![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যখন ক্লাস ৮/৯ এ পড়তাম তখন দেখতাম বাংলায় রচনা আসে, একটি বট গাছের আত্ম কাহিনী , একটি পয়সার আত্ম কাহিনী এরকম আরো কত জনের আত্ম কথা । বেশ মজা নিয়ে পড়তাম ওই সব গাজাঘুরি লেখাগুলো । কয়েক দিন পর অমুক তমুক নেতার আত্ম কথা নিয়ে পড়ানো হবে , হয়ত বাধ্য করা হবে তাই আজ আমিও লিখব তেমন এক আত্ম কাহিনী । আগেই বলে রাখি কারো সাথে মিলে গেলে আমার কিছুই করার নাই । বেপারটা নিতান্ত্তই কাকতালীয় ।
একটি গাড়ি চালকের আত্ম কাহিনী:
আমি একজন গাড়ি চালক । আমার নাম ফরিদ মিয়া । সবাই ফরিদ্ধা কইয়া ডাকে । আমার বয়স কত তা আমি জানি না । আমার বাড়ি সন্দীপে । অনেক বছর আগে লঞ্চ ডুবে আমার এক খালাত ভাই মারা যায় । তাই সেই আমলের সরকার আমার খালাকে একটা ছাগল দেয় । আমার খালার আর কোনো ছেলে মেয়ে ছিল না , তাই আমাকে ছাগলটা পালতে দেন । আর আমার বাবার একটা গাভী ছিল । আমি সেই গরু আর ছাগল চরাতাম মাঠে । গরুর দুধ বিক্রি করে কিছু টাকা মা কে দিতাম আর বাকিটা দিয়া গান্জ্জা খাইতাম । একদিন আমাদের গ্রামের মাতব্বর চাচা বললেন , কিরে ফরিদ্ধা আর কত কাল গরু ছাগল চরাবি । কিছু একটা তো কর ।আমি বললাম চাচা কি করুম কোনো কাম কাজ তো পাই না । চাচা বললেন রিকসা চালাবি । আমি রাজি হতেই উনি একটা রিকসা বেবস্থা করে দিলেন , দিনে ভাড়া মারি ২০০/২৫০ টাকা ।এখন কিছু টাকা মাকে দেই , আর বাকি টাকা দিয়ে রাতে গান্জ্জা টানি । এভাবে দিন আমার ভালই যাচ্ছিল । কিন্তু সংসার এ বউ দরকার , তাই মা বিয়ে করায়ে দিলেন । কিছু দিন যেতে না যেতেই বউ কয় তুমি রিকসা চালানো চাড় । আমি কইলাম তো খামু কি ? বউ কয় টেম্পু চালাও , আমার খালাত বোন ফুলির জামাই টেম্পু চালায় , ওর কত সুখ ।
কিছুদিন পর আমি ফুলির জামাই সদরুল ভাই এর সাথে দেখা করে বলি ভাই আমি টেম্পু চালামু । সদরুল ভাই তো বলেই বসলো শালা টেম্পু চালাবা, টেম্পু চালানো তো আগে শিখতে হবে , তুই এক কাজ কর আমার টেম্পুর হেলপারি কর আমি তোকে টেম্পু চালানো শিখাবো । পরে কোনো টেম্পু ভাড়া নিয়ে চালায়শ ।আমি রাজি হয়ে গেলাম । এখন আমি রিকসা চালাই না । আমি টেম্পুর হেলপার । মাস খানেক পর টেম্পু চালানো শিখলাম । এখন তো লাইসেন্স লাগব । সদরুল ভাই বললেন, তুই টাকা দে ৩০০০ হাজার আমি তর লাইসেন্স করায়ে দিমু । আমি টাকা দিলাম লাইসেন্স পাইলাম । সদরুল ভাই বললেন পুলিশ ধরলে হাতে কিছু টাকা ধরায়ে দিবি । এভাবে ২ বছর টেম্পু চালাই । আপনাগো দোয়া তে আমার একটা মাইয়া হইছে । তাই আর টেম্পু চালামু না আমি । ঢাকা শহর যামু ঠিক করছি , ঢাকা শহরে গাড়ি চালামু । এই গেরামে গাড়ি চালায়ে সুখ নাই , টাকা কম , রাইতে গাড়ি চালান যায় না । ঢাকা শহরে আইলাম জীবনে পরথম , জায়গাটার নাম সায়দাবাদ । দেখি শত শত গাড়ি । ভাবলাম একটা কাম পামু । কাজ পাইলাম হাফ্থা খানেক পর । কিন্তু এবার আমি টেম্পুর driver না । আমি বাস এর হেলপার । উস্তাদ কইলেন বাস চালানো শিখাবেন । আমি বললাম উস্তাদ আমি তো আগে টেম্পু চালাইছি । আমি বাস চালাইতে পারমু । উদ্স্তাদ কইলেন শালা বাস চালানো কি ওত সোজা ,আগে হেলপারি কর ,তারপর শিখামু ।
এভাবে ৬ মাস গেল আমি উস্তাদের কাছ থেকে বাস চালানো শিখলাম । এহন তো লাইসেন্স লাগব, উস্তাদ কইলেন ঢাকা শহরে গাড়ি চালাইতে হইলে গরু ছাগল চিনন লাগব । আমি বুকে সাহস নিয়া কইলাম উস্তাদ আমাগো গরু,ছাগল আছিল গেরামে ,আমি গরু ছাগল চিনি । আর আপনে যে কি কোন না , ঢাকা শহরে গরু ছাগল আইবো কেমতে ,আরে গাধা দেখস না বাস এ যেগুলা উঠে যতই ভাড়া চাষ দিয়া দেয়, একটাও কি প্রতিবাদ করে ? যে দুই একটা করে ওরা ছাড়া বাকিগুলা গরু ছাগলের মত নিরব, দুই এক টাকার জন্য ওরা চিল্লাইবো না, আর দেখস না আমি বাসে বিড়ি টানি , মোবাইলে কথা কই, এক স্টপেজ এ ৩০ মিনিট থাকলেও কিছু কয় না, তা না হলে ওরা গরু ছাগল না তো কি ? আর এইরকম গরু ছাগল মারলে তর কিছুই হইব না । আমার নেতায় এই জন্যই কইছে গরু ছাগল চিনন লাগব, তা না হলে লাইসেন্স পাওন যাবে না । উস্তাদ কইলেন হাজার সাতেক টাকা দে আমি তরে লাইসেন্স যোগার কইরা দিমু । আমি কইলাম উস্তাদ এক নাম্বার নাকি দুই নাম্বার । উস্তাদ কইলেন বেটা এক নাম্বার ,আমি দুই নাম্বার কাজ করি না । হাচা কথা কইতে আমি ভালই চালাই , কিন্তু ওই বাত্তি টাট্টি চিনি না । আমি মনে রাখতে পারি না । আর তাই উস্তাদ রে টাকা দিলাম , আর মনে রেখে কি হইব ,লাল বাত্তি জল্লেও দেখি ট্রাফিক সারে হাত উঠায়,সবুজ বাত্তি জল্লেও হাত উঠায় ,ট্রাফিক সারে হাত দিয়া কয় থাম । আর হাত সরাইলে বুঝি সামনে টানন লাগব । আর ঢাকা শহরে যা জাম তাতে তো গাড়ি চালাতেই কোনো কষ্ট হয় না । পিছনের গাড়ি হর্ন দিলে বুজি সামনে গরু ছাগল থাকলেও টানন লাগব । অহন আমি দিনে হাজার টাকা কামাই , দিন আমার ভালই যাইতাছে ।
এইদিং রাইতে বেশি গান্জ্জা টানি । হেই দিন মালিবাগের সামনে দিয়া যাইতাছিলাম , এক লোক রাস্তা পার হইতাছিল , আমি গাড়ি টান মতেই সেই অভাগা আমার গাড়ির তলে পড়ছে । তহন রাত ৮ বাজে । কোন দেহি আমার কি দোষ, গাড়ির ব্রেক ঠিক নাই , ব্রেক দিছি কাম হয় নাই । আমি পালায়ছি, পাবলিকের হাত থেকে বাচনের লাইগা । পরে উস্তাদের কাছে গেলাম , ওস্তাদ কয় আরে বেপার না , কয় দিন গা ঢাকা দিয়া থাক , কে তর বিচার করবো , এই দেশে কি বিচার আছে । আমিও ও কয়ডা মারছি তার তো হিসাব নাই , তয় আমি মাইরা আগেই মামাগো কাছে যাই , কই মামা ভুল হইয়া গেছে , টাকা কয়টা রাখেন । মামারা কয় তরা আসস বলেই তো আমরা বেচে আছি , যা কয় দিন গা ঢাকা দে ।
আমাদের অধিকাংস driver এর আজ এই অবস্থা । রিকসা চালনা থেকে শুরু এবং শেষ পর্যন্ত খুনি । এইসব খুনিদের বিচার এই রাষ্ট করতে পারবে না । কারণ রাষ্ট যন্ত্র যখন অবলীলায় এদের সমর্থন করে তখন মনে হয় এরা কি মানুষ নাকি হিংস্র জানওয়ার ।আবার বিবেক দিয়ে চিন্তা করি হিংস্র জানওয়ার অনেক ভালো , সে ক্ষুধার্থ হলে আপনাকে খেয়ে ফেলবে , তা না হলে সে আপনার ক্ষতি করবে না । কিন্তু এরা আপনাকে তিলে তিলে মারবে । এভাবে আর কত ? কাল তো আমিও খুন হতে পারি এই বর্বর দের হাতে? যার পরিবারের সদস্য চলে যায় না ফেরার দেশে , তারা ছাড়া আর কেউ এই বেদনা স্পর্শ করতে পারে না ।
চালকরা যেখানে সেখানে লোক উঠা নামা করে । তারা ভুলেও এই কথা চিন্তা করে না যে এর কারণে পিছনের গাড়ির সমস্যা হতে পারে ?কারণ তারা তো অশিক্ষিত মুর্খ গাড়ি চালক ।কেন এই অশিক্ষিত মূর্খদের অনুমোদন দেওয়া হলো ?আচ্ছা মানলাম কারণে অকারণে এরা পেয়ে গেল , কিন্তু এদের এখন কেন প্রশিক্ষণ দিয়ে যথাযথ গাড়ি চালক হিসেবে গড়ে তুলা হচ্ছে না ? কেন এদের সচেতন করে তুলা হচ্ছে না ? কেন এরা এখনো বেপরওয়া ভাবে গাড়ি চালায় ? কেন এরা নিজেরা মরে এবং অন্য হাজারও মানুষ মারে ? আজ পর্যন্ত কি এক জন গাড়ি চালকের বিচার করতে পরেছে কেউ ? আমার তা জানা নাই ? এভাবে আর কত দিন যাবে ? আমদের সচেতন সমাজ কি মরে গেছে ? আমরা কি সেই অসাধু লোক গুলোর জন্য অপেক্ষা করব, কখন তারা আমাদের মুক্তির বার্তা নিয়ে আসবে ? কখন তারা আইন পাস করবে ? জনগনের কাজ কি শুধু ভোট দেয়া , আর কিছু নেই করার এই জনগনের ? হুন্ডা চালক দের সম্পর্কে কিছু কথা না বললেই নয় ? ফুটপাথ মনে হয় হুন্ডা চালক দের বাপের সম্পত্তি ? এরা কি বিশেষ কোনো মানুষ যে এরা ফুটপাথ দিয়ে মানুষের গায়ের ওপর দিয়ে হুন্ডা নিয়ে যায় ? কেউ কি নেই এইগুলা দেখার ?
চলবে………………………………….
[বিষয়বস্তুর স্বত্বাধিকার ও সম্পূর্ণ দায় কেবলমাত্র প্রকাশকারীর.]
০১ লা জুন, ২০১২ রাত ১:২৮
নগত টাকা বলেছেন: দুঃখের কথা কি কমু ভাই...।
২| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ দুপুর ১২:৪৭
শহুরে আগন্তুক বলেছেন:
০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:০৪
নগত টাকা বলেছেন:
©somewhere in net ltd.
১|
৩১ শে মে, ২০১২ রাত ১১:৩৬
আরজু পনি বলেছেন: