নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লেখালেখি

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ বিষাক্ত প্রেম

৩১ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ১০:০৭

ইদানিং প্রেমে ব্যর্থতা ও প্রতারণার ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বেড়ে গেছে। পত্রিকার পাতা খুললে প্রায় প্রতিদিনই এ বিষয়ে এক বা একাধিক খবর চোখে পড়ে। এসব ঘটনার পরবর্তী ফলাফল বা প্রতিক্রিয়া কী হয়, তা’ যথাযথ ফলো আপ না থাকার কারণে অনেকেই জানতে পারেন না। আমি খোঁজ খবর করে কিছু ফলাফল বা প্রতিক্রিয়া বের করতে সক্ষম হয়েছি। এগুলো আপনাদের জন্য নিবেদন করলাম।

প্রেমে ব্যর্থতাঃ-

*ব্যর্থ প্রেমিক দেবদাসের মতো মাত্রাতিরিক্ত সুরা পান করতে থাকে (এ যুগে সুরার পরিবর্তে ফেন্সিডিল, গাঁজা, হেরোইন বা ইয়াবা পড়ুন)।

*আউলা স্বভাবের হয়ে যায়। পোশাক আশাকের অযত্ন, উস্কোখুস্কো চুল, দাঁত ব্রাশ না করা, জুতা পলিশ না করা ইত্যাদি নানারকম পারসোনাল ডিজঅর্ডার দেখা দেয়।

*নিউরোসিস প্রবলেমঃ এটিকে হাফ বা ফুল ম্যাড প্রবলেমও বলা যায়। আমি নিজে প্রেমে ব্যর্থ হবার পর এই সমস্যার কারণে নিজের সাথে নিজে বিড় বিড় করে কথা বলতাম। এক কাজ দু’বার তিনবার করতাম। আবার কোন জরুরী কাজের কথা একদম মনে থাকতো না। এ জন্য পরবর্তী জীবনে আমাকে অনেক ভুগতে হয়েছে।

*ছাত্রাবস্থায় প্রেমে ব্যর্থ হলে ঠিক মতো পরীক্ষা দেয় না অথবা পরীক্ষা দিলেও ফেল করে। ‘কী হবে পাশ করে’-এ ধরণের গভীর দার্শনিক প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে অন্যদের মাথা ঘুরিয়ে দেয়।

*প্যান্ট শার্ট ছেড়ে পাজামা-পাঞ্জাবী ধরে এবং বিরামহীন ধর্মকর্মে মনোনিবেশ করে। কেউ কেউ আবার নাস্তিক হয়ে যায়।

*ভায়োলেন্ট হয়ে যায়। প্রেমিকার মুখে এসিড ছুঁড়ে মারে।

*বাসায় আসবাবপত্র ভাংচুর করে এবং ছোট বোনকে কলেজে যাওয়ার সময় কঠিনভাবে শাসন করে।

*আমার পার্সোনাল ব্যাপারে তোমরা নাক গলাবে না, বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো, ডোন্ট ক্রাই ফর মি ইত্যাদি সন্ত্রাসী টাইপের কথাবার্তা বলে বাবা-মার কলিজা শুকিয়ে দেয়।

*আধ্যাত্মিক ধরণের কথাবার্তার সাথে সন্ত্রাসী ধরণের কথাবার্তার মিশেলে এক নতুন ধারার ভাষা উদ্ভাবন করে। যেমন-‘গুলি, স্রেফ একটা গুলির দরকার ছিল মওলা!’ (বাংলা চলচ্চিত্র দেখুন)।

যাই হোক, প্রেমে ব্যর্থ হলে এসব উল্টাপাল্টা কাজ কারবার সাধারণতঃ পুরুষরাই করে থাকে। মেয়েদের মধ্যে এমনটা খুব একটা দেখা যায় না। আপনারা কী কোন মহিলা দেবদাসের কথা শুনেছেন কোনদিন? কোন ব্যর্থ প্রেমিকা তার প্রেমিকের মুখে এসিড ছুঁড়ে মেরেছে, এমন কথাও নিশ্চয় শোনেননি। অনুসন্ধান করতে গিয়ে মেয়েদের প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে প্রতারণা অংশে।

প্রেমে প্রতারণাঃ-

তাহের ও মোমেনার ঘটনা শুনুন। দুর্গাপুর গ্রামের যুবক আবু তাহের তার বিয়ের দিন বরযাত্রা করার সময় বিস্মিত হয়ে দেখলো, ক্ষেত মজুর ইয়াসিনের মেয়ে মোমেনা তার বাবার ধান কাটা ধারালো কাস্তে হাতে নিয়ে তাহেরের বাড়ির সামনে রণরঙ্গিণী মূর্তিতে দাঁড়িয়ে আছে। আবু তাহের আর এক পা এগোলে তার গলায় কাস্তের কোপ বসিয়ে দেওয়া হবে মর্মে হুমকি দিচ্ছে সে। বরযাত্রা করার জন্য আবু তাহেরের বাড়িতে সকাল থেকে অনেক লোকজনের সমাগম। মোমেনার এই কাণ্ড দেখে গ্রামের আরও নারী পুরুষ তাদের কাজ কাম ফেলে চলে এলো। বাড়ির সামনে বিরাট জটলা। ঘটনা কী, সবাই জানতে চায়। কিন্তু কাস্তে হাতে মোমেনার রুদ্রমূর্তি দেখে কেউ কাছে যেতে সাহস পায় না। আবু তাহেরের বাবা আবু বাক্কার গ্রামের “এটিএম শামসুজ্জামান” কিসিমের লোক। সে নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে চিবিয়ে চিবিয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘কী হয়েছে আম্মাজান? আপনি এত গোস্বা কেন?’

জানা গেল, আবু তাহের ও মোমেনা এক বছর ধরে লোকচক্ষুর অন্তরালে ভাব ভালোবাসা করে আসছিল। ফলে মোমেনা এখন অন্তঃসত্ত্বা। আবু তাহের তাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিলেও এখন প্রতারণা করে অন্য মেয়েকে বিয়ে করতে যাচ্ছে। তাই মোমেনা তাকে কেটে দু’টুকরা করে ফেলতে চায়। কিন্তু প্রমান? আবু তাহেরের মোবাইল ফোনে তাদের ভাব ভালোবাসার অনেক ছবি আছে। এখুনি ফোন বের করে চেক করলে ছবিগুলো দেখা যাবে।

গ্রামের মুরুব্বীরা আবু তাহেরের মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে নিজেরা অনেক ঘাঁটাঘাঁটি করে ছবি বের করতে পারলো না। তারা উঠতি বয়সী যুবকদের সাহায্য নিল। যুবকরা ফোনের মেমোরি কার্ড অপশনে গিয়ে মোমেনার খোলা বুকের কিছু ছবি বের করে মুরুব্বীদের দেখালো। গ্রামের যুবকদের কাছে এসব ছবি আজকাল পানসে। এর চেয়ে অনেক রগরগে ছবি দেখতে তারা অভ্যস্ত। তবে মুরুব্বীদের কাছে তো আর নিজেদের খাসলত প্রকাশ করা যায় না। তাই তারা জিব কেটে বললো, ‘ছিঃ ছিঃ, এমন ছবি দেখা যায় না, চাচা!’
যুবকদের চেয়ে মুরুব্বীদের ছবি দেখার আগ্রহ বেশি। নিজেদের জোয়ান বয়সে এমন ছবি দেখার ভাগ্য তাদের হয়নি। তারা হুমড়ি খেয়ে পড়লো মোবাইল ফোনের ওপর। এসব চিত্তাকর্ষক ছবি তোলা এবং তা’ ছড়িয়ে দেওয়ার ব্যাপারে শহরের চেয়ে গ্রাম গঞ্জই আজকাল এগিয়ে। তো মুরুব্বীরা ছবি দেখার পর আবু তাহেরের বিয়ে আটকে দিল। বরযাত্রী যাওয়ার জন্য যে তিনটি মাইক্রোবাস ভাড়া করা হয়েছিল, সেগুলো আবু বাক্কারের পকেট থেকে কিছু ডেমারেজ দিয়ে বিদায় করে দেওয়া হলো। তাৎক্ষনিকভাবে সালিশ বৈঠক বসিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো, আবু তাহেরের সাথে মোমেনার বিয়ে পড়িয়ে দেওয়া হবে। গরীব ক্ষেত মজুরের মেয়ে বলে মোমেনার সাথে আবু তাহেরের প্রতারণা মেনে নেওয়া যায় না।

তবে যেহেতু এই দু’জন অনৈতিক কাজের সাথে জড়িত, সেহেতু কালমা পড়ানোর আগে দু’জনকেই দশ ঘা করে জুতা মারা হবে এবং কুড়ি বার কান ধরে উঠবস করানো হবে। সালিশের সিদ্ধান্ত মোতাবেক মুরুব্বীরা শাস্তি কার্যকর করা শুরু করে দিল। অন্যদিকে যুবকরা উপজেলা সদর থেকে কাজী সাহেবকে মোটর সাইকেলে তুলে নিয়ে এলো। দুপুরের আগেই মোমেনার সাথে আবু তাহেরের কালমা পড়ানো হয়ে গেল।

ঘটনা এখানে শেষ হয়ে গেলে এই গল্প লিখতাম না। কারণ এমন ঘটনার খবর পত্র পত্রিকায় পড়ে এবং টিভিতে দেখে দেখে মানুষ ক্লান্ত ও বিরক্ত হয়ে গেছে। গল্পটি লিখলাম এই কারণে যে, এই ঘটনার শেষ পরিণতি ছিল আত্মহত্যা।
না, না, অপমানজনকভাবে মোমেনাকে বিয়ে করতে বাধ্য হওয়ায় আবু তাহের আত্মহত্যা করেনি। মুরুব্বীদের দ্বারা অপমানিত হওয়ায় মোমেনাও এ কাজ করেনি। বরং আবু তাহেরের সাথে বিয়ে হওয়ায় সে ভীষণ খুশি। আত্মহত্যা করেছিল সুলতানা, যার সাথে আবু তাহেরের বিয়ে হবার কথা ছিল। পাশের উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী সুলতানা বিয়ের বেনারসী ও গয়না গাঁটি পরে সন্ধ্যে পর্যন্ত অপেক্ষা করার পর তার ক্রন্দনরত পিতার কাছে জানতে পারে যে, বরযাত্রী আর আসবে না। বর নাকি তার নিজ গ্রামের একটি মেয়েকে বিয়ে করে ফেলেছে।

ঐ দিন গভীর রাতে ঘরের দরজা আটকে সুলতানা নিজের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরদিন তার পোড়া মৃতদেহ পোস্ট মর্টেমের জন্য পুলিশ জেলা সদরে পাঠিয়ে দেয়। পোস্ট মর্টেমের রিপোর্ট থানায় আসার পর সুলতানার বাবা জানতে পারে যে, মৃত্যুর সময় তার মেয়ে তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিল।
(সত্য ঘটনা অবলম্বনে। সঙ্গত কারণে স্থান ও পাত্র পাত্রীর নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।)
রচনাঃ ২২/০৭/২০১৩
***************************************************************************************************************
[গল্পটি মাসিক উত্তর বার্তা পত্রিকার আগস্ট/২০১৩ সংখ্যায় প্রকাশিত। ব্লগার বন্ধুরা যারা পড়েননি, তাদের জন্য ব্লগে প্রকাশ করলাম।]
রি-পোস্ট।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ৩১ শে মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৪:২১

হাসান মাহবুব বলেছেন: গল্প হয় নাই।

০১ লা এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ৯:৪১

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: হুম!

২| ৩১ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ৮:৫৫

মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন:


গুরুত্বপূর্ণ একটি লেখা। এসব অপরাধে মাবাবা, বড়ভাই বোন এবং সমাজের জৈষ্ট্য নাগরিকদের অনেক দায় আছে।

০১ লা এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ৯:৪৩

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: এসব অপরাধে মাবাবা, বড়ভাই বোন এবং সমাজের জৈষ্ট্য নাগরিকদের অনেক দায় আছে।

অবশ্যই। আপনি একদম ঠিক কথা বলেছেন। ধন্যবাদ মইনুল ভাই। শুভেচ্ছা রইল।

৩| ০২ রা এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১১:৫৪

প্রামানিক বলেছেন: দারুণ লেখা। ধন্যবাদ হেনা ভাই।

০২ রা এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১২:১১

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ প্রামানিক ভাই।
শুভেচ্ছা রইল।

৪| ০২ রা এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৮:০২

ভবোঘুরে বাউল বলেছেন: এই ঘটনার মধ্যে প্রবাহিত হাজার সত্য ঘটনা। ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।

০৩ রা এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ৯:০৪

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ ভবোঘুরে বাউল।
ভালো থাকুন। শুভকামনা রইল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.