নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পৃথিবীর বুকে এক টুকরো গোলাপ অবশিষ্ট থাকা অব্দি ভালবাসা রয়ে যাবে কি? নাকি তারও আগে বিলুপ্ত হবে প্রেম!
ফুলের উদ্দ্যেশ্য কি! শুধু ফুটে ঘ্রাণ ছড়ানো নাকি সৌন্দর্য টাও প্রয়োজন আছে বাস্তু সংস্থানের? পৃথিবীর সব প্রাণীর এতো সুন্দর ব্যবস্থাপনা কোথাও জট নেই, বিশৃঙ্খলা নেই, অথচ তারা বুদ্ধিতে সৃষ্টির সেরা জীব মানুষের কাছা কাছিও নেই। আমাদের প্রিয়তীর এ নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। দিনে কয়েক বার সৃষ্টি কর্তাকে এ নিয়ে অভিযোগ না জানিয়ে প্রিয়তী বাড়ি ফেরেনা। প্রিয়তী পড়াশোনা শেষ করেছে, বয়স কম, একটা গার্মেন্টসের মানব সম্পদ বিভাগে কাজ করে বর্তমানে। ফ্যাক্টরির নিয়োগ সংক্রান্ত সকল বিষয় তাকেই দেখতে হয় । মোটামুটি এখানে সকল বিশৃঙ্খলায় অভ্যস্ত মানুষ গুলোকে কে ওর শৃঙ্খলায় ফেরাতে হয়।
প্রিয়তী মাঝে মাঝে ভাবে, একটা জীবন ৭০ কি ৮০ বছরের, আরও কমও হতে পারে। মানুষের লক্ষ্য থাকা উচিৎ কি আর মানুষ করছে কি। মোটামুটি এক দুটি বাচ্চা আরও বয়স হলে নাতী নাতনী দের নিয়ে সুখের জীবন গড়া যায়। পৃথিবীতে এটাই একমাত্র সুখের এবং বিনোদনের। সংসার মানুষকে দুশ্চিন্তায় ফেলে ঠিক ই কিন্তু একাকিত্ব দূর করে দেয়। একাকিত্বের চেয়ে বড় শত্রু পৃথিবীতে মানুষের জন্য অন্য কিছুই নেই। মানুষ যখন প্রাচীন জীবন যাপন করতো প্রয়োজনীয় ক্যালোরী সে প্রকৃতি থেকে সংগ্রহ করতো এবং দিনের ক্যালোরী সে দিনেই খরচ করে ফেলতে, ফলে নতুন আতংক ডায়বেটিক সহ অন্যান্য দূরারোগ মানুষ কে ছুতে পারতো না। কিন্তু সে আমলে মানুষ ঠুনকো রোগে মারা যেতো, যেমন ইঁদুরের উতপাতে মহামারীর কারণের তো ইউরোপেই ১৬ মিলিয়ন মানুষের সমাধী হলো। তখনো মানুষের বিন্দু মাত্র ধারণা ছিলোনা কিভাবে এ রোগ কে এড়ানো যায়। এরপরে ভারতীয় উপমহাদেশে আসলো প্রলংকারী কলেরা। কতো কোটি মানুষ মারা গেলো তার হিসেবও বোধ হয় কারো নেই। তখনো মানুষের ধারণা ছিলোনা কিভাবে এই রোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। সেই সাথে ছিলো সেই স্প্যানিশ ফ্লু, ৫০ মিলিয়ন মানুষের সমাধী এবং একটি ভাইরাস। ভাইরাস এমন একটি অনুজীব যা কোনো প্রাণীর অভ্যন্তরে গেঁথে বসা ছাড়া বাঁচতে পারেনা, খালি চোখে দেখা যায় না। এমন একটি জীব যা বাতাসের সাথেই তুলনা চলে, কারণ বাতাসও দেখা যায় না, আর এই অদৃশ্য অনুজীব কেড়ে নিয়েছে কত শত কোটি প্রাণ। কিন্তু আজকের পৃথিবী অনেক উন্নত। লক্ষ লক্ষ বছর পরে মানুষ জানে কলেরার মৃত্য শুধু আধ লিটার পানি ৩ চিমটে লবন ও এক মুঠো গুড়ের মিশ্রণে তৈরী হওয়া জাদুর পানীয়তেই ঠেকানো যায়। লবন পানি আর চিনি দিয়ে এই জাদুর পানীয় তৈরী শিখেছে মানুষ মাত্র ১ শতাব্দী আগে ১৯১৩ সালে শরীরে শিরায় প্রবেশের মাধ্যমে, কিন্তু এটুকুতেই মানুষ থেমে থাকেনি, কলকাতার গবেষক জনাব হেমেন্দ্র একই খাবার স্যালাইন পরীক্ষা করেন এবং সফল হন, ১৯৫৩ সালে ল্যানসেট জার্নালে এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। কিন্তু লেনিন এবং ক্যাশ যারা ১৯১৩ সালে শিরায় স্যালাইন দেয়ার ফর্মুলা আবিষ্কার করেন তারা জনাব হেমন্দ্রের মুখে খাওয়ার স্যালাইন নিজের বলে দাবী করেন এবং তাদের প্রতিষ্ঠান ICDDRB শক্তিশালী হওয়ায় তাদের বলা মিথ্যেই সত্যে পরিণত হয়। বলা হয়ে থাকে, মিথ্যে যখন বার বার বলা হয় তা সত্যে পরিণত হয়।
প্রিয়তী ভাবে পুকুরচুরি তো সবখানেই হয় কিন্তু তারপরেও এই একটা ফর্মুলা বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে।
কে জানে এতোদিন প্রিয়তী সহ আশে পাশের যত পরিচিত মুখ তারা হয়তো এতোদিন বেঁচে থাকতোইা না কলেরা হয়তো অনেক কেই গ্রাস করে নিতো।
১৯১৮ সালে তো আর প্রিয়তীর জন্ম হয়নি। কিন্তু সে বছর বিশ্বে হানা দিয়েছিলো ভয়ানক স্প্যানিশ ফ্লু, সেসময়ের জন সংখ্যার ৭ ভাগের ১ ভাগ এই রোগের কাছে হার মেনেছে। মানুষ দিক বিদিক হন্যে হয়ে ঘুরেও এই রোগের কোনো উত্তর পায় নি ।প্যারিসে কিছু মানুষ মাস্ক পড়তে জনগন কে আহ্বান জানায় কিন্তু কে শোনে কার কথা। রোগ টি ১৯১৮ থেকে ১৯২০ পর্যন্ত তান্ডব চালায়। তারপরে হার্ড ইমিউনিটির কাছে হার মেনে ভাইরাস টি হারিয়ে যায়। ঠিক তার ১০০ বছর পরে হানা দিলো কোভিড ১৯, পৃথিবী থেকে অগণিত মানুষ হারিয়ে গিয়েছে এই রোগের আক্রমণ থেকে। কারো হিসেব মতে ৩০ লাখ কিন্তু বাসা বাড়ি অগণিত মানুষের মৃত্যর হিসেব রেকর্ড করার প্রযুক্তি এখনো আবিষ্কার হয় নি, নাকি সরকার গুলো চায়নি তা ভাবার বিষয়। প্রিয়তী এতোটুকু বুঝতে পেরেছে প্রযুক্তি যতই উন্নত আর শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা যতই বেড়েছে মানুষের বিশৃঙ্খলা মোটেও কমেনি । মাস্ক থেকে শুরু করে হাত ধোয়া কেউ ই কিছু মানছেনা। মানবার সময় কোথায়। ফলাফল এই রোগ নিয়ন্ত্রণে থেকেও থাকছেনা।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ২০ মিলিয়ন মানুষের ইতি ঘটে তারপরে ঘটে যাওয়া মহামারীতে আরও ৫০ মিলিয়ন মানুষের সমাধী হয়, ঘুরে আসে আরও একটি শতাব্দী। দরজায় কড়া নেড়েই চলেছে একটি মহামারী। মানুষের ওপর চলা এই শতাব্দিক মহামারীর আক্রমণ শক্ত না হয় আবার প্রকৃতি কি শক্তি নিয়ে হাজির হয় তা নিয়ে শঙ্কিত প্রিয়তী। প্রিয়তীর বিশ্বাস কিছু একটা সামনে ঘটতে চলেছে । দুটি মেরুর বরফ যুগ শেষের দিকে চলেছে। তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে একটি মাত্র বাসযোগ্য এ গ্রহের কি হবে তা প্রিয়তী ভেবে পায়না । মানুষ কি অন্তত নিজেদের স্বার্থে বনায়ন উজাড় বন্ধ করতে পারে কিনা, কার্বন নিস্বরন কমানোর জন্য উদ্যত কি হবে মানুষ! নাকি আরও একটি প্রলয়ংকারী মহামারীর অপেক্ষা করছে মানব জাতি। একমাত্র বাস যোগ্র গ্রহ টা যদি জেগে ওঠে! যদি ঝেড়ে ফেলে দেয় আমাদের।
প্রিয়তীর এসব ভেবে কাজ নেই, সে আপাতত তার নাগরীক দায়িত্ব টুকুই পালন করে, প্যাকট জাত পণ্যে তার আগ্রহ নেই, পলি ব্যাগ ব্যবহার করেনা। বছরে যেকোনো খালি স্থানে একটি চারা রোপন করে । এর বেশী কিছু যে ওর করার নেই। মুখে কাউকে কিছু বললে মানুষ গুলো ওকে পাগল বলে। আর সমাজে পাগল হয়ে কে বাঁচতে চায়।
ছবিঃ ব্লগারের নিজ ডিজাইন।
২৯ শে আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১২:০৭
আহসানের ব্লগ বলেছেন: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ প্রিয় ব্লগার খায়রুল আহসান ভাই।
২| ২৭ শে আগস্ট, ২০২১ রাত ৯:০২
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: প্রিয়তির কাছ থেকে মানুষকে পরিবেশ বান্ধব আচরণ শিখতে হবে। এতো বড় বড় মহামারী আমাদের গ্রাস করার পরও যদি আমাদের বোধোদয় না হয় তাহলে আর মানব জাতির শ্রেষ্ঠত্বটা কি। তারচেয়ে তো বনের পশুরাই ভালো। ওরা প্রকৃতির কোন ক্ষতি করে না। আমরা এতো বুদ্ধিমান প্রাণী অথচ আমরা নিজেদের ভালো বুঝি না।
২৯ শে আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১২:০৮
আহসানের ব্লগ বলেছেন: আসলে আমরা কিছু সহজ অভ্যাস গড়ে তুললে পৃথিবী টা একটু বেশী দিন সহনীয় থাকবে আশা করি।
৩| ২৮ শে আগস্ট, ২০২১ সকাল ৮:১৯
শেরজা তপন বলেছেন: প্রথমে ভেবেছিলাম গল্প- কিন্তু আপনি শিরোনাম, ছবি আর লেখার শুরুতে একটু কৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন।
প্রিয়তির মুখে আপনার নিজের মনের কথা বলেছেন।
~খাবার স্যালাইনের আবিষ্কারক যে জনাব হেমেন্দ্র সেটা জানতাম না। আই সি ডি ডি আর বি যেভাবে সারা বিশ্বব্যাপী অতি অল্প মুল্যে খাবার স্যালাইন সরবরাহের জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে সেটা জনাব হেমেন্দ্র আর তার সরকার এককভাবে কোন্দিন পারতেন বলে মনে হয় না। আর তার দাবীও যে শতভাগ ঠিক সেটাও হলফ করে বলা যায় না। আমরা সবাই প্রতিনিয়ত টোটকা চিকিতসা করি- সেটা মাঝে মধ্যে কাজেও লেগে যায়। কিন্তু তার সঠিক পরিমান ও সঠিক ব্যাবহার বিধি আমরা জানি না।
বাকি লেখা বেশ ভাল।
২৯ শে আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১২:১১
আহসানের ব্লগ বলেছেন: আসলে লেখা শুরু করলাম আর শেষ করলাম। এখন আসলে অত সময় পাই না অনেক ভেবে চিনতে লেখার । আপনাকে ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ২৭ শে আগস্ট, ২০২১ রাত ৮:০৬
খায়রুল আহসান বলেছেন: চমৎকার লিখেছেন। নিজ ডিজাইনের ছবিটাও সুন্দর দিয়েছেন। + +
"একাকীত্বের চেয়ে বড় শত্রু পৃথিবীতে মানুষের চেয়ে অন্য কিছুই নেই" এ ভয়ঙ্কর সত্যটা যে কত ভয়ঙ্কর, তা কেবল ভুক্তভোগীরাই জানে।
"প্রিয়তীর বিশ্বাস কিছু একটা সামনে ঘটতে চলেছে" - প্রিয়তীর এ ভাবনাটা মনে ভয় ধরিয়ে দিল। যদিও এ রকম একটা ভাবনা আমার মনেও বাসা বেঁধে আছে প্রায় বছর দেড়েক ধরে, তবুও, আমার মত অন্য কেউও এ রকমটি ভাবছেন, তা ভেবে মনের ভয়টা আরেকটু বেড়ে গেল!
তার পরেও, একদম শেষে প্রিয়তী যে কাজগুলো করে এবং করেনা বলে লিখেছেন, আমরা প্রত্যেকে অন্ততঃ ওটুকু করতে পারলেও বেশ একটা বড় কাজ করা হবে বলে মনে করি।
পরিমিত শব্দে লেখা চমৎকার এই পোস্টে প্রথম প্লাসটি রেখে গেলাম। + +