নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১৯৮৭ সালে আইনজীবী হিসাবে ময়মনসিংহ বারে এবং পরে ঢাকা বারে যোগদান করি। ১৯৯২ সালে সুপ্রিম কোর্ট বারে যোগ দেই।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ডলার বিশ্বের রিজার্ভ কারেন্সি হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। কিন্তু বর্তমানে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উভয় কারণের সংমিশ্রণের ফলে ধীরে ধীরে ডলার আধিপত্য থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। রিজার্ভ ছাড়াও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ডলার সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়।
ইউক্রেনে আগ্রাসনের পর রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় অনেক দেশ সতর্ক হয়ে গেছে এবং এই ধরণের নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর জন্য ডলারের বিকল্প পথ খুঁজছে।
যেমন ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, বাংলাদেশ এবং ইন্ডিয়া বাণিজ্য এবং দায় পরিশোধের জন্য ব্যাকআপ মুদ্রা এবং সম্পদ — যেমন চীনা ইউয়ান এবং বিটকয়েন — লাইন আপ করছে। বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আসার পর বাংলাদেশ চীনা মুদ্রা রেনমিনবি, ইন্ডিয়ান মুদ্রা রুপি এবং ইন্টারনেট মুদ্রা বিটকয়েন ব্যবহার করবে।
যদিও বর্তমানে সামষ্টিক-ভূ-রাজনৈতিক কারণে দেশগুলিকে বিকল্প মুদ্রা খোঁজার চেষ্টা জোরদার হয়েছে, কিন্তু বৈশ্বিক বাণিজ্য ও অর্থায়নে ডলারের আধিপত্য বিস্তার রোধ করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে রাশিয়া এবং চীন কাজ করে যাচ্ছে। এই ডি-ডলারাইজেশন আলোচনা বিগত ১৯৭০ এর দশক থেকে প্রতি কয়েক বছর পর পর ঢেউয়ের মত ফিরে আসে।
কয়েকটি কারণে বিশ্বজুড়ে দেশগুলি ডলার-প্রধান বিশ্ব থেকে দূরে সরে যাওয়ার পরিকল্পনা জোরদার করেছে।
১. আমেরিকার অভ্যন্তরীণ মুদ্রা নীতি:
আমেরিকার অভ্যন্তরীণ মুদ্রা নীতি বাকি বিশ্বের উপর খুব বেশি প্রভাব ফেলে। আমেরিকা বিশ্বের রিজার্ভ মুদ্রার ইস্যুকারী। ফলে ডলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং অর্থপ্রদান ব্যবস্থায় একটি প্রভাবশালী মুদ্রা। বৈশ্বিক অর্থনীতিতে এর প্রভাব তাৎপর্যপূর্ণ এবং কখনও কখনও অতিরঞ্জিত, যার ফলে এর অত্যধিক মূল্যায়ন হয়।
এই অবস্থানটি আমেরিকাকে অতিরিক্ত সুবিধা প্রদান করেছে। এই বিশেষাধিকারের একটি দিক হল যে ডলারের মূল্য তীব্রভাবে হ্রাস পাওয়ার সময় আমেরিকা তার ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে সংকটের মুখোমুখি হতে হয় না। কারণ আমেরিকা আরও অর্থ ইস্যু করতে পারে। এক কথায় বিশ্ব অর্থনীতিকে আমেরিকার অর্থনীতির সাথে সামঞ্জস্য করে চলতে হয়।
২. উদীয়মান দেশগুলির জন্য শক্তিশালী ডলার অত্যন্ত ব্যয়বহুল হয়ে উঠছে:
বিশ্বের বেশিরভাগ মুদ্রার বিপরীতে ডলার ক্রমাগত ভাবে শক্তি অর্জন করছে। এরফলে উদীয়মান দেশগুলির আমদানি অনেক বেশি ব্যয়বহুল হয়ে যাচ্ছে।
উদাহরণ স্বরূপ, আর্জেন্টিনায় রাজনৈতিক চাপ এবং রপ্তানি হ্রাস হওয়ার ফলে ডলারের রিজার্ভের পতন হয়। ফলে আর্জেন্টিনার পেসোর উপর চাপ বেড়ে যায় ফলস্বরূপ, আর্জেন্টিনাতে মুদ্রাস্ফীতি অনেক বেড়ে যায়। আর্জেন্টিনা এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য ডলারের পরিবর্তে চীনা মুদ্রা ইউয়ান ব্যবহার করে চীন থেকে আমদানি মূল্য পরিশোধ করছে।
ডলার ক্রমাগত ভাবে শক্তিশালী হচ্ছে। ইউএস ডলার যত বেশি শক্তিশালী হতে থাকবে বিশ্বে রিজার্ভ কারেন্সি হিসাবে এর ভূমিকাকে দুর্বল হতে থাকবে বলে কোন কোন বিশেষজ্ঞ মনে করেন। এই পরিস্থিতিতে ডলার যত ব্যয়বহুল হবে ঋণগ্রহীতা দেশগুলি বিকল্প সন্ধান করবে। বিকল্প হিসাবে কখনো চীনা ইউয়ান, কখনো রাশিয়ান রুবল, কখনো ইন্ডিয়ান রুপি আবার কখনো নতুন একটা মুদ্রার কথা ভাবা হচ্ছে।
৩. বৈশ্বিক বাণিজ্য এবং তেলের চাহিদায় পরিবর্তন এসেছে:
বৈশ্বিক বাণিজ্য এবং তেলের চাহিদায় পরিবর্তন আসাতে পেট্রোডলারকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে।
ডলার বিশ্বের রিজার্ভ কারেন্সি হয়ে ওঠার একটি মূল কারণ হল মধ্যপ্রাচ্যের উপসাগরীয় দেশগুলি তেল বাণিজ্য করার জন্য একচেটিয়া ভাবে ডলার ব্যবহার করা। স্থিতিশীলতা, সহজেই বিনিময় যোগ্যতা ইত্যাদি কারণে তেলের ব্যবসা করার জন্য ডলার একটি সুবিধাজনক মুদ্রা হিসাবে গণ্য হয়।
১৯৪৫ সালে সৌদি আরব এবং আমেরিকা একটি ঐতিহাসিক চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছিল যে সৌদি আরব বিশ্বের যেকোনো দেশে শুধুমাত্র ডলারে বিনিময়ে তেল বিক্রি করবে। আর সৌদি আরব তার তেল বিক্রির উদ্বৃত্ত অর্থ আমেরিকার কোষাগার এবং কোম্পানিগুলিতে রিজার্ভ হিসাবে বিনিয়োগ করবে। বিনিময়ে আমেরিকা সৌদি আরবের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
কিন্তু অবস্থা ধীরে ধীরে পরিবর্তন হতে থাকে। আমেরিকার তেল এবং গ্যাস উৎপাদন এত বেশি বৃদ্ধি পায় যে তারা শুধু তেল-গ্যাস উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয় না বরং বিপুল পরিমাণ তেল-গ্যাস রফতানি শুরু করে। এর ফলে তেলের বাজারে একটি কাঠামোগত পরিবর্তন এসেছে। এতেও বৈশ্বিক রিজার্ভ কারেন্সি হিসেবে ডলারের ভূমিকাকে হ্রাস করতে পারে। এর কারণ হল, তেল রপ্তানিকারকরা, যারা ডলারের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তারা এখন আর এটার উপর নির্ভরশীল নয়। ফলে তারা অন্য দেশ এবং অন্য মুদ্রায় তেল বিক্রি করতে পারে।
তেল বাণিজ্য ছাড়াও আরো কিছু কারণ:
আমেরিকা এবং সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্ক:
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বেশ কয়েকটি বিষয়ে আমেরিকার সাথে সৌদি আরবের মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। যেমন সৌদি আরব আগের মত আমেরিকাতে বিনিয়োগ করছে না। যেমন সাবেক প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন যে আমেরিকা সৌদি আরবকে যে পরিমাণ নিরাপত্তা দিচ্ছে সেই পরিমাণ বিনিয়োগ আসছে না।
তাছাড়া ব্যক্তিগত একটা বিষয় যা বিশাল প্রভাব বিস্তার করেছে। সেটা হচ্ছে ওয়াশিংটন পোস্টের সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যার জন্য ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানকে দায়ী করা এবং এই ব্যাপারে আমেরিকার কঠোর অবস্থান নেয়া। এতে ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান ব্যক্তিগত ভাবে অপমানিত বোধ করেন এবং ক্ষুব্ধ হন। এই ঘটনার সুদূরপ্রসারী প্রভাব ডলার, বিশ্ব বাণিজ্য, বিশ্ব অর্থনীতি, বিশ্ব নিরাপত্তা, এবং সৌদি-আমেরিকার সম্পর্কের উপর পড়েছে। এক দিন আসবে যখন সৌদি আরব এক ফোঁটা তেলও আর ডলারে বিক্রি করবে না।
[তথ্য যাচাই, বিশ্লেষণ এবং গবেষণায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্য নেয়া হয়েছে।]
তথ্য সূত্ৰ: Markets Insider, Business Insider, Pipeline Oil & Gas Magazine, Arab News, Washington Post, Saudi Gazette, Tehran times
২| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ ভোর ৫:১৪
রিফাত হোসেন বলেছেন: +
৩| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১:০৯
রাজীব নুর বলেছেন: আপনার পোষ্টে সঠিক মন্তব্য করতে পারতেন সোনাগাজী। কিন্তু আফসোস তাকে ব্যান করে রাখা হয়েছে।
৪| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১০:৩৯
কামাল১৮ বলেছেন: ডলারের আধিপত্য অনেক কমে গেছে।যত দিন যাবে কমতে থাকবে ডলারের ব্যবহার।
©somewhere in net ltd.
১| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১:০২
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
ভাবনার বিষয়।