![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দার্শনিকেররা এযাবৎ জগৎটাকে শুধু ব্যখ্যা করেছেন , আসল কাজ হলো পরিবর্তন করা - কার্ল মার্কসের এ উক্তিটি আমার খুব প্রিয় ।
টিভি টক শো উপস্থাপক ও সাংবাদিক গোলাম মুর্তজার একটি লেখায় উনি মান্না ভাইয়ের নাগরিক ঐক্য সম্পর্কে বলেছেন যে ২৪ ঘণ্টা রাজনীতি করলে বর্তমান রাজনৈতিক বন্ধাত্ব থেকে বেড়িয়ে আশা সম্ভব । আমি অত্যন্ত বিনয়ের সাথে বলতে চাই রাজনীতি ঘণ্টার উপরে নির্ভর করে না । নির্ভর করে আদর্শ ও কর্মসূচীর উপর । যদিও উনি এখানে সার্বক্ষণিক রাজনীতির কথা বলতে চেয়েছেন বলে আমার মনে হয় । কিন্তু আমার ব্যক্তিগত রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা দিয়ে বলতে পারি সার্বক্ষণিক রাজনীতি রাজনৈতিক দলের প্রয়োজনে এমনিতেই সামনে আসে এবং নেতৃবৃন্দ তা করতে বাধ্য হয় কিন্তু এই পয়েন্ট আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয় । গুরুত্বপূর্ণ যা তা কেউ আলোচনা করছে না ।
বর্তমান রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় লুটেরা শ্রেণীর আবির্ভাব স্বাধীনতার শুরু থেকে থাকলেও রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সাথে লুটেরা শ্রেণীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয় মূলত স্বৈরাচারী এরশাদের সময় থেকে । এই প্রক্রিয়া দ্রুত জনপ্রিয় হতে থাকে । এর অন্যতম প্রধান কারন কৃষি নির্ভর অর্থনীতি থেকে শিল্প নির্ভর অর্থনীতিতে প্রবেশের জন্য যে পুজির জোগান দরকার তা আসতে শুরু করে মূলত লুটেরা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে । ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, আইএমএফ ইত্যাদি প্রজেক্ট থেকে লুটেরা পুজি প্রাথমিক জোগান তৈরি হয় । এই লুটেরা পুজি গ্রামীণ অর্থনীতিকে দ্রুত পরিবর্তন করে দেয় এবং ব্যাংক এ সঞ্চয়ের পরিমান বেড়ে যায় । ব্যাংকের সঞ্চয় বাড়ার কারনে ব্যাংকের ঋণ দেয়ার ক্ষমতা বেড়ে যায় । সেই সাথে প্রাইভেট ব্যাংকের চাহিদা বেড়ে যায় । প্রতিষ্ঠিত হয় প্রাইভেট ব্যাংক । কিন্তু সরকারি ব্যাঙ্কে মুদ্রা প্রবাহ বেশি থাকায় এবং দুর্নীতির সুযোগ থাকায় সেখানে শিল্প ঋণ প্রক্রিয়া শুরু হয় ৮০'র দশকের মাঝামাজি থেকে । কিন্তু শিল্প ঋণ সম্পর্কে পূর্ব অভিজ্ঞতার অভাবে ও দুর্নীতির সুযোগ থাকায় শিল্প ঋণের নামে ব্যাপক মাত্রায় ক্যাশ ক্যাপিটাল লুটপাট শুরু হয় । এই ভাবেই ব্যাপক গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি ও রাতারাতি শিল্পপতি তৈরি হয় । এটা একটি চক্রবৃদ্ধি প্রক্রিয়া । ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, আইএমএফ এর প্রজেক্টের টাকা লুটপাট হয়ে ব্যাংকে আসে এবং পুনরায় ব্যাংক থেকে লুট হয়ে শিল্প বানিজ্যে বিনিয়োগ হয় । লুটপাটের পরও যখন সরকারী ব্যাংকগুলো মুনাফা করতে থাকে তখন সরকারী ব্যাংকের লুটের টাকায় প্রচুর প্রাইভেট ব্যাংক গড়ে উঠে । প্রাইভেট ব্যাংক শিল্প ঋণ প্রবাহ তেমন না রাখলেও ব্যাক্তিগত ঋণ চালু করে সাধারন মানুষের জীবনের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে । এই ব্যাক্তিগত ঋণের প্রবাহ বৃদ্ধির ফলে আবার কতিপয় শিল্প বিকাশ করে যার মধ্যে রিয়েল এস্টেট, সিমেন্ট, ইট, ও রিয়েল এস্টেট এর সাথে জড়িত অন্যন্য কাঁচামাল । প্রাইভেট ব্যাংক এর ঋণ দিয়ে আমদানি ও রপ্তানি বানিজ্যের প্রভুত উন্নতি হয় । সেই সাথে রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রে লুটপাটের কারনে বর্তমান রাজনৈতিক প্রক্রিয়া মানুষের কাছে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠে কারন মানুষ এই প্রক্রিয়ার দ্বারা বেনিফিটেড । দেশের অর্থনীতির জিডিপি যদি সরকারী হিসেবে ৬% হয় তবে লুটেরা পুজির বিনিয়গে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি আরও কমপক্ষে ৪-৬% ( আমার কাছে কোন ডাটা নেই , কিন্তু অর্থনীতিবিদ আবুল বারাকাতের হিসেবে কালো টাকার পরিমান যদি বাজেটের ২ গুন হয় তবে তার প্রতিফলন এরকমই হবে ) । এখন মোট প্রবৃদ্ধি ১০-১২% যা মূলত কাল টাকার বা লুটেরা পুজি নির্ভর । সাধারন মানুষের জীবন যাত্রার মানের উন্নতিতে এই লুটেরা পুজি ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে । আর এই পুজি উৎপাদনের মেশিন হচ্ছে বর্তমান রাজনৈতিক প্রক্রিয়া । এই রাজনৈতিক প্রক্রিয়া জনগণের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় ।
এখন লুটেরা পুজির প্রভাবে সমাজ ও সংস্কৃতি তার ঐতিজ্য হারাতে বসেছে । রাজনৈতিক সংস্কৃতিতেও এর ব্যাপক প্রভাব পরেছে । লুটেরা পুজি এখন রাজনীতি ও রাষ্ট্রকে নিয়ন্ত্রণ করছে । রাজনীতি এখন শুধু লুটপাট ও পুজি তৈরির মাধ্যম । এই অবস্থায় এখন মানুষ চায় সুশাসন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে রাষ্ট্রের ব্যাপক ভুমিকা । শিল্প বিকাশের জন্য যতটুকু পুজির প্রয়োজন ছিল তা এখন আছে , এই পুজির বিকাশের জন্য কয়েকটি শর্ত পুরন করতে হবে
১। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা , ২। সুশাসন , ৩। পুজির বিকাশের জন্য অবকাঠামোর বিকাশ , ৪। শিল্প পুজি ও বাণিজ্য পুজির বিকাশের স্বার্থে আইন প্রনয়ন , ৫। রাজনীতিতে জনস্বার্থ ও জাতিয়তাবোধের বিকাশ ইত্যাদি ।
এই কতিপয় শর্তসমুহ দিয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচী প্রনয়ন এখন একটি সময়ের দাবী । এই রাজনৈতিক কর্মসূচী হয় বর্তমান রাজনৈতিক প্রক্রিয়া থেকে আসতে হবে নতুবা এই সমস্ত কর্মসূচীর প্রেক্ষিতে প্রক্রিয়া গড়ে উঠতে হবে । সাধারনভাবে বর্তমান রাজনীতি নিয়ে যতই সমালোচনা ও বিরোধিতা করা হউক তা কোন কাজে আসবে না । এমনকি বিএনপির জন্যও তা প্রযোজ্য ।
©somewhere in net ltd.