নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পৃথিবীর বুকে এক টুকরো গোলাপ অবশিষ্ট থাকা অব্দি ভালবাসা রয়ে যাবে কি? নাকি তারও আগে বিলুপ্ত হবে প্রেম!
আজ থেকে ৩৪ বছর আগের দিনগুলো হঠাত মনে পড়ে নুর মিয়ার ।
নদীর ওপারে আয়েশাদের বাড়ি ।
ওপারে নুর মিয়ার পৈতৃক ধানি জমি ।
নুর মিয়ার বাবা জমির মিয়া চাষাবাদের সময় আঠারো বছরের তাগড়া জোয়ান নুর মিয়াকে সঙ্গে নিয়ে যায় ।
নুর মিয়ার সেবায় ধানি জমি প্রাণ ফিরে পায় ।
ধান পাকার মৌসুমে পাকা ধানের তীব্র ঘ্রাণে পুরো নদীর পাড় মুহুর্তের পাগল পারা বাতাসে রুপ নেয় ।
পাশের ক্ষেতটা আয়েশার বাবার ।
দুপুরে আয়েশা ভাত নিয়ে আসে তার বাবা আফজালের জন্য ।
আয়েশার বয়স তখন এগারো ।
নুর মিয়া আয়েশার প্রেমে পড়েন ।
প্রেম কী তা জানেনা আঠারো বছরে নুর মিয়া ।
শুধু জানেন আয়েশা কে না দেখলে নুর মিয়ার ভালো লাগেনা ।
বিকেলেও আয়েশা মাঝে মাঝে আসে সখিদের নিয়ে দল বলে ।
সেখানে জোলাপাতি খেলা হয় ।
পুতুল বিয়ে হয় ।
নুর মিয়া ক্ষেতে নিড়ানি দিতে দিতে সব দেখে ,
আয়েশাও নুর মিয়ার নিড়ানির দিকে চেয়ে থাকে ।
এগারো বছরের আয়েশা জানে নুর মিয়া তাকে চায় ।
এক বিকেলে নুর মিয়া আয়েশা কে বলে ,
"আয়েশা আমারে বিয়া করবি ?
আয়েশা তা শুনে দৌড়ে পালায় ।
নুর মিয়ার আর সাহস হয়না কিছু বলার ।
ধান কাটা হয় ,
গোলা পরিপূর্ণ ।
জমির মিয়া ঘরের দাওয়ায় আরাম করে হুক্কা টানে ।
প্রতি টানে সুখ নিয়ে নেয় সে ।
চুলে কাক ভেঝা সরিষার তেল দিয়ে হাটে যায় সে ।
হুক্কা টা হাতে নিয়েই রওনা দেয় ।
সঙ্গে নুর মিয়া ।
নুর মিয়ার মন ভালো ।
হাটে যেতে হলে নদী পার হতে হয় ,
আর নদীর ওপারে আয়েশাদের বাসা হয়ে হাটে যেতে হয় ।
কেমন আছে আয়েশা তা জানেনা নুর মিয়া ।
তবে নুর মিয়ার মন ভালো আয়েশাকে দেখবে বলে ।
নৌকোয় উঠে দূর থেকে আয়েশাদের বাড়িতে কিসের যেন উত্সব !
নুর মিয়ার বুকটা চিন চিন করে উঠে ।
মুখ টা ইষত্ ম্লাণ হয়ে যায় ।
নুর মিয়া তবু ভাবে হয়তো অন্য কিছুর উত্সব ।
হয়তো অন্য কারো ।
প্রবোধ দেয় মনকে ।
নুর মিয়ার চোখে পানি তবুও কেনো যেনো ।
হাটের উদ্দেশ্যে পা বাড়ায় জমির মিয়া ,
নুর মিয়ার নৌকো থেকে নামতে ইচ্ছে হয়না ।
আফজাল চাচার বাসার সামনে দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে অনাকাঙ্খিত সত্যটা চোখে পড়ে নুর মিয়ার ।
নুর মিয়া আহত হয় ।
আয়েশার বিদায়ের সময় আয়েশা মরা কান্না জুড়ে দেয় ।
সব মেয়েরাই বাপের বাড়ি ছাড়ার সময় কাঁদে কিন্তু আয়েশার অতিরিক্ত কান্নার মানে কেউ বোঝেনা ।
আয়েশাও নুর মিয়ার প্রেমে পড়েছিল ।
নুর মিয়ার মতো আয়েশাও জানেনা প্রেম কী ?
তবে আয়েশাও নুর মিয়াকে চাইতো ।
৩৪ বছর পর ,
আয়েশা চট্রগ্রাম মেডিকেলের শৌচাগার পরিচারক ।
আয়েশার স্বামি সন্তান কেউ বেঁচে নেই ।
হঠাত্ এক সড়ক দুর্ঘটনায় পুরো পরিবার লাশে পরিণত হয় ।
আয়েশা প্রাণে বেঁচে যায় ।
এক স্থানীয় জনপ্রতিনিধির চোথে পড়ে ব্যাপারটা ।
আয়েশা কোথায় যাবে কী খাবে তা ব্যাবস্থা করে দেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ।
চট্টগ্রাম মেডিকেলের বাথরুম পরিষ্কারের চাকরি টা পায় আয়েশা।
আয়েশার জীবন ঘড়ি চলতে থাকে।
নুর মিয়া এখন প্রায় সময় অসুস্থ থাকেন ।
অসুস্থ নুর মিয়াকে কেউ দেখেন না।
তিন সন্তানেরা যে যার পরিবার নিরে ব্যাস্ত থাকেন ।
নুর মিয়া তিন সন্তানের পরিবারের মাঝে পড়েন না ।
এখন নুর মিয়ার একটাই ইচ্ছে শেষ নিশ্বাস টা যেন শুভ্র বিছানার চাঁদরেই আরাম করে শুয়ে ত্যাগ যায় ।
নুর মিয়ার বড় ছেলের বড় সন্তান হাফিজ নুর মিয়াকে খুব ভালবাসেন ।
হাফিজ ছাড়া নুর মিয়ার কেউ নেই ।
হাফিজ নুর মিয়াকে চট্টগ্রামে বন্ধুর পরামর্শে নিয়ে আসে ।
ভর্তী করানো হয় নুর মিয়াকে বার নম্বর ওয়ার্ডে ।
আয়েশা নুর মিয়ার বিছানা পরিষ্কার করতে আসেন ।
নুর মিয়ার ছানি পড়া চোখ আয়েশা কে না চিনলেও আয়েশা চিনে নেয় ।
হাফিজ আর তার বন্ধু মেডেসিন আনতে যায় ।
আপনে নুর মিয়া না ?
হঠাত্ অনাকাঙ্খিত প্রশ্নের তীরে বিদ্ধ হতে হয় নুর মিয়াকে ।
কন্ঠ টা পরিচিত হলেও কেমন যেন বার্ধক্যে রুপ নিয়েছে ।
তবে কী আয়েশা ?
"হয় আমি নুর মিয়া ।
আপনে ?"
আয়েশা কাঁদো কাঁদো স্বরে "আমি আয়েশা ।"
নুর মিয়ার বুকে ব্যাথা শুরু হয় ।
বুকের ব্যাথা ডান হাতে চেপে রেখে নুর মিয়া আয়েশার ৩৪ বছরের গল্প শুনেন ।
নুর মিয়া ও তার ৩৪ বছরের গল্প বলেন ,
এও বলেন যে তার তিন ছেলের পরিবারে নুর মিয়ার কোনো আশ্রয় নেই ।
"আমার পত্তি মাসে ইনকাম বার হাজার টেকা বকসিস টকসিস নিয়া,
আহেন আমরা একসাথে এইহানে থাহি ।"
আয়েশা কথা গুলো বলেন ।
কোনো সংকোচ নেই আজ আয়েশার মুখে ।
৩৪ বছর আগে যে ভুলটা তিনি করেছিলেন তা আজ শুধরে নিতে চান ।
আজ রবিবার সন্ধ্যা।
দাদাকে নিয়ে বাসে করে ঘুরতে বের হন হাফিজ ।
নুর মিয়া স্বপ্ন দেখেন ।
স্বপ্ন দেখেন আয়েশার কোলে মাথা রেখে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করা রঙিন বিছানার চাঁদরের ওপর ।
চলন্ত বাস ।
উল্টো দিক থেকে গায়ে চাঁদর পেচানো কয়েকজন যুবক বাসের দিকে আসছেন ।
হয়তো বাসে চড়বেন তারা ।
নুর মিয়া অপারেশন করা চোখ সব পরিষ্কার দেখে ।
হাফিজ কেনো যেনো আতঙ্কিত ।
হঠাত্ বাসটায় ঝন ঝন শব্দে আগুনের ঝলকানি ।
নুর মিয়ার কোনো স্বপ্নই আর পূরণ হয়না ।
বিছানার চাঁদরে আয়েশার কোলে মাথা রেখে শেষ নিশ্বাস টাও ত্যাগ করা হয়না ।
২৪ শে মে, ২০১৪ রাত ১১:০২
আহসানের ব্লগ বলেছেন: নুর মিয়া আর আয়েশার তো সুসময় কখোনোই আসেনি ।
আর যাও এসছিল তাও কোনো স্বপ্ন পূরণ হয়নি ।
আয়েশার স্বপ্ন আবারো ভেঙে নুর মিয়ার ভাগ্য নির্ধরণ হয় কিছু অমানুষের দ্বারা
২| ২৫ শে মে, ২০১৪ রাত ১২:৪৮
আমি তুমি আমরা বলেছেন: মন খারাপ হয়ে গেল পোস্ট পড়ে ।
২৫ শে মে, ২০১৪ সকাল ৯:১০
আহসানের ব্লগ বলেছেন: আহারে আমি সার্থক ।
২৫ শে মে, ২০১৪ সকাল ৯:১১
আহসানের ব্লগ বলেছেন: আর ধন্যবাদ পুরোটা পড়ার জন্য
৩| ০৭ ই জুন, ২০১৪ রাত ১১:০৬
ভাঙ্গা ডানার পাখি বলেছেন: মন খারাপ করা গল্প।
২৮ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১০:০৫
আহসানের ব্লগ বলেছেন: দেরিতে হলেও ধন্যবাদ ভাইয়া
©somewhere in net ltd.
১| ২৪ শে মে, ২০১৪ রাত ১০:৪৯
অপ্রতীয়মান বলেছেন: কিছু স্বপ্ন সময়ের কারণে পূর্ণতা পায় না আর কিছু স্বপ্ন কিছু অমানুষের জন্যে পরিপূর্ণ হয় না