নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লেখালেখি

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ আধখানা মানুষ

১৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৮:২৬


প্রতিদিন খুব ভোরে সিটি কর্পোরেশনের ময়লা ফেলার গাড়ি গুলো আসার আগে জামাল আর মন্টু এসে হাজির হয়ে যায়। দশ বছর বয়সের জামাল আর ওর চেয়ে এক বছরের বড় মন্টু। আবর্জনা ফেলে ট্রাক গুলো চলে গেলে শুরু হয়ে যায় ওদের কাজ। সিমেন্টের খালি পলিব্যাগের বস্তা কাঁধে নিয়ে ভাগাড়ে পলিথিনের টুকরা খুঁজতে নেমে পড়ে ওরা। অন্য টোকাইরা আসার আগে যতটা পারা যায় ছেঁড়া ফাটা শপিং ব্যাগ, ভাঙ্গা ফাটা প্লাস্টিকের টুকরা, খাবারের পলিব্যাগ, সাটারিং কাজের ছেঁড়া পলিথিন ইত্যাদি খুঁজে খুঁজে বের করে বস্তায় ভরে শক্ত করে মুখ বেঁধে ঘাড়ে তুলে নেয় ওরা। তারপর কোন পুকুর বা জলাশয়ে নিয়ে পলিথিনের টুকরা গুলো ধুয়ে রোদে শুকিয়ে নিয়ে আবার বস্তাবন্দী করে। বিসিক শিল্প এলাকার কয়েকটি প্লাস্টিক ফ্যাক্টরিতে এসবের চাহিদা আছে। সেখানে বস্তা পৌঁছে দিলে কারখানার ম্যনেজারের লোক ওজন করে ওদের টাকা দেয়। এক কেজি পলিথিন পাঁচ টাকা। বস্তায় ঠেসে ঠুসে ভরলেও দশ কেজির বেশি ধরে না। কোন কোন দিন ওদের ভাগ্যে সাত আট কেজির বেশি ছেঁড়া পলিথিন জোটে না।

আজ ময়লা ফেলার ট্রাক গুলো চলে যাওয়ার পর জামাল ভাগাড়ের আবর্জনা ঘেঁটে পলিথিন খুঁজতে গিয়ে হঠাৎ একটা আজব জিনিষ পেয়ে ঘাবড়ে গেল। পলিথিন দিয়ে মোড়ানো আধখানা দেহের মৃত মানব শিশু। কাঠির মতো সরু সরু হাত পা। অস্ফুট নাক চোখসহ কিম্ভূতকিমাকার মাথা। ছোপ ছোপ রক্তে ভেজা এক খণ্ড মাংসপিণ্ড।
‘মন্টু!’ জামালের ভয়ার্ত চিৎকারে ছুটে আসে মন্টু। জামালের হাত থেকে পড়ে যাওয়া পলিথিনের প্যাকেটটা তুলে দেখে সে। তারপর নির্বিকার চিত্তে বলে, ‘ঘাবড়াইস না। এইডা হইল জাইরা পোলা। এই কামে তুই নতুন আইছস তো! তাই ভয় পাইছস। এই রহম জাইরা পোলা আমরা কত দেখছি!’
মাংসপিণ্ডসহ পলিথিনের প্যাকেটটা ভাগাড়ের আরও ভেতর দিকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে জামালের হাত ধরে টান দেয় মন্টু, ‘চল্ চল্। ঐ দেখ, টোকাইরা সব আইয়া পড়তাছে। দিরম করলে কিছুই পাইতি না।’

ভোরের আলো তখনো ঠিকমতো ফোটেনি। তবু ওদের মতো একজন দু’জন করে টোকাই বস্তা কাঁধে নিয়ে ভাগাড়ে আসতে শুরু করেছে। সাথে সাথে শুরু হয়েছে নেড়ি কুকুরের আনাগোনা। টোকাইরা ওদের মতো পলিথিন ও প্লাস্টিকের টুকরা খোঁজে। কেউ কেউ খোঁজে ভাঙ্গা টিন, লোহা লক্কড় ও কোল্ড ড্রিঙ্কসের ক্যান। মন্টু ব্যস্ত হয়ে পড়ে তার কাজে। কিন্তু জামাল পাথরের মূর্তির মতো চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। ঘটনার আকস্মিকতা স্তব্ধ করে দিয়েছে ওকে। বুকের ভেতর ছোট হৃৎপিণ্ডটা ধুক ধুক করে এক অজানা আতংকের জানান দিচ্ছে ওকে। চলে যেতে হবে, এখান থেকে এখুনি চলে যেতে হবে ওকে। পিতৃ মাতৃহীন দশ বছরের টোকাই জামাল ভয় পেয়েছে। বস্তিতে ফিরে গিয়ে কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকবে সে। সারাদিন যেন ক্ষিধে না পায়, সে জন্য জুতার আঠা পুড়িয়ে ধোঁয়া টেনে নেশা করতে হবে ওকে। তারপর সে হারিয়ে যাবে এই ভয়ের পৃথিবী থেকে। এখানে শুধু ভয় আর ভয়, শুধু ক্ষিধে আর ক্ষিধে।
কিন্তু জামালের ফেরা হয়না। টোকাইরা ভাগাড়ের আবর্জনা থেকে খুঁজে খুঁজে পলিথিন, টিন, লোহা, কাঠ ইত্যাদি বের করে নিজ নিজ বস্তায় ভরছে। নেড়ি কুত্তাগুলো খাবারের খোঁজে হন্যে হয়ে ছোটাছুটি করছে। মন্টু পলিথিন খুঁজতে খুঁজতে চলে গেছে জামালের দৃষ্টিসীমার বাইরে। হঠাৎ জামালের চোখে পড়লো দুই কুত্তার কামড়াকামড়ি। ‘জাইরা পোলার’ রক্তাক্ত মৃতদেহটা কামড়ে ধরে টানাটানি করছে কুকুর দুটো।

জামালের কী যে হলো, সে নিজেও জানে না। সব আতংক দূর হয়ে গেল ওর মন থেকে। পায়ের কাছে পড়ে থাকা একটা কাঠের টুকরা তুলে নিয়ে সে তাড়া করলো কুকুর দুটোকে। মৃত মাংসপিণ্ডটা ফেলে দিয়ে ছুটে পালালো ওরা। খুলে যাওয়া পলিথিন দিয়ে মুড়িয়ে মাংসপিণ্ডটা জামাল বুকে তুলে নিয়ে ভাগাড় থেকে বেরিয়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটে চললো দিকভ্রান্তের মতো। কোথায় যাবে, কেন যাবে কিছুই জানে না সে।


ছুটতে ছুটতে এক সময় ক্লান্ত হয়ে এক নির্জন রাস্তার পাশে বসে পড়ে জামাল। হাপরের মতো বুকটা ওঠানামা করতে থাকে ওর। পূবের আকাশে লাল রঙের সূর্য উঠছে। পলিথিনের মোড়ক ধরা জামালের দু’হাতে মাছি বসে ভন ভন করছে। অসহায়ের মতো সেদিকে তাকিয়ে থেকে কী করবে কিছু ভেবে পায়না জামাল। এক মাস আগে এতিমখানা থেকে পালিয়ে এসেছে সে। সেখানে খাওয়ার খুব কষ্ট। সারাদিন হাড় ভাঙ্গা খাটুনী। ভারি কুড়াল দিয়ে লাকড়ি ফাঁড়ার কাজ করতে করতে দম বেরিয়ে আসে ওর। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এতিমখানাই ভালো ছিল ওর জন্য। এতিমখানার চার দেয়ালের বাইরে এই দুনিয়াটা আরও ভয়ংকর। সারাদিন নোংরা আবর্জনা ঘেঁটে দু’বেলা পেট পুরে খাবার জোটে না। ওর সারা গায়ে খোস পাঁচড়া। সারাদিন চুলকায়। চুলকাতে চুলকাতে অস্থির হয়ে যায় সে। সব কষ্টের একটা ভালো ওষুধ অবশ্য ওর কাছে সব সময় থাকে। জুতার আঠা। পেটে না খেলেও এই আঠা ওকে কিনে রাখতে হয়। আঠা পুড়িয়ে ধোঁয়া টেনে নেশা করলে ক্ষিধে, ভয়, চুলকানি কিছুই থাকে না। দশ টাকার আঠায় পাঁচ দিন নেশা করা যায়। নেশা হলে জামাল স্টেশনের প্লাটফরমে গুটিসুটি মেরে পড়ে থাকে। ট্রেন চলে যায়, যাত্রীরা চলে যায়, দিন রাত সবই চলে যায়। রেল পুলিশের লোকেরা ওকে লাথি মেরে চলে যায়। জামাল চোখ বুঁজে নিঃশব্দে পড়ে থাকে।

রাস্তার পাশে অগভীর শুকনো খালে একটা ভাঙ্গা টিনের টুকরা দিয়ে খানিকটা গর্ত খোঁড়ে জামাল। মানব শিশুর ক্ষত বিক্ষত আধখানা দেহ যত্ন করে গর্তে শুইয়ে মাটি চাপা দেয় সে। তারপর সেখানে কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থেকে উঠে পড়ে। এখন নেশা করতে হবে। নেশা না করলে সে আজই মরে যাবে। শরীরটা চরম অস্থির হয়ে উঠেছে। ক্ষিধের জ্বালায় পেটের ভেতর নাড়ীভুঁড়িগুলো জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে। আধখানা কদর্য মানব শিশুর আতংক ধরানো চেহারা বার বার ভেসে উঠছে ওর চোখের সামনে। এ সব থেকে মুক্তি পেতে চায় জামাল।

রাস্তার ওপাশে নির্জন রেল লাইনের ধারে বসে হাফ প্যান্টের পকেট থেকে জর্দার কৌটা, রাংতা আর দিয়াশলাই বের করে এদিক ওদিক দেখে নেয় সে। কোথাও কোন লোকজন নেই। কৌটা থেকে আঠা বের করে রাংতার ওপর রেখে দিয়াশলাইয়ের কাঠি জ্বালিয়ে নিচ থেকে তাপ দেয় সে। নীলচে ধোঁয়া উঠলে নাক দিয়ে টেনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে জামাল। আহ্!


দুই চোখ বুঁজে রেল লাইনের স্লিপারের ওপর গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে জামাল। স্বর্গের দূত হয়ে ছোট ছোট বাচ্চারা নেমে এসেছে মর্তে। কী অদ্ভুত সুন্দর চেহারা তাদের! রঙিন পোশাক পরে প্রজাপতির মতো চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে ওরা। ওদের আলোয় সারা জগত আলো ঝলমলে।

লাইনের ওপর দিয়ে তীব্র গতিতে ছুটে আসছে একটা ট্রেন। মসৃণ সাদা ডানাওয়ালা শ্বেতশুভ্র অপরূপা এক ঝাঁক পরী ফুলের বাগানে নেচে নেচে কিন্নর কণ্ঠে গান গাইছে। মন ভোলানো সৌরভময় শত শত রঙ বেরঙের ফুলের মাঝে আধ ফোটা বর্ণ গন্ধহীন এক নাম না জানা ফুল মাথা নুইয়ে নিজেকে যেন লুকাতে চাইছে। অথচ আকাশের তারার মতো উজ্জ্বল হয়ে অস্ফুট সেই ফুলের কলি কতই না সুন্দর! আরও সুন্দর হয়ে পাপড়ি মেলতে চায় সে।

বিকট হুইশেলের আওয়াজ তুলে ছুটে আসছে ট্রেনটা। যেন সর্বগ্রাসী এক যন্ত্রদানব। আধ ফোটা ফুলের কলিটাকে ছুঁয়ে দেখতে চাইছে জামাল। কিন্তু বার বার চেষ্টা করেও হাত দুটো তুলতে পারছে না সে। ওর এত কাছে, হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যায়, অথচ রঙ রূপহীন ছোট্ট আধ ফোটা ফুলের কলিটা কিছুতেই ছুঁতে পারছে না জামাল। হাতের স্পর্শে ছুঁতে না পারলে মনের স্পর্শ দিয়ে ছুঁতে চায় সে। তবু একবার কলিটাকে ছুঁয়ে দেখতে চায় সে।

হঠাৎ দপ করে নিভে গেল চারদিকের আলো। নিকষ কালো অন্ধকারের পর্দায় ঢাকা পড়ে গেল সব। শব্দ, বর্ণ, গন্ধ, রূপ, রসময় স্বর্গের দ্যুতি নিমেষে হারিয়ে গেল এক এতিম মানব শিশুর চোখের সামনে থেকে।
***************************************************************************************************************
রি-পোস্ট।

মন্তব্য ৪০ টি রেটিং +১২/-০

মন্তব্য (৪০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৮:৪৩

শায়মা বলেছেন: কি ভীষন কষ্টের গল্প লিখেছো ভাইয়া।:(

১৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ৯:১৭

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: হাঁ, এই হতদরিদ্র শিশুদের জীবন কষ্টেরই বটে। এই গল্প পড়ার পর যদি কারো সহানুভূতি জাগ্রত হয় এদের প্রতি, এই আশাতেই গল্পটি লেখা।
ধন্যবাদ বোন শায়মা। শুভেচ্ছা রইল।

২| ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৮:৪৮

কাছের-মানুষ বলেছেন: ভাল আছেন আসা করি ভাই!

আপনার লেখার আমি আগে থেকেই ভক্ত আমি ! সেই আলো ব্লগ থেকে !!

এই লেখাটায় হাস্যরস নেই তবে চরম বাস্তবতার সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে গল্পটায় !
‘সারাদিন যেন ক্ষিধে না পায়, সে জন্য জুতার আঠা পুড়িয়ে ধোঁয়া টেনে নেশা করতে হবে ওকে।’ পুরান ঢাকায় আমি দেখেছি এরকম করে নেশা করতে টৌকাইদের , তবে সেটা ক্ষুদার জন্য কিনা বলতে পারব না !

অনেক শুভেচ্ছা রইল !

১৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ৯:২০

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ কাছের মানুষ। আপনি অনেক আগে থেকে আমার লেখা পড়ছেন জেনে খুব ভালো লাগলো। আশা করি, ভালো মন্দ যাই লিখি এভাবে পাশে থাকবেন।
শুভেচ্ছা রইল।

৩| ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৯:৩৯

আমিই মিসির আলী বলেছেন: ভালো লাগলো করুণ গল্প।
+

১৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ৯:২১

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ আমিই মিসির আলী।
শুভেচ্ছা রইল।

৪| ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১১:৫২

মুসাফির নামা বলেছেন: শেষেরটুকু অসাধারণ ফুটিয়ে তুলছেন,হেনা ভাই।

১৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ৯:২২

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই মুসাফির নামা।
শুভেচ্ছা রইল।

৫| ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ৭:১১

কালনী নদী বলেছেন: দুঃখ-দুর্দশাগ্রস্থ!
সুন্দর হয়েছে গল্পটা।

১৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ৯:২২

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ কালনী নদী।
শুভেচ্ছা রইল।

৬| ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ৯:৫৭

সাঈদ এন কে বলেছেন: স্বনামধন্য একটি শিল্পী গোষ্ঠী-র গান শুনেছিলাম এ রকম, "তোমরা থাক খুব আরামে যেই শহরের পাঁচ তলায়, ওরা থাকে রোগ ব্যারামে সেই শহরের গাছ তলায়। যে ডাস্টবিন পেরিয়ে যেতে চেপে ধরো নাক গুলো, সেই খানেতে খাবার খুঁজে ঐ মানুষ আর কাক গুলো"। জ্বি স্যার, নির্মম বাস্তবতা তুলে ধরেছেন এই লিখায়। ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন এই কামনায়, সাঈদ।

১৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১১:৩৩

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: "তোমরা থাক খুব আরামে যেই শহরের পাঁচ তলায়, ওরা থাকে রোগ ব্যারামে সেই শহরের গাছ তলায়।

চমৎকার গানের কথাগুলো। একেবারে বাস্তব।
ধন্যবাদ ভাই সাঈদ এন কে। শুভেচ্ছা রইল।

৭| ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১০:৩৬

তাসলিমা আক্তার বলেছেন: আপনার গল্পের বিষয়টা আমায় একেবারে ছুঁয়ে গেলো। কি করুন তাদের জীবন! যে জন্মের জন্য দায়ী নয় তারা সেই জন্মটাই পাপের মত করে বয়ে বেড়াতে হয় সারাজীবন। একে কি জীবন বলে। একসময় মরে পরে থাকে রাস্তার পাশে। জীবন চক্রের এই আবর্তন থেকে তাদের মুক্তি নেই।

১৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১১:৩৬

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: আপনার গল্পের বিষয়টা আমায় একেবারে ছুঁয়ে গেলো। কি করুন তাদের জীবন! যে জন্মের জন্য দায়ী নয় তারা সেই জন্মটাই পাপের মত করে বয়ে বেড়াতে হয় সারাজীবন। একে কি জীবন বলে। একসময় মরে পরে থাকে রাস্তার পাশে। জীবন চক্রের এই আবর্তন থেকে তাদের মুক্তি নেই।

চমৎকার উপলব্ধি। এমনটা যদি আমরা সবাই উপলব্ধি করতে পারতাম, তাহলে কতই না ভালো হতো।

ধন্যবাদ বোন তাসলিমা আক্তার। শুভেচ্ছা রইল।

৮| ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১১:১৪

বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন:
নির্মম বাস্তবতা তুলে ধরেছেন আপনার সাবলীল লেখায়।

গল্পটা পড়ে মনটা বিষাদে ভরে গেল।

ভাল থাকুন প্রিয় ব্লগার। :)

১৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১১:৩৯

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: এই হতভাগা হতদরিদ্র শিশুদের ভালোবাসতে শিখুন। মন ভালো হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
ধন্যবাদ বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায়। শুভেচ্ছা রইল।

৯| ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১:৫৪

হাসান মাহবুব বলেছেন: বাস্তব অভিজ্ঞতা ব্যতীত এমন ডিটেইল বর্ণনার গল্প লেখা কঠিন। এই গল্পের সৃষ্টি হবার কাহিনীটা বলবেন?

১৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:২০

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: কয়েক বছর আগে ( আমি যখন সুস্থ ছিলাম ) এতিমখানা থেকে পালিয়ে আসা নয় দশ বছর বয়সের এক বস্তিবাসী ছেলের সাথে আমার পরিচয় হয়। ছেলেটি এক সাইকেলের দোকানে টুক টাক কাজ করতো। তার কথাবার্তা শুনে বস্তিবাসী শিশুদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে জানার আগ্রহ সৃষ্টি হয় আমার। বস্তির এই সব শিশুদের খুব কাছ থেকে আমার দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। তাদের কর্মস্থল এবং নেশা করার জায়গা ও পদ্ধতি দেখেছি। প্রথম দিকে তারা আমাকে অনাহুত মনে করলেও পরে তাদের সাথে আমার ঘনিষ্ঠতা হয়ে যায়। এভাবে কমবেশি প্রায় ছয় মাসের মতো আমি তাদের জীবন যাপনকে খুব কাছে থেকে দেখি এবং তাদের নিয়ে গল্প লেখার পরিকল্পনা করি।

এই গল্পটি কাল্পনিক। কিন্তু গল্পে বর্ণিত প্রতিটি তথ্যই আমার নিজের চোখে দেখা বাস্তব সত্য। এরা সত্যিই খুব অসহায়। কিন্তু এরা নিজেরা সেটা জানে না। জানার আগ্রহও নেই।

ধন্যবাদ ভাই হাসান মাহবুব। শুভেচ্ছা রইল।

১০| ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:১৯

ফয়সাল রকি বলেছেন: চমৎকার লিখেছেন।
এর আগে কি সামু'তেই পোষ্ট করেছিলেন? রিপোষ্ট দেখলাম তাই বললাম।

১৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:২৩

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: এর আগে এই গল্প সামুতেই পোস্ট দিয়েছিলাম। তার আগে প্রথম আলো ব্লগে।
ধন্যবাদ ভাই ফয়সাল রকি। শুভকামনা রইল।

১১| ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:৫৪

ফয়সাল রকি বলেছেন: আমি আসলে অনেকদিন সামুতে হাজিরা দিতে পারি নাই। তাই আগের বার মিস করেছিলাম।
ভাল থাকবেন আর লিখতে থাকবেন।

১৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৮:০৫

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ইনশাআল্লাহ।
অসংখ্য ধন্যবাদ।

১২| ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪৪

বিজন রয় বলেছেন: অনেক ভাল লাগল।
+++

১৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৮:০৬

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই বিজন রয়।
শুভেচ্ছা রইল।

১৩| ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫৩

সুমন কর বলেছেন: চমৎকার হয়েছে।

১৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৮:০৬

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই সুমন কর।
শুভেচ্ছা রইল।

১৪| ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১৯

ফেরদৌসা রুহী বলেছেন: আমরা এইসব আধখানা মানুষ দেখি আর আহারে বলেই শেষ করি। আর কিছুই করার নেই আমাদের।

১৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৮:১৪

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: এদের জন্য আমরা কিছু করতে পারি না তা' নয়। আসলে আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থা কল্যাণমুখী নয়। এই জন্য এরা অসহায়ের মতো ধুঁকে ধুঁকে শেষ হয়ে যায়। প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ ছাড়া ব্যক্তি উদ্যোগে এদের জন্য বেশি কিছু করা সম্ভব নয়। প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ ও রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা থাকলে অবশ্যই এই হতভাগ্যদের ভাগ্য ফেরানো সম্ভব।
ধন্যবাদ বোন ফেরদৌসা। শুভকামনা রইল।

১৫| ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৯:১৭

আহমেদ জী এস বলেছেন: আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম ,




একেবারে খাঁটি বাস্তবতায় মাখানো করুন সুন্দর একটি গল্প ।
এই একটি শব্দই গল্পটির জন্যে যথেষ্ট - অদ্ভুত...অদ্ভুত...............

১৮ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ৯:১৬

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই আহমেদ জী এস।
ভালো থাকুন। শুভকামনা রইল।

১৬| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ৯:৩০

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: কী বীভৎস!

১৮ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ৯:৩৬

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই রূপক বিধৌত সাধু।
শুভেচ্ছা রইল।

১৭| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪৪

মিজানুর রহমান মিরান বলেছেন: নির্মম...

১৮ ই এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১৫

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই মিজানুর রহমান মিরান।
শুভেচ্ছা রইল।

১৮| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৯:৩৩

কামরুন নাহার বীথি বলেছেন: উফফ------- কি ভীষন কষ্ট!!!! গল্প নয় এটি, কঠিন বাস্তবতা!!! :(
অনেক অনেক শুভেচ্ছা হেনা ভাই আপনাকে!!
ভাল থাকবেন আপনি!!

১৯ শে এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:০৯

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ বোন কামরুন নাহার। এই অসহায় হতদরিদ্র শিশুদের প্রতি আপনার মনে যদি সামান্যতম সহানুভূতি জাগ্রত হয়, তাতেই আমি খুশি। গল্প লেখার শ্রম তখন সার্থক হবে বলে মনে করি।
ভালো থাকুন। শুভকামনা রইল।

১৯| ২০ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৪:৪০

জেন রসি বলেছেন: এক নির্মম বাস্তবতার চিরচেনা দৃশ্যগুলো যেন আবারো চোখের সামনে দেখলাম। গল্পের কাঠামো, বর্ণনা অনেক চমৎকার হয়েছে।

++

২০ শে এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১৭

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ জেন রসি। আপনার আন্তরিক মন্তব্য আমার প্রেরণার উৎস।
ভালো থাকুন। শুভকামনা রইল।

২০| ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:০৬

শামছুল ইসলাম বলেছেন: খুব সহজ ভাষায় হৃদয় নিংড়ানো কথাঃ

//বস্তিতে ফিরে গিয়ে কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকবে সে। সারাদিন যেন ক্ষিধে না পায়, সে জন্য জুতার আঠা পুড়িয়ে ধোঁয়া টেনে নেশা করতে হবে ওকে। তারপর সে হারিয়ে যাবে এই ভয়ের পৃথিবী থেকে। এখানে শুধু ভয় আর ভয়, শুধু ক্ষিধে আর ক্ষিধে।//

//জামালের কী যে হলো, সে নিজেও জানে না। সব আতংক দূর হয়ে গেল ওর মন থেকে। পায়ের কাছে পড়ে থাকা একটা কাঠের টুকরা তুলে নিয়ে সে তাড়া করলো কুকুর দুটোকে। মৃত মাংসপিণ্ডটা ফেলে দিয়ে ছুটে পালালো ওরা। খুলে যাওয়া পলিথিন দিয়ে মুড়িয়ে মাংসপিণ্ডটা জামাল বুকে তুলে নিয়ে ভাগাড় থেকে বেরিয়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটে চললো দিকভ্রান্তের মতো। কোথায় যাবে, কেন যাবে কিছুই জানে না সে।// -- জামালদের হৃদয়ের ভালবাসা, মানবতা আজও মরে যায়নি !!!

//দশ টাকার আঠায় পাঁচ দিন নেশা করা যায়। নেশা হলে জামাল স্টেশনের প্লাটফরমে গুটিসুটি মেরে পড়ে থাকে। ট্রেন চলে যায়, যাত্রীরা চলে যায়, দিন রাত সবই চলে যায়। রেল পুলিশের লোকেরা ওকে লাথি মেরে চলে যায়। জামাল চোখ বুঁজে নিঃশব্দে পড়ে থাকে।//
--- কি নিষ্ঠুর জামালদের জীবন।

//বিকট হুইশেলের আওয়াজ তুলে ছুটে আসছে ট্রেনটা। যেন সর্বগ্রাসী এক যন্ত্রদানব। আধ ফোটা ফুলের কলিটাকে ছুঁয়ে দেখতে চাইছে জামাল। কিন্তু বার বার চেষ্টা করেও হাত দুটো তুলতে পারছে না সে। ওর এত কাছে, হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যায়, অথচ রঙ রূপহীন ছোট্ট আধ ফোটা ফুলের কলিটা কিছুতেই ছুঁতে পারছে না জামাল। হাতের স্পর্শে ছুঁতে না পারলে মনের স্পর্শ দিয়ে ছুঁতে চায় সে। তবু একবার কলিটাকে ছুঁয়ে দেখতে চায় সে।//
-- কাব্যিক বর্ণনায় মনটা ছেঁয়ে গেছে !!!

তারপরই ছন্দপতন এবং মুক্তি - চিরতরেঃ

//হঠাৎ দপ করে নিভে গেল চারদিকের আলো। নিকষ কালো অন্ধকারের পর্দায় ঢাকা পড়ে গেল সব। শব্দ, বর্ণ, গন্ধ, রূপ, রসময় স্বর্গের দ্যুতি নিমেষে হারিয়ে গেল এক এতিম মানব শিশুর চোখের সামনে থেকে। //

এমন বাস্তবমুখী, নির্মম গল্প - মনের গভীরে রেখাপাত করে দীর্ঘকাল।

ভাল থাকুন। সবসময়।

২৪ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৮:২৭

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: গল্পের চুম্বক অংশগুলো যত্ন করে তুলে ধরেছেন। এই অসহায় হতদরিদ্র শিশুদের প্রতি আপনার মানবিক মূল্যবোধের প্রশংসা করতেই হয়।
ধন্যবাদ ভাই শামছুল ইসলাম। শুভকামনা রইল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.