নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
[উৎসর্গঃ আমার বিবাহিতা বন্ধুদের, যাদের টুকরো টুকরো অভিজ্ঞতা থেকে লেখাটা সাজানো]
তোমার হাতের লিখা ভালো না, পড়া যায় না।
বাজারের লিস্ট হাত থেকে ছিনিয়ে নিতে নিতে শ্বাশুরিরকমেন্ট। আরে, বাজারের লিস্ট কি পরীক্ষার খাতা যে সেখানে মুক্তাক্ষরে লিখতে হবে! আর হাতের লিখাটা সুন্দরই ছিলো, অসুন্দর না।
ধরলাম হাতের লিখা খারাপ; তো?
সেই জন্য কি আপনি বাজারের লিস্ট কেড়ে নিবেন? আপনাকে যদি প্রশ্ন করি, কোথা থেকে শিখেছেন এই অভদ্রতা? তখন তো আবার এক মুহুর্ত সময় নষ্ট না করে, আমার পরিবার থেকে কিছু শেখানো হয়নি, আমার আস্পর্ধা মহাসড়কের মত বড় এবং চওড়া, আমি কত বড় বেয়াদব এইসব শুনতে হবে। আমি কিন্তু ভুলেও আপনাকে প্রশ্ন করতে পারবো না, “আপনি পরিবারে কি শিখেছেন যে একজন মানুষ হিসেবে অন্য একজন মানুষকে কিভাবে শ্রদ্ধা করে কথা বলতে হয় সেটা জানেন না!”
আপনি ভাববেন না যে, আমি আপনাকে এই কথাগুলো বলবো। কেন জানেন, কারণ সেটা আমার নীতির পরিপন্থি। আমি আপনাকে একজন পারসন হিসেবে দেখতে এবং শ্রদ্ধা করতে চাই। ভালো বাসতেও চাই। এই চাওয়াটা আমার দুর্বলতা, বলতে পারেন বিনয়ী হওয়া; কিন্তু আপনি সেটার মর্যাদা বুঝবেন না, বুঝতে চাইবেনও না। সেই উপলব্ধিটা আপনি আপনার ছেলেকে যখন ছোট থেকে আস্কারা দিয়ে বড় করেছেন, যখন এই পিতৃতান্ত্রিক সমাজ আপনাকে পুত্রসন্তান জন্মদানের জন্য বাহবা দিয়ে ক্ষমতাবান করেছে, সেই প্রক্রিয়ার মাঝেই আপনি হারিয়ে ফেলেছেন। আমার মা যখন আপনার সাথে কথা বলে, তখন আপনি আশা করেন, আমার মা আপনাকে সমীহ করে কথা বলবে, আর আপনি? আপনি মন চাইলে ভালো ভালো কথা বলবেন, আর মন চাইলে মাটিতে নামিয়ে রাখবেন। আপনি গোপনে লালন করেন, আমার মা যেন আপনার কাছে ভিক্ষা চায়, যেন মাথা নিচু করে থাকে, যেন আমার দুর্বলতাগুলো ধারন করে কথা বলে, যদিও আমি প্রচন্ড শক্তিশালী বা আপনার ছেলের চাইতেও যোগ্যতর হই।
আপনি কিন্তু কখনোই ইস্তফা দিবেন না, আমি যতই শুদ্ধ হই না কেন, আপনার চোখে ভুল ধরা পরবেই। কেননা আমি যে “দেখতে নারি”। যদি কিছুই না বের করতে পারেন তাহলে আমার চোখ কেন পটলচেড়া না হয়ে আলুচেড়া হলো, কিংবা আমি হাঁটার সময় আমার বা পায়ের পাতা একটু বাঁকা হয় এইসব নিয়ে গবেষণা পত্র পাঠ করবেন। বাদ দিবেন না আমার ভাই বা বোনের প্রাক্তন প্রেমের কথা, বা সামান্য কোন ভুল ত্রুটি।
আমি জানি, এইসব না করলে আপনার সময় কাটে না। কিন্তু আমার যে অনেক কাজ! ভোরে উঠে “আপনাদের” (আমার জন্যও করি, কিন্তু বিষয় হচ্ছে আপনাদের আচরনে আমি ভুলেই যাই এই বাড়িটা আমারও) জন্য নাস্তা তৈরী করা, কোন রকমে বাচ্চাকে তুলে তৈরী করে স্কুলে পাঠানো, কিংবা আপনার ছেলেকে তৈরী হতে সাহায্য করা, আর সকালবেলা আপনার দুকাপ চা ছাড়া তো চলতেই চায় না, আবার যেহেতু আপনারা মডার্ন এবং শিক্ষিত আপনাদের ঠাট বাট বজায় রাখতে ভালো প্রতিষ্ঠানে উচ্চবেতনে চাকুরী করা বউ চাই, সেহেতু আমাকেও ছুটতে হয় সেই সকালেই। অফিসে কিন্তু কাউকেই বসায় রেখে বেতন দেয় না, আপনার ছেলে যতটুকু কাজ করে, আমি মেয়ে হিসেবে আমার যোগ্যতা প্রমান করতে তার চেয়েও বেশি কাজ করি। আবার বাসায় ফিরে এসে আমি কত ভালো বউ সেটা প্রমাণ করতে উঠে পড়ে লাগি।
আমার বাচ্চারা জিতলেই যেহেতু আমিও জিতে যাই, সেহেতু ওরা কিভাবে জিতবে সেই রাস্তাটা আমাকেই খুজে বের করতে হয়। যদি জিতে যায় তাহলে নাতি/নাতনি আপনার বা বাচ্চা আপনার ছেলের, আর যদি হেরে যায় তাহলে ওরা আমার। আমার কিন্তু বাচ্চার উপরেও দখল নেই, আমি ত্যাক্ত বিরক্ত হয়ে ডিভোর্স চাইলেও আপনারা ওকে ছিনিয়ে নিয়ে যাবেন।
তো? ভাবছেন আমি ফুরিয়ে গেছি? মোটেও না! আমি ফুরিয়ে যাই নি, সেই জন্যেই এখন আর আমি কত ভালো মেয়ে, আমি কত ভালো বউ, আমি কত ভালো মা এসবের পরীক্ষা আমি দেব না। আমি দেবীও না অসুরও না। আপনার চা আপনি বানিয়ে খাবেন আপনার এখনো বয়স ফুরিয়ে যায় নি, আপনার ছেলে নিজেই তৈরী হবে, সে নুলা কানা বা খোড়া না; বাচ্চাদের আমি দেখাশুনা করবো বটে, সেটা আপনার ছেলের সাথে ভাগাভাগি করেই; সিদ্ধান্ত হলে দু জনেরই হবে শুধুই আমার বা আপনার ছেলের না; আমার মা বাবার সাথে যথাযোগ্য মর্যাদায় কথা বলবেন-তাদের মেয়ের জন্ম না হলে পৃথিবীর বংশবৃদ্ধি হতো না।
যারে দেখতে নারি, তার চলন আপনি বাঁকা দেখতে পারেন, কিন্তু সেইটা আপনার চোখে সোজা করার জন্য সে মেরুদন্ড বাঁকা করে হাঁটবে সেটা ভাবলে ভুল করবেন।
©somewhere in net ltd.
১| ১২ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১০:২০
মুনেম আহমেদ বলেছেন: আপনার লেখায় কেমন যেন ভালবাসা নামক কিছু পেলাম না। বিবাহিতদের মাঝে কি ভালবাসা থাকে না?