![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দার্শনিকেররা এযাবৎ জগৎটাকে শুধু ব্যখ্যা করেছেন , আসল কাজ হলো পরিবর্তন করা - কার্ল মার্কসের এ উক্তিটি আমার খুব প্রিয় ।
চাপিলা মাছের মত দেখতে একটা জাটকা ( পোণা ) ইলিশ মাছের দাম চাইল ৩৫০ টাকা । পরে কালি বাউস আর রিঠা মাছ মিলে ৪.৫ কেজি কিনলাম ৬০০+৪০০=১০০০ টাকায় । অঞ্চল ভেদে খাদ্যভ্যাস ভিন্ন বিধায় আমরা পূর্ব বঙ্গীয় বাসিন্দারা ইলিশ মাছে খুব একটা অভ্যস্থ নই । এটা দক্ষিন বঙ্গীয় একটি জনপ্রিয় ও সহজলভ্য মাছ । পূর্ব বঙ্গ ও উত্তর বঙ্গের মানুষদের কাছে ইলিশ ছিল অনিয়মিত মাছ । পূর্ব বঙ্গের মানুষ মাছের জন্য হাওর ও নদীর উপর নির্ভরশীল ছিল । দক্ষিন বঙ্গ থেকে লঞ্চে গোয়ালন্দ, চাঁদপুর, ঢাকা হয়ে রেল লাইন দ্বারা পরিবেষ্টিত অঞ্চলে হিমায়িত ইলিশ মাছের কিঞ্চিত সরবরাহ ছিল । পশ্চিম বঙ্গের কলকাতার বাবুরা লঞ্চের সাহায্যে হিমায়িত ইলিশ নিয়মিত খেতে পারতো । মুলত দক্ষিন বঙ্গের মানুষ সাগর থেকে আসা ইলিশ মাছ দ্বারা অভ্যস্থ ছিল । দক্ষিন বঙ্গের জেলেরা বা গৃহস্থ ঘরের মানুষ সকালে পান্তা ভাত দিয়ে ইলিশ মাছ প্রাতঃরাশ হিসেবে গ্রহন করতো । পূর্ববঙ্গের কিঞ্চিৎ অবস্থাসম্পন্ন মানুষেরা রুই-কাতল এর পাশাপাশি কালি বাউস, রিটা, চিতল, পাঙ্গাস, মহাশৈল ইত্যাদি মাছ বিভিন্ন পালাপর্বনে , বড় অনুষ্ঠানে এমনকি ঈদেও দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় যুক্ত করে একটু আভিজাত্য আনার চেষ্টা করতো ।
কৃষি ভিত্তিক অর্থনীতিতে চৈত্র মাস হচ্ছে অভাবের মাস । বৈশাখী ধানের ধানের অপেক্ষায় থাকা কৃষক পরিবারগুলো দিনাতিপাত করতো এক বেলা রান্না করে । বাড়ির উঠানের শাকসবজি দিয়ে বিভিন্ন ভর্তা ভাজি বা সংরক্ষিত শুঁটকি মাছ ছিল একমাত্র ভরসা । সেই সংস্কৃতির দক্ষিন বঙ্গের চিত্র ছিল সস্তায় পাওয়া ইলিশ মাছ নির্ভর । কালে তা এখন বৈশাখী উৎসবের সংস্কৃতিতে পরিনত হয়েছে ।
ইলিশ মাছ , শুঁটকি ভর্তা , পান্তা ভাত ইত্যাদি মুলত কৃষকের অভাবের চৈত্র মাস থেকে আসা । চৈত্র মাসের অভাবের আরেক কারন ছিল মহাজনের খাজনা পরিশোধ করার মাস । বৈশাখের ১ তারিখ । কৃষক পরিবারগুলোর খাজনা জোগাড় করতে অভাবের মধ্যে দিয়ে মাসটা পার করতে হতো । ফলে বৈশাখের ১ তারিখে খাজনা পরিশোধ করে নতুন বছরের আনন্দ ও উৎসব হিসেবে সামান্য অর্থ ব্যয় করে পরিবারের খাদ্য তালিকায় যে কিঞ্চিৎ আভিজাত্য সৃষ্টি করা হতো তাই আমাদের বৈশাখের সংস্কৃতি । শুধু খাদ্য নয় , বৈশাখে মেলায় বেড়াতে যাওয়া , নতুন জামা কাপড় পরিধান , নানান ধরনের যাত্রা, পালা গান , সারি গান ইত্যাদির মাধ্যমে সাংস্কৃতিক বিনোদন সবই ছিল কৃষি অর্থনীতির পহেলা বৈশাখের অংশ ।
বর্তমানে তা বাঙালি হেরিটেজ সংস্কৃতি হিসেবে পালন করা হয় কিন্তু দক্ষিণ বঙ্গের এক ইলিশ মাছের উপর এতো চাপ বৈশাখী উৎসবকে অনেকটাই ম্লান করে দেয় । এর সাথে পূর্ব বঙ্গ ও উত্তর বঙ্গের খাদের উপরও সেই অঞ্চলের মানুষদের জোর দেয়া উচিত ।
১০ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১১:৩৬
আহমেদ_শাহীন বলেছেন: ধন্যবাদ শাহ আজিজ ভাই , খুব সুন্দর বর্ণনায় সুন্দর লিখেছেন এবং তথ্য বহুল
©somewhere in net ltd.
১|
১০ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১০:৫৮
শাহ আজিজ বলেছেন: আমি খুব ছোটবেলা দেখেছি গ্রামে হিন্দুবাড়ি আর মুসলিমদের সামান্য ধনবান পরিবার বড় রুই মাছ দিয়ে ভূরিভোজন করতেন দুপুরে। এটি মুলত বাকির খাতা হালনাগাদ করনের উৎসব ছিল। হিন্দু মহাজন ও দুচার ঘর মুসলিম দোকান সাজিয়ে অপেক্ষা করতেন তার গাহাকরা টাকা পরিশোধ করে হালনাগাদকরন এবং শেষে মিষ্টিমুখ করতেন নিমকি সিঙ্গারা যোগে। চা থাকত একটি অসাধারন স্বাদের পানীয়। ব্যাস এভাবেই বৈশাখ পালিত হতো। পরদিন গ্রামের বাজার বন্ধ থাকত এবং সবাই ওই বাজারের খোলা জায়গায় বসে পালা গান বা সারি গান শুনত। খুবই সাদামাটা ব্যাপার ছিল। ইলিশ মোটেও এ উৎসবের বিষয়াশয় ছিলনা । পান্তা খেত রাতের বেচে যাওয়া ভাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে। এটাও বৈশাখের অন্তর্ভুক্ত ছিলনা। কালে কালে ৯০এর পর মানুষের রুচি পালটাতে লাগলো এবং ১ম বৈশাখ এখন বাংলাদেশের একটি বৃহত্তম সেকুলার উৎসব হয়ে গেছে। তাও ভালো আমরা মুল ধারাতেই আছি এবং থাকব। মানুষ এখন উৎসবপ্রবন । এই উতসবেও শ্রেণী দন্ধ ঢুকিয়ে দিয়ে ইলিশকে দুস্প্রাপ্য করে ফায়দা লুটছে একটা শ্রেণী । আর পান্তা ভাতে ফারমেন্টেশন হয়ে মদের সৃষ্টি হয় তাও একটা কারন। আমরা এখন থেকে রুই বা রোহিত মৎস্য খাব ছোটবেলায় যা খেয়েছি । ওটার দাম বেড়ে গেলে পাচ মিশালি মাছ হলেও চলবে। তবু চলুক এই উৎসব । বাঙ্গালীর উৎসব তোঁ , মাত্র একটা, থাকুকনা।