নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংঙ্গালির শুদ্ধ শিল্প সংস্কৃতি ও মুক্তচিন্তাচর্চার দর্শনে দীপ্ত ।

আবুল কালাম আজাদ

লেখক / বিষয়: সমাজ সংস্কৃতি ও রাজনীতি

আবুল কালাম আজাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

পুঁজিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাঃ প্রেক্ষিত বাংলাদেশ

০৯ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১২:৪১


প্রথমতঃ দেখা যাক পুঁজিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার অর্থ -কি ?পুঁজিবাদ হচ্ছে ধনতন্ত্র, ইংরেজীতে বলে (Capitalism)। এটি বিশেষত একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। বিশেষ করে বর্তমান বিশ্বে মুক্তবাজার অর্থনীতির প্রাথমিক ধারনা হচ্ছে পুঁজিবাদ। পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় বাণিজ্য কিংবা ব্যবসাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। নির্দিষ্ট সংখ্যক একটি সংগঠিত কিংবা অসংগঠিত একই ভাবধারার ব্যক্তিগত মালিকানার নিয়ন্ত্রণের জন্য অধিকাংশ শ্রমিক শ্রেণী কিংবা সাধারণ শ্রেণীকে শোষন ও শাসন কিংবা ভোগ্য হিসাবে চিহ্নিত করে যে সমাজ ব্যবস্থার বিন্ন্যস্থ করা হয় তাই পুঁজিবাদ। এখানে পুঁজিকেই গুরুত্ব দেওয়া হয় আর শ্রমকে করা হয় পণ্য। সামাজিক দৃষ্টি কোন থেকে পুঁজিবাদকে উৎপাদক ব্যবস্থার সাথে সম্পদ ও শ্রেণী ব্যবস্থার সামনঞ্জতা করতে গেলে এই ব্যবস্থার সমাজে তিনটি শ্রেণীকে নির্দিষ্ট করা যায় তা হল উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও নিম্মবিত্ত ( গরিব শ্রেণী)। এই ব্যবস্থায় উচ্চবিত্তরা সম্পদ সংরক্ষণ ও আহরন করে মধ্যবিত্তরা হা-হুতাসের মধ্যে থাকে আর নিম্মবিত্তরা অর্থাৎ গরিব শ্রেণীরা দাস প্রথার মতই শ্রমকে বিক্রয় করে আর শোষিত হয়। অনেক বুদ্ধিজীবীরা এই বিষয়টিকে ভদ্রভাবে বলে যে- পুঁজিবাদী বাজার ব্যবস্থায় ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে প্রতিযোগীতার মাধ্যমে উৎপাদন ব্যবস্থাকে উৎসাহিত করা হয় । বিষয়টি মুটেই সেই রকম নয়। বাস্তবতা হল এই পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় সমাজের ধনী গরিবের শ্রেণীভেদ তৈরী করে। ধনীরা থাকেন শোষক আর গরীবরা থাকেন শোষিতা। গরীবের উৎপাদিত পণ্য অতি সহজ ও কাযদাকানুনে রাহুগ্রাসে পরিনত হয় ধনী শোষক শ্রেণীর কাছে। উৎপাদিত পূণ্যের ন্যায্য মূল্য তো দূরের কথা অনেক সময় লোকসান দিয়েও বিক্রয় ও বিনিময় করতে হয়। এই পরিস্থিতিতে পুঁজিবাদ যে শুধু ধনী ও গরীবের বৈষম্য তৈরী করে তা না। এর বিশাক্ত ছোবলে সমাজ ও রাষ্ট্রে তৈরী হয় ধর্মীয় আধিপত্যবাদ। সংখ্যালগু সম্প্রদায়রা অর্থবিত্তে সম্পদশালী হলে ও সংখ্যাঘরিষ্ট সম্প্রদায়ের সামাজিক কাঠামোগত পেশীশক্তির বলে তারা হয়ে পরেন সামাজিক ভাবে কোনঠাসা। এটাকেই আমারা সামাজিক ও সাম্প্রদায়িক ব্যবস্থার উৎপক্তি ও বিকাশের এই পর্যায়ে হিসাবে বিবেচনা করে রাষ্ট্রীয় সাম্প্রদায়িকতাকে নির্দিষ্ট করতে পারি। এবার এই সাম্প্রাদায়িকতা বিষয়টি কি দেখা যাক। তার পর আমরা পুঁজিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিষয়ে আমাদের বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট নিয়ে বিস্তারিত আলোচনায় যাওয়া যাবে।
সাম্প্রদায়িকতা-ইংরেজীতে হল (communalism)।একটি নির্দিষ্ট গোষ্টি যখন তাদের নিজেদের গোষ্টিগত স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে বিভিন্ন অভিন্ন মত প্রকাশ করে এবং অতিরঞ্জিত মতভেদের সৃষ্টি করে, তাই সাম্প্রদায়িকতা। হতে পারে এটা ধর্মের ক্ষেত্রে, গোষ্টির ক্ষেত্রে । অনেক পন্ডিতেরা সাম্প্রদায়িকতাকে এই ভাবে বলেন যে- নির্দিষ্ট কোন সম্প্রদায়কে সমর্থন বা প্রতিনিধিত্ব করাকে সাম্প্রদায়িকতা বলে। অনেকটা পজেটিভ অর্থ বুঝায়। বিষয়টি মোটেও পজেটিভ নয়। সাম্প্রায়িকতা পুরোটাই নেগেটিভ মাইন্ডে বুঝানো হয়। কোন সম্প্রাদায়ের মধ্যে পারস্পারিক হীনমন্যতা, বিরোধ, মতভেদ সৃষ্টি করাকেই সাম্প্রদায়িকতা হিসাবে আক্ষ্যায়িত করা হয়। অপরদিকে সাম্প্রদায়িকতা পূঁজিবাদ সাম্প্রদায়িকতারই একক উপসর্গ। ইউরোপে রেঁনেসা জাগরনের সময়টুকুতে ধর্ম নিরপেক্ষতাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছিল। এবং কিছু কিছু রাষ্ট্র ধর্ম-নিরপেক্ষতাকে তাদের রাষ্ট্র ব্যবস্থায় প্রতিষ্ঠিতও করেছিল। এখানে বলে রাখতে চাই যে - রেঁনেসা পূর্ববর্তী সময়টুকুতে সামন্তবাদ ও দাসপ্রথাযুক্ত সমাজ ব্যবস্থায় ধর্ম ছিল খুবই বিশ্বাস ও বিভিন্ন উন্নয়নের মূল চালিকা শক্তি। একটা সময়ে এসে এই বিশ্বাস ও উৎপাদন কৌশল গুলোর মধ্যে ফাটল ধরতে শুরু করল। তার ফলে ধর্ম দিয়ে প্রতিষ্ঠিত যে সামাজিক মূল্যবোধ তা আর টিকে থাকতে পারলো না। এই সুযোগে পুঁজিবাদ এই শূন্যতার স্থানটি দখল করে নিল, সাথে ধর্মীয় বিশ্বাস ও মূল্যবোধ গুলোকে সাম্প্রদায়িকতায় রূপ দিয়ে পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থার উত্থান ঘটলো যাকে সাম্রাজ্যবাদী প্রতিষ্ঠাকরনও বলা যায়।
যাই হোক বৃটিশ শাসন আমাদের উপমহাদেশে সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের মধ্যে দিয়ে পুঁজির বিকাশ ঘটিয়েছিল অনেক পূর্বেই। যখন তারা বুঝতে পারলো এই দেশে আর তেমন সুবিধা করতে পারবে না। তখনই তারা সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে দিল। এবং উপমহাদেশকে এমনভাবে বিভক্ত করলো যে বিভক্তির (ধর্ম, জাতিতে, গোষ্টিতে, শ্রেণীগতভাবে) দায়ভার বা মাসুল এই উপমহাদেশের মানুষ আজও বহন করে চলছে এবং ভবিষ্যতেও চলতে হবে। যত প্রজন্ম বিস্তার ঘটবে ততই এই অসম বিভক্তির শাখা-প্রশাখা বিস্তার লাভ করবে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই সাম্প্রদায়িকতার বীজ বোনা হয়েছিল ১৯৪৭ সালে যখন দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত -পাকিস্তান ভাগ হয়। বাংলাদেশ পূর্ব পাকিস্তান নাম নিয়ে পাকিস্তানের সাথে যুক্ত হয়। বাঙালিরা সত্যিকার অর্থে পশ্চিম ও পূর্ববঙ্গঁ মিলে এক সাথে বাংলাদেশ নির্মান করতে চেয়েছিল। বাঙালিদের জন্য আলাদা একটি পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্র। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও শরৎ বসু দিল্লীতে প্রস্তাব করলেন যুক্তবঙ্গঁ (বাংলাদেশ) নির্মানের। কিন্ত পাকিস্তান ও ভারতের মুসলীগ ও কংগ্রেসের বড় .বড় নেতারা কোন গুরুত্বই দিলেন না। বিষয়টিকে পরবর্তীতে বাংলাদেশ নির্মানের স্বপ্নদ্রষ্টারা দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে ফিরে এলেন দিল্লী থেকে এবং বঙ্গঁবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ফিরে এসেছিলেন ঢাকাতে এবং নতুন করে স্বপ্ন দেখতে লাগলেন বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র গঠনের। ক্রমাগত’৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ৬৭ সালের ৬ দফা, ৬৯’ সালের গণ-অভ্যুত্থান, -এর মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীন বাংলাদেশ। বাংলাদেশ সৃষ্টির পেছনেও রয়েছে পাকিস্তানের শোষন, শাসন, নির্যাতন ও সাম্প্রদায়িকতার ইতিহাস। পাকিস্তানের সাম্প্রদায়িক শাসন শোষনই বাধ্য করে ছিল বাংলাদেশেকে তৈরী করতে। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত একটি অসম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দেশ বাংলাদেশ। কিন্ত বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পরও পাকিস্তানের সাম্প্রদায়িক ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি। তাদের এদেশীয় এজেন্টদের দিয়ে আবারও একটি মার্মান্তিক ঘটনা ঘটালেন ১৯৭৫ সালে। বঙ্গঁবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যা করে। সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র পাকিস্তান থেকে ১৯৭১ সালে বেড়িয়ে আসলেও ৭৫ সালে আবারও সাম্প্রদায়িকতার নতুন খপ্পরে পরল বাংলাদেশ। ১৯৭৫ সালের পরবর্তী সময়টুকুতে শুধু সাম্প্রদায়িকতাই নয় বরং সাম্প্রদায়িকতার সাথে সাথে পুঁজিবাদেরও ভিক্তি স্থাপিত হল এই বাংলাদেশে। ধর্ম, সাম্প্রদায়িকতা, পুঁজিবাদ এই বিষয়গুলো পুরোপরি স্থান করে নিল আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় ও রাজনীতিতে। পরবর্তীতে এই সাম্প্রদায়িকতাই জঙ্গীঁবাদ রূপ লাভ করে বিশেষ করে জেনারেল জিয়ার শাসনামলে। বিশ্বের বিভিন্ন ইসলামী রাষ্ট্রগুলোর বিভিন্ন জঙ্গীঁ গোষ্টি ও সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক শক্তিগুলো ক্রমশ পুঁজি বিনিয়োগ করতে লাগলো আমাদের দেশে। আমাদের দেশীয় সাম্প্রদায়িক শক্তিই রাজনৈতিক দলগুলো (ইসলামী রাজননৈতিক দল) লুফে নিল আর্ন্তজাতিক এই পুঁজিবিনিয়োগকে। এবং দেশীয় বহুজাতিক কোম্পানীগুলো আন্তর্জাতিক বহুজাতিক কোম্পানীগুলোর সাথে হাত মিলিয়ে বিশাল এক পুঁজি বাজার ও জঙ্গিঁ অর্থায়নের একটা ঘাঁটিতে পরিণত করলো বাংলাদেশকে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক কিছু সংস্থা ও কোম্পানী এই অর্থের জোগানদাতা। মেজর জিয়া ও এরশাদ দু’জনেই এই সব বিনিযোগকে আশ্রয় ও প্রশয় দিতে থাকলো। যার কারণে এই স্বাধীন সার্বোভৌম বাংলাদেশ হয়ে গেল পাকিস্তানী আদলে একটি মৌলবাদী রাষ্ট্রে। শুধু মৌলবাদী রাষ্ট্রই হল না এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেল মৌলবাদী রাজনৈতিক দলেরও । বি,এন,পি-জামাত সহ আরো বহু ডানপন্থি রাজনৈতিক দল এই সাম্প্রদায়িকতাকে অবলম্বন করেই রাজনীতি শুরু করে ছিল। আমাদের দূভার্গ্য যে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে বাঙালি জাতিয়তাবাদ, ধর্মানিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র ও গণতন্ত্রকে মূলভিত্তি হিসাবে ধারন করে যে বিজয় ও স্বাধীনতা লাভ করেছিলাম সেই স্বাধীনতার মাত্র চার বছরের মাথায় মুখ থুবরে পরলো। বিপন্ন হয়ে পরল চার মূলনীতি। আর আমরাও চেয়ে চেয়ে দেখলাম, কেউ কেউ আনন্দ উল্লাসও করলাম। পরবর্তীতে নিজেদের খোরা গর্তে নিজেরাই পরলাম। অর্থাৎ বঙ্গঁবন্ধু হত্যাকান্ডে যে সব বাম রাজনৈতিকরা আনন্দ উল্লাসসহ পরিবর্তনের জয়গান গেয়েছিলেন তাদের এই আনন্দ উল্লাসের সম্পূর্ণ ফসল চলে গেল ডানপন্থি অর্থাৎ বি,এন,পি-জামাতের শিবিরে। বঙ্গঁবন্ধুর স্বপরিবারে হত্যাকান্ড সে সম্পূর্ণ পরিকল্পিত ও দেশকে একটি পাকিস্তানী আদলের সাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তির ইন্দন ও ষড়যন্ত্র ছি তা হয়তো বাম পন্ডিত নেতারা (আংশিক) সেদিন বুঝে উঠতে পারেন নাই। বুঝলেন যখন মেজর জিয়া এসে সংবিধান পরিবর্তন করে মুক্তিযুদ্ধের মূলনীতিগুলোকে কর্তন করে ধর্মীয় আবেসে ৫ম সংশোধনী করলেন। যাতে কিনা উল্লেখ ছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্টের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে ১৯৭৯ সালের ৫ই এপ্রিল পর্যন্ত সামরিক সরকারের (জিয়া সরকারের) যাবতীয় কর্মকান্ডের বৈধতা দানসহ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম সংযোজন।
মেজর জিয়ার মৃত্যুর পর জেনারেল এরশাদ এসে ক্ষমতা দখল করলেন এবং ঘুরতে শুরু করলেন সকল পীরের মাজার। মাজারে মাজারে ঘুড়ে ঘুড়ে ইসলাম ধর্মকে আফিম বানিয়ে গিলাতে লাগলেন এদেশের ধর্মভীরু মানুষকে । গণতন্ত্রের লেবাসে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকার ধর্ম তথা সাম্প্রদায়িকতাকে প্রতিষ্ঠা করতে উঠে পরে লাগলেন। তার রাজনীতিতে আমন্ত্রন জানালেন দেশের পুঁজিপতিদের এবং ক্ষমতালোভী রাজনৈতিকদের। সেই সময়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এরশাদ যে সাম্প্রদায়িক ও পুঁজিবাদী সূত্র কাজে লাগিয়ে অধিকাংশ রাজনীতিবিদ সহ মেধাবী ছাত্র, ব্যবসায়ী, পেশাজীবী নাগরিক সমাজের সকল স্তরের মানুষদের রাজনৈতিক চরিত্র হনন করেছিলেন। আওয়ামীলীগ সহ বি,এন,পি’র অধিকাংশ নেতা কর্মী সেই সময় এরশাদের এই ট্রেপের আধার গিলেছিলেন, বিশাল একটি সাম্প্রদায়িক ও পুঁজিবাদী মহল তৈরী করতে সক্ষম হয়েছিলেন হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ। তিনি স্বৈরাচারী সামরিক ক্ষমতাবলে ক্ষমতায় আসলেও খুব অল্প সময়ের মধ্যে বিশ্বের পুঁজিবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলোর সাথে কুটনৈতিক সম্পর্কে দৃঢ় করে তুলেছিলেন। মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক বহুজাতিক কোম্পানীগুলোকে বাংলাদেশে পুঁজি বিনিযোগের সুযোগ সৃষ্টি করে বাংলাদেশের ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোকে আর্থিক ও পারস্পারিক সম্পর্ক উন্নায়নে সহায়তা দান করেন। তার আমলেই শিক্ষা ব্যবস্থার জানান পরিবর্তন সহ ছাত্র রাজনীতি বন্ধের পায়তারা এবং পল্লী উন্নায়নের নামে মোটা অংকের অর্থ আত্মসাথ করার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছিলেন তার সাঙ্গঁ পাঙ্গঁদের। বাংলাদেশে পোশাক শিল্পের উন্নায়ন ও ঘটেছিল এই এরশাদ সরকারের সময়ে। বিশ্বের বাজারে বাংলাদেশের শ্রমকে সস্তায় বিক্রি করার সিষ্টেম চালু করেছিলেন তিনি। বাঙালিদেরকে দর্জি শিল্পের পরিচয়ে পরিচিত করেন। বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশগুলোকে আমন্ত্রন করলেন- তোমরা বাংলাদেশ থেকে তৈরী পোষাক আমদানী করো কারন বাংলাদেশে শ্রম খুবই সস্তা এবং খুব কম দামে এখান থেকে পোষাক কিনতে করতে পারবে। যা কি না চীন কিংবা শ্রীলংকায় করতে পারবে না। শুরু হয়ে গেল পোশাক শিল্পের বিশাল উৎপাদন বাজার। গ্রামের দরিদ্র নারী-পুরুষরা দল বেধে কৃষি কাজ ফেলে ছুটে আসলো গার্মেন্ট কারখানায়। সৃষ্টি হলো নতুন এক বাণিজ্যিক সমাজ কাঠামো। গ্রামীম ও শহরের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট পাল্টে গেল। সাধারণ গরীব মানুষের জীবন যাত্রা পাল্টে গেল। এটাকে এরশাদ সহ আমাদের উন্নয়ন ভাবনার বুদ্ধিজীবীরা বাংলাদেশের উন্নতি হচ্ছে বলে চিৎকার করতে লাগলো। অনেকটা রবীন্দ্রনাথের সেই “তোতাপাখী ”কবিতার মত। এই ধারাবাহিকতায় এক শ্রেণীর ব্যবসী খুব তারাতারি আঙ্গুঁল ফুলে কলা গাছ হয়ে গেল। সাধারণ গরীব মানুষের শ্রম বিক্রি করে তারা হয়ে উঠলো সম্পদের কুমির। সাথে সাথে এই সম্পদ কিংবা পুঁজির প্রভাব পরতে শুরু করলো রাজনীতি, সমাজ ও সংস্কৃতিতে। সাম্প্রদায়িকা মাথাচার দিয়ে উঠলো। শিক্ষার মান কমে গেল। সামাজিক অস্থিরতা সহ সকল পর্যায়ে অল্প বিদ্যা ভয়ংকরীর মতই আনঘোরা ,অপরিপক্ক ব্যবস্থার বিস্তার লাভ করতে লাগলো যাই হোক ৯০’ সালের এই এরশাদ স্বৈরাচারীর পতনের পর আমরা আশা করেছিলাম বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি বিশাল পরিবর্তন আসবে। কিন্তু না সেটাও স্বপ্নভঙ্গঁ হল। বেগম খালেদা সরকার একই নিয়মনীতিতে রাষ্ট্র পরিচালনা শুরু করলো। জামাতসহ সকল ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল গুলোকে নিয়ে জোট গঠন করলো এবং বিত্তশালী ব্যবসায়ীদের দিয়ে কমিশন ব্যবসার প্রচলন করলেন। বাংলাদেশের মানুষ আবারও জিম্মি হয়ে পরলো পুঁজিবাদী সাম্প্রদায়িকতার যাতাকলে।
১৯৯৬’ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বাংলাদেশ আওযামীলীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। কিন্ত আওয়ামী লীগের কাছে বাংলার মানুষ যতটুকু আশা ভরাসা করেছিল আওয়ামী লীগও সেই সাধারণ মানুষের আখাংকিত জায়গায় যেতে পারেনি। আওয়ামী লীগের কাছে আমাদের এত প্রত্যশা কিংবা আশা-ভরসাই বা কেন ? একটিই কারণ সেটি হচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিল আর সেই নেতৃত্বের মূল নায়ক ছিলেন বঙ্গঁবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শুধুমাত্র বঙ্গঁবন্ধুর নেতৃত্বে তারই সংগঠন আওয়ামী লীগ সর্বস্তরের মানুষকে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিল সেটাই মূল কথা। মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে ও স্বাধীনতার স্বপক্ষের রাজনৈতিক দল হিসাবে একমাত্র বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকেই বিশ্বাস করা যায়। কিন্তু কালের পরিক্রমায় আমাদের আশা ভঙ্গেঁর জায়গা এইখানেই। আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসে তাদেরকে দেখা গেল মূল রাজনৈতিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থেকে কিছুটা সরে দাঁডালো শুধুমাত্র এই সাম্প্রদায়িকতার কারনে। ক্রমশ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রগতিশীল রাজনৈতিক আদর্শ থেকে সরে গিয়ে সাম্প্রদায়িকতার চরিত্র ধারন করলো। এই ক্ষেত্রে শুধু আওয়ামী লীগকে দোষ দিলে চলবে না। সামগ্রিক পরিস্থিতি হয়তো বাধ্য করেছে আওয়ামী লীগকে এমন রূপ ধারন করতে । হতে পারে হয়তো রাজনৈতিক কৌশল !! যাই হোক না কেন। বাস্তবতা হল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এখন আর প্রগতিশীল রাজনৈতিক ধারাকে প্রতিনিধিত্ব করছে না। আমি স্পষ্টই বলবো হেফাজতে ইসলাম সহ অন্যানা ইসলামী রাজনৈতিক শক্তির কাছে আওযামী লীগ হার মেনে গেল। নতি স্বীকার করলো তাদের দাবি দাওয়ার কাছে। তাদের অনেক সাম্প্রদায়িকরনের উপকরনকে মেনে নিতে বাধ্য হলো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
এমন শুধু আওয়ামী লীগের পক্ষে কথা বলতে হলে এটাই বলতে হবে যে- সামগ্রিক ভাবে বর্তমান বাংলাদেশের ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি ও ধর্মভিত্তিক শিক্ষা ও চর্চাগুলো যে ভাবে শিকড় গেড়ে বসেছে এই ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ চাইলেও হঠাৎ করে এই পরিস্থিতির পরিবর্তন আনতে পারবে না। জিয়া, এরশাদ ও খালেদার পৃষ্ঠপোষকতায় যে সাম্প্রদায়িকতা সমাজের রন্দ্রে রন্দ্রে প্রবেশ করেছে তা পরিস্কার করা সময় সাপেক্ষ বটে। দীর্ঘ দিনের সাম্প্রদায়িক ও পুঁজিবাদী যে কাঠামো সে সময় রাজনীতি, সমাজনীতি ও অর্থনীতি সহ সকল স্তরে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে এই কাঠামো থেকে বেরিয়ে এসে আবার ৭২-এর সংবিধানে পূনঃপ্রতিষ্ঠা করা আওয়ামী লীগের সভনেত্রী মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার এ সময়ের বড় চেলেঞ্জ বটে। ২০০৯ থেকে এখনও ২০১৭ পর্যন্ত এককভাবে এক সংখ্যা গরিষ্ট দল হিসাবে আওয়ামী লীগই দেশ শাসন করে আসছে। এই দীর্ঘ সময় শাসনের মধ্যে দিয়ে যতটুকু ব্যর্থতা এই দলটির দেখেছি এই সকল ব্যর্থতাকে ধূয়ে মুছে নতুন করে আমরা বিশ্বাস করতে চাই- হেফাজতে ইসলামের সাথে সমঝোতা বলি আর হার মানাই বলি না কেন, ধর্মীয় রাষ্ট্র ব্যবস্থা বহাল রাখা, পাঠ্যসূচীতে সাম্প্রদায়িকরন ইত্যাদি আওয়ামী সরকারের রাজনৈতিক কৌশল মাত্র শুধুই পরিবেশ ও পরিস্থিতির কারনে। আমরা এখনও বিশ্বাস করতে চাই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেত্রী শেখ হাসিনা সাম্প্রদায়িক নন, তিনি বঙ্গঁবন্ধুর কন্যা হয়ে বঙ্গঁবন্ধুর মতো বাংলার মাটিতে অসাম্প্রদায়িক চেতনা গড়ে তুলতে চান। বঙ্গঁবন্ধু যেমনটি শোষিতের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন এবং পুঁজিবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বকে তাক লাগিয়ে শোষন মুক্ত, অসম্প্রাদায়িক, গণমুখী শিক্ষা, গণতান্ত্রিক, সামাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছিলেন বঙ্গঁকন্যা শেখ হাসিনা পিতা বঙ্গঁবন্ধুর সেই অসমাপ্ত স্বপ্ন সমাপ্ত করবেন।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১:৩৪

চাঁদগাজী বলেছেন:


"বঙ্গঁবন্ধু যেমনটি শোষিতের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন এবং পুঁজিবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বকে তাক লাগিয়ে শোষন মুক্ত, অসম্প্রাদায়িক, গণমুখী শিক্ষা, গণতান্ত্রিক, সামাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছিলেন বঙ্গঁকন্যা শেখ হাসিনা পিতা বঙ্গঁবন্ধুর সেই অসমাপ্ত স্বপ্ন সমাপ্ত করবেন। "

-"গণমুখী শিক্ষা" চালু করার জন্য শেখ সাহেব কি কি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন?

০৯ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৮:১৩

আবুল কালাম আজাদ বলেছেন: ভাই চাঁদগাজী ,আপনার প্রতি সম্মান রেখেই বলছি "চাঁদগাজী" নামটি আপনার আসল নাম নয়।হয়তো ছদ্মনাম।আমার ধারনা ছদ্মবেশীরা তেমন একটা সুবিধার লোক হয়না।
কারন ইচেছ করে কেই নিজে ছদ্মবেশ ধারন করে না।নিজেকে আড়াল করা কিংবা গোপন করার মধ্যে অবশ্যই কোন না উদ্দেশ্য থাকে।আপনার উদ্দেশ্যটা কি তা আপনিই ভাল বুঝেন।যাই হোক আপনার উদ্দেশ্য অবশ্যই ভাল।পৃথিবীর অনেক বড় বড় লেখকরাও ছদ্মনামে লিখতেন।আপনি হয়তো তাদেরকে ফলো করছেন।
যাই হোক শেখ সাহেব বলতে আপনি অবশ্যই বঙ্গবন্ধুকে বুঝিয়েছেন।আমার দাদাও বঙ্গবন্ধুকে শেখ সাহেব বলে সম্বোধন করতেন।পুরাতন লোকেরা এখনো বঙ্গবন্ধুকে শেখ সাহেবই বলেন।এটা বঙ্গবন্ধুকে ভালবেসেই বলেন।আপনিও অবশ্য ভালবেসেই বলেছেন।তাই আপনার প্রশ্নের উত্তর দিচিছ....
প্রশ্ন : গণমুখী শিক্ষা" চালু করার জন্য শেখ সাহেব কি কি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন?
উত্তর : গণমুখী শিক্ষা ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে যদি আপনি গোগুলে ( ) সা‌র্স দেন প্রচুর তথ্য পাবেন।তবুও বলছি বাংলার সাধারন মানুষের সামাজিক সচেতনতা ও সুষ্ঠু সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য শিক্ষাকেই বঙ্গবন্ধু স‌র্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছিলেন এবং ১৯৭২ সালের সংবিধানের ১৭ অনুচ্ছেদে তিনি শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন এই ভাব ---- অনুচ্ছেদে ১৭।
রাষ্ট্র
(ক) একই পদ্ধতির গণমুখী ও সার্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য এবং আইনের দ্বারা নির্ধারিত স্তর পর্যন্ত সকল বালক-বালিকাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষাদানের জন্য,
(খ) সমাজের প্রয়োজনের সহিত শিক্ষাকে সংগতিপূর্ণ করিবার জন্য এবং সেই প্রয়োজন সিদ্ধ করিবার উদ্দেশ্যে যথাযথ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও সদিচ্ছা প্রণোদিত নাগরিক সৃষ্টির জন্য,
(গ) আইনের দ্বারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিরক্ষরতা দূর করিবার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবে।

সার্বজনীন অবৈতনিক বাধ্যতামূলক শিক্ষা’ যে নাগরিকের একটি মৌলিক অধিকার সেটাকে অঙ্গীকার হিসাবে সংবিধানসম্মত ভাবে বিধানে পরিণত করেন। কেবল সংবিধানে লেখা-ই নয়, বঙ্গবন্ধু ১৯৭২-৭৩ সালে তৎকালে বিদ্যমান সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে জাতীয়করণ করেন। ফলে হাজার হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা লাভ করে এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েক লক্ষ শিক্ষক সরকারি বেতন-ভাতার সুযোগ পেয়ে এক নতুন মানবিক জীবনের অধিকারী হয়। এভাবেই বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের বুনিয়াদি শিক্ষার ভিত্তি স্থাপন করেন।
সংবিধান প্রণয়নের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের ২৬ জুলাই খ্যাতিমান বিজ্ঞানী ড. কুদরাত-এ-খুদার নেতৃত্বে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ‘শিক্ষা কমিশন’ গঠন করেন। কুদরাত-এ-খুদা কমিশনেও গণমুখী শিক্ষা" চালুর সুপারিশ করা হয়।
যদি পারেন কুদরাত-এ-খুদা কমিশনের রিপোটা ভাল কর পড়ে নিবেন।তা হলে আরো বিস্তারিত জানতে পারবেন।
কুদরাত-এ-খুদা কমিশনের রিপ‌ো‌র্ট (১৯৭২) অনুযায়ী এবং বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাভাবনাকে ভিত্তি করে রচিত হয়েছিল বাংলাদেশের শিক্ষানীতি। কিন্তু তিনি আর পারলেন কই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে মেজর জিয়া যখন ক্ষমতা নিলেন তখন তিনি বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্রদর্শনের পাশাপাশি তাঁর শিক্ষাদর্শন তথা কুদরাত-এ-খুদা কমিশনও বাতিল করে দেন।

২| ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১:৪৭

জীবন সাগর বলেছেন: ভালো লাগলো, জানতে পারলাম।

৩| ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১:৫৬

উজ্জল দাস বলেছেন: ভালো লিখেছেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.