তার যথাযথ স্থানে রাখতে পারে।
তাকে অবশ্যই দৃষ্টি রাখতে হবে নফসের চালাকি এবং শয়তানের ফাঁদ-এর দিকে। তাকে অবশ্যই ধৈর্য ধরতে হবে যদি কোন বিপদ আপদ আসে এবং যে বিষয়ে সে তাদেরকে উপদেশ দেয় সে বিষয়ে অবশ্যই সে জনগণের কাছ থেকে তার কোন প্রতিদান নিবে না, না তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করবে। সে অবশ্যই আক্রমণাত্মক ও আবেগপূর্ণ হবে না। সে নিজের জন্য রাগান্বিত হবে না। সে অবশ্যই নিজের নিয়তকে একমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার জন্য স্থির করবে এবং তাঁর সাহায্য চাইবে এবং তাকেই চাইবে। কিন্তু যদি জনগণ তার বিরোধিতা করে এবং তার প্রতি কর্কশ আচরণ করে তাহলে তাকে অবশ্যই ধৈর্য ধরতে হবে এবং যদি তারা তার সাথে একমত হয় এবং তার মতকে গ্রহণ করে, তাহলে তাকে অবশ্যই কৃতজ্ঞ হতে হবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে, তার কাছে নিজেকে সমর্পণ করবে এবং সে নিজের ত্রুটিগুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখবে।
.......চলবে
©somewhere in net ltd.