নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আহসান মুহাম্মাদ www.facebook.com/ahsan.muhaammad

অতঃপর নীরবতা

যদি কবিতা লেখা শিখানোর কোন পাঠশালা থাকত তাহলে সে পাঠশালার আজীবন অবৈতনিক ঝাড়ুদার হইতাম।

অতঃপর নীরবতা › বিস্তারিত পোস্টঃ

মনের প্রদীপ জ্বলুক প্রতিটি হৃদয়ে

১১ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১:১২

একটা সুন্দর বাচ্চার গালে আমরা চুমু খাই। কিউট বলে কোলে তুলে নিয়ে নাকের ডগায় ডগা মেলাই। বাচ্চাটা খিল খিল করে হেসে ওঠে। আমরা আনন্দ পাই। আবার চুমু খাই। এখানে কোন অপরাধ নেই। কারও দোষ নেই। নিষ্পাপ শিশুর মতো আমাদের এই ছোট্ট আদরটুকুও নিষ্পাপ, নিঃস্বার্থ। কিন্তু নিজেদের অজান্তেই কি একটা ছোট্ট বিদ্বেষ আমরা পরিবারে ছুড়ে দিচ্ছি না? তথাপি সমাজে?

কিছুদিন আগে গ্রামে গিয়েছিলাম। একটা দাওয়াতে দুই মামা তার পরিবারসহ এলেন। দু পরিবারেই দুটো সন্তান। বড় মামার বাচ্চার বয়স তিন মাস আর ছোট মামার বাচ্চার বয়স চার মাস। তো সেই দাওয়াতে আমি ছিলাম অধম খাদিমদার। আমি খুব অদ্ভুতভাবে লক্ষ্য করলাম দুটো বাচ্চাকে আদর করার ভঙ্গি আশ্চর্যজনকভাবে বেশ আলাদা। সবাই বাচ্চা দুটোকে কোলে নিচ্ছে, আদর করছে, চুমু খাচ্ছে। কিন্তু চুমুর পরিমাণে, ধরণে রয়েছে যেন বেশ অতিকৌশলী পার্থক্য। সবাই তুলনামূলকভাবে ছোট মামার বাচ্চাটিকে বেশি আদর করছে। যেহেতু বেশি আদর করছে সেহেতু স্বভাবতই তার গালে বেশি চুমু খাওয়া হচ্ছে। তাকে ঘিরেই বারবার জটলা বাঁধছে। বড় মামার বাচ্চাকে যে কেউ আদর করছে না, চুমু খাচ্ছে না তা না। তাকেও আদর করা হচ্ছে, কোলে নেয়া হচ্ছে কিন্তু কোথাও যেন, কেমন যেন এক স্বল্পতা অথবা ঘাটতি আমি প্রথম থেকেই পোলাওয়ের বাটি হাতে দৌড়াচ্ছি আর লক্ষ্য করছি।

আমার দুর্বল, অকেজো মস্তিষ্কে সেই ঘাটতি কিংবা সল্পতার সহজ কারণটা আমি একটু পরই বুঝতে পারি অথবা বলতে গেলে সক্ষম হই।
বড় মামার বাচ্চাটা কালো, স্বাস্থ্য খুব একটা ভালো না। অন্যদিকে ছোট মামার বাচ্চাটা সুন্দর, স্বাস্থ্য ভালো। আরও বিশেষণ লাগালে ফুটফুটে কিংবা ইংরেজিতে কিউট এবং সুইট। এই বাংলা- ইংরেজির বিশেষণগুলো বড় মামার বাচ্চাটার গায়ে নেই। সে একটু পর পর এ ওর কোলে যাচ্ছে। চুপ করে পৃথিবীর মানুষগুলোকে দেখছে। তাদের ভালোবাসা দেখছে। পাচ্ছে। কিন্তু পার্থক্য কি অনুভব করছে?

সে সম্পর্কে কোন তথ্য তাকে কোলে নেয়ার পর সে আমাকে দেয়নি। কখনও কাউকে এরকম ঘাটতিমূলক কোন তথ্যও সে ফাঁস করবে কি না তাও জানা নেই। কিন্তু এই সামান্য পার্থক্যটুকু, ক্ষুদ্র স্বল্পতাটুকু তার ওই ছোট্ট মাথায় ঢুকতে হয়তো খুব একটা সময় নেবে না। সৃষ্টিকর্তা তাকে বিশেষণের আবরণ গায়ে মেখে না পাঠালেও মাথায় মগজ এক গ্রামও কম দেননি।

আমি ওকে খুব আলতোভাবে কোলে নিলাম। চুমু খেলাম। কপালের ডান পাশে কালো টিকাটা তর্জনী আঙুল দিয়ে আরও গোল করে দিলাম। যেন কারও নজরে না পড়ে। ওর কারও নজরে পড়ার দরকারও নেই হয়তো। ও পরিপূর্ণ। সৃষ্টিকর্তা কাউকে অপরিপূর্ণ করে এখানে পাঠান না।

তারপর আমি নাকের ডগা দিয়ে ওর নাকের ডগা ছুঁয়ে দিলাম। ও হাসল। পবিত্র হাসি।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১:৩৪

ক্থার্ক্থা বলেছেন: ভালো লাগলো আপনার লেখাটি পড়ে । এখানেই বুঝতে হবে কালো সুন্দরের পার্থক্য ।

১১ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৫২

অতঃপর নীরবতা বলেছেন: হুম।

২| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১:৫১

ফেরদৌসা রুহী বলেছেন: আমরা, আমাদের সমাজ, সমাজের মানুষ এমনি।

আমি কালোদের দেশে থাকি বলে এখন আর সাদা কালোর পার্থক্য বুঝিনা। মানুষের কর্মই আমার কাছে আসল।

১১ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৫২

অতঃপর নীরবতা বলেছেন: ঠিক বলেছেন।

৩| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১:৫৩

গেম চেঞ্জার বলেছেন: মানসিকতা বদলানোর তাড়না জাকুক সবার মনে।

১১ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৫৩

অতঃপর নীরবতা বলেছেন: অবশ্যই।

৪| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৪০

ধমনী বলেছেন: ও হাসল। পবিত্র হাসি।
- এটাই তো স্বর্গ....

১১ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৫৩

অতঃপর নীরবতা বলেছেন: স্বর্গেই আছি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.