নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দেশ , মানুষ

জীবনের সব কিছু আললাহর সন্তুষ্টির জন্য

আল মাহদী ফোর্স

কোরান ও নবী পরিবারের আঃ অনুসারী।

আল মাহদী ফোর্স › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইমাম আবুল হাসান আলী ইবনে মূসা আর-রেযা (আ.) থেকে বর্ণিত বিষয়সমূহ ইস্তিফা (নির্বাচিতকরণ) এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে ইমাম (আ.)-এর বক্তব্য

২০ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৩২

ইমাম আবুল হাসান আলী ইবনে মূসা
আর-রেযা (আ.) থেকে বর্ণিত বিষয়সমূহ
ইস্তিফা (নির্বাচিতকরণ) এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে ইমাম (আ.)-এর বক্তব্য
ইমাম রেযা (আ.) যখন মামুনের জলসায় উপস্থিত হলেন এবং ইরাক ও খোরাসানের একদল প-িত সে জলসায় বসা ছিলেন, মামুন উপস্থিতবৃন্দকে বললেন : আমাকে এ আয়াতের অর্থ সম্পর্কে অবগত করুন : ‘অতঃপর আমরা কিতাবের উত্তরাধিকার করেছি তাদেরকে যাদেরকে নিজের বান্দাদের মধ্য থেকে বেছে নিয়েছি।’ প-িতবর্গ সকলেই বললেন : ‘এখানে বাছাইকৃত বান্দাদের বলতে আল্লাহ্র উদ্দেশ্য সকল উম্মত।’
মামুন ইমাম রেযা (আ.)-কে বললেন : হে আবাল হাসান! আপনি কী বলেন? উত্তরে ইমাম রেযা (আ.) বললেন : যদি উদ্দেশ্য সকল উম্মত হয়ে থাকে তাহলে সকলেরই উচিত বেহেশতে যাওয়া। কারণ, আল্লাহ্্ এর পরেই বলেন : ‘তাদের কেউ কেউ নিজের প্রতি জুলুম করে আর কেউ কেউ ন্যায়ানুগ আচরণ করে। আর কেউ কেউ যে কোনো কল্যাণ কাজে অগ্রবর্তী হয় আল্লাহ্র অনুমতিক্রমে। এটাই হলো সে মহান মর্যাদা।’ অতঃপর তাদের সকলকেই বেহেশতের অধিকারী বলেছেন : ‘আদ্ন বেহেশত যেখানে তারা প্রবেশ করে।’ সুতরাং উত্তরাধিকারিত্ব কেবল পবিত্র আহলে বাইতের জন্য নির্দিষ্ট। অন্যদের নয়। অতঃপর ইমাম রেযা (আ.) বলেন : এরা হলো তাঁরা, আল্লাহ্ স্বীয় কিতাবে যাদের গুণ বর্ণনা করেছেন। ইরশাদ হচ্ছে : ‘আল্লাহ্ তো চান শুধু তোমাদের থেকে সকল পঙ্কিলতা দূর করতে হে আহলে বাইত! এবং তোমাদেরকে পূত- পবিত্র করতে।’ এবং যাদের সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বলেছেন : ‘নিশ্চয় আমি দু’টি ভারী বস্তু রেখে যাচ্ছি : আল্লাহ্র কিতাব এবং আমার ইতরাত (আমার আহলে বাইত)। এ দু’টি কখনোই একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না হাউযে কাউসারে আমার সাথে মিলবে। লক্ষ্য করবে কীভাবে তাদের ব্যাপারে আমার স্থলাভিষিক্ত হও। হে লোকসকল! তাদেরকে শেখাতে যেও না। কারণ, তারা তোমাদের চেয়ে বেশি জ্ঞানী।’
প-িতরা বললেন : হে আবাল হাসান! আমাদেরকে বলুন : ইতরাত কি ঐ ‘আল’ নাকি ‘আল’ ব্যতীত অন্য কিছু? ইমাম রেযা (আ.) বলেন : ইতরাত ঐ ‘আল’ই। প-িতবৃন্দ বললেন : কিন্তু স্বয়ং রাসূলুল্লাহ্ (সা.) থেকে হাদীস বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেছেন : ‘আমার উম্মতের সকলেই আমার আল।’ আর যেহেতু হাদীসটি মুস্তাফিয (তিনের অধিক) সূত্রে বর্ণিত হয়েছে তাই তা প্রত্যাখ্যানযোগ্য নয়। সুতরাং প্রমাণিত হয় যে, আলে মুহাম্মাদ হলো তাঁরই উম্মত।
ইমাম রেযা (আ.) বললেন : আমাকে বলুন দেখি, সাদাকা (যাকাত ও দান) আলে মুহাম্মাদ (সা.)-এর ওপর নিষিদ্ধ নাকি নিষিদ্ধ নয়? তারা বললেন : জি, নিষিদ্ধ।
ইমাম রেযা (আ.) বললেন : সাদাকা কি সকল উম্মতের ওপরে নিষিদ্ধ? তাঁরা বললেন : না। ইমাম বললেন : এটাই হলো উম্মত ও আলের মধ্যে পার্থক্য। ধিক্ আপনাদের! আপনারা কোথায় সরে গেছেন? আপনারা কি কোরআনের প্রতি পৃষ্ঠ প্রদর্শন করেছেন নাকি আপনারা অবিবেচক দল? আপনারা কি জানেন না যে, রেওয়ায়েত বাহ্যত নির্বাচিত পথপ্রাপ্তদের সম্পর্কে, অন্যদের সম্পর্কে নয়? তাঁরা বললেন : হে আবাল হাসান! কিসের ভিত্তিতে বলছেন? ইমাম বললেন : আল্লাহ্র বাণী থেকে। ইরশাদ হচ্ছে : ‘আর প্রেরণ করেছি নূহ ও ইবরাহীমকে এবং তাঁদের বংশে দিয়েছি নবুওয়াত ও কিতাবকে, তাদের কিছু কিছু পথপ্রাপ্ত হয়েছে আর তাদের অনেকেই অনাচারী।’ সুতরাং নবুওয়াত ও কিতাবের উত্তরাধিকার থেকেছে পথপ্রাপ্তদের মধ্যেই, অনাচারীদের মধ্যে নয়। আপনারা কি জানেন না যে, নূহ তাঁর প্রতিপালকের কাছে আবেদন করলেন এবং বললেন : ‘নিশ্চয় আমার পুত্র আমার আহলভুক্ত এবং নিশ্চয় আপনার প্রতিশ্রুতি সত্য।’ একথা এজন্য ছিল যে, আল্লাহ্ তাঁকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তাঁকে তাঁর পরিবারবর্গসহ ডুবে যাওয়া থেকে নাজাত দান করবেন। তখন তাঁর প্রতিপালক মহামহিম আল্লাহ্ বলেন : ‘নিশ্চয় সে তোমার আহলভুক্ত নয়। নিশ্চয় সে অসঙ্গত কর্ম (মন্দকর্মের প্রতিকৃতি)। অতএব, যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই সে ব্যাপারে আমার কাছে আবেদন করবে না। আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি, মূর্খদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।’ (সূরা হূদ : ৪৬)
মামুন জিজ্ঞেস করলেন। আল্লাহ্ কি ইতরাতকে অন্যদের চেয়ে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন? ইমাম রেযা (আ.) বললেন : নিশ্চয় মহীয়ান গরীয়ান আল্লাহ্ ইতরাতকে অন্যদের ওপরে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন স্বীয় সৃদৃঢ় কিতাবে। মামুন বললেন : এটা আল্লাহ্র কিতাবের কোথায়? ইমাম রেযা (আ.) বললেন : আল্লাহর এই বাণীতে : ‘নিশ্চয় আল্লাহ্ আদম, নূহ, আলে ইবরাহীম ও আলে ইমরানকে জগৎবাসীর ওপরে নির্বাচিত করেছেন। তারা এমন এক বংশধর যারা একে অপরের থেকে।’ (সূরা আলে ইমরান : ৩৩-৩৪)।
অন্যত্র মহান আল্লাহ্ ইরশাদ করেছেন : ‘নাকি তারা হিংসা করে মানুষের সাথে আল্লাহ্ তাঁদের স্বীয় করুণা থেকে যা দান করেছেন সেজন্য। অবশ্য আলে ইবরাহীমকে দান করেছি কিতাব ও প্রজ্ঞা এবং দান করেছি মহান রাজত্ব।’ (সূরা নিসা : ৫৪) অতঃপর অন্যান্য মুমিনের উদ্দেশে কথা বলেন এবং ইরশাদ করেন : ‘হে ঈমানদারগণ! আনুগত্য কর আল্লাহ্র, আনুগত্য কর রাসূলের এবং তোমাদের মধ্য থেকে উলুল আমরের।’ (সূরা নিসা : ৫৯) অর্থাৎ যাদেরকে কিতাব ও প্রজ্ঞার উত্তরাধিকারী করেছেন এবং যারা অন্যদের হিংসার মুখে পড়েছেন। আল্লাহ্র এ বাণীর প্রেক্ষিতে : ‘তবে কি তারা হিংসা করে মানুষের সাথে, আল্লাহ্ আপন করুণা থেকে তাদের যা দান করেছেন সেজন্য। অবশ্যই আমি আলে ইবরাহীমকে দান করেছি কিতাব ও প্রজ্ঞা এবং দান করেছি মহান রাজত্ব।’ (সূরা নিসা : ৫৪) এখানে উদ্দেশ্য, মনোনীত পূত-পবিত্রদের আনুগত্যের অধিকার। আর এখানে ‘মুল্ক’ (রাজত্ব) বলতে আনুগত্যের অধিকার বুঝানো হয়েছে।
মজলিসের প-িতবৃন্দ বললেন : ‘আল্লাহ্ কি ইসতিফা (বাছাইকৃত, মনোনীত, নির্বাচিত)-কে কোরআনে ব্যাখ্যা করেছেন?
ইমাম রেযা (আ.) বললেন : ‘ইসতিফা’কে কোরআনে (যে সকল আয়াতে) বাতেনী অর্থে (এসেছে) ছাড়া যাহেরীভাবেও ১২টি স্থানে ব্যাখ্যা করেছেন :
প্রথমত, আল্লাহ্র এ বাণী ‘এবং সতর্ক করুন নিকটতম আত্মীয়বর্গকে এবং আপনার নিষ্ঠাবান জ্ঞাতিগোষ্ঠীকে’Ñ উবাই ইবনে কাব এর পঠনে (সংকলিত কোরআনে) এরূপ রয়েছে। আর আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদের মুসহাফেও তা লিপিবদ্ধ রয়েছে। (অতঃপর যখন খলিফা ওসমান, যায়েদ বিন সাবিতকে কোরআন সংকলনের নির্দেশ দেন তখন এ আয়াতের ব্যাখ্যামূলক অংশটিকে কোরআন থেকে বাদ দেন)। এ হলো উচ্চস্থান মহান করুণা এবং উন্নত মর্যাদা যখন আল্লাহ্ এ শব্দটি দ্বারা ‘আল’-কে উদ্দেশ্য করেছেন। এটা হলো একটি।
ইসতিফা সম্পর্কে দ্বিতীয় আয়াত হলো আল্লাহ্র এ বাণী ‘হে আহলে বাইত! আল্লাহ্ তো চান শুধু তোমাদের থেকে সকল অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে পূত-পবিত্র রাখতে।’ (সূরা আহযাব : ৩৩) এটা এমন এক মর্যাদা যা কোনো অস্বীকারকারীই অস্বীকার করতে পারে না। কারণ, এটা স্পষ্ট মর্যাদা।
তৃতীয় আয়াতটি হলো যখন আল্লাহ্ পূত-পবিত্রদেরকে তাঁর সৃষ্টিকুল থেকে পৃথক করেছেন। মোবাহিলার আয়াতে স্বীয় নবীকে নির্দেশ দিয়ে বলেছেন : ‘বলুন (হে মুহাম্মাদ!) এস, আমরা আহ্বান করি আমাদের পুত্রদেরকে ও তোমাদের পুত্রদেরকে এবং আমাদের নারীদেরকে ও তোমাদের নারীদেরকে এবং আমাদের নিজেদেরকে ও তোমাদের নিজেদেরকে। তারপর (আল্লাহ্র কাছে) অভিশাপ কামনা করি এবং মিথ্যাবাদীদের ওপর আল্লাহ্র অভিসম্পাত বর্ষণ করি।’ (সূরা আলে ইমরান : ৬১) তখন নবী (সা.) আলী, হাসান, হুসাইন ও ফাতিমা (আ.)-কে নিয়ে বের হলেন এবং তাঁদেরকে নিজের সঙ্গী করলেন। আপনারা কি জানেন ‘আমাদের নিজেদের’ ও ‘তোমাদের নিজেদের’ এর অর্থ কী? প-িতবৃন্দ বললেন : ‘এর অর্থ স্বয়ং মহানবী (সা.)।’ ইমাম রেযা (আ.) বললেন : ভুল বলেছেন। নিশ্চয় একথার উদ্দেশ্য আলী (আ.)। এর একটি প্রমাণ হলো নবী (সা.)-এর বক্তব্য যখন তিনি বললেন : ‘বনি ওলিয়াহ (ইয়েমেনের কিন্দাহর একটি গোত্র)-কে অবশ্যই বিরত হতে হবে। নতুবা আমি এমন একজন লোককে তাদের উদ্দেশ্যে পাঠাব যে হবে স্বয়ং আমার মতো।’ তাঁর উদ্দেশ্য ছিল আলী (আ.)। এটা এমন এক বৈশিষ্ট্য যে ব্যাপারে কেউই আলীর অগ্রগামী হতে পারেনি। আর এমন এক গুণ কোনো মানুষই যাতে পৌঁছতে পারেনি। আর এমন এক মর্যাদা যে ব্যাপারে কেউই আলীকে ছাড়িয়ে যেতে পারেনি। কারণ, আলীকে স্বয়ং নিজের স্থলে দিয়েছেন। এটা হলো তৃতীয়।
চতুর্থটি হলো, সকল লোককে তাঁর মসজিদ থেকে বের করে দিলেন, শুধু ইতরাত ব্যতীত। তারপর লোকেরা যখন এ প্রসঙ্গে কথা বলল এবং আব্বাসও বললেন : ‘হে রাসূলুল্লাহ্! আলীকে ছেড়ে দিলেন আর আমাদেরকে বের করে দিলেন যে?’ তখন রাসূলুল্লাহ্ (সা.)বললেন : ‘আমি তাকে ছেড়ে দেইনি এবং তোমাদেরকে বের করে দেইনি; বরং আল্লাহ্ই তাকে ছেড়ে দিয়েছেন এবং তোমাদেরকে বের করে দিয়েছেন।’ আর এরই মধ্যে রয়েছে আলী (আ.)-এর ব্যাপারে তাঁর এ কথার ব্যাখ্যা অর্থাৎ ‘আমার নিকট তোমার স্থান মূসার নিকট হারুনের স্থানের ন্যায়।’
প-িতবৃন্দ বললেন : এটা কোরআনের কোথায় আছে? ইমাম রেযা (আ.) বললেন : আমার কাছে এ সম্পর্কে কোরআন (এর আয়াত) রয়েছে এবং তোমাদের জন্য পাঠ করব। তারা বললেন : আনুন। তিনি বললেন : মহামহিম আল্লাহ্র এ বাণী ‘এবং আমি ওহী করলাম মূসা ও তাঁর ভাইয়ের প্রতি যে তোমরা দু’জন তোমাদের স¤প্রদায়ের জন্য মিশরে বাড়িঘর প্রস্তুত কর এবং আপন আপন ঘরসমূহকে কিবলা বানাও।’ (সূরা ইউনুস : ৮৭) এ আয়াতেই নিহিত রয়েছে মূসার নিকট হারুনের মর্যাদা ও স্থানের ব্যাখ্যা। আর এরই মধ্যে নিহিত রয়েছে রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর নিকট আলী (আ.)-এর মর্যাদারও নির্দেশনা। আর এর সাথে প্রকাশ্য প্রমাণ রয়েছে রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর কথায় যখন তিনি বলেন : ‘নিশ্চয় এটা মসজিদ, সেখানে কোনো জানাবাতগ্রস্ত ও হায়েযগ্রস্ত ব্যক্তির অবস্থান বৈধ নয়, কেবল মুহাম্মাদ ও আলে মুহাম্মাদের জন্য ছাড়া।’ তখন প-িতবৃন্দ উচ্চকিত হয়ে বললেন : এই ব্যাখ্যা এবং এই বয়ান আপনাদের রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর আহলে বাইতের নিকট ছাড়া পাওয়া যায় না।
ইমাম রেযা (আ.) বললেন : কে আছে এর অস্বীকারকারী? যখন রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বলেন : ‘আমি হলাম জ্ঞানের নগরী আর আলী তার দরজা। যে ব্যক্তি জ্ঞানের নগরীতে প্রবেশ করতে চায় তাকে তার দরজা দিয়ে ঢুকতে হবে।’ আমরা এই যা কিছু ফযল ও মর্যাদা সম্পর্কে ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেছি এবং অগ্রগামিতা, ইসতিফা ও পবিত্রতা সম্পর্কে যা কিছু বলেছি, তা এমন জিনিস যে শত্রু ব্যতীত কেউ তা অস্বীকার করবে না। আর সেজন্য সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্রই। এ হলো চতুর্থ।
পঞ্চমটি হলো : মহামহিম আল্লাহ্র এ বাণী ‘আর নিকটাত্মীয়কে তার অধিকার প্রদান করুন।’ (সূরা বনি ইসরাঈল : ২৬) এটা এমন এক বৈশিষ্ট্য মহীয়ান গরীয়ান আল্লাহ্ যা দ্বারা তাঁদেরকে নির্দিষ্ট করেছেন এবং সকল উম্মতের ওপরে তাঁদেরকে মনোনীত করেছেন। যখন এই আয়াত রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর প্রতি অবতীর্ণ হয় তখন তিনি বললেন : ‘ফাতিমাকে আমার কাছে ডেকে আন।’ তাঁকে ডেকে আনা হলো। তখন নবী বললেন : ‘হে ফাতিমা।’ ফাতিমা বললেন : ‘জি, হে রাসূলুল্লাহ্্।’ তখন বললেন : ‘ফাদাক হলো এমন সম্পত্তি যা অশ্বারোহী ও উষ্ট্রারোহী বাহিনীর জোরে হস্তগত হয়নি এবং স্বয়ং আমারই জন্য নির্দিষ্ট মুসলমানদের বিপরীতে। আর আমি তা তোমাকে দিলাম। কেননা, আল্লাহ্ আমাকে তার নির্দেশ দিয়েছেন। তাকে তোমার জন্য, তোমার সন্তানদের জন্য গ্রহণ কর।’ এ হলো পঞ্চম।
ষষ্ঠটি হলো : মহান আল্লাহ্র বাণী ‘বলুন : আমি তোমাদের থেকে পারিশ্রমিক চাই না, শুধু নিকটাত্মীয়ের ভালোবাসা ব্যতীত।’ (সূরা শূরা : ২৩)
এটা হলো অন্যান্য নবীর ওপর মহানবী (সা.)-এর একটি শ্রেষ্ঠত্ব এবং তাঁর আলের জন্য একটি বৈশিষ্ট্য, অন্যদের বিপরীতে। আর এটা একারণে যে, আল্লাহ্ হযরত নূহ (আ.)-এর স্মৃতিকথা বর্ণনা প্রসঙ্গে নবীদের থেকে তুলে ধরেছেন : ‘হে আমার স¤প্রদায়! এর বিনিময়ে আমি তোমাদের নিকট ধনসম্পদ যাঞ্ছা করি না। আমার পারিশ্রমিক তো আল্লাহ্রই নিকট এবং মুমিনদিগকে তাড়িয়ে দেওয়া আমার কাজ নয়। তারা নিশ্চিতভাবে তাদের প্রতিপালকের সাক্ষাৎ লাভ করবে। কিন্তু আমি তো দেখছি তোমরা এক অজ্ঞ স¤প্রদায়।’ (সূরা হূদ : ২৯) আর হূদ (আ.) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেন : ‘হে আমার স¤প্রদায়! আমি এর বিনিময়ে তোমাদের নিকট পারিশ্রমিক যাঞ্ছা করি না। আমার পারিশ্রমিক আছে তাঁরই নিকট যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন। তোমরা কি তবুও অনুধাবন করবে না?’ (সূরা হূদ : ৫১)
আর তাঁর নবীকে বলেছেন : ‘বলুন, আমি তোমাদের থেকে কোনো পারিশ্রমিক চাই না, শুধু নিকটাত্মীয়ের ভালোবাসা ছাড়া।’ আল্লাহ্ তাঁদের ভালোবাসাকে ওয়াজিব করেছেন। একারণে যে, তিনি জানতেন, তাঁরা কখনই দীন থেকে প্রত্যাবর্তন করবেন না এবং কখনই পথভ্রষ্টতায় লিপ্ত হবেন না। আরেকটি কথা হলো এই যে, যদি কেউ কারো অনুরাগী হয় ও তাকে ভালোবাসে, কিন্তু তার পরিবারের কেউ তাকে শত্রু মনে করে তাহলে তার অন্তর তাকে ভালোবাসার ক্ষেত্রে আর নিখাদ থাকে না। তাই আল্লাহ্ চেয়েছেন রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর অন্তরে মুমিনদের সম্পর্কে যেন কোনো উৎকণ্ঠা না থাকে।
আর এজন্যই নিকটাত্মীয়ের ভালোবাসাকে তাদের ওপর ফরয করেছেন যাতে যে ব্যক্তি তদনুযায়ী আমল করবে এবং রাসূলুল্লাহ্ (সা.) ও তাঁর আহলে বাইতকে ভালোবাসবে রাসূলুল্লাহ্ (সা.) তাদেরকে ঘৃণা করতে পারবেন না। আর যে তা বর্জন করবে এবং তা গ্রহণ করবে না এবং তাঁর নবীর আহলে বাইতের প্রতি ঘৃণা পোষণ করবে, তাহলে রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর জন্য ন্যায্য হবে তাকে ঘৃণা করা। কারণ, সে আল্লাহ্র ওয়াজিবকৃত একটি ওয়াজিব বর্জন করেছে। আর কোন্ অনুগ্রহ ও মর্যাদা আছে যা এর চেয়ে অগ্রগণ্য হতে পারে? তাই যখন আল্লাহ্ এ আয়াতকে তাঁর নবী (সা.)-এর ওপর অবতীর্ণ করলেন : ‘বলুন এর বিনিময়ে আমি তোমাদের কাছে কিছুই চাই না, কেবল নিকটাত্মীয়ের ভালোবাসা ব্যতীত’, তখন রাসূলুল্লাহ্্ (সা.) স্বীয় সাহাবীদের মাঝে দাঁড়িয়ে গেলেন, অতঃপর আল্লাহ্র প্রশংসা ও স্তুতি জ্ঞাপন করলেন এবং বললেন : ‘হে লোকসকল! নিশ্চয় আল্লাহ্ তোমাদের ওপর একটি কাজ ফরয করেছেন। তোমরা কি তা পালন করবে?’ কেউ তাঁর উত্তর দিলেন না। অতঃপর দ্বিতীয় দিনে তিনি তাঁদের মাঝে দাঁড়ালেন এবং আগের দিনের মতো বললেন। কিন্তু কেউ তাঁকে উত্তর দিলেন না। তিনি তৃতীয় দিনে তাঁদের মাঝে দাঁড়ালেন এবং বললেন : ‘হে লোকসকল! নিশ্চয় আল্লাহ্ তোমাদের ওপর একটি কাজ ফরয করেছেন। তোমরা কি তা পালন করবে?’ তখনও কেউ তাঁর উত্তর দিলেন না। অতঃপর তিনি বললেন : ‘এ ফরয কাজটি স্বর্ণ বা রৌপ্য কিংবা খাদ্য বা পানীয় সম্পর্কিত নয়।’ তারা বললেন : ‘তাহলে সেটা আনুন।’ তখন তিনি এ আয়াতটি তাদের সামনে পাঠ করলেন। তারা বললেন : ‘যদি এটাই হয়ে থাকে, তাহলে হ্যাঁ (পালন করব)।’ অথচ তাঁদের অধিকাংশই তাঁদের কথা রাখেননি।
তারপর ইমাম রেযা (আ.) বলেন : আমার পিতা আমার পিতামহ থেকে এবং তিনি স্বীয় পিতৃপুরুষদের মাধ্যমে হুসাইন ইবনে আলী (আ.) থেকে আমার জন্য বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেন : ‘মুহাজির ও আনসাররা রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর নিকট এসে বললেন : ‘হে আল্লাহ্র রাসূল! নিশ্চয় আপনার নিজের জন্য এবং যেসব অতিথি আপনার কাছে আসে তাদের জন্য খরচ প্রয়োজন রয়েছে। আমরা আমাদের সমুদয় সম্পদ ও জীবন আপনার হাতে তুলে দিলাম। এ সম্পর্কে আপনি যে নির্দেশই দিবেন তা সঠিক সিদ্ধান্ত ও এজন্য পুরস্কারপ্রাপ্ত হবেন। আপনি যা চান দান করুন আর যা চান রেখে দিন কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছাড়াই।’ তখন মহামহিম আল্লাহ্ রুহুল আমীনকে প্রেরণ করলেন এবং বললেন : ‘হে মুহাম্মাদ! ‘বলুন, আমি এর বিনিময়ে কোনো পারিশ্রমিক চাই না, শুধু নিকটাত্মীয়ের ভালোবাসা ব্যতীত।’ আমার পরে আমার নিকটাত্মীয়দের কষ্ট দিও না।’ তারপর সবাই বের হয়ে গেল। তখন তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ পরস্পরে বলতে লাগলেন : ‘রাসূলুল্লাহ্ (সা.) আমাদের প্রস্তাবকে গ্রাহ্য করলেন না। আমাদেরকে তাঁর নিকটাত্মীয়ের ভালোবাসতে প্রবৃত্ত না করা ছাড়া। আর এই যে আয়াত তিনি পড়লেন তাঁর মজলিসে, এটা তাঁর নিজেরই উদ্ভাবিত।’ তাঁদের এ বক্তব্য অনেক বড় কথা ছিল। তাই আল্লাহ্ এ আয়াতটি অবতীর্ণ করলেন : ‘তবে কি তারা বলে যে, সে (রাসূল) এটা উদ্ভাবন (রচনা) করেছে। বলুন, যদি আমি এটা উদ্ভাবন করে থাকি তবে তোমরা তো আল্লাহ্র শাস্তি থেকে আমাকে কিছুতেই রক্ষা করতে পারবে না। তোমরা যে বিষয়ে আলোচনায় লিপ্ত আছ, সে সম্বন্ধে আল্লাহ্ সর্বাধিক অবহিত। আমার ও তোমাদের মধ্যে সাক্ষী হিসাবে তিনিই যথেষ্ট এবং তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সূরা আহকাফ : ৮)
তখন নবী (সা.) তাঁদের সন্ধানে প্রেরণ করলেন এবং বললেন : ‘নতুন কিছু কি (তোমরা বলেছ)?’ তাঁরা বললেন : ‘জ্বি, আল্লাহ্র কসম, হে রাসূলুল্লাহ! আমাদের কেউ কেউ অনেক বড় কথা বলেছে যা আমরা অপছন্দ করেছি।’ তখন রাসূলুল্লাহ্ (সা.) তাঁদের জন্য এ আয়াতটি পাঠ করলেন। ফলে তাঁরা কেঁদে ফেললেন এবং অঝরে কাঁদলেন। তখন আল্লাহ্ এ আয়াত অবতীর্ণ করলেন : ‘তিনিই তাঁর বান্দাদের তওবা কবুল করেন ও পাপ মোচন করেন এবং তোমরা যা কর তিনি তা জানেন।’ এ হলো ষষ্ঠ।
আর সপ্তমটি হলো : মহান আল্লাহ্ বলেন : ‘নিশ্চয় আল্লাহ্ ও তাঁর ফেরেশতারা নবীর ওপরে দরূদ প্রেরণ করেন। হে মুমিনগণ! তোমরাও নবীর জন্য দরূদ প্রেরণ কর এবং তাঁকে যথাযথভাবে সালাম জানাও।’ তাঁদের শত্রুরাও জানে যে, যখন এ আয়াত অবতীর্ণ হলো তখন বলা হলো : ‘হে রাসূলুল্লাহ্! আপনার ওপর দরূদ প্রেরণ আমরা বুঝলাম। কিন্তু আপনার ওপর সালাওয়াত কিভাবে?’ তিনি বললেন : ‘বলবে : ‘আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিউ ওয়া আলি মুহাম্মাদ কামা সল্লাইতা আলা ইবরাহীমা ওয়া আলি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।’
ইমাম রেযা (আ.) বললেন : হে লোকসকল! এ ব্যাপারে তোমাদের মধ্যে কি কোনো মতপার্থক্য রয়েছে? তারা বলল : না। মামুনও বললেন : এ ব্যাপারে কোনো মতপার্থক্য নেই। এটা সর্বসম্মত। আপনাদের কি ‘আল’ সম্পর্কে কোরআনে এর থেকে স্পষ্টতর আর কিছু রয়েছে? ইমাম রেযা (আ.) বললেন : আপনারা আমাকে বলুন দেখি : ‘ইয়াসীন, শপথ জ্ঞানগর্ভ কোরআনের, আপনি অবশ্যই রাসূলদের অন্তর্ভুক্ত, আপনি সরল পথে প্রতিষ্ঠিত।’ (সূরা ইয়াসীন : ১-৪) এখানে ‘ইয়াসীন’ বলতে কী বুঝানো হয়েছে? সকল প-িত বললেন : ইয়াসীন হলো মুহাম্মাদ (সা.), এতে কোনো সন্দেহ নেই। ইমাম রেযা (আ.) বললেন : আল্লাহ্ এর মাধ্যমে মুহাম্মাদ ও আলে মুহাম্মাদকে এক শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন, আপনাদের মধ্যে কেউ যতই বুদ্ধি খরচ করুন না কেন এর মর্ম উপলব্ধি করতে পারবেন না। এটা এজন্য যে, আল্লাহ্ কারো ওপর সালাম প্রেরণ করেননি, নবীগণ ব্যতীত। মহামহিম আল্লাহ্ ইরশাদ করেছেন : ‘সমগ্র বিশ্বের মধ্যে নূহের ওপর সালাম (শান্তি) বর্ষিত হোক।’ (সূরা সাফফাত : ৭৯) আরো বলেন : ‘সালাম (শান্তি) বর্ষিত হোক মূসা ও হারুনের ওপর।’ (সূরা সাফফাত : ১২০) আল্লাহ্ কিন্তু বলেননি : ‘সালাম বর্ষিত হোক আলে নূহের ওপর।’ কিংবা বলেননি : ‘সালাম বর্ষিত হোক আলে ইবরাহীমের ওপর’, কিংবা বলেন নি : ‘সালাম বর্ষিত হোক মূসা ও হারুনের আলের ওপর’। তবে আল্লাহ্ বলেছেন : ‘সালাম বর্ষিত হোক আলে ইয়াসীনের ওপর’। (সূরা সাফফাত : ১৩০) অর্থাৎ আলে মুহাম্মদ। মামুন বললেন : আমি ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছি যে, এই ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ নবুওয়াতের খনির মধ্যেই নিহিত। এ হলো সপ্তম।
অষ্টমটি হলো আল্লাহ্ বলেন : ‘আর জেনে রাখ, তোমরা যা গনীমত অর্জন করবে তার এক-পঞ্চমাংশ আল্লাহ্র, রাসূলের এবং নিকটাত্মীয়ের।’ (সূরা আনফাল : ৪১) এখানে নিকটাত্মীয়ের অংশকে রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর অংশের সাথে উল্লেখ করেছেন। এটাই হলো আল ও উম্মতের মাঝে পার্থক্য। কারণ, আল্লাহ্ তাঁদেরকে এক স্থানে নির্ধারণ করেছেন আর সকল উম্মতকে নির্ধারণ করেছেন তা থেকে নি¤œতর স্থানে। আর আলের জন্য সে জিনিসই পছন্দ করেছেন যা নিজের জন্য পছন্দ করেছেন এবং তাঁদেরকে নির্বাচিত করেছেন। অতঃপর নিজেকে দিয়ে শুরু করেছেন, তারপর স্বীয় রাসূলকে দ্বিতীয় স্থানে এনেছেন, তারপর নিকটাত্মীয়কে যা কিছু ফাই (শত্রুর থেকে বিনা যুদ্ধে লব্ধ সম্পদ), গনীমত (যুদ্ধলব্ধ সম্পদ) ইত্যাদি থেকে আল্লাহ্ নিজের জন্য পছন্দ করেছেন, তা তাঁদের জন্যও পছন্দ করেছেন ও বলেছেন (আর তাঁর কথা সত্য) : ‘জেনে রাখ, তোমরা যা গনীমত অর্জন করবে তার এক-পঞ্চমাংশ আল্লাহ্র, রাসূলের এবং নিকটাত্মীয়ের।’ এটা হলো তাঁদের জন্য জোরালো গুরুত্বারোপ ও স্থির নির্দেশ, কিয়ামতের দিন পর্যন্ত, আল্লাহ্র সবাক কিতাবের মধ্যেÑ যে কিতাবের মধ্যে বাতিলের প্রবেশের কোনো সুযোগ নেই, না তার সামনে থেকে, না তার পেছন থেকে এবং যা অবতীর্ণ হয়েছে প্রজ্ঞাবান প্রশংসিত আল্লাহ্র পক্ষ থেকে। তবে, এই আয়াতের বাকি অংশে যে বলেছেন, ইয়াতীম ও মিসকীনদেরও অংশ রয়েছে (এটা সাময়িক), কারণ, যখন ইয়াতিম সাবালক হয় তখন গনীমতের ব্যয় থেকে বাইরে চলে যায় এবং কোনো প্রাপ্য থাকে না। তদ্রƒপ মিসকীনও যখন সামর্থ্যবান হয়ে যায়, তখন আর গনীমতের কোনো প্রাপ্য পায় না, তা থেকে গ্রহণ করা বৈধ থাকে না। আর নিকটাত্মীয়ের অংশ কিয়ামত পর্যন্ত বলবৎ থাকে, সামর্থ্যবান থাকুক আর দরিদ্র থাকুক। কারণ, নিকটাত্মীয়রা ব্যতীত কেউ নেই যে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের অংশ গ্রহণ করতে পারে। আল্লাহ্ নিজের জন্য তা থেকে একটি ভাগ বরাদ্দ রেখেছেন এবং তাঁর রাসূলের জন্য এক ভাগ। আর যা কিছু নিজের জন্য ও তাঁর রাসূলের জন্য পছন্দ করেছেন, তাদের জন্যও তা পছন্দ করেছেন। তদ্রƒপ ফাই (শত্রুর থেকে বিনা যুদ্ধে লব্ধ সম্পদ) থেকে যা কিছু নিজের জন্য ও তাঁর রাসূলের জন্য পছন্দ করেছেন, নিকটাত্মীয়ের জন্যও তা পছন্দ করেছেন। (সূরা হাশর : ৭) যেমনভাবে গনীমতের বেলায় তাদের জন্য অনুমোদন করেছেন। নিজের দ্বারা শুরু করেছেন, তারপর রাসূলুল্লাহ্ (সা.) এবং তারপর নিকটাত্মীয়। আর তাঁদের ভাগকে নিজের ভাগের ও স্বীয় রাসূলের ভাগের সাথেই যুক্ত করেছেন। মহান আল্লাহ্র আনুগত্যের বেলায়ও ঠিক এরূপ।
ইরশাদ হচ্ছে : ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহ্র, আনুগত্য কর রাসূলের এবং তোমাদের মধ্য থেকে উলিল আমরের।’ (সূরা নিসা : ৫৯) এখানেও নিজেকে দিয়ে শুরু করেছেন। অতঃপর তাঁর রাসূলকে এবং তারপর তাঁর আহলে বাইতকে। বেলায়াতের আয়াতের ক্ষেত্রেও একই কথা। ইরশাদ হচ্ছে : ‘তোমাদের অভিভাবক তো আল্লাহ্, তাঁর রাসূল এবং মুমিনগণ।’ (সূরা মায়িদা : ৫৫) এখানে তাঁদের বেলায়াতকে রাসূলের বেলায়াতের সহযোগে তাঁর নিজের বেলায়াতের সাথে যুক্ত করেছেন। যেমনভাবে নিজের অংশকে রাসূলের অংশের সহযোগে তাঁদের অংশসমূহের সাথে যুক্ত করেছেন, গনীমতের ক্ষেত্রে ও ফাই-এর ক্ষেত্রে। কাজেই বরকতময় মহান আল্লাহ্, তাঁর নেয়ামত এ আহলে বাইতের ওপর কতই না মহান! আর যখন সাদাকার প্রসঙ্গ আসল তখন তিনিÑযাঁর স্মরণ মহীয়ানÑনিজেকে যেমন তা থেকে মুক্ত ঘোষণা করলেন, তেমনি তাঁর রাসূল এবং তাঁর আহলে বাইতকেও তা থেকে মুক্ত ঘোষণা করলেন। ইরশাদ হচ্ছে : সাদাকা তো কেবল নিঃস্ব, অভাবগ্রস্ত ও তৎসংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের জন্য, যাদের চিত্ত আকর্ষণ করা হয় তাদের জন্য, দাসমুক্তির জন্য, ঋণ ভারাক্রান্তদের, আল্লাহ্র পথে ও মুসাফিরদের জন্য। এটা আল্লাহ্র বিধান। এখানে কি কোথাও পাবেন যে, তাঁর নিজের জন্য কোনো ভাগ বরাদ্দ রেখেছেন কিংবা তাঁর রাসূলের কিংবা নিকটাত্মীয়ের জন্য? কারণ, যেহেতু নিকটাত্মীয়কে সাদাকা থেকে পবিত্র জেনেছেন, নিজেকেও পবিত্র জেনেছেন, তাঁর রাসূলকেও পবিত্র জেনেছেন এবং আহলে বাইতকেও পবিত্র জেনেছেন? না, বরং সাদাকা তাঁদের জন্য হারাম করেছেন। কারণ, সাদাকা মুহাম্মাদ (সা.) ও তাঁর আহলে বাইতের জন্য হারাম। (কেননা,) তা জনমানুষের উচ্ছিষ্ট এবং তাঁদের জন্য হালাল নয়। কারণ, তাঁরা সকল নোংরা ও ময়লা থেকে পবিত্র হয়েছেন, (আল্লাহ্) যেহেতু তাঁদেরকে পবিত্র করেছেন এবং নির্বাচিত করেছেন, সুতরাং তাঁদের জন্য সেটাই পছন্দ করেছেন যা নিজের জন্য পছন্দ করেছেন। আর তাঁদের জন্য খারাপ মনে করেছেন যা কিছু নিজের জন্য খারাপ মনে করেছেন।
আর নবমটি হলো আমরা হলাম সেই আহলে যিক্র যা আল্লাহ্ তাঁর মজবুত কিতাবে উল্লেখ করেছেন। ইরশাদ হচ্ছে : ‘তোমরা জিজ্ঞাসা কর আহলে যিক্রকে, যদি না জান।’ তখন প-িতবৃন্দ বলে উঠলেন : এখানে তো ইঙ্গিত করা হয়েছে ইহুদি ও নাসারাদেরকে। ইমাম রেযা (আ.) বললেন : এ রকম নির্দেশ কি শোভন যখন তারা আমাদেরকে ডাকে তাদেরই দীনের দিকে এবং দাবি করে যে, তা ইসলামের চেয়ে শ্রেষ্ঠ? তখন মামুন বললেন : হে আবাল হাসান! আপনার কাছে কি কোনো ব্যাখ্যা আছে যা প-িতবৃন্দ যা বলেছেন তার বিপরীত হবে? ইমাম বললেন : হ্যাঁ, এখানে যিক্র বলতে রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-কে উদ্দেশ্য করা হয়েছে আর আমরা তাঁর আহল। আল্লাহ্ এ অর্থটিকে স্বীয় কোরআনে বর্ণনা করেছেন সূরা তালাকে তাঁর বাণীর মধ্যে। ইরশাদ হচ্ছে : ‘অতএব, তোমরা আল্লাহ্কে ভয় কর, হে বোধসম্পন্ন ব্যক্তিরা! যারা ঈমান এনেছ। নিশ্চয় আল্লাহ্ তোমাদের প্রতি অবতীর্ণ করেছেন যিক্রকে। এক রাসূল যে তোমাদের নিকট আল্লাহ্র সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ পাঠ করে।’ (সূরা তালাক : ১০-১১) সুতরাং ‘যিক্র’ হলেন রাসূলুল্লাহ্ (সা.) আর আমরা তাঁর আহল। এ হলো নবম।
দশমটি হলো আয়াতে তাহরীম-এ মহান আল্লাহর বাণী : ‘তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে তোমাদের মাতা, কন্যা ও ভগ্নীদেরকে (আয়াতের শেষ পর্যন্ত)।’ (সূরা নিসা : ২৩) আমাকে বলুন দেখি, আমার কন্যা, আমার পুত্রের কন্যা কিংবা যে কেউ আমার বংশ থেকে আসবে, যদি রাসূলুল্লাহ্ (সা.) জীবিত থাকেন তাহলে কি তাদের কাউকে স্ত্রী হিসাবে গ্রহণ করতে পারবেন? তাঁরা বললেন : না। ইমাম বললেন : বলুন তো, আপনাদের কন্যাদেরকে স্ত্রী হিসাবে গ্রহণ করতে পারবেন কি না? তাঁরা বললেন : জ্বি। ইমাম বললেন : এটা নিজেই একথা স্পষ্ট করে দেয় যে, আমরাই তাঁর আল। আর আপনারা তাঁর আল নন। যদি তাঁর আল হতেন তাহলে আপনাদের কন্যারাও তাঁর জন্য হারাম থাকত। যেমনভাবে আমার কন্যারা তাঁর জন্য হারাম। কেননা, আমরা হলাম তাঁর আল আর আপনারা তাঁর উম্মত। আর এটা হলো আল ও উম্মতের মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্য। কারণ, আল হলো তাঁর থেকে। আর উম্মতÑ যারা তাঁর বংশ থেকে নয় তারা তাঁর থেকে নয়। এ হলো দশম।
এগারতম হলো আল্লাহ্ সূরা মুমিনের মধ্যে এক ব্যক্তির উল্লেখ করে বলেছেন : ‘ফিরআউনের পরিবারভুক্ত একজন মুমিন ব্যক্তি যে স্বীয় ঈমানকে গোপন রাখত সে বলল : তোমরা কি এমন এক ব্যক্তিকে হত্যা করছ, যে বলছে, ‘আমার প্রতিপালক হলেন মহান আল্লাহ্’, অথচ সে তোমাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে সুস্পষ্ট প্রমাণসমূহ তোমাদের কাছে এনেছে?’ (সূরা মুমিন : ২৮০) সে ছিল ফিরআউনের খালাতো ভাই। তাকে ফিরআউনের পরিবার ও বংশভুক্ত জেনেছেন ও তার স্বধর্মী বলেন নি। তদ্রƒপ আমরা হলাম রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর বংশভুক্ত। আর অন্য মুসলমানদের সাথে স্বধর্মী হিসাবে একীভূত। এটাও হলো উম্মত ও আলের মধ্যে আরেকটি পার্থক্য। এ হলো এগারতম।
বারতম হলো মহান আল্লাহ্র এ বাণীটি : ‘এবং তোমার পরিবারবর্গকে সালাতের আদেশ দাও ও তার ওপর অবিচল থাক।’ (সূরা ত্বাহা : ১৩২) এ দ্বারা আমাদেরকে বিশেষ এক মর্যাদায় আসীন করেছেন যখন আমাদেরকে তাঁর আদেশ দ্বারা আদিষ্ট করেছেনÑ উম্মতের বিপরীতে স্বতন্ত্রভাবে। এজন্য রাসূলুল্লাহ্ (সা.) এ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর থেকে নয় মাস যাবৎ প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের সময় হলে আলী ও ফাতেমা (আ.)-এর ঘরের দরজার কাছে আসতেন। আর বলতেন : ‘নামাযকে ধরে থাক। আল্লাহ্ তোমাদের রহমত দান করুন।’ আল্লাহ্ কোনো নবীর বংশধরকে এভাবে সম্মানিত করেননি যা তিনি আমাদের করেছেন উম্মতের মাঝে আমাদেরকে স্বতন্ত্র করার মাধ্যমে। আল ও উম্মতের মধ্যে এটাও একটি পার্থক্য। ওয়াল হামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন। ওয়া সাল্লাল্লাহু আলা মুহাম্মাদিন নাবিয়্যিহ্।
ইমাম রেযা (আ.) কর্তৃক ইমামত, ইমাম ও তাঁর মর্যাদা সম্পর্কে বর্ণনা
আবদুল আযীয ইবনে মুসলিম বলেন : আমরা মারভে ইমাম রেযা (আ.)-এর সাথে ছিলাম। একদিন সেখানকার জামে মসজিদে আমরা সমবেত হই এবং লোকেরা ইমামত সম্পর্কে আলোচনা করছিল এবং এ ব্যাপারে যে অনেক মতপার্থক্য রয়েছে সেগুলো স্মরণ করছিল। আমি আমার মাওলা ও মনিব ইমাম রেযা (আ.)-এর কাছে উপস্থিত হলাম এবং লোকদের আলোচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে তাঁকে অবগত করি। তিনি মৃদু হাসলেন। অতঃপর বললেন : হে আবদুল আযীয। লোকেরা মূর্খ এবং স্বীয় দীনে তারা ধোঁকা খেয়েছে। নিশ্চয় আল্লাহ্্ তাঁর নবীকে মৃত্যু দান করেননি যতক্ষণ না স্বীয় দীনকে পূর্ণ করেছেন এবং তাঁর প্রতি কোরআন অবতীর্ণ করেছেন যার মধ্যে সবকিছুরই বর্ণনা রয়েছে। হালাল, হারাম, দ-বিধি, বিধি-বিধানসহ মানুষের যা কিছু প্রয়োজন রয়েছে সামগ্রিকভাবে তিনি তার বিবরণ তাতে দিয়েছেন এবং বলেছেন : ‘কোনো কিছুই আমি বাদ দেইনি এ কিতাবে।’ (সূরা আনআম : ৩৮) আর বিদায় হজে যা তাঁর জীবনের শেষ ভাগে ছিল, তাঁর প্রতি অবতীর্ণ করেনÑ ‘আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পূর্ণ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহকে সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দীন মনোনীত করলাম।’ (সূরা মায়েদা : ৩) ইমামতের বিষয়টি হলো দীন পূর্ণ হওয়ার শর্ত। আর নবী (সা.) ইন্তেকাল করেননি যতক্ষণ না পর্যন্ত তাঁর উম্মতের জন্য দীনের সমুদয় শিক্ষা বর্ণনা করেছেন এবং তাদের পন্থাসমূহ বাতলে দিয়েছেন ও তাঁদেরকে সোজা পথে চালিত করেছেন। আর আলী (আ.)-কে তাদের ইমাম ও নেতা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আর উম্মতের প্রয়োজনীয় এমন কিছুই বাদ রাখেননিÑ তার ব্যাখ্যা প্রদান করা ব্যতীত। যে ব্যক্তি ধারণা করবে যে, আল্লাহ্্ তাঁর দীনকে পূর্ণ করেননি, সে আল্লাহ্্র কিতাবকে প্রত্যাখ্যান করল। আর যে আল্লাহ্্র কিতাবকে প্রত্যাখ্যান করে সে কাফের হয়ে যায়। তারা কি ইমামতের গুরুত্ব ও তার মর্যাদা অনুধাবন করতে সক্ষম হয়েছে যে, এ ব্যাপারে তাদের নির্বাচন বৈধ হবে?
ইমামত এমন একটি মর্যাদা যা মহান আল্লাহ্্ ইবরাহীম খলীল (আ.)-এর জন্য বিশেষায়িত করেছেন নবুওয়াত ও বন্ধুত্বের (খলীল হওয়ার) মর্যাদা অর্জন করার পরে, একে তাঁর তৃতীয় অর্জন হিসাবে দেখেছেন এবং তাঁকে তা দ্বারা মর্যাদাবান করেছেন। আর তাঁর নামকে করেছেন সমুন্নত। মহামহিম আল্লাহ্্ বলেন : ‘এবং (স্মরণ কর) যখন ইবরাহীমকে তাঁর প্রতিপালক কয়েকটি কথা দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন এবং সেগুলো সে পূর্ণ করেছিল, তখন তিনি (আল্লাহ্্) বললেন : আমি তোমাকে মানব জাতির নেতা করলাম।’ (সূরা বাকারা : ১২৪) এতে আনন্দিত হয়ে খলীলুল্লাহ বললেন : ‘আমার বংশধরগণের মধ্য হতেও (নেতা মনোনীত করুন)!’ তিনি (আল্লাহ্্) বললেন : ‘আমার প্রতিশ্রুতি যালিমদের জন্য প্রযোজ্য নয়।’ সুতরাং এ আয়াত কিয়ামত পর্যন্ত যে কোনো যালিমের জন্য ইমামতকে নাকচ করে দিয়েছে এবং একে শুধু বিশেষ নির্বাচিতদের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। অতঃপর আল্লাহ্্ একে সম্মানিত করেছেন এবং শুধু নির্বাচিত ও পবিত্রদের বংশধরের মধ্যে তা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আর বলেছেন : ‘এবং আমি ইবরাহীমকে দান করেছিলাম ইসহাক এবং পৌত্ররূপে ইয়াকুব আর তাদের প্রত্যেককেই করেছিলাম সৎকর্মপরায়ণ এবং তাদেরকে করেছিলাম নেতা; তারা আমার নির্দেশ অনুসারে মানুষকে পথপ্রদর্শন করত, তাদেরকে ওহী প্রেরণ করেছিলাম সৎকর্ম করতে, সালাত কায়েম করতে এবং যাকাত প্রদান করতে, তারা আমারই ইবাদত করত।’ (সূরা আম্বিয়া : ৭২-৭৩) অতঃপর এই বংশধারা একের পর এক শতাব্দী থেকে শতাব্দী ধরে উত্তরাধিকার লাভ করেছে, এভাবে তা পৌঁছায় নবী (সা.) পর্যন্ত। তখন আল্লাহ্্ বলেন : ‘নিশ্চয় মানুষের মধ্যে তারাই ইবরাহীমের ঘনিষ্ঠতম যারা তার অনুসরণ করেছে এবং এই নবী ও যারা ঈমান এনেছে।’ (সূরা আলে ইমরান : ৬৮) ইমামত শুধু তাঁদের জন্য নির্দিষ্ট ছিল এবং নবী (সা.) তা আলী (আ.)-এর ওপর অর্পণ করেন, অতঃপর এ দায়িত্ব তাঁর বংশধরের নির্বাচিত সেই ব্যক্তিদের হাতে অর্পিত হলো যাঁদেরকে আল্লাহ্্ জ্ঞান ও ঈমান দান করেছেন। এটা তাঁর বাণীতেই এসেছে। ইরশাদ হচ্ছে : ‘কিন্তু যাদেরকে জ্ঞান ও ঈমান দেওয়া হয়েছে তারা বলবে : তোমরা তো আল্লাহ্্র বিধানে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত অবস্থান করেছ। এটা তো পুনরুত্থান দিবস, কিন্তু তোমরা জানতে না।’ (সূরা রূম : ৫৬) ঐ একই প্রথায় আল্লাহ্্ তাঁর (রাসূলের) সন্তানদের মধ্যেই ইমামত নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন কিয়ামত দিবস পর্যন্ত। কারণ, মুহাম্মাদ (সা.)-এর পরে কোনো নবী নেই। কোথা থেকে এসব মূর্খ তাদের নিজেদের রায়ের মাধ্যমে ইমামতকে নির্বাচন করবে? নিশ্চয় ইমামত হল নবীদের স্থান আর ওয়াসিগণের উত্তরাধিকার। নিশ্চয় ইমামত হলো আল্লাহ্্্র খেলাফত ও তাঁর রাসূল (সা.)-এর খেলাফত এবং আমীরুল মুমিনীন (আ.)-এর মর্যাদা এবং হাসান ও হুসাইন (আ.)-এর খেলাফত। নিশ্চয় ইমামত হলো দীনের লাগাম, মুসলমানদের শৃঙ্খলা, দুনিয়ার কল্যাণ আর মুমিনদের সম্মানস্বরূপ। ইমাম হলেন ক্রমবর্ধমান ইসলামের ভিত্তি আর তার বিকশিত প্রশাখা। ইমামের দ্বারাই নামায, যাকাত, রোযা, হজ ও জিহাদ সঠিক ও প্রতিষ্ঠিত হয়। আর খাজনা ও সাদাকাসমূহ প্রাচুর্য লাভ করে আর দ-সমূহ ও বিধি-বিধান বাস্তবায়ন হয়। আর সীমান্ত ও প্রদেশসমূহ সুরক্ষিত থাকে।
ইমামই আল্লাহ্্্র হালালকে হালাল গণ্য করেন আর হারামকে হারাম গণ্য করেন। দ-কে কার্যকর করেন এবং আল্লাহ্্র দীনের প্রতিরক্ষা করেন আর আল্লাহ্্র পথে আহ্বান করেন প্রজ্ঞা, উত্তম উপদেশ এবং যথার্থ প্রমাণ সহযোগে।
ইমাম হলেন কিরণময় সূর্যÑ যার আলো পৃথিবীকে উদ্ভাসিত করে এবং দিগন্তে তার অবস্থা যেখানে দৃষ্টিসমূহ ও হাতসমূহ পৌঁছে না।
ইমাম হলেন আলোময় চাঁদ, শিখাময় প্রদীপ, অন্ধকারাচ্ছন্ন রাতে পথনির্দেশক নক্ষত্র, হেদায়াতের পথপ্রদর্শনকারী আর ধ্বংস থেকে মুক্তিদাতা।
ইমাম হলেন টিলা শৃঙ্গের অগ্নিশিখা, প্রত্যেক শীতার্তের উষ্ণতা প্রদানকারী, প্রত্যেক বিপর্যয় থেকে মুক্তির দিশা, যে ব্যক্তি তাঁর থেকে বিচ্ছিন্ন থাকবে সে ধ্বংস হবে।
ইমাম হলেন বৃষ্টিবর্ষণকারী মেঘ, তীব্রবেগী বৃষ্টি, ছায়া বিস্তারকারী আকাশ, মসৃণ ভূমিতল, প্রবহমান ঝরনাধারা, জলাধার ও উদ্যান।
ইমাম হলেন বিশ্বাসী সহচর, দয়ালু পিতা, সহোদর ভাই এবং দুগ্ধপোষ্য শিশুর মমতাময়ী মাতাস্বরূপ আর আল্লাহ্্্র বান্দাদের আশ্রয়।
ইমাম হলেন আল্লাহ্্্র ও তাঁর সৃষ্টির মাঝে তাঁর আমানতদার (বিশ্বস্ত রক্ষক)। আর তাঁর বান্দাদের ওপরে তাঁর হুজ্জাত এবং তাঁর দেশে দেশে তাঁরই খলীফা এবং আল্লাহ্্্র দিকে আহ্বানকারী আর আল্লাহ্্্র (দীনের) সীমার প্রতিরক্ষাকারী। ইমাম গোনাহ থেকে পবিত্র এবং ত্রুটি-বিচ্যুতি থেকে মুক্ত, জ্ঞানে বিশেষায়িত ও সহিষ্ণুতায় খ্যাত; দীনের শৃঙ্খলাবিধায়ক, মুসলমানদের সম্মান প্রতিষ্ঠাকারী, মুনাফিকদের ক্রোধের কারণ, আর কাফেরদের ধ্বংসকারী।
ইমাম তাঁর যামানার একজনই, (সৃষ্টিজগতে) কেউ তাঁর সমকক্ষ নয় এবং তার সমান কোনো জ্ঞানী নেই। তাঁর কোনো বদলা ও সদৃশ ও দৃষ্টান্ত নেই। তিনি কিছু চাওয়ার পূর্বেই তাঁকে সকল মর্যাদার বৈশিষ্ট্য দান করা হয়েছে। এ বৈশিষ্ট্যসমূহ কৃপাময় আল্লাহর পক্ষ থেকে কেবল তাঁর জন্যই নির্দিষ্ট করা হয়েছে। তাই কে আছে যে ইমামের পরিচয়ে পৌঁছতে পারে ও তাঁর গুণের মর্ম অনুধাবন করতে পারে?
অনেক দূরে! অনেক দূরে! তাঁর একটি মর্যাদা ও গুণ বর্ণনা করতে গিয়ে মেধাসমূহ হয়রান। বক্তাদের ভাষা আড়ষ্ট, কবিদের মন শ্রান্ত, সাহিত্যিকরা ব্যর্থ, বিশুদ্ধভাষীরা বোবা, প-িতরা নিশ্চুপ ও (তাদের) মাথা হেঁট। সকলেই তাঁর মর্যাদার বৈশিষ্ট্যসমূহ হতে এমনকি একটি গুণ বর্ণনায়ও নিজের অপরাগতা ও ত্রুটি স্বীকার করে, তাঁর সকল úূর্ণতার বর্ণনা তো দূরের কথা! কীভাবে তারা তাঁর প্রকৃতির পূর্ণ বর্ণনা দান করবে? কেউ কি আছে যে তাঁর স্থলে দাঁড়াতে পারে কিংবা তাঁর ন্যায় উপকার সাধন করতে পারে? কোথা থেকে পারবে? যখন তিনি হলেন নক্ষত্রের মতো এমন উচ্চ স্থানে অবস্থানশীল যে, সে স্থান হস্ত প্রসারণকারীদের নাগাল থেকে ও গুণ বর্ণনাকারীদের থেকে দূরে। তারা কি মনে করে যে, ইমাম রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আল (বংশধর) ব্যতীত পাওয়া যায়? আল্লাহ্্্্র কসম! (যদি তারা এ ভিন্ন চিন্তা করে তবে) তাদের নিঃশ্বাসগুলোও তাদেরকে মিথ্যাবাদী বলে গণ্য করবে। আর তারা অলীক আশা করেছে যেন তারা এমন উঁচু ও কঠিন গিরিপথে আরোহণ করেছে এবং পিচ্ছিল স্থানে পা রেখেছে যা তাদেরকে নিক্ষিপ্ত করবে। এজন্য যে, তারা চায় নিজের জন্য একজন ইমাম বানাবে। কীভাবে পারে নিজের জন্য ইমাম নির্বাচন করতে যখন এমন একজন জ্ঞানী ইমাম আছেন যাঁর কোনো মূর্খতা নেই, এমন এক অভিভাবক আছেন যিনি কখনও ধোঁকা দেন না, যিনি নবুওয়াতের খনি, তাঁর বংশধারায় কোনো কলুষ নেই এবং অন্য কেউ বংশ মর্যাদায় তাঁর সমানে পৌঁছতে পারে না। তাঁর পরিবার কুরাইশ থেকে এবং বনি হাশিম বংশীয় রাসূল (সা.)-এর ইতরাত থেকে, মর্যাদায় সর্বশ্রেষ্ঠ এবং আবদে মানাফের প্রশাখা। প্রবৃদ্ধিমান জ্ঞানসম্পন্ন, পরিপূর্ণ সহিষ্ণু, ইমামতের কাজে শক্তিমান আর রাজনীতিতে প-িত, প্রধানকর্তা হওয়ার যোগ্য এবং আবশ্যিক আনুগত্যের পাত্র, আল্লাহ্্্র নির্দেশ বাস্তবায়নকারী এবং আল্লাহ্্্র বান্দাদের শুভাকাক্সক্ষী।
নবিগণ এবং ওয়াসিগণকে আল্লাহ্্্ তৌফিক দেন ও সাহায্য করেন এবং স্বীয় প্রজ্ঞার ভা-ার থেকে তাঁদেরকে দান করেন, যা অন্যদেরকে দেন না। তাঁর জ্ঞান সে যুগের সকলের চেয়ে শ্রেয়। মহামহিম আল্লাহ্্্ বলেন : ‘যিনি সত্যের পথনির্দেশ করেন তিনি আনুগত্যের অধিকতর হকদার, না যাকে পথ না দেখালে পথ পায় না সে? তোমাদের কি হয়েছে? তোমরা কেমন বিচার করে থাক?’ (সূরা ইফনুস : ৩৮) আর তালুতের কাহিনীতে আল্লাহ্্্ বলেন : ‘(নবী) বলল : আল্লাহ্্্ অবশ্যই তাকে তোমাদের জন্য মনোনীত করেছেন এবং তিনি তাকে জ্ঞানে ও দেহে সমৃদ্ধ করেছেন। আল্লাহ্্্ যাকে ইচ্ছা স্বীয় রাজত্ব দান করেন।’ (সূরা বাকারা : ২৪৭) আর দাউদের কাহিনীতে বলেছেন : ‘দাউদ জালুতকে সংহার করল, আল্লাহ্্্ তাকে রাজত্ব ও হেকমত দান করলেন এবং যা তিনি ইচ্ছা করলেন তা থেকে শিক্ষা দিলেন।’ (সূরা বাকারা : ২৫১) আর তাঁর নবীর জন্য বলেছেন : ‘আর আল্লাহ্্্ আপনার প্রতি কিতাব ও হিকমত অবতীর্ণ করেছেন এবং আপনি যা জানতে সক্ষম ছিলেন না তা আপনাকে শিক্ষা দিয়েছেন। আপনার প্রতি রয়েছে আল্লাহ্্্র মহা অনুগ্রহ।’ (সূরা নিসা : ১১৩) আর তাঁর নবীর আহলে বাইতের ইমামগণ ও তাঁর ইতরাত ও বংশধরদের জন্য বলেছেন : ‘তবে আল্লাহ্্্ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে যা দিয়েছেন সেজন্য মানুষরা কি তাদের প্রতি ঈর্ষা করে?... (আয়াতের শেষ পর্যন্ত) জাহান্নামই যথেষ্ট।’ (সূরা নিসা : ৫৪-৫৫) আর নিশ্চয় আল্লাহ্্্ যখন তাঁর কোনো বান্দাকে বান্দাদের কার্য পরিচালনার জন্য নির্বাচিত করেন তখন তাঁর বক্ষকে একাজের জন্য প্রসারিত করে দেন এবং প্রজ্ঞার প্রস্রবণসমূহকে তাঁর অন্তরে সোপর্দ করেন। আর তাঁর জিহ্বাকে বাগ্মী করে দেন যাতে এরপরে সে উত্তর প্রদানে ব্যর্থ না হয় এবং সঠিক ছাড়া না বলে। আর সবসময় সফলকাম, অপরাজেয় ও মদদপুষ্ট হয়। ভ্রান্তি ও বিচ্যুতি থেকে নিরাপদ থাকে। আল্লাহ্্্ তাঁকে এ স্থানে স্বাতন্ত্র্য দিয়েছেন যাতে তাঁর সৃষ্টির ওপরে হুজ্জাত হন এবং তাঁর বান্দাদের ওপর হন সাক্ষী। তারা কি এরূপ ক্ষমতা রাখে যে, এরূপ ইমামকে নির্বাচন করবে এবং তাদের কর্তৃক নির্বাচিত যে, সে এসব গুণের অধিকারী থাকবে?



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.