নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সবার কথা

আহমেদ রশীদ

আহমেদ রশীদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

তারেক ভীতি, আওয়ামী লীগের না বিএনপির?

০৩ রা জুন, ২০১৩ সকাল ৮:৫৭





রাজনীতিতে এখন তারেক ঝড় বয়ে যাচ্ছে। বিএনপি বলছে তারেকের দেশে ফিরে আসার কথা শুনে সরকারের ভিত নড়ে গেছে। আবার সরকার বলছে তারেককে যথাযথ আইনের মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। বিএনপি নেতা শামসুজ্জামান দুদু তারেককে ভাবী প্রধানমন্ত্রী বলার পরদিনই নিম্ন আদালত থেকে তারেককে পলাতক দেখিয়ে ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। তারেক দেশের ভাবী প্রধানমন্ত্রী এ কথা শুনে বিশিষ্ট কলামিস্ট আব্দুল গাফফার চৌধুরী বলেছেনÑ ‘তারেক প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে যেন আল্লাহ ওনার মৃত্যু দেন।’ কিন্তু নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে যদি বিচার করা হয় তাহলে তারেক জিয়ার উত্থান ও রাজনীতিতে তার যে পথভ্রষ্ট হয়েছিল তাও তো আর মিথ্যে হয়ে যাবে না। এহেন কোনো কর্ম নেই এ বরপুত্র করেননি। তার রাজনীতিতে আসা কিন্তু ইতিবাচক ছিল। সুদর্শন স্মার্ট খুব সাদামাটা একটা মানুষ গত বিএনপি আমলে রাজনীতিতে আসাকে অনেকেই ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দেখেছিল। বিশেষ করে ছাত্রদলের ইউনিয়ন পর্যায়ে রাজনীতিক যোগ সৃষ্টি করে সে সময় বেশ আলোচিতও হয়েছিলেন বেগম জিয়ার বড় পুত্র। কিন্তু তারেক রহমান তার ভালো মানুষিটা ধরে রাখতে পারেননি। একদল অসৎ ও রাজনৈতিক শিষ্টাচার বিবর্জিত লোককে তার ডান পাশে বাম পাশে বসিয়ে ক্ষমতার মোহে অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। হাওয়া ভবন কেন্দ্রিক দ্বিতীয় পাওয়ার হাউজ তৈরি করে সে সময় অনেকটা খোলামেলাভাবেই তার নেতৃত্বে ঘুষ বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্য, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি সবকিছু তার অঙ্গুলির ইশারায় হতো। সে সময় বিএনপির সিনিয়র অনেক নেতা মন্ত্রী পর্যন্তও তারেক সিন্ডিকেটের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন। তৎকালীন অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান তো কয়েকবার মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেয়ার কথাও বলেছিলেন। পরে খালেদা জিয়ার হস্তক্ষেপে শেষ পর্যন্ত রক্ষা হয়। তারেক জিয়ার দুর্নীতি ও বিদেশে অর্থ পাচারের গল্পগুলো কিন্তু গালগল্প ছিল না। যাই হোক তারেক জিয়ার অনেক বদনাম আছে। কিন্তু তিনি পলাতক! এটা রাজনৈতিক বাক্যালাপ ছাড়া কিছুই নয়। কেননা সরকার জানে তারেক জিয়া লন্ডনে বসে বিএনপির রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছেন। বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা লন্ডনে গিয়ে তারেক জিয়ার আশীর্বাদ নিয়ে এসে রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছেন। তারেক জিয়া লন্ডনে থাকার কারণে অনেক ছাত্রদল নেতা যুবদল ও বিএনপির মিড পর্যায়ে নেতারা ঘন ঘন লন্ডন সফর করছেন। কারণ একটাইÑ তারেক জিয়ার আশীর্বাদ নেয়া। বিএনপি যারা করে সেটা বিএনপির স্থায়ী কমিটি থেকে কেন্দ্রীয় পর্যায়ের অধিকাংশ নেতাই তারেক জিয়ার সুদৃষ্টি নিয়েই রাজনীতিতে টিকে থাকতে চান। কারণ একটাইÑ বিএনপির সমর্থক, কর্মী, নেতারা মনে করেন তারেকই আগামী দিনের কা-ারি। অর্থাৎ বিএনপি ক্ষমতায় আসলে তারেক জিয়ার নেতৃত্বেই সরকার পরিচালিত হবে।



২. তারেক প্রীতি বা বিদ্বেষী হওয়ার জন্য বলছি না। তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে যেসব মামলা আছে বিশেষ করে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলাও কিন্তু সরকার ইতি টানতে পারেনি। যেসব মামলা দিয়ে সরকার চাইলে অতি সহজেই তারেক জিয়াকে বিচারের মুখোমুখি করতে পারতো কিন্তু সরকার রাজনৈতিক কৌশল হিসেবেই হোক বা ইচ্ছে করেই হোক তা করেনি। কিন্তু কেন? বিএনপির অনেক নেতা যারা পরিচ্ছন্ন রাজনীতির অধিকারী তারাও কিন্তু গরু চুরির মামলায় মুরগি চুরির মামলায় জেল খেটেছেন। কোকোর পাচার করা অর্থ সিঙ্গাপুর থেকে আদালতের মাধ্যমে দেশে ফেরত এসেছে কিন্তু কোকো কিন্তু আসেননি। অর্থ পাচারকারী হিসেবে কোকোকে আইনের আওতায় আনতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। একই রূপে তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলাগুলো এতো ধীরগতিতে চলছে যে এ মামলাগুলোর কূলকিনারাই সরকার করতে পারেনি। যেহেতু কোর্ট থেকে তারেককে এখনো কোনো মামলায় সাজা দেয়া যায়নি তাহলে তারেক রহমান অপরাধী সেটা বলাও তো এক ধরনের অপরাধ বলে প্রচার করছেন বিএনপির আইনজীবীরা। সরকারের হাতে পাঁচটি বছর সময় ছিল; এ পাঁচ বছরেও সরকার তারেক রহমানকে বিচারের মুখোমুখি করতে পারেনি। এ ব্যর্থতার দায়ভার সরকারকেই নিতে হবে। এখন ক্ষমতার শেষ প্রান্তে এসে ইন্টারপোলের মাধ্যমে তারেক রহমানকে পলাতক দেখিয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়না এক ধরনের রাজনৈতিক স্ট্যান্টবাজি বলেই ধরে নিতে হচ্ছে। সামনে নির্বাচন, বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে তার দেশে আসাই উচিত। কারণ বিএনপি রাজনীতি এখন পুরোটাই তারেক নির্ভর। আর বেগম খালেদা জিয়াও চান তারেক রহমান বিএনপির হাল ধরুক। তাই তারেক রহমানের দেশে আসা নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক হতেই পারে কিন্তু তাকে দেশান্তরী করে রাখার মতো কোনো মওকা সরকারের হাতে নেই। এখন তারেক রহমান দেশে ফিরে কিভাবে আইনি মোকাবেলা করবেন সেটা তার ব্যাপার। কারণ এ সরকার যখন ক্ষমতা ছেড়ে দেবে তখন প্রশাসন আওয়ামী লীগের লোকজনের কথা শুনতে বাধ্য নয়। নিম্ন আদালত থেকে তারেক রহমানের শাস্তি হলে উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেবেন আর তখন উচ্চ আদালত থেকে তারেক জিয়ার জামিন পেতে সমস্যা হবে না। কারণ এদেশে আইন বিচার সবই ক্ষমতাকেন্দ্রিক।



৩. অতি প্রচলিত একটা প্রবাদ আছে ‘চুন খেয়ে মুখ পুড়লে দই দেখলেও ভয় জাগে’। তারেক জিয়া রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হলে আর বিএনপি ক্ষমতায় আসলে আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার জন্য যা যা করা লাগে তা সবই করবে, এটা আগাম বলে রাখা যায়। তারেক জিয়া সংশোধিত হবেন কিনা এটা একান্তই ওনার ব্যাপার। কিন্তু ওনার চারপাশে এখনো যারা ঘুরঘুর করে তাতে পূর্বরূপে যে তারেক রহমান স্বমহিমায় ফিরবেন তাও দিনের আলোর মতনই সত্য। তার ওপর ১/১১’র দুঃসহ স্মৃতি তাকে প্রতিনিয়ত তাড়া করে বেড়াচ্ছে। সব মিলিয়েই একটা শঙ্কা বিরাজ করছে। এ শঙ্কাটা শুধু আওয়ামী লীগের নয় বিএনপির অনেক সিনিয়র নেতারও। কারণ তারেক রহমান যতো বেশি বিএনপি নিয়ন্ত্রণ করবেন ততো বেশি প্রবীণ নেতারা কদর্য হারাবেন। তাই ভয়টা তাদের মধ্যেই বেশি কাজ করছে। মনে আছে মান্নান ভূইয়াদের কথা। বামপন্থী এ নেতা অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে বিএনপির হয়ে কাজ করলেও কিন্তু শেষাবধি বিএনপিতে ভাঙনের সুর তুলেছিলেন। তার এতো প্রিয় বিএনপি উনি ভাঙতে চেয়েছেন কারণ মান্নান ভূইয়া তৎকালীন বিএনপির মহাসচিব হিসেবে প্রত্যক্ষ করেছেন তারেক রহমানের দৌরাত্ম্য। তাই উনি সময় ও সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন হয়তো! শেষাবধি সুযোগ আসলে তা কাজেও লাগান। তার এ ভাঙনের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য যাই-ই থাকুক তিনি কিন্তু দেশের জন্য বড় একটা কাজ করতে চেয়েছেন। কারণ রাজনৈতিক দূরদর্শী এ মানুষটি জানতেন বিএনপি টিকলে তারেক কোনো না কোনোভাবে রাজনীতিতে স্থায়ী হবেন। এবং একদিন না একদিন তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত হয়ে যেতে পারেন। তাই বিএনপি শক্তিটাকে দুভাগ করার প্রচেষ্টা নিয়েও শেষ পর্যন্ত সফল হতে পারেননি। জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক কৌশল ও আদর্শ ও বেগম জিয়ার রাজনৈতিক শিষ্টাচারের বিপরীত স্রোতে চলা মানুষ হচ্ছেন তারেক রহমান। তারেক রহমানের কাছে ক্যাবিনেট বলে কিছু ছিল না; চাপিয়ে দেয়া ছিল তার অন্যতম লক্ষ্য। যা নিয়ে কিচেন কেবিনেটের অনেকেই মনঃক্ষুণœ হয়েছেন বলে শোনা গেছে। পরিশেষে একটুকুই বলবো তারেক রহমান নিয়ে ভীতি ছড়াচ্ছেন তার দলের লোকেরাই। যারা তারেক-প্রীতি দেখিয়ে মুখে ফেনা তুলছেন কিন্তু গোপনে তারেক বিদ্বেষী হয়ে বিভিন্ন উপায়ে তারেক রহমানের দেশে আসা ঠেকাতে চান। আর পুরো বিষয়টি তারা সরকারকে দিয়ে করাতে চাচ্ছেন। আর সরকারের কোনো কোনো মন্ত্রীর তারেক রহমান সম্পর্কে কটূক্তিকে দুর্বলতা বলে ধরে নিচ্ছে বিরোধী দল। সামনের দিনগুলোতে বিরোধী দলের রাজনৈতিক কৌশল, আন্দোলন সংগ্রাম ও সরকারি দলের মেয়াদের শেষ সময়টাতে বিরোধী দলকে মোকাবেলা ও নির্বাচনী প্রস্তুতি সবকিছু মিলেই রাজনীতির মাঠ গরম থাকবে। তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুতে দুই শিবিরে দুই রকমের অবস্থান ও আগামী জাতীয় নির্বাচনই প্রমাণ করবে গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা।



মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা জুন, ২০১৩ সকাল ১০:১২

এ সামাদ বলেছেন: সুন্দর লেখা।

তবে .................................

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.