![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আহসান হাবীব।। সাদরি হাবীব নামে ভার্সিটি ফ্রেন্ডদের দেয়া অভিধাটা নামায়নের ক্ষেত্রে ব্যবহার করে ফেললাম।
‘আনোয়ার ভাই, আনোয়ার ভাই, ও আনু ভাই দরজা খোলো না।’ এবার আনু ভাই ঘর থেকে এসে দরজাটা খুলে দিল। সাবেরি বারান্দার বেঞ্চিতে বসে বলল, ‘আনু ভাই কাজ আছে দ্রুত স্টেশন বাজার যেতে হবে, বের হয়ে এসো।’ এদের কাজ খুব কমই থাকে-- হাতে হাত রেখে পূর্ণভবার তীর ঘেঁষে হেঁটে বেড়ানোই এদের কাজ। দুজনে পাশাপাশি হয়ে হেঁটে যাচ্ছে। আনু ভাই জিজ্ঞেস করল, ‘গতকালের অঙ্কের সমস্যা সমাধান হয়েছে।’ না ভাই, তোমার কাছে না আসলে হবে না মনে হয়। কিন্তু তোমার হয়েছে তো? কথোপকথনের মধ্যে কার যেন ডাক শুনতে পেল ওরা। কথা শুনে থ বনে গেল-- ‘শেষ পর্যন্ত শান্তি পাড়ার মেয়ে!’
আনু ভাই বিমর্ষ হয়ে হোস্টেলে ফিরে এল। কারও সাথে কথা বলে না। এরকম পরিস্থিতির সম্মুখীন যে আনু ভাই আগে হয়নি তা কিন্তু নয়। এ আঘাতটা আনু ভাই একটু বেশিই পেয়েছে। এর পেছনে অবশ্য কারণও আছে। বন্ধুদের বলা কথায় ব্যথা কম কিন্তু সেই কথা যদি শ্রদ্ধেয় কেউ বলে...।
অনেক দিন পর আনু ভাই স্টেশন বাজার গিয়েছে। বাড়ি থেকে চাল পাঠিয়েছে সেটা ঘাট থেকে আনতে হবে। রেললাইনে উঠতেই দেখে একটা মালবাহী ট্রেন মুর্শিদাবাদদের দিক থেকে ছুটে আসছে। রহনপুর স্টেশন ছেড়ে সেটার গন্তব্য রাজশাহী। আনু ভাই প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে কয়েকটি ট্রেন আসা-যাওয়ার দৃশ্য অবলোকন করল। পেছন থেকে খুব জোরে ডাকাতে হতচকিয়ে উঠে আনু ভাই। ‘কী আনু ভাই, ক্লাসে আস না আজকাল, কী হয়েছে? বউ মরল নাকি!’ আনু একটা বিশুষ্ক হাসি হেসে বলল, ‘বউ মরলে কথা বলছে কী করে?’ সাবেরি প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়ে বলল, ‘আমাদের বাসা চল আনু ভাই।’ ‘তুমি যাও, আমি ঘাট থেকে আসছি’-- বলে কোন মতে কাটাতে পারলেও আনু ভাই পড়ল ভীষণ চিন্তায়। আমি শান্তি পাড়া যাব! যদি কেউ দেখে ফেলে! আনু ভাইয়ের সামনে উভয় সংকট এসে উপস্থিত। আনু ভাইয়ের একটা খ্যাতি আছে, কাউকে কথা দিলে জীবন গেলেও সে কথার হেরফের হয় না।
আনু ভাইয়ের পা কাঁপছে, ঘেমে যাচ্ছে শরীর। অজানা দুশ্চিন্তার ভারে চালের ওজন দ্বিগুণ হয়ে উঠেছে। চিরপরিচিত রাস্তা, তার পরও যেন অচেনা। দুপাশের গণিকালয়ের মধ্যে সরু অথচ মসৃণ পাকা রাস্তা। লোকশ্রুতি আছে, এক ব্রিটিশ সৈন্য এখানকার এক সুন্দরি কসবির প্রেমে পড়েছিল। তারই উদ্যোগে সরকার এই সড়ক নির্মাণ করে নাম দেয় শান্তিপাড়া, যাতে সৈন্যরা নির্বিঘ্নে ব্রাথেলে যেতে পারে। আনু ভাইয়ের ভয় পেতে লাগল। যদি কেউ জার্জিসের মতো...। এই গত মাসের ঘটনা। আনু ভাইয়ের রুমমেট জার্জিস এক ভরদুপুরে শান্তিপাড়ার রাস্তা হয়ে হোস্টেলে ফিরছিল। এমন সময় এক গণিকা তাকে জোর করে গৃহে নিয়ে যায়। মেয়েটি অবশ্য বুঝতে পেরেছিল যে সে খদ্দের নয়। সে যাত্রায় আনু ভাইয়ের বন্ধু রক্ষা পেয়েছিল বটে কিন্তু মেঘ না চাইতে বৃষ্টি পাওয়ার সুযোগ সে হাতছাড়া করে বেশ আফসোস করেছিল। আনু ভাইয়ের ভয় উবে যেতে লাগল। তার মনে পড়ে এই সেই রাস্তা, এই সব বাড়ি যে কিনা রাতবিরাতে এসেছে গিয়েছে যখন সে মাধ্যমিকে পড়ত। তার আরও মনে পড়ে সাহানা খালা, অঞ্জলি দি আর সেফালি বু’র কথা যারা কিনা তার নাম রেখেছিল আনু। সরু রাস্তার ঠিক মোড়ের তেতলা বাড়ি, যে বাড়িতে সাবেরি থাকে আর এ গৃহেই সে চার বছর লজিং ছিল। অবশ্য সে ভালো করে জানে এ বাড়ির কোন সদস্যের পেশা গণিকাবৃত্তি নয়। এবার আনু ভাই নিজেকে মৃত্যুঞ্জয় কল্পনা করে দরজার সামনে গিয়ে সাবেরি বলে ডাক দিল। তীর্থের কাক হয়ে বসে থাকা বিলাসী যেন বলছে ‘আমি পাইলাম ইহাকে পাইলাম।’
আনু ভাই গ্রামের একটি সুশ্রী মেয়েকে বিয়ে করেছে। যেখানে সাবেরিদের মত পল্লি নেই। যেখানে সবাই সামাজিক। অসামাজিক সমীরণ যাকে, যার বাড়িকে স্পর্শ করে না-- থেমে যায় না কারও বিয়ের বাদ্য। শুধু থেমে যায় শান্তিপাড়ার। আনু ভাই খবর পেয়েছে, সাবেরির এবারের বিয়েটাও নাকি ভেঙ্গে গেছে।
শিক্ষার্থীঃ জহুরুল হক হল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
২| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৪ সকাল ৭:৫০
এএইচ ছোটন বলেছেন: ধন্যবাদ মিন---
©somewhere in net ltd.
১|
০৭ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১১:২২
মিনুল বলেছেন: সুন্দর ! চালিয়ে যান।