![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রাইমারি স্কুলে আমাদের এক বন্ধু ছিল। নাম বদরুল
আলম। তো বদরুলের কাজ ছিল স্যারেদের টিফিন চুরি
করে খেয়ে ফেলা। প্রায়শই দেখা যেত ওমুক স্যারের
টিফিন বক্স হাওয়া হয়ে গেছে। পরের দিন আরেক
স্যারের। তার পরের দিন আরেক স্যারের। বদরুল
পরপর দুদিন একই স্যারের টিফিন চুরি করত না। সে
যথেষ্ঠ মানবিক। চুরি করলেও নীতি বজায় রাখতো।
পরপর দুদিন একই স্যারের খাবার খেয়ে ফেলার মতো
নির্দয় সে হতো না। সিরিয়াল মেইন্টেন করে খেতো।
প্রথম প্রথম ব্যাপারটা সেভাবে কোন স্যার গুরুত্ব
দিতেন না। কিন্তু ঘটনাটা যখন নিয়ম করে ঘটতে
লাগল তখন স্যারেরা চিন্তায় পড়ে গেলেন। এতটুকু
বাচ্চারা চুরি করবে সেটা তো আসলে ভাল দেখায়
না। একটা বিহিত করা দরকার। প্রত্যেক স্যারেরা
নিজেদের টিফিন বক্স চোখে চোখে রাখা শুরু
করলেন। উদ্দেশ্য চোর কে হাতে নাতে ধরা। তবু
কোনকিছুতে কাজ হয় না। কোন এক ফাকে ঠিকই টিফিন
চুরি হয়ে যায়। স্যারেরা হাল ছেড়ে দিয়ে
সিদ্ধান্ত নিলেন যার যেদিন টিফিন চুরির পালা
সে সেদিন দুটি করে বক্স আনবে। অর্থাত, আজ যদি
আনসার স্যারের টিফিন চুরি হবার পালা থাকে তবে
আনসার স্যার দুটি টিফিন বক্স আনবেন। বদরুল এই
টিফিন চুরিটা এমনই সিরিয়াল মেইন্টেন করে করত
যে স্যারেরা নিজেদের মধ্যেই একটা অলিখিত রুটিন
বানিয়ে ফেলেছিলেন। কোন স্যারের টিফিন
কোনদিন চুরি হবে সেটা স্যারেরা আগেভাগে বুঝতে
পারতেন! এবং সে অনুযায়ি ডাবল খাবার আনতেন।
একটা চোরের জন্য একটা নিজের জন্য। মজার
ব্যাপার হলো এতকিছুর পরও আবিস্কার করা গেলো না
চুরিটা আসলে করছে কে! সব রকমের গোয়েন্দা
কার্যক্রম বলতে গেলে ব্যর্থ। স্যারেরা ক্লাশ নিতে
এসে গম্ভির মুখে বলতেন, আজ অমুক স্যারেরটা গেলো!
আমরাও স্যাররা ক্লাশে আসলে সবার আগে জিজ্ঞেস
করতাম, স্যার আজ কোন স্যারেরটা গেছে? তারপর
রোলকল শুরু হতো।
সন্দেহের তীর যে বদরুলের দিকে যায়নি তা নয়।
তবে হাতেনাতে ধরা যাচ্ছিল না বলে কেউ নিশ্চিত
হতে পারতেন না। অবশেষে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষন।
বদরুল হাতে নাতে কর্ট! ধর্ম স্যার একেবারে স্পটে
ধরে ফেলেছেন। বদরুলকে নিয়ে যাওয়া হলো হেড
স্যারের কাছে। ক্লাশ ফাইভের একটা বাচ্চা ছেলে
চুরি করবে এটা মানা কষ্টকর হয়ে যাচ্ছিল
স্যারেদের জন্য।
বিচার বসল স্কুলের মাঠে। আমরা সার্কাস দেখার
আনন্দ নিয়ে গোল হয়ে বসেছি। স্যারেরা চেয়ারে
সারিবদ্ধ হয়ে বসেছেন। বদরুল মাথা নিচু করে
দাড়ানো। তার মুখ দেখে কিছু বোঝা যাচ্ছে না। সে
ভাবলেশহীন। বদরুলের বাড়ি খবর পাঠানো হলো তার
বাপকে ডেকে আনার জন্য। বদরুলের বাবা মা কাউকে
পাওয়া গেলো না। বদরুলদের ছোট্ট ঘরটা তালা
দেওয়া। সুতরাং গার্জিয়ান ছাড়া বদরুলের বিচার
শুরু হলো।
হেডস্যার- বদরুল তোর বাবা কী করেন?
বদরুল- স্যার আমার বাবা নেই। মারা গেছেন।
হেডস্যার- কবে?
বদরুল- আমার মনে নেই।
(স্কুলের কাগজপত্র চেক করে দেখা গেল আসলেই
বদরুলের বাবা মৃত)
হেডস্যার- তোর মা আছে? বাসায় তালা দেওয়া কেন?
বদরুল- আমার মা বাসাবাড়ি কাজ করে। এ সময় ঘরে
তালা মারা থাকে। আমার কাছে একটা চাবি আছে
সেটা দিয়ে আমি খুলি। মার কাছে আরেকটা চাবি
আছে।
হেডস্যার- তুই টিফিন চুরি করিস কেন বল তো?
বদরুল- স্যার আমি সকালে না খেয়ে আসতাম। মা
দুপুরের আগে ভাত আনতে পারে না। খিদা লাগত তাই
চুরি করতাম।
(স্যারেদের মধ্যে মৃদু গুঞ্জন শুরু হলো। সম্ভাবত তারা
কোনও সিদ্ধান্তে আসতে পারছেন না। আমাদের সবার
মাথা ততক্ষন বদরুলের মতো নিচু)
হেডস্যার- চুরি করা যে অপরাধ সেটা কি জানিস
তুই? তোর খিদা লাগলে আমাকে বা অন্য স্যারদের
বলতে পারতিস। পারতিস না? স্কুলে পড়ে চুরি করলে
মানুষে কি বলবে তোকে? আর স্কুলের সম্মান কি
থাকবে বল? ঠিকাছে যা হয়েছে হয়েছে। কাল থেকে
আমার বাসা থেকে তোর জন্য প্রতিদিন টিফিন আনা
হবে। তুই আর চুরি করিস না বাবা। কেমন?
বদরুল- হ্যা অথবা না কিছুই বলল না। মাথা নিচু করে
দাড়িয়ে আছে।
তার পরদিন থেকে স্কুলে আর বদরুলকে দেখা যায় নি।
সে আর কোনদিন স্কুলে আসে নি। সম্ভাবত এতগুলো
স্যার ও বন্ধুদের সামনে চুরির লজ্জা শিশুমন নিতে
পারেনি। সেই অভিমান অথবা লজ্জা অথবা ক্ষোভ
থেকে বদরুল ছেলেটা সেই যে হারিয়ে গেল আর ফিরে
এলো না।
বদরুলের সাথে আমার সাত বছর পর দেখা হয়েছিল। সে
রিকসা চালায় এখন। বদরুলের গাজা খাওয়া লাল
টুকটুকে দুটো চোখ জানান দিচ্ছিল, ও দুটি চোখ
কোনদিন কোন স্বপ্ন দেখেনি।
২| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১:২৪
এনামুল রেজা বলেছেন: মন খারাপ আর নস্টালজিয়া এসে ভর করলো লেখাটাভ শেষ করে।
©somewhere in net ltd.
১|
১০ ই এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১:১০
দিশেহারা রাজপুত্র বলেছেন: এমন অনেক চোখ থাকে যেখানে স্বপ্ন বাসা বাঁধে না।