নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
“ মানূষের জীবনকাল মাত্র দুই দিনের যার একদিন যায় স্বপ্ন দেখতে- একদিন যায় স্বপ্ন ভাঙ্গতে ” ।
‘সামহোয়ারইন ব্লগ’ এর সম্মানীত পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ :
মোবাইল ফোনের ব্যবহার সভ্য জীবনের একটা অপরিহার্য ব্যবস্থা হয়ে উঠলেও এর ক্ষতির দিকও রয়েছে । বর্তমানে আট থেকে আশি বছরের সবাই মোবাইল ফোনে কম/বেশী আসক্ত । বিশেষ করে, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সহজে যোগাযোগ করতে অবিবাহিতরা জড়িয়ে পড়ছে অসম প্রেমে ।টিনেজ তথা উঠতি বয়সের যুবক-যুবতীরা জড়িয়ে পড়ছে নানারকম জীবন জটিলতায় এমনকি শেষ পরিণতিতে ধর্ষণসহ অস্বাভাবিক মৃত্যুকে আলিঙ্গন করা স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে । বিবাহিতরা পরকিয়ায় জড়িয়ে পড়ছে সহজেই । ফলস্বরুপ দীর্ঘ সময়ে তীলেতীলে গড়া সোনার সংসার ধ্বংস হয়ে ব্রোকেন ফ্যামিলীতে রুপান্তরিত হচ্ছে । আর স্বাভাবিকভাবেই ব্রোকেন ফ্যামিলীতে বেড়ে উঠা শিশুদের জীবন অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বা ধ্বংস হচ্ছে । নিম্নবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত এমনকি রাস্ট্রের গুরুদায়িত্ব পালণকারী সদস্যরাও এর থেকে পরিত্রান না পেয়ে ইতিমধ্যে ভুক্তভোগীদের বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পেয়ে তাদের জীবনও দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে । অনেকে সারাদিন ফেসবুক/হোয়াটসএপস/ইউটিউব কিংবা টুইটারে বুদ হয়ে থাকায় কমে যাচ্ছে পারিবারিক বন্ধন। ফাটল ধরছে স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কে। সৃষ্টি হচ্ছে সন্দেহ, বাড়ছে পারিবারিক কলহ। পরিবারের সব সদস্যের একসঙ্গে বসে গল্পগুজব-হাসিঠাট্টা করার কথা সমাজ ভুলতে বসেছে। যতটুকু সময় অবসর মিলছে, তার পুরোটাই কাটছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এই মাধ্যমগুলো শুধু তাদের সময়ই নষ্ট করছে না, নষ্ট করছে ভালো সম্পর্ক, ভালো অভ্যাস, আবেগ-বিবেক-নীতি-নৈতিকতা-মূল্যবোধ।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো যুবসমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকিয়ে দিচ্ছে একাকিত্বের ছোঁয়া। তারা বিচ্ছিন্ন হচ্ছে তাদের পারিবারিক ভালোবাসার জগৎ থেকে, জড়িয়ে পড়ছে ভার্চুয়াল জগতে, যে জগৎ একাকিত্ব ও হতাশা দিয়ে গড়া।
পৃথিবীকে আমাদের হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম- ফেসবুক, টুইটার, গুগল প্লাস, ইনস্টাগ্রাম, মাই স্পেস, ইউটিউব ইত্যাদি। এসব সামাজিক মাধ্যম আমাদের ভৌগোলিক দূরত্ব কমালেও বাড়িয়েছে পারস্পরিক সম্পর্কের দূরত্ব। হুমকির দিকে ঠেলে দিচ্ছে যুবসমাজকে, ঘটাচ্ছে অবক্ষয়।
যুবসমাজকে এই ভয়ংকর অবক্ষয় থেকে বাঁচাতে প্রয়োজন পারিবারিক স্নেহের বন্ধন ও সামাজিক সহায়তা। মা-বাবার সঙ্গে ছেলেমেয়ের সম্পর্ক হতে হবে বন্ধুত্বের। পরম আস্থার জায়গা হবে মা-বাবা, যেখানে তারা তাদের সব ব্যক্তিগত বিষয় স্বতঃস্ফূর্তভাবে শেয়ার করতে পারবে। মা-বাবাকে তাদের সন্তানদের দিকে নজর রাখতে হবে। তাছাড়া তাদের মধ্যে ধর্মীয় মূল্যবোধ জাগিয়ে তুলতে হবে। কোনো ধর্মেই নৈতিকতাবহির্ভূত কাজের স্থান নেই।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার থেকে তাদের বের করে নিয়ে আসা সমাজের নৈতিক দায়িত্ব। এসব মাধ্যমের অপব্যবহার নয়, সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে সমাজে শান্তি আসুক, এটাই কাম্য।
উত্তরবঙ্গের একটি জেলা শহরে কিছুদিন আগে আলোড়ন সৃষ্টিকারী একটি ঘটনা নিয়ে রচিত আমার একটি বড়গল্প “।। একজন মা ও তার বেওয়ারিশ বিড়াল মাতৃকতা ।।” ধারাবাহিকটি পড়ে সম্মানীত পাঠকবৃন্দের মূল্যবান মতামত ব্যক্ত করার প্রত্যয় কামনা করছি । সবাইকে জানাই শুভকামনা । - আহমেদ রুহুল আমিন ।পঞ্চগড়, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০ খ্রি. ।
(পর্ব-৫)
কয়েকদিনপর একদিন বিকেলবেলায় আলেয়ার বড়বোন মরিয়ম ঢাকা থেকে মোবাইল করে জানায় যে, সে তার দুলাভাই ও ছেলেমেয়েসহ রহিমার বরকে নিয়ে ঢাকা থেকে ‘পঞ্চগড় এক্সপ্রেস’ নামে নুতন ট্রেনে করে বাড়িতে আসছে । রহিমাকে সে ঢাকায় একটা গারমের্ন্টসে কাজ নিয়ে দিয়েছে এবয় একটা ছেলের সাথে বিয়েও দিয়েছে । বড়বোনের আসার খবর শুনে তার যারপর নাই আনন্দ লাগছে । তাই তড়িঘড়ি করে ‘বাবু’কে নিয়ে কামরুলকে বলে কাজিরহাটের তালমা গুচ্চছগ্রামের বাপের বাড়িতে যায় । অনেকদিন পর বাপের বাড়িতে এসে মায়ের কথা, শৈশব স্মৃতি, বোনদের সাথে ঘুড়ে বেড়ানোর স্মৃতি হাতরিয়ে মনটা বিষাদে ছেয়ে যায় । তার বাবা যেন দিন দিন অপরিচিত হয়ে যাচ্ছে । দিন বদলের সাথে সাথে পৃথিবীর একমাত্র আপনজনের বদলানো তাকে অবাক করে । তারপরও অনেকদিন পর তিনবোন মিলে খাওয়া-দাওয়া, গ্রামের পড়শীদের বাড়িতে বেড়ানো খুব ভাল লাগে । কিন্তু তার সৎ’মায়ের অন্ধকার মুখ, কথা কম বলা বা তারা আসাতে মনভার করে থাকা মেয়েদের প্রতি বাপের আগ্রহ কম থাকা ইত্যাদি মিলিয়ে তার খুব মন খারাপ হয় । মেয়েদের প্রতি যেন বাপের কোন দায়বদ্ধতা নেই । তাই সে সিদ্ধান্ত আর কোনদিন বাপের মুখ দর্শন করবেনা বা বাড়িতে আসবেনা । বড়আপু ও রহিমার নুতন বরকে নিয়ে তাদের মকর্দমডাংগার বাড়িতে যায় । সকাল সকাল বড়বোনের কাছে বিদায় নিয়ে সেও কাজিরহাট থেকে ভ্যানে করে পুরাতন বোর্ড বাজারে এসে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে । একটা বাস আসলে বাসে বেশী ভিড় থাকায় পরের বাসের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে । এমন সময় একটি দশচাকার পাথরবোঝাই ট্রাক তাদের সামনে থামে । ট্রাক ড্রাইভার আগ্রহ ভরে তাদের সামনের সীটে বসার জন্য বলে। তার পরণে সালোয়ার কামিজ থাকায় সামনের সীটে বসার তার কোন অসুবিধা হয়না । জগদল বাজারে এসে গাড়ি থামিয়ে ড্রাইভার তাদের চানাস্তা করার অফার দেয় । মাঝবয়সী ট্রাক ড্রাইভারের নাম আরিফুল ।তার অমায়িক ব্যবহার তার ভালই লাগে । তার বাড়ি নাকি দিনাজপুরের পার্বতীপুরে । ড্রাই্ভারের নাকি একটি ছোট বোন ছিল তার মতো দেখতে । বিয়েও দিয়েছিল এবং বিয়ের কয়েকদিন পরে বোনটি হঠাৎ ডায়রিয়ায় মারা যায় । চানাস্তা করে তার কাছে মোবাইল নম্বর চাইলে সে নির্বিঘ্নে দিয়ে দেয় । তাকে ভাড়া দিতে চেয়েও দিতে পারেনি । পঞ্চগড় শহরে এসে পৌঁছে যখন তখন প্রায় সন্ধ্যা নামে ।
পরেরদিন রাতে অনেকক্ষণ ধরে আরিফুল ড্রাইভারের সাথে মোবাইলে কথা হয় । আরিফুল ড্রাইভার অল্প বয়সে বিয়ে করায় ছেলে মেয়ে বড় হয়ে গেছে এমনকি তাদের বিয়েও দিয়ে দিয়েছে । ছেলে পার্বতীপুরে ভাল ব্যবসা করে । বউ থাকে ছেলের কাছে । বউ ছেলে এখন তার খোঁজ রাখেনা । সুতরাং সে যদি রাজি হয় তবে সে তাকে বিয়ে করে ভাড়া বাসায় রাণীর মতো রাখবে । আলেয়াও মাঝে মাঝে কামরুলের কথা ভাবে । সে অনেক সময় মোবাইলে কোন মেয়ের সাথে দীর্ঘক্ষণ কথা বলে । বিশেষ করে, সে শুনেছিল ওর নাকী এক মামাতো বোনের সাথে প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে । ইদানিং সে আলেয়ার প্রতি কোন দায়িত্ব পালণ করতে চায়না । বাবুর জন্য কোন কিছু নিয়ে আসেনা । এমনকি বাসার বাজারও নিয়মিত করেনা । সে কাজ করে যা পায় তাই দিয়ে তাদের চলতে হয় । শুধু সে বাসা ভাড়ার টাকাটা দেয় । তাও অনেকসময় বাকী ফেলে যা আলেয়াকেই শোধ করতে হয় । অনেক ভেবেচিন্তে তাই ও সিদ্ধান্ত নেয় এই আধবুড়োর সাথে সংসার করলেই ওর ভবিষ্যতের অনিশ্চিত অবস্থা থেকে রেহাই পাবে । মোবাইলেই কথা অনুযায়ী দিনাজপুর কোর্টের এক পরিচিত উকিলের বাসার নোটারি পাবলিক চেম্বারে এফেডেফিট করে ওদের বিয়ের কাজ সম্পন্ন করে দিনাজপুর শহরে ভাড়া বাসায় থাকবে । এরকম স্বপ্নের জ্বাল বুনা গ্রামে জন্ম ও বেড়ে ওঠা অনিশ্চিত জীবনের গন্তব্যে চলা মেয়েটি জানেনা সেই জ্বালের মধ্যে রাক্ষুসে মাছেদের হাজারো কামড়ে ফুটো হওয়া ছিদ্রে পালিয়ে যাওয়া আরিফুল ড্রাইভারদের জন্য কত সহজসাধ্য ।
মানুষ ভাবে এক আর বাস্তবে ঘটে আরেক । না হলে সকালবেলা এরকম একটি খবর আলেয়ার সংসার নামের মাটির হাড়িটির ঠিক মাঝ বরাবর যে ফাটল সৃষ্টি হয়েছিল তা ছড়ে গিয়ে একেবারে চুরমার হয়ে গেছে । গতকাল যখন সন্ধ্যায় মাস্টারনি আপার বাসায় কাজ শেষ করে রাতের খাবার নিয়ে ভাড়াবাড়ির চালাঘরে এসে কামরুলের জন্য মাঝরাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে থাকে । কিন্তু তার না আসার কারণে সারারাত ছেলেকে নিয়ে ঘুমোতে পারেনি ।
সকালে হোটেলে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারে গতকাল সন্ধ্যায় সে বাসায় চলে গেছে ।স্বামীর কোন খোঁজ না পেয়ে সে পাগলিনী প্রায় । এতদিনে সে বুঝতে পেরেছে কামরুল যখন তখন মোবাইলে কার সাথে যেন কথা বলে যা তার চেহারায় ফুটে উঠতো । এ নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করলে সে থতমত খেতো । কয়েকদিন পর জানতে পারে সে কামরুল কাজীরহাটের ওর সেই সম্পর্কের মামাতো বোনকে নিয়ে ঢাকায় পালিয়ে গেছে । এদিকে পেটের বাচ্চার বয়স বাড়তে থাকলে আলেয়া তার ঔরসজাত সন্তানের অনাগত ভবিষ্যতের চিন্তায় অকুল পাথারে ভাসতে থাকে ।
কয়েকদিন পরে আরিফুল ড্রাইভারের কথামতো ঢাকায় বড়বোনের বাসায় যাবার কথা বলে দিনাজপুরে গিয়ে নোটারীর উকিলের কাছে এফিডেফিট করে আলেয়ার সাথে বিয়ে হয় এবং সেখানে ফকিরপাড়ায় একটি একরুমের বাসাভাড়ায় বার-চৌদ্দ দিন থাকে । কিন্তু আরিফুল যখন বুঝতে পারে আলেয়া আগে থেকে প্রেগনেন্ট তখন সাফ জানিয়ে দেয় সে কিন্তু এই বাচ্চাকে কিছুতেই গ্রহণ করবেনা এতে যদি তাকে তালাক দেয়ার প্রয়োজন হয় তাই সে করবে । এতক্ষণে আলেয়া বুঝতে পারে যে, তার পায়ের নীচে থেকে মাটি আস্তে আস্তে সরে যেতে শুরু করেছে । এপর্যায়ে আরো কয়েক দিন থেকে পঞ্চগড়ে তুলারডাংগায় ভাড়াবাড়িতে চলে আসে এবং মাস্টারনি আপার বাসায় কাজে যোগ দেয় । এই বাড়িতে এসেই আলেয়া বুঝতে শুরু করে এতদিনের গড়া সংসার নামের মাটির হাড়িটির ঠিক মাঝ বরাবর যে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে তা আর জোড়া লাগার কোনই সম্ভাবনা নেই ।
( ক্রমশঃ )
১৩ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ১০:৩৬
আহমেদ রুহুল আমিন বলেছেন: অপ্রিয় হলেও এটাই সত্যি.....
২| ১৩ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ২:১০
মেহেদি হাসান《মিরাজ》 বলেছেন: মোবাইল ফোনের ব্যবহার সম্পর্কে যথার্থ লিখেছেন।
১৩ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ১০:৩৭
আহমেদ রুহুল আমিন বলেছেন: ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য ।
৩| ১৩ ই অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ১২:২৮
মা.হাসান বলেছেন: বাস্তব জীবনের প্রতিচ্ছবি।
পরকিয়া আগেও ছিলো। মোবাইল আরো সহজ করে দিয়েছে।
৪| ১৩ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ১০:৪১
আহমেদ রুহুল আমিন বলেছেন: পরকিয়াকে মোবাইল ফোন অনেক সহজ করে দিয়েছে, এর থেকে পরিত্রাণের কোন উপায় নেই ......। অনেক ধন্যবাদ মন্তব্য প্রদানের জন্য ।
©somewhere in net ltd.
১| ১৩ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ১২:১০
রাজীব নুর বলেছেন: এক বছরের শিশুও হাতে মোবাইল দিলে চুপ হয়ে যায়।