![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নাটের গুরু তিনি। যার চক্রান্তের শিকার হয়েই আইসিসির সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন আ হ ম মুস্তফা কামাল। কাল পদত্যাগ করার সময় তাকে ঘিরেই অধিকাংশ কথা বলেছেন লোটাস কামাল। কিন্তু নামটা একবারও মুখে উচ্চারণ করেননি। তিনি বলেন, 'ওই লোকটি নাম মুখে নিতেও আমার ঘৃণা হয়।' নাম না বললেও বুঝতে কষ্ট হয় না, ঘৃণিত ওই লোকটির নাম এন শ্রীনিবাসন! বিতর্কিত এই লোকটিকে তার কৃতকর্মের জন্য কিছুদিন আগে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড-বিসিসিআইয়ের সভাপতির পদ থেকেও। তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন ডালমিয়া। শ্রীনিবাসনের বিরুদ্ধে ভারতে অনেক মামলা রয়েছে। তার বিরুদ্ধে রয়েছে ম্যাচ পাতানোর মতো গুরুতর অভিযোগও। তার মেয়ে-জামাই মায়াপ্পন সরাসরি ম্যাচ পাতানোর দায়ে অভিযুক্ত। এতো অভিযোগ যার বিরুদ্ধে সেই লোককে কীভাবে আইসিসির চেয়ারম্যান পদে রাখা হলো? এ ব্যাপারে কেন আইসিসি কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বা আইসিসির সভাপতি হিসেবেই বা আপনি কী করেছেন, এমন প্রশ্নে মুস্তফা কামাল বলেছেন, 'যখন তিনি আইসিসির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েছিলেন, তখন অভিযোগ ছিল না।'
শ্রীনিবাসনের চক্রান্তের শিকার হয়ে মুস্তফা কামাল পদত্যাগ করলেও তার বিরুদ্ধে তিনি মামলা করতে রাজি হননি। কামাল মনে করেন, এখন তার বিরুদ্ধে মামলা করলে তা আইসিসির বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। একজন ক্রিকেটপ্রেমিক হিসেবে তা করতে চান না কামাল। তবে শ্রীনিবাসনের মতো ব্যক্তিরা যাতে আইসিসিতে রাজত্ব করতে না পারে তার প্রতিবাদ হিসেবেই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। 'আমার এই পদত্যাগে ক্রিকেটের বিজয় হয়েছে। সত্যের বিজয় হয়েছে। এখন গোটা বিশ্ব এই কারণটা অনুসন্ধান করবে। তখন বুঝতে পারবে আসল ঘটনা। এই কুৎসিত লোকগুলো থাকলে ক্রিকেটের উন্নতি হবে না।'
দেশই বড় কামালের কাছে
বিশ্বকাপ ক্রিকেটে কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশ পক্ষপাতিত্বের শিকার হয়েছে। কিভাবে দুই আম্পায়ার ইয়ান গোল্ড ও আলিম দার ভারতকে জিতিয়েছেন তা গোটা বিশ্ব দেখেছে। এসব পক্ষপাতিত্বে নীরব হয়ে বসে থাকতে পারেননি আইসিসিরি সভাপতি আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি এর প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। খেলা চলাকালে জায়ান্ট স্ক্রিনে ভারত জিতে গা, ভারত জিতে গা শ্লোগান দেখা যায়। জায়ান্ট স্ক্রিন পুরোপুরি আইসিসির অধীনে। এখানে কোনো দেশের পক্ষে শ্লোগান দিতে পারে না। অথচ ভারত গায়ের জোরে তাই করেছিল। এই অবৈধ কাজটিরও প্রতিবাদ জানান মুস্তফা কামাল। ব্যস্ এতেই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন আইসিসির চেয়ারম্যান শ্রীনিবাসন। যার বিরুদ্ধে স্বয়ং ভারতেই দুর্নীতির মামলা হয়েছিল। মুস্তফা কামাল ন্যায়ের পক্ষে কথা বলেছিলেন। বিশ্বকাপ ফুটবলে কোনো ম্যাচে বাজে রেফারিং হলে স্বয়ং ফিফার সভাপতিও সমালোচনা করে থাকেন। এর জন্য তাকে কোনো জবাবদিহিতার মধ্য পড়তে হয় না। কিন্তু মুস্তফা কামাল আম্পায়ারের সমালোচনা করাতে ক্ষোভের কি আছে। আর তিনি যা বলেছেন তাতো মিথ্যা বলেননি। কোয়ার্টার ফাইনালে বাজে আম্পায়ারিং ঘিরে বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় বয়ে যায়। গ্রেট ক্রিকেটাররাও ইয়ান গোল্ড ও আলিম দারের সমালোচনা করেন। বাদ যায়নি ভারতও।
আসলে মুস্তফা কামাল আইসিসি সভাপতি হওয়ায় শ্রীনিবাসন মেনে নিতে পারেননি। তিনি যে আইসিসির চেয়ারম্যান হন তা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। তিনি চেয়েছিলেন চেয়ারম্যান হিসেবে সব ক্ষমতা তার হাতে রাখতে। কিন্তু গঠনতন্ত্রে আইসিসির সভাপতিই হচ্ছেন বিশ্ব ক্রিকেটের মূল অভিভাবক। বাংলাদেশের কেউ বিশ্ব ক্রিকেটে কর্তৃত্ব দেখাবে এটা মেনে নিতে পারেননি শ্রীনিবাসন। তাই তিনি ফাঁক-ফোকর খুঁজছিলেন কিভাবে মুস্তফা কামালকে অপদস্ত করা যায়। কোয়ার্টার ফাইনালে বিতর্কিত আম্পায়ারিংয়ে সমালোচনা করার পর শ্রীনিবাসন ষড়যন্ত্রের অস্ত্র খুঁজে পান। ফাইনালে আগের দিন শ্রীনিবাসন আইসিসির বিশেষ সভা ডাকেন। যা তিনি পদাধিকার বলে কোনোভাবেই করতে পারেন না। কারণ আইসিসিসির সভা ডাকার অধিকার রাখেন শুধু সভাপতিই। এই সভায় শ্রীনিবাসন কঠোর ভাষায় মুস্তফা কামালকে বলেন, কোয়ার্টার ফাইনালে আম্পায়ারিং নিয়ে যা বলেছেন তা লিখিতভাবে প্রত্যাহার করতে হবে। কামাল স্পষ্টভাবেই বলেছেন, আমি সত্যের পক্ষে কথা বলেছি। সুতরাং প্রত্যাহারের প্রশ্নই উঠে না। এতেই শ্রীনিবাসন আইসিসিরি গঠনতন্ত্র ভঙ্গ করে ফাইনালে চ্যাম্পিয়ন দলের হাতে ট্রফি তুলে দেন। এমনকি কামালকে পুরস্কার বিতরণী মঞ্চেও ডাকা হয়নি। কামাল সেদিনই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, আইসিসি সভাপতি হলেও আমার কাছ দেশ বড়। সুতরাং অন্যায় মেনে নিলে ১৬ কোটি মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করা হবে। ফাইনালে পুরস্কার বিতরণী প্রসঙ্গে বলেন, গঠনতন্ত্র ভঙ্গ করে শ্রীনিবাসন পুরস্কার দিয়েছেন। এ জন্য আমি দেশে ফিরে আইনজীবীদের সঙ্গে আলাপ করব মামলার ব্যাপারে।
গতকাল দেশে ফিরে এসেছেন আ হ ম মুস্তফা কামাল। বিমানবন্দরে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, দেশ আমার কাছে বড়। তাই অন্যায় মানা আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। এই নোংরামির অবস্থার আমিতো থাকতে পারি না। তাই আইসিসির সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বাঙালিরা কারও কাছে মাথানত করে না এই পদত্যাগের মাধ্যমে ষড়যন্ত্রকারীদের বুঝিয়ে দিলাম। তার এ সিদ্ধান্ত সঠিক হয়েছে কিনা তা জানতে চাওয়া হয়েছিল জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক শফিকুল হক হিরার কাছে। তিনি বলেন কামাল পদত্যাগ করে সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছেন। আমি তার সাহসিকতা ও দেশপ্রেমের জন্য ধন্যবাদ জানাই। কোয়ার্টার ফাইনালে আম্পায়ারিং কতটা নিম্নমানের ও পক্ষপাতিত্ব ছিল তা গোটা দুনিয়াই দেখেছে। সুতরাং মাঠে উপস্থিত থাকা মুস্তফা কামাল নীরবভাবে বসে থাকেন কিভাবে। আইসিসি সভাপতি হলেও তিনি দেশের প্রতি অবিচার সহ্য করবেন কেন? এরপর আবার ফাইনালে তার অধিকার খর্ব করা হয়েছে। আইসিসির গণতন্ত্র লঙ্ঘন করে শ্রনিবাসন চ্যাম্পিয়ন দলের হাতে পুরস্কার তুলে দিয়েছেন। এত অবিচার মানা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তাই পদত্যাগ করে কামাল প্রমাণ দিয়েছেন বাংলাদেশ কারও কাছে মাথানত করে না।
তবে এই পদত্যাগটা যদি তিনি রবিবার অস্ট্রেলিয়াতে করতেন আরও ভালো হতো। জাতীয় দলের আরেক সাবেক অধিনায়ক রকিবুল হাসান বলেন, মুস্তফা কামালের পদত্যাগ সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। দেখেন বিশ্বকাপে এবার ম্যাচে বাংলাদেশের সঙ্গে অন্যায় আচরণ করা হয়েছে। অনেকটা জোর করেই কোয়ার্টার ফাইনালে হারানো হয়েছে। এরপর আবার গঠনতন্ত্র ভঙ্গ করে আইসিসি সভাপতিকে ফাইনালে পুরস্কার দিতে দেওয়া হয়নি। শ্রীনিবাসন ভেবেছিলেন এতসব অন্যায়ের পরও বাংলাদেশ নীরব থাকবে। কিন্তু বীর বাঙালিরা কখনো মাথানিচু করে না তার প্রমাণ দিলেন মুস্তফা কামাল পদত্যাগ করে। এ বিজয় শুধু তার নয় ১৬ কোটি মানুষের। জাভেদ ওমর বেলিম গুল্লু বলেন, অন্যায়ের জবাব দিয়েছেন কামাল ভাই পদত্যাগ করে। এতে করে বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশের মর্যাদা আরও বাড়ল।
শ্রীনিবাসনকে নিয়ে ভারতও ক্ষুব্ধ
বিশ্বকাপ ক্রিকেট ফাইনালে আইসিসি সভাপতি মুস্তফা কামালের বদলে চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্কের হাতে ট্রফি তুলে দিয়েছেন সংস্থার চেয়ারম্যান শ্রীনিবাসন। গঠনতন্ত্র ভঙ্গ করে কেন এমন হলো এ প্রশ্ন পুরো বিশ্বজুড়ে। অনেক গ্রেট ক্রিকেটারই বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন। বলেছিলেন, আইসিসি সভাপতি কোয়ার্টার ফাইনালে আম্পায়ারের সমালোচনা করে না হয় ভুল করেছিলেন। এ জন্য তার কাছে জবাব চাইতেই পারেন আইসিসি। কিন্তু শ্রীনিবাসন গঠনতন্ত্র ভঙ্গ করে ফাইনালে ট্রফি দিলেন কিভাবে।
এ অবৈধ কাজের জন্য তার বিরুদ্ধে মামলাওতো হতে পারে। শ্রীনিবাসনের পুরস্কার দেওয়ার বিষয়টি ভারতও ভালো চোখে দেখছে না। ফেসবুকে তাদের অনেক ক্রিকেটপ্রেমীই উল্লেখ করেছেন, শ্রীনিবাসন ভারতীয় ক্রিকেটে বিতর্কিত ব্যক্তি। তারপরও তাকে আইসিসির চেয়ারম্যানের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব কেন দেওয়া হলো। ভারতীয় ক্রিকেটে কি ভালো লোক ছিল না। ফেসবুকে উল্লেখ করা হয়েছে কোয়ার্টার ফাইনালে আইসিসি সভাপতি যেভাবে আম্পায়ারের সমালোচনা করেছে তা ভারতবাসী মানতে পারেনি। কিন্তু তাই বলে শ্রীনিবাসন জোট বেঁধে সভাপতির অধিকার খর্ব করবে তাতো আরও বড় অন্যায়। গঠনতন্ত্রে যেখানে বলা আছে ফাইনালে চ্যাম্পিয়ন দলের হাতে ট্রফি তুলে দেবেন সভাপতিই।
এতদিন তা মানা হলেও এবার কেন ভাঙা হলো। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে শ্রীনিবাসনকে দেখার পরই দর্শকরা তাকে ধিক্কার জানিয়েছে। এই অপমানতো শুধু শ্রীনিবাসনকে করা হয়নি। অপমানিত হয়েছে ভারতবাসীও।
গঠনতন্ত্র ভঙ্গ করার কারণে তার বিরুদ্ধে আইসিসি কোনো ব্যবস্থা নেবে কিনা তা দেখার বিষয়। কিন্তু ভারত সরকারের উচিত হবে শ্রীনিবাসনকে ডেকে তাকে জিজ্ঞাসা করা ফাইনালে তিনি আইসিসির গঠনতন্ত্র ভাঙলেন কেন? বিশ্ব ক্রিকেটে সবচেয়ে মর্যাদাশীল দেশ ভারত। এখনতো শ্রীনিবাসনের কারণে ভারতের ইমেজই ক্ষুণ্ন হয়েছে। মুস্তফা কামাল যাই করুক না কেন তা বাংলাদেশ বুঝবে। কিন্তু এমন অন্যায়ের পরও যদি শ্রীনিবাসন ছাড় পেয়ে যান তাহলে তিনি আরও বিতর্কিত কাণ্ড ঘটাতে সাহস পাবেন।
নাটের গুরু তিনি। যার চক্রান্তের শিকার হয়েই আইসিসির সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন আ হ ম মুস্তফা কামাল। কাল পদত্যাগ করার সময় তাকে ঘিরেই অধিকাংশ কথা বলেছেন লোটাস কামাল। কিন্তু নামটা একবারও মুখে উচ্চারণ করেননি। তিনি বলেন, 'ওই লোকটি নাম মুখে নিতেও আমার ঘৃণা হয়।' নাম না বললেও বুঝতে কষ্ট হয় না, ঘৃণিত ওই লোকটির নাম এন শ্রীনিবাসন! বিতর্কিত এই লোকটিকে তার কৃতকর্মের জন্য কিছুদিন আগে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড-বিসিসিআইয়ের সভাপতির পদ থেকেও। তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন ডালমিয়া। শ্রীনিবাসনের বিরুদ্ধে ভারতে অনেক মামলা রয়েছে। তার বিরুদ্ধে রয়েছে ম্যাচ পাতানোর মতো গুরুতর অভিযোগও। তার মেয়ে-জামাই মায়াপ্পন সরাসরি ম্যাচ পাতানোর দায়ে অভিযুক্ত। এতো অভিযোগ যার বিরুদ্ধে সেই লোককে কীভাবে আইসিসির চেয়ারম্যান পদে রাখা হলো? এ ব্যাপারে কেন আইসিসি কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বা আইসিসির সভাপতি হিসেবেই বা আপনি কী করেছেন, এমন প্রশ্নে মুস্তফা কামাল বলেছেন, 'যখন তিনি আইসিসির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েছিলেন, তখন অভিযোগ ছিল না।'
শ্রীনিবাসনের চক্রান্তের শিকার হয়ে মুস্তফা কামাল পদত্যাগ করলেও তার বিরুদ্ধে তিনি মামলা করতে রাজি হননি। কামাল মনে করেন, এখন তার বিরুদ্ধে মামলা করলে তা আইসিসির বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। একজন ক্রিকেটপ্রেমিক হিসেবে তা করতে চান না কামাল। তবে শ্রীনিবাসনের মতো ব্যক্তিরা যাতে আইসিসিতে রাজত্ব করতে না পারে তার প্রতিবাদ হিসেবেই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। 'আমার এই পদত্যাগে ক্রিকেটের বিজয় হয়েছে। সত্যের বিজয় হয়েছে। এখন গোটা বিশ্ব এই কারণটা অনুসন্ধান করবে। তখন বুঝতে পারবে আসল ঘটনা। এই কুৎসিত লোকগুলো থাকলে ক্রিকেটের উন্নতি হবে না।'
দেশই বড় কামালের কাছে
বিশ্বকাপ ক্রিকেটে কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশ পক্ষপাতিত্বের শিকার হয়েছে। কিভাবে দুই আম্পায়ার ইয়ান গোল্ড ও আলিম দার ভারতকে জিতিয়েছেন তা গোটা বিশ্ব দেখেছে। এসব পক্ষপাতিত্বে নীরব হয়ে বসে থাকতে পারেননি আইসিসিরি সভাপতি আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি এর প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। খেলা চলাকালে জায়ান্ট স্ক্রিনে ভারত জিতে গা, ভারত জিতে গা শ্লোগান দেখা যায়। জায়ান্ট স্ক্রিন পুরোপুরি আইসিসির অধীনে। এখানে কোনো দেশের পক্ষে শ্লোগান দিতে পারে না। অথচ ভারত গায়ের জোরে তাই করেছিল। এই অবৈধ কাজটিরও প্রতিবাদ জানান মুস্তফা কামাল। ব্যস্ এতেই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন আইসিসির চেয়ারম্যান শ্রীনিবাসন। যার বিরুদ্ধে স্বয়ং ভারতেই দুর্নীতির মামলা হয়েছিল। মুস্তফা কামাল ন্যায়ের পক্ষে কথা বলেছিলেন। বিশ্বকাপ ফুটবলে কোনো ম্যাচে বাজে রেফারিং হলে স্বয়ং ফিফার সভাপতিও সমালোচনা করে থাকেন। এর জন্য তাকে কোনো জবাবদিহিতার মধ্য পড়তে হয় না। কিন্তু মুস্তফা কামাল আম্পায়ারের সমালোচনা করাতে ক্ষোভের কি আছে। আর তিনি যা বলেছেন তাতো মিথ্যা বলেননি। কোয়ার্টার ফাইনালে বাজে আম্পায়ারিং ঘিরে বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় বয়ে যায়। গ্রেট ক্রিকেটাররাও ইয়ান গোল্ড ও আলিম দারের সমালোচনা করেন। বাদ যায়নি ভারতও।
আসলে মুস্তফা কামাল আইসিসি সভাপতি হওয়ায় শ্রীনিবাসন মেনে নিতে পারেননি। তিনি যে আইসিসির চেয়ারম্যান হন তা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। তিনি চেয়েছিলেন চেয়ারম্যান হিসেবে সব ক্ষমতা তার হাতে রাখতে। কিন্তু গঠনতন্ত্রে আইসিসির সভাপতিই হচ্ছেন বিশ্ব ক্রিকেটের মূল অভিভাবক। বাংলাদেশের কেউ বিশ্ব ক্রিকেটে কর্তৃত্ব দেখাবে এটা মেনে নিতে পারেননি শ্রীনিবাসন। তাই তিনি ফাঁক-ফোকর খুঁজছিলেন কিভাবে মুস্তফা কামালকে অপদস্ত করা যায়। কোয়ার্টার ফাইনালে বিতর্কিত আম্পায়ারিংয়ে সমালোচনা করার পর শ্রীনিবাসন ষড়যন্ত্রের অস্ত্র খুঁজে পান। ফাইনালে আগের দিন শ্রীনিবাসন আইসিসির বিশেষ সভা ডাকেন। যা তিনি পদাধিকার বলে কোনোভাবেই করতে পারেন না। কারণ আইসিসিসির সভা ডাকার অধিকার রাখেন শুধু সভাপতিই। এই সভায় শ্রীনিবাসন কঠোর ভাষায় মুস্তফা কামালকে বলেন, কোয়ার্টার ফাইনালে আম্পায়ারিং নিয়ে যা বলেছেন তা লিখিতভাবে প্রত্যাহার করতে হবে। কামাল স্পষ্টভাবেই বলেছেন, আমি সত্যের পক্ষে কথা বলেছি। সুতরাং প্রত্যাহারের প্রশ্নই উঠে না। এতেই শ্রীনিবাসন আইসিসিরি গঠনতন্ত্র ভঙ্গ করে ফাইনালে চ্যাম্পিয়ন দলের হাতে ট্রফি তুলে দেন। এমনকি কামালকে পুরস্কার বিতরণী মঞ্চেও ডাকা হয়নি। কামাল সেদিনই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, আইসিসি সভাপতি হলেও আমার কাছ দেশ বড়। সুতরাং অন্যায় মেনে নিলে ১৬ কোটি মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করা হবে। ফাইনালে পুরস্কার বিতরণী প্রসঙ্গে বলেন, গঠনতন্ত্র ভঙ্গ করে শ্রীনিবাসন পুরস্কার দিয়েছেন। এ জন্য আমি দেশে ফিরে আইনজীবীদের সঙ্গে আলাপ করব মামলার ব্যাপারে।
গতকাল দেশে ফিরে এসেছেন আ হ ম মুস্তফা কামাল। বিমানবন্দরে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, দেশ আমার কাছে বড়। তাই অন্যায় মানা আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। এই নোংরামির অবস্থার আমিতো থাকতে পারি না। তাই আইসিসির সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বাঙালিরা কারও কাছে মাথানত করে না এই পদত্যাগের মাধ্যমে ষড়যন্ত্রকারীদের বুঝিয়ে দিলাম। তার এ সিদ্ধান্ত সঠিক হয়েছে কিনা তা জানতে চাওয়া হয়েছিল জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক শফিকুল হক হিরার কাছে। তিনি বলেন কামাল পদত্যাগ করে সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছেন। আমি তার সাহসিকতা ও দেশপ্রেমের জন্য ধন্যবাদ জানাই। কোয়ার্টার ফাইনালে আম্পায়ারিং কতটা নিম্নমানের ও পক্ষপাতিত্ব ছিল তা গোটা দুনিয়াই দেখেছে। সুতরাং মাঠে উপস্থিত থাকা মুস্তফা কামাল নীরবভাবে বসে থাকেন কিভাবে। আইসিসি সভাপতি হলেও তিনি দেশের প্রতি অবিচার সহ্য করবেন কেন? এরপর আবার ফাইনালে তার অধিকার খর্ব করা হয়েছে। আইসিসির গণতন্ত্র লঙ্ঘন করে শ্রনিবাসন চ্যাম্পিয়ন দলের হাতে পুরস্কার তুলে দিয়েছেন। এত অবিচার মানা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তাই পদত্যাগ করে কামাল প্রমাণ দিয়েছেন বাংলাদেশ কারও কাছে মাথানত করে না।
তবে এই পদত্যাগটা যদি তিনি রবিবার অস্ট্রেলিয়াতে করতেন আরও ভালো হতো। জাতীয় দলের আরেক সাবেক অধিনায়ক রকিবুল হাসান বলেন, মুস্তফা কামালের পদত্যাগ সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। দেখেন বিশ্বকাপে এবার ম্যাচে বাংলাদেশের সঙ্গে অন্যায় আচরণ করা হয়েছে। অনেকটা জোর করেই কোয়ার্টার ফাইনালে হারানো হয়েছে। এরপর আবার গঠনতন্ত্র ভঙ্গ করে আইসিসি সভাপতিকে ফাইনালে পুরস্কার দিতে দেওয়া হয়নি। শ্রীনিবাসন ভেবেছিলেন এতসব অন্যায়ের পরও বাংলাদেশ নীরব থাকবে। কিন্তু বীর বাঙালিরা কখনো মাথানিচু করে না তার প্রমাণ দিলেন মুস্তফা কামাল পদত্যাগ করে। এ বিজয় শুধু তার নয় ১৬ কোটি মানুষের। জাভেদ ওমর বেলিম গুল্লু বলেন, অন্যায়ের জবাব দিয়েছেন কামাল ভাই পদত্যাগ করে। এতে করে বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশের মর্যাদা আরও বাড়ল।
শ্রীনিবাসনকে নিয়ে ভারতও ক্ষুব্ধ
বিশ্বকাপ ক্রিকেট ফাইনালে আইসিসি সভাপতি মুস্তফা কামালের বদলে চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্কের হাতে ট্রফি তুলে দিয়েছেন সংস্থার চেয়ারম্যান শ্রীনিবাসন। গঠনতন্ত্র ভঙ্গ করে কেন এমন হলো এ প্রশ্ন পুরো বিশ্বজুড়ে। অনেক গ্রেট ক্রিকেটারই বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন। বলেছিলেন, আইসিসি সভাপতি কোয়ার্টার ফাইনালে আম্পায়ারের সমালোচনা করে না হয় ভুল করেছিলেন। এ জন্য তার কাছে জবাব চাইতেই পারেন আইসিসি। কিন্তু শ্রীনিবাসন গঠনতন্ত্র ভঙ্গ করে ফাইনালে ট্রফি দিলেন কিভাবে।
এ অবৈধ কাজের জন্য তার বিরুদ্ধে মামলাওতো হতে পারে। শ্রীনিবাসনের পুরস্কার দেওয়ার বিষয়টি ভারতও ভালো চোখে দেখছে না। ফেসবুকে তাদের অনেক ক্রিকেটপ্রেমীই উল্লেখ করেছেন, শ্রীনিবাসন ভারতীয় ক্রিকেটে বিতর্কিত ব্যক্তি। তারপরও তাকে আইসিসির চেয়ারম্যানের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব কেন দেওয়া হলো। ভারতীয় ক্রিকেটে কি ভালো লোক ছিল না। ফেসবুকে উল্লেখ করা হয়েছে কোয়ার্টার ফাইনালে আইসিসি সভাপতি যেভাবে আম্পায়ারের সমালোচনা করেছে তা ভারতবাসী মানতে পারেনি। কিন্তু তাই বলে শ্রীনিবাসন জোট বেঁধে সভাপতির অধিকার খর্ব করবে তাতো আরও বড় অন্যায়। গঠনতন্ত্রে যেখানে বলা আছে ফাইনালে চ্যাম্পিয়ন দলের হাতে ট্রফি তুলে দেবেন সভাপতিই।
এতদিন তা মানা হলেও এবার কেন ভাঙা হলো। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে শ্রীনিবাসনকে দেখার পরই দর্শকরা তাকে ধিক্কার জানিয়েছে। এই অপমানতো শুধু শ্রীনিবাসনকে করা হয়নি। অপমানিত হয়েছে ভারতবাসীও।
গঠনতন্ত্র ভঙ্গ করার কারণে তার বিরুদ্ধে আইসিসি কোনো ব্যবস্থা নেবে কিনা তা দেখার বিষয়। কিন্তু ভারত সরকারের উচিত হবে শ্রীনিবাসনকে ডেকে তাকে জিজ্ঞাসা করা ফাইনালে তিনি আইসিসির গঠনতন্ত্র ভাঙলেন কেন? বিশ্ব ক্রিকেটে সবচেয়ে মর্যাদাশীল দেশ ভারত। এখনতো শ্রীনিবাসনের কারণে ভারতের ইমেজই ক্ষুণ্ন হয়েছে। মুস্তফা কামাল যাই করুক না কেন তা বাংলাদেশ বুঝবে। কিন্তু এমন অন্যায়ের পরও যদি শ্রীনিবাসন ছাড় পেয়ে যান তাহলে তিনি আরও বিতর্কিত কাণ্ড ঘটাতে সাহস পাবেন।
©somewhere in net ltd.