![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শুরু হতে যাচ্ছে নতুন একটি অর্থবছর। অর্থনৈতিক খাতে সরকারের অনেক সাফল্য আছে, আছে অনেক ব্যর্থতাও। বিনিয়োগ খাতে দৃশ্যমান কোনও অগ্রগতি নেই। রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা বা প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা কোনওটিই হয়তো পূরণ হবে না। আর এসব ব্যর্থতা শুধু শেখ হাসিনার সরকারের, তাও হয়তো নয়। যে রাজনীতি বিরোধী পক্ষ থেকে আমরা দেখেছি সেটিও দায়ী অনেকখানি।
প্রতিহিংসার আগুনে সন্ত্রাস, পেট্রোলবোমা, সহিংসতার কারণে মাসের পর মাস স্থবির ছিল ব্যবসা বাণিজ্যের চাকা। যার বড় প্রভাব পড়েছে সামগ্রিক অর্থনীতিতে।
শেখ হাসিনা টানা দ্বিতীয়বার সরকার পরিচালনা করছেন। এর আগে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছিল তার হাত ধরে ২১ বছর পর। দু’বারেই তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ছিল অবকাঠামো খাতের উন্নয়ন। দু’বারই পূর্বতন বিএনপি সরকারের অসফলতাকে মোকাবেলা করে অবকাঠামো খাত, বিশেষ করে বিদ্যুৎ খাতের দিকে তাকে বিশেষভাবে নজর দিতে হয়েছে। তার মাধ্যমেই বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতে বিদেশি বেসরকারি বিনিয়োগ এসেছে, মোবাইল টেলিফোন খাত উন্মোচিত হয়েছে।
এর বাইরে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তগুলোও ছিল তার জন্য চ্যালেঞ্জিং। প্রথম মেয়াদে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার শুরু করে শেষ করতে হয়েছে ২০০৯ এ দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে। আর এ মেয়াদে তাকে পথ চলতে হচ্ছে যুদ্ধাপরাধের বিচারের মতো একটি দুরূহ কাজ হাতে নিয়ে। আর এ কারণে তার সরকারকে তথা এ দেশের মানুষকে অনেক কঠিন মূল্য দিতে হচ্ছে। তাই শেখ হাসিনার সরকারের জন্য রাষ্ট্র পরিচালনা এখন রাজনৈতিক অর্থনীতির এক সমন্বয় সাধন। কেউ যদি বলেন, কিচ্ছু হচ্ছে না, তাহলে তার মনে করতে হবে ২০০৮ এর নির্বাচনের আগে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা কোন পর্যায়ে ছিল। উড়াল সেতুগুলো দেখে নিশ্চয় তার মনে পড়বে সড়ক অবকাঠামো খাতে আমরা কোথায় ছিলাম। আজ সুদূর প্রান্তিক মানুষের কাছে ইন্টারনেটের সেবা পৌঁছে যাওয়ার কথাও নিশ্চয়ই তাকে পুরনো দিনের কথা মনে করিয়ে দেবে।
কিন্তু সরকারের কাছেও বিবেচ্য হওয়ার আছে অনেক কিছ্।ু কেন উন্নয়নের সঙ্গে জনগণকে সুশাসনের ধারণা দেওয়া গেল না? কেন ছাত্রলীগ, যুবলীগের আচরণ সরকারের অঙ্গিকারের সঙ্গে মেলে না? কেন দুর্নীতির জাল বিস্তৃত হলো? এসব প্রশ্নের উত্তর সরকার খুঁজবে কিনা তা সরকারই বলবে।
বাংলাদেশের আজ প্রয়োজন অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক মুক্তি। সরকারি খাতে এখনও অনেক ব্যবসা-বাণিজ্য ও আর্থিক খাত রয়েছে, যা অর্থনীতিতে রক্ত ক্ষরণের কাজ করছে। শুধু একটি খাতকে যদি আমরা বিবেচনায় নেই তা হলো মোবাইল ফোন খাত। বেসরকারি খাতে থাকায় তার বৈপ্লবিক বিস্তৃতি ঘটেছে যা বর্তমার সরকারে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছে। সম্ভাবনা আছে তথ্যপ্রযুক্তি খাতেও। যদি এখনও তার প্রবৃদ্ধি যতটা আশা করা হচ্ছে ততটা দেখতে পাচ্ছি না আমরা।
বাংলাদেশের ব্যক্তিখাত উদ্যোক্তা হওয়ার যোগ্যতা দেখিয়েছে। কিন্তু তার মুক্তি মেলেনি এখনও। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, রাজনৈতিক বেড়াজালে অনেকখানি বন্দী এখনও উদ্যোক্তারা। আর এই মুক্তির জন্য আমাদের দরকার ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রতিটি পদক্ষেপে কম-কম সরকার, বেশি-বেশি সহযোগিতা। কম-কম আইন আর বিধি, বেশি-বেশি উৎসাহ, অনুপ্রেরণা আর সহজতা।
আমাদের আমলাতন্ত্রকে নিয়ে ভাববার সময় এসেছে এখন। নিরঙ্কুশ ক্ষমতার সাথে সাথে তাদের দায়বদ্ধতা কতটা নিশ্চিত করছি তার হিসেব নেওয়া প্রয়োজন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক বছর আগে নির্বাচিত হয়ে বলেছিলেন- এমন এক পরিবেশ সৃষ্টি করতে চান তিনি, যেখানে রাজনীতি আর আমলাতন্ত্র ক্ষমতা আর দায়বদ্ধতা, এ দুটোরই চর্চা করবে। বাংলাদেশে কি এমন করে ভাবার লোক আছে?
আজ বিদেশিরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আসে না। আমাদের ভাবতে হবে, যতভাবেই ডাকি না কেন তাদের, তারা বাধ্য নয় এখানে বিনিয়োগ করতে। পুঁজি যার কাছে আছে, তার জন্য বাংলাদেশ ছাড়াও হাজারও বাজার রয়েছে বাণিজ্য করার। বড় পুঁজির কাছে পুরো বিশ্বই বাজার এবং সুযোগ। আমাদের এমন ধারণা দিতে হবে যে, এখানে বিনিয়োগ করলে, তা বিকশিত হয়, বিস্তৃত হয়। এমনিতে আমরা বলছি, আমাদের দ্বার অবারিত, নিয়মনীতি এখন অনেক শিথিল, কিন্তু বাস্তবতা হলো, মাঠ পর্যায়ে বা নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করাই আমাদের সংস্কৃতি।
বাণিজ্য স্বাধীনতা আবার শুধু ব্যবসায়ীর তাও নয়। এখানে ক্ষমতায়নকে দেখতে হয় আরও বিস্তৃতভাবে। ভোক্তা, কৃষক, গ্রামীণ বা শহুরে শ্রমিক, শিল্পী, কারিগরের ক্ষমতায়ন। তাই কৃষিতে ব্যাপক সাফল্যের পরও যখন শোনা যায়, কৃষক তার উৎপাদিত পণ্যের মূল্য পাচ্ছে না, বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, ক্ষমতায়ন প্রক্রিয়ায় তার অবস্থান অনেক দূরে।
দুর্নীতিবিরোধী যুদ্ধের কথা আমরা শুনেছি। কিন্তু মানুষের মনের ধারণা বিপরীত। সাধারণভাবে এটাই প্রতিষ্ঠিত যে, দুর্নীতি কমেনি, বরং বেড়েছে। যদিও সরকার দলীয় এমপি বা সাবেক মন্ত্রীকে কিছুকালের জন্যও জেলে যাওয়া, বা আদালতে আত্মসমর্পন করতে দেখেছে মানুষ, কিন্তু এতে করে তার ধারণা পাল্টে যায়নি। ব্যবসায়ীরাও দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে পারছেন না যে, তাদেরকে আগের চেয়ে এখন কম ঘুষ দিতে হয়।
বাংলাদেশ যদি বিভিন্ন খাতে দুর্নীতি কমাতে পারে, একথা বিশ্বাস হয় যে, দেশটি বিশ্ব অর্থনীতির জন্য যোগ্য ও দক্ষ কর্মীবাহিনী সরবরাহ করতে পারবে। আর এটা সম্ভব যদি, হয়রানিমুক্ত, সহজ একটি বিনিয়োগ পরিবেশ সৃষ্টি করা যায়। বাংলাট্রিবিউন
©somewhere in net ltd.