নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ঢাকা ব্যুরো প্রধান, ফোকাসবাংলানিউজ http://www.focusbanglanews.com http://www.facebook.com/biplob1972

আহমেদ মাসুদ বিপ্লব

সত্য লিখতে বাঁধা কই, বাঁধা এলে মানবো কেন?

আহমেদ মাসুদ বিপ্লব › বিস্তারিত পোস্টঃ

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডী : সেই সেলাই দিদিমণিরা কেমন আছেন?

২৬ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ৮:৪৬

বাংলাদেশ আর আমরা বাংলাদেশী বাঙ্গালীদের একটা বড় ধরণের দূর্ভাগ্য বলা যায়- বিশ্বের মাঝে ভাল কাহিনীতে আমাদের র‌্যাঙ্কিং খুব একটা বেশী না থাকলেও দূর্ঘটনা কিংবা নেতিবাচক অনেক কিছুতে আমরা ঠিকই র‌্যাঙ্কিংয়ের প্রথম দিকে অবস্থান করে থাকি। জনসংখ্যা সমস্যা, অশিক্ষা-কুশিক্ষা, দূর্নীতি, দূষিত নগরীর তালিকা সবকিছুতেই আছি আমরা। এমনকি বিশ্বের ইতিহাসে ৩য় বৃহত্তম শিল্প দুর্ঘটনা হিসেবে বিবেচিত ধ্বংশলীলার ঘটনাটিও এই দেশের বুকেই ঘটেছিল। ‘রানা প্লাজা ট্র্যাজেডী’ খ্যাত সেই দুঃসহ স্মৃতির ক্ষত এখনো বয়ে বেড়াচ্ছে দেশের তৈরী পোশাক শিল্পখাতটি।

নগরবাউলের জেমসের একটা অসম্ভব সুন্দর গান আছে সেলাই দিদিমণিদের নিয়ে-
“দিদিমণি দিদিমণি সেলাই দিদিমণি
ছল ছল চোখে সেই দিদিমণি
আরে এই শহরে তোমার পাশে আমিও যে থাকি
লালটুক লালটুক দিদিমণি
দিদিমণি নিও তুমি আমার ভালবাসা
তোমার চোখে দেখি আমি নতুন দিনের আশা,
ইতয়স্ত খাটো তুমি, ছড়াও দেহের ঘাম
মহাজান দেয় কি তোমার ঘামের সঠিক দাম,
কখনো তুমি শিল্পী আর কখনও তুমি নারী
কখনও তুমি প্রেমিকা আর কখনও প্রতিবাদি
দিদিমণি দিদিমণি সেলাই দিদিমণি
চলতে পথে তোমার সাথে যখনই হয় দেখা
ইচ্ছে করে শুধাই তোমায় মনের দুটি কথা,
আরে এই শহরে তোমার পাশে আমিও যে থাকি
লালটুক লালটুক সেলাই দিদিমণি”

২৪ এপ্রিল ২০১৭ তারিখ সকাল ৮টা ৪৭ মিনিট - মোবাইল ফোনের ডিসপ্রে স্ক্রীণে ভেসে উঠতেই মনে পড়ে গেল ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল তারিখের ঠিক এই সময়টির কথা। বাংলাদেশে তৈরী পোশাক শিল্পখাতে এযাবতকালের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ানক দূর্ঘটনাটিই সেদিন সংঘটিত হয়েছিল রাজধানী ঢাকার স্বল্পদূরত্বে সাভার বাসষ্ট্যান্ড এলাকাতে। মুহুর্তের মধ্যেই যেন পুরো এলাকাটি হয়ে পড়লো নরকের এক সেরা উদাহরণ, লাশের সারি সাথে আহতদের আহাজারি। উদ্ধারকর্মীদের ছোটাছুটি, পুলিশ এ্যাম্বুলেন্স ্আর ফায়ার বিগ্রেডের গাড়ীর সাইরেণে পুরো এলাকা যেন কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছে। পুরো উদ্ধারকাজ শেষ হতে অনেকদিন চলে যায়। সতের দিনের মাথায় অলৌলিকভাবে উদ্ধার হয় রেশমা নামের এক নারী শ্রমিক, যদিও তার বেশ কয়েকমাস পরেও রানা প্লাজার ধ্বংসস্তুপ থেকে মানুষের মাথার খুলি আর হাড়গোড় পাওয়া গিয়েছিল। সেদিনের সেই দূর্ঘটনায় প্রায় তেরশ’ (কম-বেশী) মানুষ নিহত, কয়েক হাজার আহত, তিন শতাধিক নিখোঁজ হলেও আজো জানা যায়নি ধ্বসে পড়বার সময় রানা প্লাজার ভিতরে অবস্থানরত মানুষের সঠিক সংখ্যাটি। তবে একথা সত্য যে, অবস্থানকারী মানুষের সিংহভাগই ছিল নারী। যে নারীদের রোজ সকালে দেখা যেত একটা টিফিন ক্যারিয়ার হাতে নিয়ে ছুটে চলেছেন কর্মস্থলের দিকে, কি রোদ কি বৃষ্টি কোন কিছুই কখনো তাদের বাঁধা হয়ে দাঁড়াতেই পারেনি। সেই নারীগুলোর একেক জনই আমাদের সেলাই দিদিমণিরা।

আহত আর পঙ্গুত্ব বরণকারী সেলাই দিদিমণিরা

রানা প্লাজার দূর্ঘটনায় যারা প্রাণ হারিয়েছিলেন এক দৃষ্টিতে তারা বলা যায় হয়তো সৌভাগ্যবানই ছিলেন! আহত আর পঙ্গুঁত্ব বরণ করে আরো বেশী দূর্বিসহ জীবনের মুখোমুখি তাদের হতে হয়নি। দেখে যেতে হয়নি জীবনের কদর‌্যময় বিভীষিকার আরো একটি অধ্যায়। অগণিত শ্রমিক নতুন করে কর্মের সংস্থান করতে ব্যর্থ হয়েছেন শুধুমাত্র আহত বা পঙ্গুঁ শরীরের কারণে। তারা কাজ করতে সক্ষম হলেও তাদের কাজে যোগদিতে দেওয়া হয়না তাদের শারীরিক অবস্থার অজুহাতে।

‘২০১৩ সালে আগের আমি মরে গেছি। যখন আমার দুই হাত ছিল। স্বপ্ন দেখতাম, একসময় সেলাই মেশিন ছেড়ে পড়ালেখা শেষ করে অন্যরকমভাবে বেঁচে থাকবো। জীবন চলেই তো গেছিল! বলতে পারেন আমার বয়স এখন চার। আমার এই জন্মে একটি হাত নেই। আমার না থাকা হাতটি বড় ওড়না দিয়ে ঢেকে রাখি। এখনও পড়ালেখা করার চেষ্টায় আছি। বেঁচে থাকার লড়াইটা এখন আরও কঠিন, স্বপ্নগুলো অনেক বেশি বাস্তব’— বলছিলেন রানা প্লাজার দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পী রানী দাস। শিল্পী রানীর মত এমন অসংখ্য সেলাই দিদিমণিরা রানা প্লাজা ট্র্যাজেডীর পর মানবিক জীবন-যাপনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জয়ের মুখে পড়েছিলেন। আহত আর পঙ্গুঁ শরীর নিয়ে নতুন কর্মের সংস্থান করাটা ভীষণ কঠিন হয়ে পড়ে তাদের জন্য।

আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা অ্যাকশন এইড গত চার বছর ধরে রানা প্লাজা ধসে নিহতদের পরিবার এবং আহতদের পর্যবেক্ষণ করছে৷ তাদের সর্বশেষ গবেষণা পরিচালিত হয় দুঘর্টনায় আহত ১ হাজার ৪০৩ জন শ্রমিক এবং নিহত শ্রমিকের পরিবারের ৬০৭ জনের ওপর৷ আর তাতে দেখা যায়, আহত শ্রমিকদের মধ্যে ৪২.২ শতাংশ এখনো বেকার৷ কাজে যুক্ত হয়েছেন ৫৭ শতাংশ শ্রমিক৷ এছাড়া ২৬ শতাংশ শ্রমিক পরিকল্পনার অভাবে কোনো কাজে যুক্ত হতে পারছেন না৷

বাধ্য হয়ে অনেক নারীরাই তাদের পেশা পরিবর্তন করেছেন ইতিমধ্যে। কেউ সেজেছেন মুদীর দোকানি, কেউ হয়তো বিক্রয়কর্মী, কেউবা অন্যকিছু। অবশ্য সেই অলৌকিক কন্যা রেশমা কিছুটা ভাল আছেন সবার চেয়ে। অনেকটা আড়ালেই কেটে যাচ্ছে রেশমার দিন। সেই আলোড়ন সৃষ্টিকারী দরিদ্র পোশাক শ্রমিক রেশমা আক্তার এখন কোথায় আছেন, কেমন আছেন, তার পরিবার কোথায়- এসব খবর কেউই জানেন না। কয়েক জায়গায় যোগাযোগ করে ও কথা বলে এতটুকুই জানা গেছে যে, রেশমা এখনও পাঁচ তারকা হোটেল ওয়েস্টিনেই চাকরি করছেন এবং ভালো আছেন।

ক্ষতিগ্রস্থ অনেকের সংসারও পঙ্গুত্বের কারণে ভেঙেছে

আলোচিত রানা প্লাজা ট্র্যাজেডীর ঘটনায় ওই ভবনে থাকা কারখানা শ্রমিকরা কেবল পঙ্গুই হননি, হারিয়েছেন ঘর-সংসারও। কোনও কোনও আহত-পঙ্গু শ্রমিক শারীরিক সক্ষমতা হারিয়ে মানসিকভাবেও ভেঙে পড়েন। এর ফলে অনেকেরই স্ত্রী ও স্বামী তাদের ছেড়ে চলে গেছেন। রানা প্লাজার দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের একজন রোকসানা খাতুন। ভবন ধসের তিন দিন পর গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার হলে বাম পা হারাতে হয় তাকে। একপা হারানোর পর হাসপাতাল থেকে কৃত্রিম পা নিয়ে বাড়ি ফিরতে হয় তাকে। ওই অবস্থাতেই ঘর ঝাড়ু দেওয়া, কাপড় ধোয়া, রান্নাসহ গৃহস্থালীর সব কাজ করতেন তিনি। তারপরও স্বামী-শাশুড়ির মন পাননি তিনি! এসব জানাতে গিয়ে নীরবে চোখের পানি ফেলেন রোকসানা। রোকসানা জানায়, ‘স্বামী আমার সেই ভাঙা শরীরেই মারতো, শাশুড়ির অত্যাচারও সইতে হয়েছে আমাকে। কোলের মেয়েটা মারা যাওয়ার পরও স্বামী-শাশুড়ি কেউ দেখতে যায়নি। স্বামী বলতো, ‘তুই মেয়ে, তুই পঙ্গু, তুই আর কী করবি? তোকে নিয়ে সংসার করা যায় না।’ তাকে বলেছিলাম, আমি সফল হয়ে দেখাবো। আজ আমি সফল হয়েছি, নিজে উপার্জন করছি আর বাবা-মাকে দেখছি। শুধু দুঃখ একটাই, মেয়েটাকে ধরে রাখতে পারিনি।” রোকসানা আজ প্রধানমন্ত্রীর অনুদান হতে দেয়া সঞ্চয়পত্র আর কাপড় সেলাই করে মোটামুটি ভালভাবে থাকলেও অনেককেই সংসার হারাতে হয়েছে। শুধুমাত্র উপার্জন করতে অক্ষম বলেই তারা স্বামীর ঘর থেকে বিতাড়িত হয়েছিলেন। এই পরিণতি ঘটেছে রানা প্লাজার দুর্ঘটনার শিকার পোশাককর্মী আমাদের সেলােই দিদিমণি জেসমিন, রীতা খাতুন, রিক্তা ও লাভলীর জীবনেও। ভবন ধসের সঙ্গে-সঙ্গে বদলে গেছে তাদের জীবনের গল্প। ভেঙে গেছে তাদের সাজানো সংসারও।

শেষকথা

প্রতিবেদনটি লিখবার ইচ্ছে ছিল আরো বেশী তথ্যবহুল অার বাস্তবতার ভিত্তিতে। তবে ক্ষমাপ্রার্থী নিজের অপারগতার কারণে। সময় স্বল্পতা, তারচেয়ে বেশী তথ্য সল্পতার কারণে প্রতিবেদনটি মনের মত করে সাজাতে পারলাম না। তাই প্রচেষ্টা রইলো আগামীতে আরো তথ্যবহুল আকারে রানা প্লাজাসহ আরো যে সকল আলোচিত দূর্ঘটনা ঘটেছিল তৈরী পোশাক শিল্পে তার উপর একটি সুন্দর প্রতিবেদন প্রকাশের।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.