নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সবার কথা

আহমেদ রশীদ

আহমেদ রশীদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

দেশে এখন অনেকেরই মন খারাপ

২৪ শে জুন, ২০১৪ সকাল ৭:৪৬

নানা কারণে দেশে এখন অনেকেরই মন খারাপ। অনেকের সাথে আমারও মন খারাপ অর্ধ ডজন যুদ্ধাপরাধীর বিচারের চুড়ান্ত রায় দিতে এত দেরি হচ্ছে কেন সেই কারণে। আওয়ামী লীগের অনেক সমর্থকদের মন খারাপ এই কারণেই কেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ বুঝতে পারছেন না কয়েকজন অর্বাচীন ব্যক্তির কারণে দলের সুনাম যে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সেই বিষয়টি? দেশের এক শ্রেণির সুশীল সমাজ আর জামায়াত-বিএনপি’র বেজায় মন খারাপ চীনের একটি কোম্পানির সাথে বাংলাদেশের পদ্মা সেতু নির্মাণের চুক্তি হওয়ার কারণে। এই চুক্তি হওয়ার কথা ছিল আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের পূর্বের মেয়াদকালে। সেতু হলে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ছয় কোটি মানুষ উপকৃত হতেন। সেই সেতুটি যাতে নির্মাণ না হয় তার জন্য বিরোধী দলতো বটেই একটি অত্যন্ত শক্তিশালী সুশীল সমাজের লবি বিশ্বব্যাংকের কাছে সে কী দেন দরবার। শেষতক সেতুর অর্থায়ন বিষয়ে বিশ্বব্যাংক চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে বললো তারা সেতু নির্মাণকালে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছেন অতএব তারা এই সেতুতে অর্থায়ন করার আগে পুরো বিষয়টা তদন্ত করবেন। সরকার তাদের স্বাগত জানালো। বেশ সময় নিয়ে তদন্ত হলো কিন’ কোনো চূড়ান্ত কিছু পাওয়া গেল না। যে কানাডীয় কোম্পানিটি এই ষড়যন্ত্রের মূল অংশীদার বলে বিশ্বব্যাংকের ধারণা সেই এসএনসি-লাভলিনের দুজন মাঝারি পর্যায়ের কর্মকর্তাকে সে দেশে গ্রেফতার করা হলো । আদালতে মামলা উঠলো কিন’ দুই বছরেও সেই মামলার কোনো সুরাহা হলো না । কিছুদিন আগে সে দেশের আদালত বাংলাদেশের একজন অভিযুক্তকে সেই মামলা হতে অব্যাহতি দিল এই বলে যেহেতু সেই ব্যক্তি কানাডার নাগরিক নন সেহেতু তাকে সে দেশে বিচার করা যাবে না। এটি আবিষ্কার করতে তাদের এত দীর্ঘ সময় লাগলো? বাংলাদেশ বললো চাই না তোমাদের অর্থ, আমরা আমাদের নিজস্ব অর্থেই এই সেতু নির্মাণ করবো। সুশীলদের চোখ কপালে উঠলো। বলে কী শেখ হাসিনার সরকার? তিনি কী বুঝতে পারছেন না এটি কোনো বাঁশের সাঁকো নয়? বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অত্যন্ত সিনিয়র অধ্যাপক আমাকে বললেন ভাই শেখ হাসিনা দেশের এমন সর্বনাশ না করলেই কী হতো না? কী সর্বনাশ করলেন আবার তিনি? কেন শুনেন নি তিনি পদ্মা সেতুর সকল অর্থ তুলে মেরে দিয়েছেন? বলি কোথায় আপনি এই খবর পেলেন? কোনো অর্থইতো ছাড় করা হয়নি? তিনি শুনবেন কেন আমার কথা? তিনি কী আমার চেয়ে কম জানেন? টিভির রাতের টকশোগুলি বেশ সরগরম। শেখ হাসিনা দেশের এমন একটা সর্বনাশ না করলে পারতেন। জামায়াত-বিএনপি জোট বললো এই মুহূর্তে সরকারের পদত্যাগ করা উচিত। তাদের সাথে সুর মেলালেন সুশীল ভাইয়েরা। অনেকটা শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে বুধবার চীনা কোম্পানির সাথে সেতু নির্মাণের চুক্তি সই হলো। সব ঠিকঠাক থাকলে ২০১৮ সাল নাগাদ পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে যানবাহন চলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সরকার ঘোষণা করেছেন এই সেতুতে রেল চলাচলের ব্যবস’াও থাকবে। এর ফলে বর্তমানে রেলপথ বিহীন জেলা বরিশালেও রেল চলবে। বিএনপি আর সুশীল শিবিরে চাপা উত্তেজনা। সুশীলরা প্রকাশ্যে এখনো তেমন একটা প্রতিক্রিয়া না দেখালেও দু’একজনকে দুঃখভারাক্রান্ত হৃদয়ে বলতে শুনেছি ‘আওয়ামী লীগতো মনে হয় পাঁচ বছরের জন্য টিকেই গেল’। বিএনপি’র ভারাক্রান্ত্র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বৃহস্পতিবার বললেন ‘জনগণের অর্থ চুরি করার জন্য চীনের সাথে এই সেতু নির্মাণের চুক্তি হয়েছে। সেতুই যদি নির্মাণ করবে তাহলে বিশ্বব্যাংকের সাথে কেন এই চুক্তি হলো না? সেখানে চুরি করা যাবে না বলে?’ এই বুদ্ধি নিয়ে তিনি দীর্ঘদিন একটি বড় দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব? বিশ্বব্যাংকের অর্থ চুরি করা যায় না এমন বিশ্বাস তাঁর কেন হলো? বিশ্বব্যাংকের অর্থ বড় আকারে চুরি হয় তবে তার বেশির ভাগই করে ব্যাংকের সাথে সংশ্লিষ্ট লোকজন, তবে অন্য নামে যার একটি হলো ফান্ড ব্যবস’াপনা আর পরামর্শক ফী। এই সব অর্থের একটি বড় অংশ ফেরত যায় যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ অথবা তাদের নির্বাচিত অন্য কোনো রাষ্ট্রে, ভিন্ন উপায়ে। বিশ্বব্যাংক আর আইএমএফ’র এই সব অনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রচুর গবেষণা আর লেখালেখি হয়েছে।

বিএনপি’র মন খারাপ কারণ তাদের তথাকথিত সরকারবিরোধী আন্দোলন তেমন জমছে না। আন্দোলন দলের কেন্দ্রীয় অফিসের স’ায়ী বাসিন্দা রুহুল কবির রিজভী আর মির্জা ফখরুলের হালুম হুলুমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। দলের চেয়ারপার্সন বেগম জিয়া তাঁর বৈকালিক ভ্রমণের অংশ হিসেবে তাঁর গুলশানস’ দপ্তরে রাত করে যান, দু’একটি বয়ান ছাড়েন তারপর নিজ গৃহে ফিরে আসেন। মাঝে মধ্যে তাঁর মোর্চার ওয়ান পার্টির কয়েক জনকে ডেকে শলাপরামর্শ করেন। বলেন আগাম নির্বাচনের জন্য সংলাপ শুরু না করলে ঈদের পর গণআন্দোলনের তোড়ে এই সরকার ভেসে যাবে? আমার বন্ধু আক্কাস আলী নিউইয়র্ক হতে ফোন করে জানতে চায় ভাই কোন ঈদ? বলি সামনের কোনো এক ঈদ হবে হয়তো। আওয়ামী লীগের নেতারা বলেন কোনো সংলাপ বা আগাম নির্বাচন হবে না। বেগম জিয়া বলেন ‘আওয়ামী লীগকেই আমার সাথে এসে আলোচনা করতে হবে। আমি ৯৫% জনগণের প্রতিনিধি?’ ফোন করে আবার আক্কাস। ‘আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের সব নেতা কর্মীরা কী সকলে জোট বেঁধে বিএনপিতে যোগ দিল? সিপিবি, বাসদ জাসদ সহ আওয়ামী লীগের এত মিত্রদেরই বা কী হলো?’ আক্কাসকে বলি যতটুকু জানি সাম্যবাদী দলের নামে কিছু লোকজন বিএনপিতে যোগ দেয়ার খবর আছে। আসলে কিছু মিডিয়া আর এক শ্রেণির সুশীল বাবুরা বেগম জিয়া আর তাঁর জ্যেষ্ঠ সন্তান তারেক রহমানের মাথা বিগড়ে দিয়েছেন। লন্ডনে বসে তারেক রহমান তার ‘গবেষণালব্ধ’ ঐতিহাসিক তত্ত্ব তার অনুসারীদের সামনে হাজির করে বললেন তার আব্বাজান জেনারেল জিয়া বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেয়া অবৈধ। তার অনুসারিরা সকলে হুক্কাহুয়া করে উঠলেন। না দেশের নাদান মানুষ তা তেমন একটা খেল না। তারেক জিয়াতো বটেই তার অনুসারীদের সকলের মন খারাপ। বিএনপি’র দুজন উপদেষ্টা আছেন। লোকে বলে রহমান-রহমান। তাঁরা তারেক রহমানকে উপদেশ দিলেন ‘দেশে মোড়ক উন্মোচন করুন না আপনার এই অসাধারণ তত্ত্বসমৃদ্ধ বইটির?’ যেই কথা সেই কাজ। বেশ ঘটা করে গত রোববার এই ‘অমূল্য’ গ্রনে’র মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এককালের উপাচার্য রাজনীতিবিজ্ঞান বিভাগের পণ্ডিত অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমেদ। লোকে বলে বেগম জিয়া এই পণ্ডিত ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি করতে চেয়েছিলেন। তাঁর লোকজন বুুঝতে না পেরে ছুটে গিয়েছিলেন অধ্যাপক ইয়াজুদ্দীনের কাছে। তাঁকেই ফোনে কথা বলিয়ে দিয়েছিলেন। তারপর হতে অধ্যাপক এমাজউদ্দীন বসে আছেন আবার কখনো যদি তাঁর ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়। সুতরাং তারেক রহমানের অমূল্য গ্রনে’র মোড়ক উন্মোচন হবে তিনি কী ভাবে ঘরে বসে থাকেন? তাঁর সঙ্গী হলেন আরো কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের এমন দেউলিয়াপনা নজিরবিহীন। না এই অনুষ্ঠানের সংবাদটি পাবলিক তেমন খেল না। গণমাধ্যমও তেমন সংবাদটির একটা ভালো ট্রিটমেন্ট দিল না । আবার সকলের মন খারাপ।

এরই মধ্যে ভারতে লোকসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদির দল বিজেপি বিশাল ব্যবধানে বিজয়ী হলো। বিএনপি শিবিরে সেকি আনন্দ। মনে হচ্ছিল বিজয় নরেন্দ্র মোদি বা বিজেপি অর্জন করে নি, করেছে বিএনপি। খবর রটলো আমন্ত্রিত হয়ে মোদির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন বেগম জিয়া । লন্ডন হতে জিয়া তনয় তারেক রহমান মোদিকে ‘বড় চাচা’ সম্বোধন করে চিঠি লিখে অভিনন্দন জানালেন। সকলে বলাবলি করলো এবার মোদি বেগম জিয়াকে ক্ষমতায় বসিয়ে তিনি অন্যান্য কাজে কর্মে হাত দেবেন। কোথায় কী? শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনার পরিবর্তে গেলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী। বাংলাদেশ সফরে আসছেন সে দেশের নূতন পররাষ্ট্র মন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। শোনা যাচ্ছে এরপর নরেন্দ্র মোদি আসবেন। ফের মন খারাপ বিএনপি শিবিরে।

সবশেষ মন খারাপের কারণটি ঘটলো গত বৃহস্পতিবার। দেশের উচ্চ আদালত জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সালামের এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁদের রায়ে বললেন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ১৫৪ জন সংসদ সদস্যের বিষয়ে কোনো প্রশ্ন তোলা যাবে না। বাদি গণপ্রতিনিধি আদেশের ১৯ ধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এই রিটটি দায়ের করেছিলেন। বিএনপিসহ এতদিন যারা ১৫৪ জন সংসদ সদস্যের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন গণতন্ত্রের পরিপনি’ বলে হৈ চৈ করছিলেন তাঁদের মন নিশ্চিতভাবে খারাপ। তাদের অনেকেরই আবার মন্তব্য তা হলে কী আওয়ামী লীগ পাঁচ বছর টিকে গেল?’ আসল কথা হচ্ছে যারা মন খারাপ করেছেন তাদের অনেকেই গত ৫ই জানুয়ারির আগে বিএনপি-জামায়াত জোটকে আন্দোলনের নামে দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করিয়ে আর একটি এক এগার সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন। তেমনটি হলে শপথ নেয়ার জন্য অনেকেই প্রস’তিও গ্রহণ করেছিলেন। শেখ হাসিনার কিছু দুঃসাহসী সিদ্ধান্তের কারণে তাদের সেই ইচ্ছে পূর্ণ হয়নি বলে তাদের সকলেরই মন খারাপ। সেই জন্যই বিএনপি’র চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া নিয়মিত আর একটি পনেরই আগস্টের হুমকি দেন। তা শুনে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের মন খারাপ হয়। বিএনপি-জামায়াত-আর তাদের পোষ্য সুশীলদের জন্য যখন কোনো দিক থেকেই ভালো খবর আসছে না তখন তাঁরা নারায়ণগঞ্জের মেয়র সেলিনা হায়াত আইভিকে বেছে নিল। এখন তাঁকে দিয়েই নানা রকমের তোপ দাগানো হচ্ছে। বেচারা বুঝতে পারলো না তাঁরও রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এই কায়েমী স্বার্থান্বেষী মহলটি শেষ করে দিচ্ছে। তাই দেশে আমার নিজের মন খারাপ। যখন আইভি মেয়র নির্বাচনে শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয় লাভ করলো তখন বেশ খুশি হয়েছিলাম। মনে করেছিলাম যাক একজন যোগ্য মানুষকে নারায়ণগঞ্জের মানুষ নির্বাচিত করলো। তাঁর যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন করার কোনো সুযোগ আমার নেই কিন’ তাঁর রাজনৈতিক দূরদর্শিতা নিয়ে আমি সন্দিহান।

২৩ জুন আওয়ামী লীগের ৬৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠিত হবে। আশা করবো আগামী সময়ে দলে শুদ্ধি অভিযান চালিয়ে শেখ হাসিনা তাঁর সকল শুভাকাঙ্ক্ষীদের মন ভালো করার কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে জুন, ২০১৪ সকাল ৯:৪৮

মাইরালা বলেছেন: আজ যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনালের রায়! তদন্তে মিথ্যার পাহাড়, নান্নু স্ক্যান্ডালসহ একের পর এক স্ক্যান্ডাল প্রমাণ করেছে মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ শুধুই মিথ্যা ছাড়া কিছু নয়! সেই সাথে মাওলানা নিজামী একজন নির্দোষ ব্যক্তি হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে! কিন্তু আওয়ামী ট্রাইবুনাল থেকে যে অন্যায় রায় আসবে, অবিচারের রায় আসবে সেটা সহজেই অনুমেয়!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.