নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লেখালেখি

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ গচ্চা

০৯ ই আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪৪

উত্তরবঙ্গের কোন এক জেলার অধিবাসীদের কৃপণতার কথা সবাই জানে। তাদের এই কার্পণ্য নিয়ে অনেক মুখরোচক গল্প খোদ উত্তরবঙ্গেই চালু আছে। এই জেলার লোকজন নাকি পোস্ট অফিস ও রেল স্টেশনের কাউন্টারে গিয়ে খাম-পোস্টকার্ড ও ট্রেনের টিকিটের দাম নিয়ে দরাদরি করে। আমি নিজে অবশ্য এমন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন না হলেও একটু ভিন্ন রকম ঘটনা ঘটতে দেখেছি। এই জেলার বাসিন্দা আমার এক অফিস কলিগকে দেখেছি ফার্মেসীতে গিয়ে সামান্য বেশি দামের কারণে ডাক্তারের লেখা প্রেসক্রিপশনের বাইরে অন্য ওষুধ নিয়ে বাড়ি ফিরতে। বেশি দামের ওষুধটি ছিল একটি নাম করা প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির। ক্যাপসুল প্রতি মাত্র পঞ্চাশ পয়সা বেশি দিতে হবে বলে তিনি এক অখ্যাত কোম্পানির ওষুধ কিনে দাঁত বের করে হেসে বললেন, ‘শুনলেন তো, দোকানদার কী বললো? একই ওষুধ। শুধু শুধু বেশি দাম দিতে যাবো কেন বলুন?’

আমি বললাম, ‘হক সাহেব, এটা বোধহয় ঠিক হলো না। ওষুধের মান কিন্তু একটা ফ্যাক্টর। দামে এত সামান্য পার্থক্যের জন্য আজে বাজে কোম্পানির ওষুধ না খাওয়াই ভালো। ডাক্তার তো ভালো কোম্পানির ওষুধই লিখে দিয়েছেন।’

‘আরে রাখেন আপনার ডাক্তার!’ আব্দুল হক তুড়ি মেরে ডাক্তারকে উড়িয়ে দিয়ে তার স্ত্রীর জন্য অখ্যাত কোম্পানির ওষুধ কিনে নিয়ে গেলেন। কিন্তু এক সপ্তাহ ওষুধ খেয়েও তার স্ত্রীর ব্যথা ভালো হলো না। ডাক্তারকে দ্বিতীয় দফা দেখাতে গেলে আবার ফি দিতে হবে এবং ঝাড়ি খেতে হবে বলে হক সাহেব তার কাছে না গিয়ে প্রেসক্রিপশনে লেখা ওষুধ কিনে নিয়ে বাসায় গেলেন। তার আগে বাজে ওষুধ দেওয়ার জন্য ফার্মেসীর সেই কর্মচারীর সাথে তার ঝগড়াঝাঁটি ও হাতাহাতি হলো। এতে তার চশমার একটা কাঁচ ভেঙ্গে গেল। তবে ভালো খবর হলো এই যে, নতুন ওষুধ খেয়ে তার স্ত্রীর ব্যথা কমে যেতে লাগলো।

আব্দুল হক অফিসে বসে মনে মনে একটা হিসাব কষে আমাকে বললেন, ‘হেনা সাহেব, আপনার কথা না শুনে আমার আটানব্বই টাকা গচ্চা গেল। সেদিন আপনি আমাকে আর একটু ভয় দেখালেন না কেন? তাহলেই তো ওই ওষুধটা আর নিতাম না। ওফ্! আটানব্বই টাকা! ভাবতে পারেন?’

আমি বললাম, ‘ভেবে আর কী হবে? হিসাবের গরমিল হলো এখন ভাবনার বিষয়। আপনার গচ্চা যাওয়া টাকার হিসাবে একটু গরমিল আছে। আরও কিছু টাকা বোধহয় যোগ হবে।’

‘কী রকম, কী রকম?’ আব্দুল হক নিজের চেয়ার ছেড়ে উঠে আমার কাছে এসে উদ্বিগ্ন কণ্ঠে তার মানসাঙ্কের হিসাবটা বুঝিয়ে দিলেন। বললেন, ‘সাত টাকা করে একটা ক্যাপসুলের দাম। প্রতিদিন দু’টা করে খেলে চৌদ্দ টাকা হয়। আমি এক সপ্তাহের ওষুধ নিয়েছিলাম। তাহলে চৌদ্দ ইনটু সাত মোট আটানব্বই টাকা হচ্ছে না?’

আমি বললাম, ‘সেটা তো ঠিক আছে। কিন্তু ফার্মেসী দোকানের কর্মচারীর সাথে ঘুষোঘুষি করে যে চশমার একটা কাঁচ ভেঙ্গে এলেন, ওটার দাম ধরবেন না? চশমা ছাড়া তো আপনি একটা লেখাও পড়তে পারেন না। অফিসে কাজ করবেন কীভাবে?’

‘তাই তো! ওহ্ সর্বনাশ! আপনি তো ঠিক কথাই বলেছেন।’ আব্দুল হক উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বললেন, ‘আচ্ছা, চশমার একটা কাঁচের দাম কত হবে আপনার আইডিয়া আছে?’

‘না ভাই। আইডিয়া নাই। চশমার দোকানে গেলেই জানতে পারবেন। তবে সেখানে গিয়ে পয়সা বাঁচানোর জন্য যদি আবার কম পাওয়ারের কাঁচ নেন তো পরে খরচা আরও বেড়ে যাবে বলে দিচ্ছি।’

‘আরে না! কী যে বলেন না! চশমার কাঁচে যে পাওয়ার লাগবে সেটাই তো নিতে হবে। কম পাওয়ার নিলে ও কাঁচ কী কাজে লাগবে? মাঝখান থেকে চোখটা আরও খারাপ হবে।’

‘এই তো বেশ বুঝতে পারছেন। তাহলে এবার দোকানে গিয়ে চশমার কাঁচ লাগান আর কাঁচের দাম ওষুধের দামের সাথে যোগ করে দেখুন মোট কত টাকা গচ্চা গেল। চশমার জন্য এ ক’দিনে আপনার কিন্তু অনেক ফাইল পেন্ডিং পড়ে গেছে।’

আব্দুল হক বিরক্তির সাথে হাত নেড়ে বললেন, ‘আপনি তো বলেই খালাস। আরে ভাই, আমার দুই চোখে দুই রকম পাওয়ার। ডান চোখের পাওয়ার যে কত ছিল সেটা তো এখন আমার মনে নেই। আট দশ বছর আগে নেওয়া চশমা। এতদিন কী আর মনে থাকে?’

‘চশমার প্রেসক্রিপশনটা নিয়ে দোকানে যাবেন।’

‘অতদিন আগের প্রেসক্রিপশন যদি বাসায় খুঁজে না পাই? আট দশ বছরে তিনবার বদলী হয়েছি। ওই প্রেসক্রিপশন কী আর আছে? মনে হয় খুঁজে পাওয়া যাবে না।’

‘তাহলে চোখের ডাক্তারকে দেখিয়ে নতুন প্রেসক্রিপশন নিতে হবে। সে ক্ষেত্রে চোখের ডাক্তারের ফিও গচ্চা যাওয়া টাকার সাথে যোগ করতে হবে। তিনি তো আর বিনে পয়সায় প্রেসক্রিপশন দেবেন না। এ্যামাউন্টটা তাহলে আর একটু বাড়বে।’

আব্দুল হক দু’হাতে মাথার চুল খামচে ধরে হতাশ গলায় বললেন, ‘নাহ্, আপনি একের পর এক আমার খরচ শুধু বাড়িয়েই যাচ্ছেন। এত টাকা আমি পাবো কোথায়?’

‘ওই ফালতু ওষুধ কোম্পানির নামে একটা ক্ষতিপূরণের মামলা ঠুকে দেন। দেখবেন আপনার সব টাকা পেয়ে গেছেন।’

‘আমার এই বিপদের দিনে আপনি ঠাট্টা করছেন?’

কথাবার্তা সেন্টিমেন্টাল পর্যায়ে চলে যাচ্ছে দেখে আমি আর কিছু বললাম না। আব্দুল হক আমার ওপর বিরক্ত হয়ে চলে গেলেন। বাসায় গিয়ে তিনি সম্ভব অসম্ভব সব জায়গায় লাঙ্গল চষা করে খুঁজেও প্রেসক্রিপশন পেলেন না। অগত্যা কী আর করা! ডাক্তারের ফি এড়ানোর জন্য লায়নস চক্ষু হাসপাতালের আউটডোরে কুড়ি টাকা দিয়ে টিকিট কেটে তিনি চোখ দেখালেন। সেখানে তার বাঁ চোখের পাওয়ারও বদলে দেওয়া হলো। কিন্তু তিনি চশমার দোকানে গিয়ে বিস্তর দরদাম করে শুধু ভেঙ্গে যাওয়া চশমার ডান চোখের কাঁচ লাগিয়ে নিয়ে চলে এলেন।

এরপর একদিন অফিসে বসে কাজ করতে করতে আব্দুল হক ফিস ফিস করে আমাকে বললেন, ‘আচ্ছা, মামলা করলে কী সত্যিই ক্ষতিপূরণ পাওয়া যাবে?’

আমি বললাম, ‘ভেজাল বা অকেজো ওষুধের জন্য তো ওষুধ কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করা যায় বলে শুনেছি। এখন ক্ষতিপূরণ কী পাবেন না পাবেন সেটা একজন উকিলের সাথে পরামর্শ করে দেখতে হবে।’

‘তাহলে তো আবার উকিলকে ফি দিতে হবে। তাই না?’

‘শুধু ফি বলছেন কেন? মামলার অন্যান্য খরচ আছে না? স্ট্যাম্পের খরচ, মুহুরীর খরচ, ওকালতনামা...............।’

হক সাহেব দু’হাতে মাথার চুল খামচে ধরে ডুকরে উঠলেন। আমার দুই হাত তার নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে কাঁদো কাঁদো গলায় বললেন, ‘আর বলবেন না প্লিজ!’

**********************************************

মন্তব্য ২০ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (২০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ৮:২০

ডি মুন বলেছেন: হা হা হা।

বেশ মজার কাহিনী তো ।

১০ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ৭:৪৭

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ, ভাই ডি মুন।

২| ০৯ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ৮:২৫

সুমন কর বলেছেন: ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার স্মৃতিচারণ বলা যেতে পারে। ভাল লাগল। মজা করে লিখেছেন।

১০ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ৭:৪৭

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ, ভাই সুমন কর।

৩| ০৯ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ৮:৩৭

নাসরিন চৌধুরী বলেছেন: সালাম হেনা ভাই। কেমন আছেন? গল্পটি আগেও পড়া ছিল ---এবারও পড়লাম।বেশ কিন্তু :)

১০ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ৭:৫০

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ, নাসরিন। আমি ভালো আছি বোন। তুমি সামুতে আছো, জানতাম না তো! ভালো হয়েছে। ভাই বোন একসাথে এখানে ব্লগিং করতে পারবো।

৪| ০৯ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ৯:০৮

হাসান মাহবুব বলেছেন: আপনার লেখায় কত বিচিত্র মানুষের সন্ধান পাই! +

১০ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ৭:৫৩

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ, ভাই হাসান মাহবুব। দুনিয়ায় বহু বিচিত্র ধরণের মানুষ আছে। এদের নিয়ে লিখলে এক জীবন শেষ হয়ে যায়।

৫| ০৯ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ৯:২১

আজমান আন্দালিব বলেছেন: হাহাহা...মজা পেলাম পড়ে।

১০ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ৭:৫৪

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ, ভাই আজমান আন্দালিব।

৬| ০৯ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১০:০৪

ঢাকাবাসী বলেছেন: বেশ মজার লেখা, ভাল লাগল। মামলাটা করান, আরো মজা হতে পারে!

১০ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ৭:৫৫

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: হাঃ হাঃ হাঃ। ধন্যবাদ, প্রিয় ঢাকাবাসী।

৭| ১০ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১০:০০

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:


মজারতো +++

১০ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১২:৩৯

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ, কাণ্ডারি অথর্ব।

৮| ১০ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৩:৩৪

নীল জোসনা বলেছেন: দারুন মজা লেগেছে ।

১০ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৪:৫৫

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ, নীল জোসনা।

৯| ১০ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১১:৪৬

শান্তির দেবদূত বলেছেন: হা হা হা মজার হয়েছে। উত্তরবঙ্গের মানুষ মনে হয় বেশ সহজ সরল ভালো মানুষ ধরনে হয়।

১১ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১১:২৩

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ, ভাই শান্তির দেবদূত।

১০| ১০ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১১:৫৮

জাফরুল মবীন বলেছেন: হাহাহাহা...।পড়ে অনেক মজা পেলাম হেনা ভাই :)

১১ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১১:২৪

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ, ভাই জাফরুল মবীন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.