নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শাহাবুদ্দিন শুভ

শাহাবুিদ্দন শুভ

শাহাবুদ্দিন শুভ লেখালেখির নেশাটা ছাড়তে পারিনি। তাই এক সময় জড়িয়ে গেলাম সাংবাদিকতায়। কাজ করেছি দেশ ও দেশের বাহিরের পত্রিকাতে। আর এখন পুরোপুরি একজন ব্যাংকার স্বত্ব সংরক্ষিত e-mail- [email protected] ০০৮৮ ০১৭১৬ ১৫৯২৮০ e-mail- [email protected] +৮৮ ০১৭১৬১৫৯২৮০

শাহাবুিদ্দন শুভ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফ্রান্সের পথে পথে বই: স্বপ্ন দেখি বাংলাদেশের জন্য - ২

২০ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ১০:২৭



শাহাবুদ্দিন শুভ :: ইউরোপের অনেক কিছুই আমাকে মুগ্ধ করে, কিন্তু ফ্রান্সের রাস্তার পাশে বই রাখার এই সংস্কৃতি সত্যিই হৃদয় ছুঁয়ে যায়। সেখানে কোনো আনুষ্ঠানিকতা নেই, নেই কোনো কড়াকড়ি বা বই ফেরত দেওয়ার বাধ্যবাধকতা। এখানে বিশ্বাস আর স্বাধীনতার এক অপূর্ব মেলবন্ধন তৈরি হয়েছে। এই দৃশ্য দেখে আমি বারবার ভেবেছি, যদি আমাদের দেশেও এমন সুযোগ থাকত! ছোটবেলায় যদি আমি এই সুবিধাটা পেতাম, হয়তো আমার জীবন অন্যরকম এক মোড় নিত।
বই পড়া এবং লাইব্রেরির সঙ্গে আমার আত্মিক সম্পর্ক সেই ছোটবেলা থেকেই। আমাদের গ্রামের পাশের বাড়ির নুরুজ চাচা পত্রিকা রাখতেন, আর আমি প্রতিদিন সেখানে গিয়ে পড়তাম। তখন আমাদের গ্রামে পত্রিকা আসতে বিকেল হয়ে যেত, কারণ তা বাজার থেকে সংগ্রহ করে আনতে হতো। আমি ক্লাস ফোরে পড়ার সময় থেকেই বিকেলে খাবারের পর পত্রিকা পড়তে যাওয়া আমার নেশায় পরিণত হয়। পরের বছর যখন আমি ক্লাস ফাইভে উঠলাম, তখন আমার বই ও পত্রিকা পড়ার নেশা আরও বেড়ে গেল। আমাদের বাজারে লুৎফর চাচার দোকানে বিভিন্ন গ্রামের মানুষ তাদের পত্রিকা রেখে যেতেন, আর আমি সেখানে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে পড়তাম।

গোপলার বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবনে যখন ‘গোপলা বাজার গণকেন্দ্র পাঠাগার’ প্রতিষ্ঠিত হলো, তখন আমি প্রথম সদস্যদের একজন ছিলাম। এক সপ্তাহের জন্য বই নেয়ার সুযোগ থাকত, আর আমি সবার আগে সেই সুযোগ গ্রহণ করতাম। এক মাসের মধ্যে এত বই পড়ে ফেললাম যে পাঠকের তালিকায় আমার নাম সবার উপরে উঠে গেল। এই বিষয়টি আমার বাবাকে রীতিমতো রাগিয়ে তুলল। তিনি মনে করতেন, অতিরিক্ত বই পড়লে পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটবে। কিন্তু আমি কেমিস্ট্রি ও ফিজিক্স বইয়ের মাঝে গল্পের বই লুকিয়ে পড়তাম।

কলেজে ভর্তি হওয়ার পর শহরের সুজন লাইব্রেরি থেকে টাকা দিয়ে বই ভাড়া নিয়ে পড়তাম। শর্ত ছিল—বইয়ে কোনো দাগ দেওয়া যাবে না, কারণ এই বই আবার অন্যদের কাছে যাবে। বই পড়তে পড়তে বিভিন্ন বিষয়ে জানার আগ্রহ জন্মাল, কুইজ প্রতিযোগিতায় অংশ নিলাম, ছোট ছোট লেখা পাঠাতে শুরু করলাম বিভিন্ন পত্রিকায়। ১৯৯৭ সাল থেকে বাংলাদেশ বেতার সিলেটে আমার কবিতা প্রচারিত হতে শুরু করে। শুধুমাত্র বই পড়ার অভ্যাসই আমাকে এই জায়গায় নিয়ে এসেছিল।
ফ্রান্সের রাস্তায় বই রাখার এই সংস্কৃতি দেখে আমি অনুপ্রাণিত হই। এখানে একটি শিশু বড় হতে হতেই বুঝতে শেখে যে, পড়াশোনা কেবল পাঠ্যবইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বিনামূল্যে বই পড়ার সুযোগ, লাইব্রেরিতে সহজ প্রবেশাধিকার, এমনকি স্কুলে এক্সট্রা কারিকুলাম হিসেবে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা হয়। আর আমাদের দেশে? সেখানে এসব চিন্তাই যেন অবাস্তব!


ফ্রান্সের মেট্রোরেল বা দূরপাল্লার ট্রেনে উঠলে মোবাইল স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকা মানুষের সংখ্যা তুলনামূলক কম, বরং তাদের হাতে থাকে বই। চলন্ত ট্রেনে, ব্যস্ত রাস্তার পাশে, ক্যাফেতে বসে—সব জায়গায় মানুষ বই পড়ছে। একমনে পড়ছে, যেন চারপাশের কোলাহল তাদের স্পর্শ করতে পারছে না।
আমি স্বপ্ন দেখি, হয়তো একদিন আমাদের দেশেও এমন দৃশ্য দেখা যাবে। হয়তো একদিন প্রতিটি স্কুল, বাজার কিংবা গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ছোট ছোট পাঠাগার থাকবে। আমাদের নতুন প্রজন্ম যদি বই পড়ার প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠে, তাহলে আমরাও গড়ে তুলতে পারব এক আলোকিত ভবিষ্যৎ। ফ্রান্সের মতো আমাদের দেশে হয়তো রাস্তায় বই রাখার ব্যবস্থা এখনো করা সম্ভব নয়, কিন্তু আমরা অন্তত স্কুল, কলেজ ও বাজারকেন্দ্রিক পাঠাগার তৈরি করতে পারি। হয়তো একদিন বাংলাদেশের কোনো শিশুও রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে অবলীলায় একটি বই হাতে নিয়ে পড়তে শুরু করবে, কোনো প্রশ্ন ছাড়াই!
এই স্বপ্ন সত্যি হবে কি না জানি না, তবে আমি স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি। কারণ, বড় কিছু করার প্রথম শর্তই হলো—বড় স্বপ্ন দেখা।


(চলবে...)

শাহাবুদ্দিন শুভ
ফ্রান্স প্রবাসী সাংবাদিক ও লেখক
[email protected]

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ১০:৪৪

নকল কাক বলেছেন: আমি একজন নতুন ব্লগার, আমার ব্লগে আসবেন।

২৪ শে মার্চ, ২০২৫ ভোর ৫:৪৫

শাহাবুিদ্দন শুভ বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ২২ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ১১:৪০

রাজীব নুর বলেছেন: ফান্স ভালো দেশ।

২৪ শে মার্চ, ২০২৫ ভোর ৫:৪৬

শাহাবুিদ্দন শুভ বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.