![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জামায়াত-শিবিরের নৃশংসতা বেড়েই চলেছে। একাত্তরের ঘাতকদের বিচার বানচাল করতে এমন কোন হীন তৎপরতা নেই, যা তারা করছে না। কয়েক মাস ধরে রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী পুলিশ বাহিনীর ওপর তাদের হামলা অব্যাহত রয়েছে। ১৮ দলীয় জোটের নামে বিএনপি-জামায়াত অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির মাধ্যমে দেশে গৃহযুদ্ধ বাধাতে চাচ্ছে। বিএনপি-জামায়াত মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত একাত্তরের ঘাতকদের বিচার কোনভাবেই মেনে নিতে পারছে না। অথচ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আজ গণদাবিতে পরিণত হয়েছে। আসলে জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার গুরু পাপে লঘু কারাদ-ই বাঙালি জাতিকে জাগিয়ে দিয়েছে। বৈজ্ঞানিক নিউটন তার তৃতীয় সূত্রে বলে গেছেন_ 'প্রত্যেক ক্রিয়ারই প্রতিক্রিয়া আছে।' কাদের মোল্লার বিচারের রায়ের প্রতিক্রিয়া হিসেবেই প্রজন্ম চত্বরে প্রতিদিন লাখো বিক্ষুব্ধ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সমাবেশ ঘটছে। মামলার তদন্ত ও সাক্ষ্য-প্রমাণের দুর্বলতা বা অন্য যে কোন কারণেই হোক, ৫ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার ঘাতক কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন শাস্তি বাংলার মানুষ মেনে নিতে পারেনি। তাৎক্ষণিক রায় প্রত্যাখ্যান করে বস্নগার অ্যান্ড অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট নেটওয়ার্ক শাহবাগে অবস্থান নিয়ে কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবি জানায়। পরে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে তা আন্দোলনে রূপ নেয়। ক্লান্তিহীন সেস্নাগানে একাকার হয়ে যায় রাত-দিন। সারাদেশে এমনকি বিদেশেও ছড়িয়ে পড়ে এই আন্দোলনের ঢেউ। লন্ডনের প্রভাবশালী ইকোনমিস্ট সাময়িকী যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে শাহবাগের গণজমায়েতকে দুই দশকের মধ্যে বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় আন্দোলন বলে উল্লেখ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা যায়, '১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় ভয়ঙ্কর সব অপরাধ করা সত্ত্বেও ধর্মভিত্তিক দলের নেতা কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেয়ায় সাধারণ মানুষ ফুঁসে উঠেছে। তার ফাঁসির দাবিতে ঢাকার প্রাণকেন্দ্র শাহবাগে প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষ বিক্ষোভ করছে।' এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী 'ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল' পত্রিকা এক রিপোর্টে বলেছে_ 'একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে বাংলাদেশে দুই দশকের মধ্যে সবচেয়ে গণবিস্ফোরণ হচ্ছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় লাখ লাখ বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে। তাদের অনেকেই নিহত হয়েছেন ইসলামপন্থিদের হাতে। ওই ইসলামপন্থিরা পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের মুক্তির বিরোধিতা করেছিল।'
শাহবাগের এই গণজাগরণ বাংলাদেশের মানুষের কাছে এক বিস্ময় হয়ে দেখা দিয়েছে। বিগত বহু বছর ধরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে বড় বড় সমাবেশে টাকা দিয়ে ভাড়া করে লোক জমায়েত করতে হয়। মাত্র কয়েকজন তরুণের আহ্বানে ১২ দিন ধরে বিরামহীনভাবে প্রজন্ম চত্বরে সর্বস্তরের লাখো মানুষ সমবেত হচ্ছেন। মুক্তিযোদ্ধা, ছাত্র, যুবক, তরুণ-তরুণী, নারী, শিশু, বৃদ্ধ সব শ্রেণী-পেশা মানুষের এখন একটাই দাবি। আর সেই কাঙ্ক্ষিত দাবি হচ্ছে_ 'একাত্তরের ঘাতকদের ফাঁসি চাই।' শাহবাগে গণজাগরণের একাদশ দিনে আয়োজক তরুণ সমাজ আন্দোলনে কিছুটা পরিবর্তনের ঘোষণা দেন। টানা ১১ দিন চলার পর ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে দিবা-রাত্র ২৪ ঘণ্টার পরিবর্তে প্রতিদিন বিকেল তিনটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত শাহবাগ চত্বরে অবস্থান কর্মসূচি চালানোর ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। বিবিসির সান্ধ্য অনুষ্ঠানে আন্দোলনের সময়সীমা কমানোর ঘোষণাকে ব্যক্তিগতভাবে স্বাগত জানিয়েছিলাম। কেননা দিবা-রাত্রি ২৪ ঘণ্টা কোন আন্দোলন মাসের পর মাস চলতে পারে না। আমার মনে এমন ভাবনা ছিল, পর্যায়ক্রমে আন্দোলনের কর্মসূচিকে শিথিল করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন ও শাস্তি কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত শুক্র ও শনিবার ছুটির দিনে শাহবাগে কর্মসূচি অব্যাহত রাখা হবে।
কিন্তু জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসের জন্য আন্দোলনকারীরা আবার লাগাতার আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছেন। ১৫ ফেব্রুয়ারি শাহবাগ মঞ্চ থেকে মিরপুর বাসায় ফেরার পথে রাত ৯টায় পলাশনগরে দুর্বৃত্তরা আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী বস্নগার স্থপতি আহমেদ রাজীব হায়দার শোভনকে (৩৫) উপর্যুপরি কুপিয়ে হত্যা করে। গলা কেটে রাজীব হত্যার খবর শাহবাগ মঞ্চে পেঁৗছলে সঙ্গে সঙ্গে ২৪ ঘণ্টা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। শাহবাগ আন্দোলনের সক্রিয় এই নেতাকে হত্যার জন্য জামায়াত-শিবিরকে দায়ী করেছে আন্দোলনকারীরা। ১৬ ফেব্রুয়ারি দৈনিক কালের কণ্ঠের প্রথম পাতায় 'রাজীব ছিলেন শিবিরের প্রথম টার্গেট' শীর্ষক খবরে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে জামায়াত-শিবিরই রাজীবকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। এটা সবাই জানেন, স্বাধীন বাংলাদেশে 'গলাকাটা-রগকাটা' রাজনীতির ধারক-বাহক হচ্ছে বর্বর জামায়াত-শিবির চক্র। গত কয়েকদিনে বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশিত খবরে বলা হয়_ 'জামায়াত-শিবির শাহবাগ মঞ্চে হামলা করাসহ বস্নগারদের হত্যার ষড়যন্ত্র করছে।' এটা ঠিক, রাজীব হত্যা দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়া জামায়াতবিরোধী আন্দোলনকে আরও বেগবান করবে। বাঙালি জাতির শত বছরের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, অতীতে দমন-পীড়নের মাধ্যমে বাঙালিকে দমন করা যায়নি।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সালাম, বরকত, জব্বার, রফিকদের হত্যার পর বাংলাভাষা অন্যতম রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা পেয়েছিল। ১৯৬৯ সালে আসাদ, মতিউর, সার্জেন্ট জহুরুল হকদের হত্যার পর পরাক্রমশালী জেনারেল আইয়ুব খানের ১০ বছরের স্বৈরশাসনের পতন ঘটে। একাত্তরে ইতিহাসের নৃশংসতম-বর্বর হত্যাকা- চালিয়ে পাকিস্তানিরা বাঙালির স্বাধীনতা ঠেকিয়ে রাখতে পারেনি। ১৯৯০ সালে ডা. মিলনের হত্যার পর জেনারেল এরশাদের ৯ বছরের স্বৈরশাসনের অবসান ঘটে। পুলিশের ওপর হামলা এবং রাজীবদের হত্যা করে গণবিচ্ছিন্ন স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবিরও দীর্ঘদিন টিকে থাকতে পারে না। জামায়াতি দুর্বৃত্তরা বাঙালিকে চিনতে পারছে না। গ্রাম-গঞ্জ-শহরে বাংলার মানুষ একবার রুখে দাঁড়ালে জামায়াতি দুর্বৃত্তরা ইঁদুরের বাচ্চার মতো গর্তে ঢুকে যেতে বাধ্য হবে।
বস্নগার রাজীব হত্যার ঘণ্টা দুই আগে এবারের গণবিস্ফোরণের সূতিকাগার শাহবাগ মঞ্চ থেকে আন্দোলনের নয়া কর্মসূচিসহ জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা এবং বয়কট করার জোর দাবি জানানো হয়। রাজীব হত্যার পর শাহবাগ মঞ্চ, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে জামায়াত-শিবিরকে প্রতিহত করার ঘোষণাসহ ১৮ ফেব্রুয়ারি সোমবার দেশব্যাপী জামায়াত আহূত সকাল-সন্ধ্যার হরতাল প্রত্যাখ্যান ও প্রতিহত করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ১৬ ফেব্রুয়ারি শনিবার রাজীবের কফিন ছুঁয়ে শপথ নিয়েছে প্রজন্ম চত্বরের জনসমুদ্র। জাতীয় পতাকায় আচ্ছাদিত হয়ে কফিনে শুয়ে শেষবারের মতো প্রিয় শাহবাগে এলেন আহমেদ রাজীব হায়দার। বীরকে শ্রদ্ধা জানাতে লাখো মানুষ নীরবে উঠে দাঁড়ালেন। সন্ধ্যায় রাজীবের কাফন ছুঁয়ে সহযোদ্ধারা শপথ নিলেন 'মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার আর জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত কেউ রাজপথ ছাড়বেন না।' শপথবাক্যে বলা হয়, 'পাড়ায় পাড়ায় প্রতিরোধ কমিটি করে নির্মূল করা হবে যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াত-শিবির। প্রজন্ম চত্বরের গণজাগরণের সহযোদ্ধা হয়ে যে যুুদ্ধ শুরু করেছিলেন রাজীব, যুদ্ধাপরাধী জামায়াত-শিবিরমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত সে যুদ্ধ শেষ হবে না। রাজীবের রক্তঋণ শোধ হবে রাজাকার-আলবদর আর তাদের দল জামায়াত-শিবির নিশ্চিহ্ন করার মধ্য দিয়ে।'
একাত্তরের ঘাতকদের ১৮ ফেব্রুয়ারি আহূত হরতাল আবারও প্রতিহত করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে ১৬ ফেব্রুয়ারি আন্দোলনের মঞ্চ থেকে। কোন দল বা ব্যক্তি যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নিলে তাদেরও প্রতিহত করার ঘোষণা দেয়া হয়। ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির নেতারাও যার যার অবস্থান থেকে এই হরতাল প্রতিহত করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এদিকে রাজীব হত্যার পরেও একাত্তরের ঘাতকরা হুমকি-ধমকি দিয়ে যাচ্ছে। এই প্রচ- গণরোষের মধ্যেও তারা সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালনের ঘোষণা দিয়েছে। একই সঙ্গে একাত্তরের ঘাতক, ধর্ষক মানুষ নামের নরকের কীট, ধর্মব্যবসায়ী জামায়াতচক্র বিভিন্নভাবে প্রচার মাধ্যমে ধর্মের দোহাই দিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। ঘাতকচক্র নিহত রাজীবের নামাজে জানাজার ইমাম এবং আরও ১৭ জন বস্নগার অ্যাকটিভিস্টকে হত্যার হুমকি দিয়েছে বলে ১৭ ফেব্রুয়ারি বিবিসির প্রভাতী খবরে বলা হয়। বিবিসি প্রায় প্রতিদিন কোন জামায়াতি নেতা বা সাংবাদিক নেতা অথবা ওদের কোন দোসরদের মন্তব্য প্রচার করে। বিবিসির বক্তব্য জামায়াত তাদের অস্তিত্বের জন্য আন্দোলন, সংগ্রাম বা হরতাল করে যাচ্ছে। দেশবিরোধী এই ঘাতকচক্রের হামলা, ধ্বংসাত্মক ও সন্ত্রাসী কর্মকা-কে তারা আন্দোলন বলে চালিয়ে যাচ্ছে।
গত ১২ দিনে শাহবাগ আন্দোলনের ঢেউ এবং সর্বশেষ বস্নগার রাজীবকে নির্মম হত্যার পর জামায়াত-শিবির এখন একঘরে ও জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো_ জনসমর্থনহীন জামায়াত-শিবিরের শক্তি ও সাহসের উৎস কোথায়? একাত্তরের খুনি-রাজাকার-আলবদর-আলশামস চক্রকে মদত দিচ্ছে কে? এটা এখন সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত সত্য যে, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করার জন্যই বিএনপির নেতৃত্বে ১৮ দলীয় জোট গঠন করা হয়েছে। ১১ ফেব্রুয়ারি এক বিবৃতিতে বিএনপি শাহবাগ আন্দোলনকে ফ্যাসিবাদের বহিঃপ্রকাশ বলে আখ্যায়িত করেছে। ওই বিবৃতির কয়েক ঘণ্টা পর ১২ ফেব্রুয়ারি অপর এক বিবৃতিতে একদিকে শাহবাগ আন্দোলনকে সমর্থন, অন্যদিকে একাত্তরের রণধ্বনি জয়বাংলা সেস্নাগানকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেছে। শাহবাগ মঞ্চ থেকে বার বার উচ্চারিত জয়বাংলা সেস্নাগানকে বিএনপি একেবারেই সহ্য করতে পারছে না। কেননা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার জেনারেল জিয়াউর রহমান বীর-উত্তম একাত্তরের রণধ্বনি জয়বাংলা সেস্নাগান ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে হত্যা করেননি, একাত্তরের গণধিকৃত বর্বর ঘাতক জামায়াত-শিবিরকে রাজনীতিতে তিনিই পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেছেন।
এতকিছুর পরেও জামায়াতকে ছাড়তে পারছে না বিএনপি। রাজীব হত্যার নিন্দা বা রাজীবের পরিবারের প্রতি সামান্যতম সহানুভূতিও দেখায়নি দলটি। এটা বুঝতে কারও অসুবিধা হচ্ছে না যে, বিএনপি ও বেগম জিয়ার মদতেই জামায়াত-শিবির এখনও লাফালাফি করছে। বিএনপি সমর্থন না দিলে জামায়াত এত স্পর্ধা দেখাতে পারত না। ১১ ও ১২ ফেব্রুয়ারি বিএনপির পরস্পরবিরোধী বিবৃতি থেকে বোঝা যায়, যুদ্ধাপরাধী জামায়াত-শিবিরকে সমর্থনের ব্যাপারে দলটি ভেতরে ভেতরে দু'ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। যদ্দুর জানা যায়, বেগম জিয়া এবং জিয়া পরিবার যে কোন মূল্যে জামায়াত-শিবিরকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করার পক্ষে। এ মাসের গোড়ার দিকে বিএনপি নেতা তরিকুল ইসলাম বলেছিলেন, 'ট্রাইব্যুনাল ভেঙে দেয়া সংক্রান্ত জামায়াতের দাবি সমর্থন করে না বিএনপি।' এতে তীব্র ক্ষোভ জানায় জামায়াত। আর জামায়াতের মান ভাঙাতে বেগম জিয়ার নির্দেশে ৯ ফেব্রুয়ারি নয়াপল্টনে ১৮ দলের সমাবেশ ডাকা হয়। কিন্তু বিক্ষুব্ধ জনমতের কথা বিবেচনা করে_ পুলিশ সমাবেশ করার অনুমতি দেয়নি অজুহাত দেখিয়ে ওই সভা স্থগিত করা হয়।
দেশের সব রাজনৈতিক দলসহ প্রায় সমগ্র জাতি যখন জামায়াত-শিবিরের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে, তখনো বেগম জিয়ার দল ঘাতকদের পক্ষে সাফাই গাচ্ছে। রাজীব হত্যার জন্য দেশের মানুষ যখন শোকাহত এবং রাজীবের পরিবার, শাহবাগ মঞ্চ এবং প্রচার মাধ্যম যখন এই অনাকাঙ্ক্ষিত হত্যার জন্য জামায়াত-শিবিরকে দায়ী করছে, তখনো বিএনপি নেতারা হত্যাকা-ের জন্য সরকারের ব্যর্থতাকে দায়ী করেছেন (কালের কণ্ঠ ১৭/২/১৩)। বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, 'দেশে ফ্যাসিবাদের চরম উত্থান ঘটেছে। দেশ ক্রমে গৃহযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে' (আমাদের অর্থনীতি ১৭/২/১৩)। শাহবাগ আন্দোলনের ব্যাপকতায় ভীত হয়েই দলবদলের কারিগর মওদুদ এসব আবোলতাবোল বলছেন বলে অনেকের ধারণা। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিএনপি জোট ভেঙে যাচ্ছে_ বিভিন্ন গণমাধ্যমের এমন খবরকে নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, 'এই জোট শুধু অটুট নয়, এটি আরও বৃহৎ এবং শক্তিশালী হবে' (কালের কণ্ঠ ১৬/২/১৩)। মাঝে মধ্যে জনমতকে বিভ্রান্ত করতে জামায়াত-শিবিরের বিপক্ষে দু'এক কথা বললেও বিএনপি সর্বশক্তি দিয়ে জামায়াত-শিবিরকে রক্ষা করে যাবে বলে পর্যবেক্ষক মহলের বিশ্বাস। বিপথগ্রস্ত জামায়াতকে টেনে তোলার জন্যই বিএনপি ১৭ ফেব্রুয়ারি রাজধানীতে সমাবেশের ডাক দেয়।
বিএনপি এবং বেগম জিয়া ছাড়া সমগ্র জাতিই এখন জামায়াত-শিবিরের বিপক্ষে। ইতোমধ্যে জনগণ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে শুরু করেছে। কয়েকদিন আগে চট্টগ্রামে এবং ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারে জামায়াতিদের হরতাল ফ্লপ করেছে। ১৫ ফেব্রুয়ারি শেওড়াপাড়ায় মুসলি্লরা শিবির চক্রকে পিটুনি দিয়েছেন। শাহবাগে জানাজা শুরুর আগে রাজীবের বাবা সমবেত জনতার উদ্দেশে বলেন, 'আজ এই কফিনে রাজাকারের লাশ থাকার কথা ছিল। অথচ আজ এখানে একটি নিষ্পাপ ছেলের লাশ। আমি এখানকার লাখো তরুণকে বলতে চাই_ রাজীবের স্বপ্ন ছিল সব যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি এবং আইন করে জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করা। তার স্বপ্ন শুধু এখন স্বপ্ন নয়, ১৬ কোটি বাঙালির দাবি। এই দাবি না আদায় করে তোমরা আন্দোলন ছেড়ে যাবে না। এই বিশ্বাস নিয়ে রাজীবের লাশ তোমাদের দিয়ে গেলাম।' ঘাতকদের দ্বারা নিহত হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে রাজীব তার মামাকে বলেছিলেন 'একাত্তরে যুদ্ধ করতে পারিনি। এবার রাজাকারমুক্ত দেশ গঠনে ভূমিকা রেখে সেই কষ্ট দূর করব। শাহবাগে আন্দোলনকারীদের রেখে পেট ভরে ভাত খেতে পারি না। গোসল আর চুল কাটার কাজটিও করব আন্দোলন শেষ করে। আমাকে তাড়াতাড়ি খেতে দাও মামা। বিকেলে সমাবেশ রয়েছে। হায়েনাদের ফাঁসি দেখে বিশ্রাম নেব।' রাজীব এখন চির বিশ্রামে চলে গেছেন।
শোকসন্তপ্ত পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'রাজীবকে হত্যা করে জামায়াত-শিবির প্রমাণ করেছে ওরা একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। স্বাধীন বাংলাদেশে রাজনীতি করার কোন অধিকার নেই জামায়াতে ইসলামীর।' মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, কথায় বলে_ 'সময়ের একফোঁড়, অসময়ের দশফোঁড়।' বিএনপি ছাড়া সমগ্র জাতি এখন জামায়াত-শিবিরের বিপক্ষে। স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ ও প্রতিহত এবং ওদের রক্ষক, দোসর ও মদতদাতা বিএনপির মুখোশ উন্মোচনের এখনই সময়। দৈনিক সংবাদ ১৭ ফেব্রুয়ারি সম্পাদকীয় নিবন্ধে যথার্থই লিখেছে 'জামায়াত-শিবির তার অস্তিত্ব রক্ষার জন্য এখন মরিয়া হয়ে উঠেছে। শাহবাগ নবজাগরণ ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানানোর মধ্য দিয়ে জামায়াতের মৃত্যুঘণ্টা বেজে গেছে। জামায়াত এখন মরণকামড় দিতে উদ্যত। শুধু প্রশাসনিক আদেশে নিষিদ্ধ নয়, জামায়াতকে সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে প্রতিরোধ করতে হবে। এখনই উপযুক্ত সময়।... জামায়াতকে ঐক্যবদ্ধভাবেই প্রতিহত করতে হবে।'
২| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:০৯
tarek.enamul বলেছেন: আর কত রক্ত ঝরালে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা হবে?
৩| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:৩২
"চিত্ত যেথা ভয় শূণ্য, উচ্চ সেথা শির" বলেছেন: ছাগু, বিলাই বাহিনি নিপাত যাক
৪| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:৩২
"চিত্ত যেথা ভয় শূণ্য, উচ্চ সেথা শির" বলেছেন: ছাগু, বিলাই বাহিনি নিপাত যাক
©somewhere in net ltd.
১|
১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৯:৪৮
রাহিক বলেছেন: জামায়াতকে নিষিদ্ধ করলে আওয়ামী লীগ রাজনীতি করবে কি নিয়ে ?