নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পৃথিবীর বুকে এক টুকরো গোলাপ অবশিষ্ট থাকা অব্দি ভালবাসা রয়ে যাবে কি? নাকি তারও আগে বিলুপ্ত হবে প্রেম!
সময় টা ২০১২ সাল , আমি সবে এইচএসসি পরীক্ষা শেষ করে ১ মাসের বেকার বসে আছি । বেকার বলছি কারণ পড়া লেখা আর করার ইচ্ছে ছিলো কিন্তু পকেট প্রায় সময় ই শূন্য থাকতো। খুব খারাপ সময় কাটতো । বন্ধু বান্ধব আড্ডা, গান, ধুমপান সবই নিয়ম মাফিক চলতো।
কিন্তু পকেটে অঢেল টাকা এলেও তা বেশী ক্ষণ স্থায়ী হতোনা । এভাবে কয়েক দিন চলার পর বুঝতে পারলাম পরিবারের উপর আর চাপ দেয়া উচিত হবে না । একটা চাকরী করার দরকার । আমাদের একটা আড্ডা স্থল ছিলো , বাড়ি হতে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে । সেখানে পরিচিত মানুষ কেউ থাকতোনা বললেই চলে । কিন্তু তাও মাঝে মাঝে বাসায় খবর যেত আমার ধুনপানের ব্যাপারে । কিন্তু একটা সময় এ ব্যাপার গুলো সয়ে আসে । বাবা মা ও আর কিছু বলার সময় পান না । ওনারা এক প্রকার ক্লান্তই হয়ে পড়েন ।
রেজাল্ট তখনো বের হয় নি , চা পান করতে করতে সেই দোকানের ফটকে একটা পোস্টার সাটানো দেখলাম । কোনো এক টোব্যাকো লিঃ এ কয়েক জন সেলস ম্যান জরূরী নিয়োগ দেয়া হবে , যোগ্যতা SSC, ভাবলাম একবার চেষ্টা করে দেখি ।
পরদিন ওই ঠিকানায় চলে গেলাম SSC ট্রান্সক্রিপ্ট আর HSC রেজিঃ নিয়ে । সম্ভবত ওনার নাম ছিলো মিঃ আবুল , ওনাকে সবাই স্যার বলতো । সম্ভবত উনি ওই টেরটরির প্রধাণ ছিলেন । উনি আমাকে বললেন আমার মত অনেকেই আসেন দুদিন ট্রেনিং করে নাকি চলে যান , আমি কি আসলেই চাকরী টা করবো কিনা । আমি বললাম প্রয়োজন বিধায় করতে হবে আরতো উপায় নেই । অগ্যতা উনি রাজি হলেন, আমাকে ট্রেনিং এ অংশ গ্রহণ করতে বললেন ।
পরদিন সকাল ৭ টায় আমি হাজির হই অফিসে । দেখলাম বেশির ভাগ সেলস ম্যান লেখা পড়া জানেন না । টেরিটরি অফিসার মিঃ আবুল আমাকে বললেন আমি নাকি ওভার কোয়ালিফাইড, উনি শিউর আমি জব টা করবো না । তাও একজন জোন ইনচার্জের অধীনে আমাকে ট্রেনিং এ যেতে বললেন ।
ওইদিন ছিলো হরতাল , কিন্তু শহরে গাড়ির কমতি ছিলনা । আমার তাও মনে মনে আতঙ্ক বোধ হচ্ছিল । আমার সাথে ভ্যান চালক ড্রাইভার আমাকে বললেন “ভাই আপনে কি জব টা করবেন? মনে তো হয় না” । আমি চুপ রইলাম ।
একটা লোকাল গাড়ি করে জিইসি মোড়ে নেমে ভারতীও দূতাবাসের সামনে পর্যন্ত হেটে গেলাম , তখন আট টা বাজে । ছ সাত জন পুলিশ সদস্য বসে আছেন আমিও আমার গাড়ি আর ট্রেইনারের অপেক্ষায় ১০ কি সাড়ে ১০ পর্যন্ত বসে রইলাম । একজন পুলিশ সদস্য আমার নাম আর বসে থাকার কারণ জেনে আবার তাদের অলস বসে থাকায় মনোনিবেশ করলেন । অপেক্ষা যেন শেষ ই হয় না । অবশেষে গাড়ি আসলে আমিও হাটা ধরি গাড়ির সাথে , কিভাবে প্রোডাক্ট সেল করতে হয় , বিল করতে হয় , চাবির দায়িত্ব কিভাবে পালন করতে হয় সব বুঝিয়ে দিচ্ছেন জোন ইনচার্জ ।
তখন মোটামুটি শীত কাল ছিল , ফেব্রুয়ারী মাস চলে বোধ করি, হালকা গরম হালকা শীত । জ্যাকেট টা এনে বিপদে পড়েছি গরমে গায়ে পড়তেও পারছিনা আবার হাতে রাখতে রাখতে ক্লান্ত হয়ে পড়ছি । ঝাউ তলা এলাকাটা পাশ দিয়ে ঢাকা চিটাগং রুটে রেল লাইন টা গিয়েছে । মাঝে মাঝে শহুরে নীরবতা ভেদ করে শশব্দে ট্রেন টা যখন গন্তব্যে যায় তখন মনে হয় জীবন এতো কষ্টের কেন ।
এভাবে প্রায় ৩ দিনের ট্রেনিং শেষে এক বিকেলে আমার প্রচন্ড জ্বর হয় । গায়ের ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠছিলাম । মনে হচ্ছিলো এই বুঝি পড়ে যাবো মাথা ঘুরিয়ে , ক্ষুধা পেয়েছিলো প্রচুর । দুপুরে ৩৫ টাকার ভাত আর ডিমে পেট ভরে নি এতটুকু তার ওপর কড়া রোদ আর মাইল ব্যাপি হাটা হাটি । এভাবে আনমনে কি যেন ভাবছিলাম । হঠাত কোনো এক কলেজের কিছু মেয়ে আমার সামনে পড়লো তারা কি নিয়ে যেনো আলাপ আলোচনা করছিলো , তাদের মধ্যে একজন আমার মনে গেঁথে যায় । আমার মাথায় দু লাইন কাব্য জন্ম নেয় ।
“পৃথিবীর বুকে এক টুকরো গোলাপ অবশিষ্ট থাকা অব্দি ভালবাসা রয়ে যাবে কি? নাকি তারও আগে বিলুপ্ত হবে প্রেম।“
রাতে বাসায় এসে না খেয়ে এক ঘুম দেই , তারপরে আর কোনো দিন সেই অফিসে যাওয়ার নাম নেই নি ।
০৫ ই মার্চ, ২০১৯ বিকাল ৪:২৩
আহসানের ব্লগ বলেছেন: মন্তব্য দানে অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া৷
২| ০৫ ই মার্চ, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:০৫
মাহমুদুর রহমান বলেছেন: পরিশ্রমই সৌভাগ্যের প্রসূতি।
যত বেশী পরিশ্রম করবেন তত দ্রুতই আপনি সফলতার দ্বারপ্রান্তে গিয়ে পৌছাবেন।
০৬ ই মার্চ, ২০১৯ রাত ১২:৩৬
আহসানের ব্লগ বলেছেন: ফিল্ড জব অনেক কষ্টের৷
৩| ০৫ ই মার্চ, ২০১৯ রাত ১০:১৩
সুমন কর বলেছেন: ভ্যান চালক ড্রাইভারের কথাই ঠিক হলো........হাহাহাহাহ।
কেমন আছেন?
০৬ ই মার্চ, ২০১৯ রাত ১২:৩৭
আহসানের ব্লগ বলেছেন: আমি ভালো আছি। আপনি? অনেক ধন্যবাদ আমায় মনে রাখার জন্য৷
মিঃ আবুল ও কিন্তু ঠিক ছিলেন!
©somewhere in net ltd.
১| ০৫ ই মার্চ, ২০১৯ বিকাল ৩:১৮
রাজীব নুর বলেছেন: বাহ!!