নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি নরসুন্দা নদের হাওয়া

আফরোজা সোমা

নরসুন্দা নদের হাওয়া

আফরোজা সোমা › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমাদের অর্গ্যানিক মা

১০ ই মে, ২০২০ রাত ১১:৩৫

প্রকৃতিগতভাবেই, হরমোনের কারণে, প্রাণী জগতে সন্তানের জন্য মাতৃকূলের আকুলতা-ব্যাকুলতা, ত্যাগ-তিতিক্ষা অপরিসীম ও অতুলনীয়।


কিছু প্রানী জন্মদাত্রীকে খেয়ে ফেলে। মাকে খেয়ে বেড়ে ওঠে নবজাতক। আবার কিছু বুভুক্ষু প্রাণী দুর্নিবার ক্ষুধার মুহূর্তে নিজের সন্তানকেও খেয়ে ফেলে।


প্রাণীকূলের মধ্যে মনুষ্যকূল সবচেয়ে আলাদা। বুদ্ধিমান। তার আছে হাতিয়ার। তার আছে গর্ব, সম্মান এবং এরকম আরো অবস্তুগত শক্তিশালী শব্দমালা ও ধারণা সকল।


গর্ভধারিনীর জন্য মনুষ্যকূল একদিকে রেখেছে 'মাতৃত্বের মহত্ব'। আরেকদিকে রাখেছে, পুরুষের বংশরক্ষার 'আধার' বা ‘পাত্র' হবার উপেক্ষা। অর্থাৎ মা, সন্তানের বাহক মাত্র। মালিক নয়।


মহাভারত জুড়ে, পুরুষই প্রধান। নারীর জরায়ু না পেলে পুরুষের বীর্য নানান পাত্রে ধারণ করা হয়েছে। অলৌকিকভাবে সেসব থেকেও জন্ম নিয়েছে সন্তান।


যিশুর মতন ঘটনাও আছে। 'পিতৃহীন' জন্মেছে সন্তান। অবিবাহিত মাতা মেরির উদরে জন্ম নেয়া যিশু পেয়েছেন 'ঈশ্বরের সন্তান' পরিচয়। কিন্তু পিতাহীন সকল শিশু যিশুর মতন 'সৌভাগ্যবান' নয়।


শকুন্তলার উপরেও ছিল অলৌকিক আশীর্বাদ। বহু বছর স্বামীর ফেরার অপেক্ষায় থেকে অবশেষে সন্তান সমেত নিজেই হাজির হন স্বামীর দরবারে। কিন্তু স্বামী দুষ্মন্ত শুকুন্তলাকে চিনতে পারে না [বা না পারার ভান করে]। তখন আকাশ থেকে আসে দৈব বানী। সে বাণীকে উপেক্ষা করে এমন সাধ্য কোন সে রাজার!


ভরতের মা শকুন্তলা পেয়েছিলেন অলৌকিক আশীর্বাদ। কিন্তু ভীষ্মের মা গঙ্গার কপালে তা জোটেনি। মহাভারত বলছে, রাজা শান্তনুর সাথে মানবীরূপী দেবী গঙ্গার প্রণয়ের ফল রাজকুমার দেবব্রত ওরফে ভীষ্মের জন্ম। ছেলে দেবব্রতকে রাজা শান্তনু প্রাসাদে ঠাঁই দিলেও গঙ্গার স্থান হয় না।


হায় গঙ্গা! নদীপাড়ের নারী! সাধারণ মানবী হয়ে স্বামী-সন্তান নিয়ে সুখে থাকবার বর তার জোটেনি। অবশ্য হবেই-বা কী করে! পুরাণ তো তাকে দিয়েছে দেবীর ঐশ্বর্য! হায় দেবী! সে কি করে হয় সামান্য ঘরনী!


আহারে সাধারণ মা! আহারে সমাজের ‘পিতৃপরিচয়’! মায়ের একক পরিচয় যথেষ্ট নয়। তাই, কাউকে হতে হয় মাতা মেরী, কাউকে হতে হয় দেবী গঙ্গা। মানবী পরিচয়ে সংসারে টিকে থাকবার সুযোগটুকুই শুধু তাদের মেলে না।

প্রাণীকূল স্বাক্ষী, মাতৃত্ব দেয় একাধারে দায়িত্ব ও আনন্দ। কিন্তু মাতৃত্বের টোপর মাথায় দিয়ে নারীকে বন্দী করে রাখার এমন কৌশল প্রাণীকূলের আর কারো জানা নেই।


সন্তান যিনি ধারণ করেন তিনি মেশিন নন। গর্ভধারিনী নন পুরুষের বংশরক্ষার নিমিত্তমাত্র।


পৃথিবী অনেক পাল্টেছে। সারোগেসির মাধ্যমে এখন অনেক সন্তান জন্ম নিচ্ছে পৃথিবীতে। গর্ভধারিনীর সাথে তাদের আর তৈরি হচ্ছে না চিরকালীন অর্গ্যানিক মাতা-সন্তান সম্পর্ক।


পৃথিবী অনেক পাল্টে গেছে। পশ্চিমে এখন সিমেন ডোনেট বা বীর্য দান করে অনেক মানুষ। যে নারী মা হতে চান, কিন্তু বিয়ে করতে চান না, পুরুষের সাথে জীবন কাটাতে চান না তারা চাইলে ডোনেটরদের থেকে বীর্য নিয়ে মা হতে পারেন। পিতার অনুপস্থিতিতেই এখানে গড়ে উঠতে পারে মাতা-সন্তানের অর্গানিক সম্পর্ক।


কিন্তু আধুনিক এই মায়েদের লাগবে না মাতা মেরির তকমা। এই মায়েদের লাগবে না দেবী গঙ্গার ছদ্মবেশ। এই মাকে হতে হবে না শকুন্তলা। আধুনিক এই সন্তানদের লাগবে না ‘ঈশ্বরের সন্তান’ পরিচয়। এই মায়েদের সতিত্বের পক্ষে প্রমাণ দিতে আকাশ থেকে ধ্বনিত হতে হবে না দৈব বানী।


মানুষের মনোভঙ্গী পাল্টালে সমাজ পাল্টায়। সমাজ পাল্টালে মানুষের বন্দীত্ব শেষ হয়। সমাজ পাল্টাটে মানুষের দু:খের হয় অবসান।


মা দিবসে মায়েদের প্রতি নিজ নিজ সন্তানেরা ফেসবুকে অপার শ্রদ্ধা প্রকাশ করছেন। এই ভালোবাসা দেখতেও আনন্দময়। সময় এসেছে, নিজের মায়ের পাশাপাশি, আসুন এবার সমাজের আরো মায়েদের মুক্তির কথা ভাবি।


এদেশের আইনে সন্তানের অভিভাবকত্বের ক্ষেত্রে এখনো মায়েরা প্রবল বৈষম্যের শিকার। তালাকের পর সন্তানের অভিভাবকত্বের ক্ষেত্রে পুরুষ এবং তার পরিবারের অধিকার সর্বাগ্রে।


বাংলাদেশে এমন অসংখ্য মা আছেন, যারা কেবল সন্তানকে হারানোর ভয়ে একটা তেতো সম্পর্কের মধ্যে দিনের পর দিন নির্যাতন সয়ে যান।


হে সন্তানেরা! মা দিবসে, আপনাদের আবেদন জানাই, মায়েদের মুক্তির পক্ষে আপনারা আওয়াজ তুলুন। সন্তানের অভিভাবকত্ব পাওয়া নিয়ে আইনে যে বৈষম্য আছে তা দূর করতে সোচ্চার হোন। ‘সিঙ্গেল মাদার’ বা একা মায়েদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করুন।

আমাদের মায়েরা তাদের বাবার বাড়িতেও বঞ্চিত। পিতার সম্পত্তিতে তাদের ‘হক’ তাদের ভাইয়েদের চেয়ে কম। দেশের আইনে এই বৈষম্য বহুকাল ধরে চলে আসছে। এই বঞ্চনার অবসান এখন সময়ের দাবী।

মায়েরা আমাদের ভালোবেসে জীবন উৎসর্গ করেন। ভালোবেসে পাখিকে খাচায় বন্দী করার নাম ভালোবাসা নয়। ভালোবাসলে পাখিকে খাচা থেকে মুক্তি দিতে হয়। আমাদের ভালোবাসা যদি মায়েদের জন্য সর্বাঙ্গীন মুক্তি এনে দিতে না পারে তবে এই ভালোবাসার অর্থ কী?

মায়েদের মুক্তির এই মিছিলে আমি আছি। হে সন্তানেরা, আপনারাও আসুন। বৈষম্যের অবসান ঘটান। আগামীর মায়েদের মুক্ত করুন।


---

১০মে, ২০২০

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই মে, ২০২০ রাত ১২:০০

রাজীব নুর বলেছেন: বাংলাদেশে করোনাকালে জন্ম নেওয়া এক নবজাতকের নাম রাখা হয়েছে 'করোনা'।
ভারতে একজনের নাম রাখা হয়েছে 'কোভিড ম্যারি'।
করোনার ঘোর এইসব নাম রাখতে উৎসাহিত করতেছে। এই শিশুটাই বড়ো হতে থাকবে আর নিজের নামের প্রতি বিরক্তি জন্মাতে থাকবে। বিরক্তি জন্মাতে তাকে সহযোগিতা করবে পাড়া কিংবা শিক্ষাজীবনের সহপাঠীরা। তখন সে নতুন নাম রাখবে। আগের নাম বদলিয়ে। তখন বাবা-মারও ঘোর কাটবে।

২| ১১ ই মে, ২০২০ রাত ১২:১৯

নেওয়াজ আলি বলেছেন: আচ্ছা দিবস লাগবে মাকে ভালোবাসতে

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.