| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আফনান আব্দুল্লাহ্
প্রত্যেকটা মানুষের জীবনের গল্প তার আঙ্গুলের ছাপের মতই ভিন্ন। দূর থেকে এক মনে হলেও যতই তার গভীরে যাবে কেউ ততই বৈচিত্রময় বিভিন্নতা পাবে। নিজের জীবনের গল্পে চরে বেড়ানো মানুষগুলো সবাই’ই যার যার জগতে বন্ধী। সহস্র বছর বাঁচতে পারলে পৃথিবীর প্রত্যেকটা মানুষের জীবনের গল্প আমি শুনতাম।নিজের দেখা জগৎ দেখা আদেখা মানুষদের জগতের সাথে গেঁথে নিতেই লিখি এবং আন্যের লিখা পড়ি। কেউ যদি মিথ্যুক বা ভন্ড না হয় তাহলে তার যে কোন ভিন্ন মতের কারন তার চার পাশের ভিন্ন জগৎ, ভিন্ন পরিবেশ, ভিন্ন শিক্ষা। তাই মানুষকে বুজতে হলে তার জগৎটাকে জানতে হবে, তার গল্পগুলো শুনতে হবে।আফনান আব্দুল্লাহ্
আমাদের এখন পার ক্যাপিটা ইনকাম প্রায় ১,৩১৪ ডলার। (World Bank এর হিসাবে $১০৮০ )। . এইটা প্রায় এক লাখ তিন হাজার টাকার সমান। এই হিসাবানুযায়ী দেশের একটা পরিবার যদি চার জনের হয় তাহলে ঐ পরিবারের বছরের আয় হলো চার লাখ টাকার উপরে। মাসে প্রায় পয়ত্রিশ হাজার টাকা। কি দারূন ব্যাপার।। হিসাব নিকাশানুযায়ী পুরা দেশের সবাই দেখি হাঠাৎ করি বেশ বড়লোক হই গেলাম!! . পুরনো দিনের তথ্যভান্ডার ঘাঁটাঘাঁটি করলে দেখা যায় ১৯৭৩ সালের ১২০ ডলার থেকে ১৯৭৪ সালে দেশের মানুষের মাথাপিঁছু আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছিলো ১৫০ ডলারে। তখন এক ডলারে ৮.০৮ টাকা পাওয়া যেত। . মাথা পিছু আয় বাড়ার পরেও ১৯৭৪ সালেই, অফিসিয়াল হিসাবেই এই দেশের মানুষ স্রেফ না খেয়েই মারা গেছে ২৬,০০০ জনেরও বেশী। আধ মরাদের হিসাব এর বাইরে। . আরো ঘাঁটাঘাঁটি করলে দেখা যায় ঐ বছর, মানে ১৯৭৪ সালে দেশের মোট চালের উৎপাদন ছিলো ১১.১০ মেট্রিক টন, প্রায় আট কোটি মানুষের বিপরীতে। অর্থাৎ প্রতি দিন দেশের প্রতিটি মানুষের জন্যে গড়ে প্রায় আধা কেজী করে চাল ঐ বছর দেশেই উৎপাদন হয়েছে। আগের বছরের মজুদ এবং বন্যার প্রভাব বাদেই। ‘৭৪ সালে দেশের বাজারে প্রতি মে.টন চালের দাম ছিলো ৮২৬-৩০ ডলার। তাহলে প্রতি কেজী ০.৮৩ ডলার করে প্রতি জন মানুষ প্রতি দিন আধা কেজী চাল ০.৩২ ডলারে কিনে নিতে পারতো; বছরে মোট ১১৭ ডলার খরচ করে। হাতে জমা থাকতো আরো ৩৩ ডলার করে। . তার উপর আন্তর্জাতিক বাজারে তখন চালের দাম ছিলো প্রতি মে.টন মাত্র ৫৪০-৪২ ডলার করে। তখন দেশের মোট রিজার্ভ ছিলো প্রায় ১৩৮.২ মিলিয়ন ডলার, সস্তা দরের চাল আমদানীর জন্যে যা ছিলো যথেষ্ঠ। আর স্বাভাবিক ভাবেই, কোন জীনিষের দাম এক দেশে কম আর আরেক দেশে বেশি হলে বেশি দামের দেশেই ঐ জীনিষ রপ্তানী হবে বেশী। তাই আন্তর্জাতিকভাবে কম দামের বাজার থেকে প্রচুর চাল হুরহুর করে বাংলাদেশের বেশি দামের বাজারে ঢুকে যাওয়ার কথা। মোদ্দাকথা, কোন ভাবেই এত্ত্বগুলা মানুষ স্রেফ না খেয়ে মারা যাওয়ার কথা না। . কিন্তু মারা গেছে! এবং না খেতে পেয়েই ধীরে ধীরে ভয়ঙ্কর কষ্টে মারা গেছে। কাগজে কলমের মাথা পিছু আয়, খাদ্য মজুদ, দেশীয় আর অন্তর্জাতিক চালের বাজার দর, বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ কোন কিছুই তাদের পেটের ভেতরের ক্ষুধা নেভায়নি। কারন, খাতার হিসাবের বাইরে সত্যিকারের চাল তাদের নাগালে ছিলো না। মূলত, যে কোন গড় হিসাব সাধারনত, সবার জন্যে সমান হিসাব হয়না। সমস্যাটা অন্য জায়গায় থেকে যায়, গড় আয়ে নয়। বাতাস ভরা খোলা মাঠে কারো নাক মুখ চেপে ধরলে যেমন সে শ্বাস নিতে পারেনা, ব্যাপারটা বোধহয় অনেকটা তেমনই। . Dr. Amartya Sen তাঁর Poverty and Famines: An Essay on Entitlement and Deprivation বইএ বিশ্লেষণ করেছেন গত শতাব্দীর বেশ কয়টা দূর্ভীক্ষের ঘটনা। এর মধ্যে রয়েছে ১৯৪৩ এ বাংলাদেশের মহা মন্দা, ১৯৭৩ আর ১৯৭৪ সালের ইথিওপিয়ান দূর্ভীক্ষ, বাংলাদেশের এতক্ষণ ধরে বলা ১৯৭৪ এর দূর্ভীক্ষ, মধ্য আফ্রিকার ১৯৭০ সালের মহা দূর্ভীক্ষ। . এখানে Dr. Amartya Sen দূর্ভীক্ষের পেছনে প্রচলিত ‘দেবতার অভীশাপ’ জাতিয় ধারনার বিপরীতে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছেন মূল কারন হিসেবে মানুষ্য সৃষ্ট কারন গুলাকে (the ‘entitlement approach’) । বলেছেন, যথেষ্ট পরিমান খাবার মজুত থাকার পরেও গড়পরতার মানুষের সেখানে প্রবেশাধীকার না থাকাই দূর্ভীক্ষের প্রধান কারন গুলোর একটি। . আয়ের সুযোগ এবং সম্পদের বন্টন ব্যবস্থায় ত্রুটি থাকলে দেশজ আয় যাই হোক না কেন তা দারীদ্রতা আর দূর্ভীক্ষ ঠেকাতে পারেনা। বরং যার আছে তার সাথে না পাওয়া গোষ্ঠীর ব্যবধান বাড়াতে থাকে। . দেশজ মাথাপিছু গড় আয় বা পার ক্যাপিটা ইনকাম কখনোই ক্রীকেট ম্যাচের রান নয় যে দু’জনে মিলে দলের তিন শ রান করে দিলেই তা সবার রান হয়ে যায়। বিশ শতাংশ মানুষের আয়ের সাথে বাকিদের নাম মাত্র আয়কে যোগ করে ভাগ দেয়ার বেলায় শতভাগ লোকসংখা দিয়ে ভাগ দিলেই তা সবার সমান আয় হয়ে যায় না। যে কোন গড়পড়তার হিসাবের সাথে সাথে দেখাতে হয় এর স্টান্ডার্ড ডেভিয়েশান, রিগ্রেশান এ্যানালাইসিস। অর্থাৎ এই গড় হিসাব সবার বেলায় কত পর্যন্ত কম বেশি হতে পারে তা বের করা। এর পর দেখতে হবে কত শতাংশ মানুষ এই কম-বেশি রেঞ্জের উপরে এবং নিচে আছে। অর্থাৎ কত শতাংশ মানুষ এই মাথাপিছু গড় আয়ের থেকে উপরে অনেক বেশি আয়ের সীমায় আছে। আর কত শতাংশ মানুষ গড় আয়ের অনেক নিচে অনেক কম আয় করছে। . বাংলাদেশের বেলায়, কেউ যখন এই হিসাবটা করে গ্রাফে দেখাবে, নিশ্চিতই বলা যায় কি দেখা যাবে সেখানে। দেখা যাবে অল্প কিছু মানুষ গ্রাফের অনেক উপরে বীপুল আয়ের মাঝে ভাসছে। আর আরেক দিকে অসংখ্য মানুষ অনেক অনেক অনেক নিচে অনেক কম আয়ের সীমার মধ্যে হিজিবিজি ভাবে গিজ গিজ করতেছে। . . মাথাপিছু আয়ের হিসাব নিকাশ যেমন বেশির ভাগ মানুষেরই মাথার উপর দিয়ে যায়, তারও অনেক বেশি উপর দিয়ে যায় সত্য়িকারের আয়-রোজগারের রাস্তাগুলো... #Afnan_Abdullah 07072015 Ref: 1. Exchnge rate a. Click This Linkb. Click This Link. 2.Per Capita Income Click This LinkClick This Link. 3. Price of rice per ton Click This Link. 4. World Bank national accounts data, and OECD National Accounts data files. . 5. Total reserve Click This Link
২|
১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:৪০
আফনান আব্দুল্লাহ্ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ভাই, পড়ার জন্যে।
©somewhere in net ltd.
১|
১১ ই মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৬
সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: ধন্যবাদ । এতো সুন্দর লেখাটি উপহার দেওয়ার জন্য । এতোদিন পর লেখাটি পড়েও ভাল লাগল । সেই সাথে লজ্জা হচ্ছে আগে লেখাটি
চোখে পড়েনি বলে