একটাই পরিচয় তারা দরিদ্র, দারিদ্রতাই তাদের জাতীয়তা

২০ শে মে, ২০১৭ রাত ১১:০৬

রেল লাইনের পাশে বসবাস করা এই পরিবারটি নিঃসন্দেহে অসংখ্য দরিদ্র পরিবারের একটি। অথছ এই ছবিটি জানান দিচ্ছে তাদের হাসিমুখের, সুখের। হিংসে করার মত এই সুখটা, হিংসে করার মত তাদের মুখের এই হাসিটুকু। কারণ হাজার হাজার কোটিপতির ঘরেও এই সুখটা নেই, নেই তাদের মুখে এমন হাসিও। অর্থই যে সব সুখ বা হাসির জন্মদাতা হতে পারেনা তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত এই পরিবারটি। খুঁজতে বের হলে হয়তো এমন আরো কিছু পরিবারের সন্ধান পাওয়া যাবে নগরীর অলি গলিতেও।

কিন্তু সবাই তো আর এদের মত হাসতে পারছেন না। দারিদ্রতার নিষ্পেষনে জর্জরিত হয়ে বাস্তবতার প্রতিনিয়ত নির্মমতার শিকার এই দেশের হাজার হাজার, লক্ষ কোটি মানুষ। তারা সবাই কিন্তু মোটেই সুখে নেই, নেই তাদের মুখে সামান্যতম হাসিও। তারাও হাসতে চান, কিন্তু পারেন না। কারণ তারা দরিদ্র, হাসতে যে তাদের মানা! তাদের জন্মই যেন হয়েছে মলিন মুখে জিন্দেগী পার করে দেওয়ার জন্য। তাদের হাসির অধিকার নেই। তাদের ভাল থাকবার অধিকার নাই। নাই তাদের নূন্যতম মানবিক চাহিদা পূর্ণ করবার অধিকার।

এই রাষ্ট্রে দরিদ্রতা যেন এক অভিশাপ! দরিদ্র হয়ে জন্মানোটাই যে সবচেয়ে বড় পাপ এইখানে। পদে পদে জ্বালা নিয়ে বাঁচতে হবে তাকে। কখনো যদি দরিদ্রতার বাঁধন ছিন্ন করতে চায় সে তবে সেটাও হয়ে যায় তার জন্য আরো বড় ধরণের মহাপাপ! কোন না কোন ভাবে ঠিকেই তাকে পিছন থেকে টেনে ধরে রাখা হবে, যেন সামনে এগুতেই না পারে সে। দরিদ্র হয়ে মারা যাওয়াটাও এখানে অনেক বড় ঝক্কিঝামেলার কাজ। দাফন-কাফন করার জন্য যে নূন্যতম খরছাপাতির প্রয়োজন হয় তার সংস্থানও থাকেনা অনেকের কাছেই। রাস্তার পাশে লাশ ফেলে রেখে পথচারীর দয়ার উপর নির্ভর করে দরিদ্র লাশের অন্তিম যাত্রার আয়োজন।

হে দারিদ্র তুমি মোরে করেছ মহান- একথা শুধু যেন সাহিত্যেই শোভা পায়, বাস্তবে নয়। দারিদ্রতার মূল্যায়ন একটা সময় অবশ্য হয়, যখন ভোটের দরকার পড়ে। দরিদ্র মানুষগুলাও তখন ভোটপ্রার্থীর আপনজনের চেয়েও বেশী আপন হয়ে পড়ে। কিন্তু ভোট শেষ হলে আবার ‘যে লাউ সে কদু’ অবস্থায় ফিরে আসে তাদের অবস্থানটা। সর্বোপরি একটি কথাই প্রযোজ্য দরিদ্র জনগণের জন্য- তাদের পরিচয় তারা দরিদ্র, দারিদ্রতাই তাদের জাতীয়তা।

০ টি +০/-০