নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ঢাকা ব্যুরো প্রধান, ফোকাসবাংলানিউজ http://www.focusbanglanews.com http://www.facebook.com/biplob1972

আহমেদ মাসুদ বিপ্লব

সত্য লিখতে বাঁধা কই, বাঁধা এলে মানবো কেন?

আহমেদ মাসুদ বিপ্লব › বিস্তারিত পোস্টঃ

বেটা থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত শিশু অহনের চিঠি কি প্রধানমন্ত্রী বরাবর পৌঁছানো যাবে না?

২৭ শে এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ১০:১১

থ্যালাসীমিয়া (Thalassemia) একটি ভয়াবহ ঘাতক ব্যাধি। এই রোগে রক্তে অক্সিজেন পরিবহনকারী হিমোগ্লোবিন কণার উৎপাদন কম হয় ফলে রোগী রক্তে অক্সিজেনস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়াতে ভুগে থাকেন (রক্তশুন্যতা)। অ্যানিমিয়ার ফলে অবসাদগ্রস্ততা থেকে শুরু করে অঙ্গহানি ঘটতে পারে। থ্যালাসেমিয়া দুইটি প্রধান ধরনের হতে পারে: আলফা-থ্যালাসেমিয়া ও বেটা-থ্যালাসেমিয়া। সাধারণভাবে আলফা থ্যালাসেমিয়া বেটা থ্যালাসেমিয়া থেকে কম তীব্র। আলফা থ্যালাসেমিয়াবিশিষ্ট ব্যক্তির ক্ষেত্রে রোগের উপসর্গ মৃদু বা মাঝারি প্রকৃতির হয়। অন্যদিকে বেটা থ্যালাসেমিয়া রোগের ক্ষেত্রে রোগের তীব্রতা বা প্রকোপ অনেক বেশি; এক-দুই বছরের শিশুর ক্ষেত্রে ঠিকমত চিকিৎসা না করলে এটি শিশুর মৃত্যুর কারণ হতে পারে। অনিরাময়যোগ্য এই রোগের ওষুধ এখনো আবিস্কার হয়নি। রোগীকে নিয়মিত রক্ত গ্রহনই বেঁচে থাকার একমাত্র চিকিৎসা। তবে রোগীর বোনম্যারো-ট্রান্সপ্লান্ট করলে রোগী ভালো হবার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু দেশে প্রয়োজনীয় সুবিধা না থাকাতে দেশের বাইরে গিয়ে চিকিৎসা খরছের পরিমাণ অনেক বেশী হওয়ায় সবার পক্ষে বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট করানোটা সম্ভব হয়ে উঠেনা।

বাবা-মায়ের একমাত্র আদরের সন্তান মোঃ ফারহান কাইফ অহন। বয়স সবে মাত্র ৯ কি ১০ বছর। খুলনার খালিশপুরে নিজের পরিবারের সাথে থাকে সে। চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র অহনের বয়স যখন মাত্র ৫ মাস তখন তার শরীরে ধরা পড়ে থ্যালাসেমিয়া। আস্তে আস্তে অবস্থার অবনতি হতে থাকে। প্রথমে মাসে একবার তার রক্তের প্রয়োজন হতো। মূলত অহনের শরীরে রেডসেলের উদপাদন ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ায় তাকে রেডসেল দেয়া হয়। রক্ত থেকে পানি ও আয়রন আলাদা করে রেডসেল দেয়া হয় অহনকে। কিন্তু এখন মাসে ৫/৬ বার করে তাকে রেডসেল দিতে হয়। এতে অহনের পরিবারকে প্রত্যেকবারের জন্য অনেক টাকা ব্যয় করতে হয়। বেটা থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত অহনের এখন বোন-ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট করা ভীষণ জরুরি হয়ে পড়েছে। অহনের মা জানান, ভারতে চিকিৎসাকালে এক ডাক্তার জানিয়েছেন অহনের ব্লাডক্যান্সার হয়েছে বোনম্যারো প্রতিস্থাপন করতে হবে। বোনম্যারো প্রতিস্থাপনে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকার প্রয়োজন যা অহনের পরিবারের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। এখন সমাজের বিত্তবান ও সরকারের কাছে সাহায্য চেয়েছেন তার বাবা-মা।

এর আগেও প্রচুর পরিমাণ অর্থ খরছ করতে হয়েছিল শুধুমাত্র পুরো খুলনাতে রক্ত শোধনের একমাত্র মেশিনটি কর্মক্ষম ছিলনা বলে। অহনের বাবা-মাকে খুলনা থেকে রক্তদানকারীকে সাথে নিয়ে যশোরে গিয়ে রক্ত দিয়ে আসতে হতো, পরের দিন আবার যশোর যেয়ে রক্তের রেডসেল আলাদা করে নিয়ে এসে আবার সেটাকে নিয়ে হাসপাতালে গিয়ে অহনের শরীরে রক্ত সঞ্চালন করতে হতো। খুলনাতে রক্ত শোধনের নতুন একটি মেশিন চেয়ে তখন অহন মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বরাবর লিখেছিল, ‘মন্ত্রী আমরা তো আরো অনেকদিন বাঁচতে চাই। আমাদের রেড সেল দরকার একটা রেড সেল আলাদা করবার মেশিনের দাম কত? একটা মেশিন চাই। ইদানিং আমার প্রতি সপ্তাহে রক্তের দরকার হয়। আমার মা তো ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছে যশোর ও খুলনা যেতে যেতে। মন্ত্রী একটা মেশিন দিয়ে দেন না প্লিজ।’ অহনের সেই আবেদন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে পৌঁছালে তিনি নতুন একটি মেশিন না দিলেও পুরাতন মেশিনটি ঠিক করিয়ে দিয়েছিলেন।

সেই অহন এবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েছে দেশে একটি ভাল মানের বোনম্যারো ট্রান্সপ্লানটেশন সেন্টার স্থাপন করবার জন্য। দেশে বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট করার একমাত্র কেন্দ্রটি ২০১৩ সালের অক্টোবরে ঢাকা মেডিকেল কলেজে স্থাপন করা হয়েছিল। ঐ মুহুর্তে বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টের প্রস্তুতি নেয়া হলেও হঠ্যাৎ করে এই মূল্যবান যন্ত্রটি বিকল হয়ে পড়ায় পরবর্তীতে ২০১৪ সালের মার্চ মাসে পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি শেষে বোনম্যারো প্রতিস্থাপনের কাজ আরম্ভ হয়। কিন্তু একমাত্র এই কেন্দ্রটির সুবিধা যেটুকুই থাকুক না কেন প্রয়োজনের তুলনায় এটা একেবারেই নগন্য। দেশে বর্তমানে যে পরিমাণ বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট এর রুগী রয়েছে কোনভাবেই এই একটিমাত্র কেন্দ্র দিয়ে তাদের সেবা দেওয়া সম্ভবপর নয় বিধায় জরুরী ভিত্তিতেই আরো একটি পূর্ণাঙ্গ বোনম্যারো প্রতিস্থাপণ কেন্দ্র স্থাপণ করা প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। এই কারণে একমাত্র এই দেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীই দেখাতে পারেন ঐসকল রুগীদের আশার আলো। শিশু অহন এই বিশ্বাস থেকেই স্মরণাপন্ন হয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর। শিশু অহনের পক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর অবদি আবেদন পৌঁছানো অদ্যাবধি সম্ভব হয়নি বলে তার আবেদনখানা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেয়ালে দেয়ালে ঘুরে বেড়াচ্ছে দীর্ঘসময় ধরে। অথছ এরমাঝে অতিক্রান্ত হয়ে যাচ্ছে মূল্যবান সময়। আসুন না আমরা সবাই মিলে একবার চেষ্টা করে শিশু অহনের এই আবেদনটুকু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করে দিই। শিশু অহনের মত পুরোজাতিই বিশ্বাস করেন, একবার যদি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিগোচর হয় অহনের এই আবেদনখানি তাহলে আর দূর্ভোগ পোহাতে হবেনা দেশের অসংখ্য শিশু-কিশোর-যুবক-বৃদ্ধ বোনম্যারো প্রতিস্থাপণ প্রত্যাশী রুগীগুলোকে।

প্রধানমন্ত্রী বরাবর অহনের লিখা চিঠিখানি এখানে দেয়া হলো:

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
সালাম নিবেন। ভালবাসা রইল।
আপনি কেমন আছেন? আমি জানি আপনি ব্যস্ত, তাই সংক্ষেপে আপনাকে আমার কথাটা বলে ফেলি। আমাদের স্যাটেলাইট, সাবমেরিন,পারমানবিক কেন্দ্র, পদ্মা সেতুর মত হাজার কোটি, শত কোটি টাকার প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হতে দেখে আমার সাহস করে আপনাকে বলতে ইচ্ছে হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, একটা ভাল মানের বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট সেন্টার বাংলাদেশে বানিয়ে ফেলুন না। আপনি হয়ত জানেন না, আমার বেচেঁ থাকার জন্য বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট এর বিকল্প নেই। প্রতিবছর আমার মত দেশের কত শত মানুষের বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টের প্রয়োজন হয়। কিন্তু আমাদের দেশে ভাল মানের বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টের সুবিধা নেই। যাদের সুযোগ হয়, আর্থিক অবস্থা ভাল তারা ভারতে যায়।
আমার অবশ্য ভাগ্য ভাল। আমি ভাগ্যবান সারাদেশ থেকে একদল মানুষ আমায় ভালোবেসে আমার চিকিৎসার জন্য টাকা সংগ্রহ করছে। হয়ত আগামী কয়েক মাসের মধ্যে আমার টাকা সংগ্রহ হয়ে যাবে। আমি চিকিৎসা করতে ভারত যাবো।
কিন্তু যারা আমার মত ভাগ্যবান নয়, তাদের মৃত্যুর বিকল্প নেই। হয়ত আপনার কলমের এক খোঁচাতে হয়ে যাবে একটা ভাল মানের বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট সেন্টার। বেঁচে যাবে আমার মত হাজার হাজার অহন। আপনাকে বলতে ভুলে গেছি আমার এক চিঠির প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী খুলনায় রক্তের রেডসেল আলাদা করার নষ্ট মেশিনটি ঠিক করে দিয়েছেন। এখন আমার মত শিশুদের আর কষ্ট করতে হয় না।
আগে কত যে কষ্ট হত আমার আর আমার মায়ের। প্রতি মাসে যশোর কিংবা ঢাকায় যেতে হত। এরপর আমার সাহস আরো বেড়ে গেছে। মায়ের সাথে কথা বলে, সাহস করে আপনাকে চিঠিটা লিখে ফেললাম।
আমি অহন, আমি বাঁচতে চাই, ডাক্তার যতই ভয় দেখাক। আমার নাকি মাস কয়েক সময় আছে, বড়জোর এই বছরটা। কিন্ত আমি স্বপ্ন দেখি- স্বপ্নের পদ্মা-সেতু উদ্ভোধনের সময় আমি আপনার সাথে আপনার পাশেই থাকব। খুলনা থেকে তখন আর সারারাত জেগে ঢাকায় আসতে হবে না ডাক্তার দেখাতে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট সেন্টারটা খুলে ফেলেন না। প্লিজ। আপনি তো চাইলেই পারেন। বাবা বলেছিল, সবাই নাকি ভেবেছিল পদ্মাসেতু হবে না। অসম্ভব! বিদেশী সাহায্য ছাড়া এত বড় সেতু হবেই না। কিন্তু আপনিতো সেটাকেও সম্ভব করে দেখিয়েছেন। দেখিয়েছেন যে, বিদেশীদের খয়রাতি সাহায্য ছাড়াও আমরা শুধুমাত্র আমাদের নিজের প্রচেষ্টায় যেকোন ধরণের বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষমতা রাখি। আমি বাবাকে বলি, বাবা তোমাকে আমি পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকায় নিয়ে যাব।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, কত টাকা দরকার একটা বোনম্যাররো ট্রান্সপ্ল্যান্টের সেন্টার বানাতে? আমার চিকিৎসার পর যত টাকা বেচে থাকবে আমি তা দিয়ে দিব। আমি দেশবাসী থেকেও টাকা সংগ্রহ করে দিব। হাজার হাজার ভাইয়া-আপুরা আমার সাথে আছে, প্লিজ প্রধানমন্ত্রী আপনি একটা উদ্যোগ নিন না। আমাদের তো কোন বিকল্প নেই বেঁচে থাকার বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট ছাড়া।
বলতে ভুলে গেছি আমার নাম অহন। থাকি খুলনায়। ক্লাস ফোরে পড়ি। আপনি ভাল থাকুন। সুস্থ থাকুন। ভালবাসা রইল আপনার প্রতি।
ইতি-
অহন, খালিশপুর, খুলনা।

আমাদের প্রত্যাশা শিশু অহনের এই অাবেদনখানি দৃষ্টিগোচর হবে অতিশীঘ্রই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয়ের। আর তখন তিনি নিশ্চয় তা ফেলবেন না, অহনের আবেদন বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত দেশে একটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ‘বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট সেন্টার’ গড়ে তুলবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ণের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। হাজার হাজার শিশু অহন যে সে ভরসা্য়ই তাকিয়ে আছেন জাতির জনকের কন্যার মুখের দিকে। মাতৃস্নেহেই নিশ্চয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ফিরিয়ে দিবেন আবার অহনদের হারিয়ে ফেলা মুখের হাসিটুকু।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.