নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি ময়মনসিংহ জেলা স্কুল থেকে ১৯৭৭ সালে এস.এস.সি এবং আনন্দ মোহন কলেজ থেকে ১৯৭৯ সালে এইচ.এস.সি পাশ করেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৪ সালে এলএল.বি (সম্মান) এবং ১৯৮৫ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএল.এম পাশ করি।

মোহাম্মদ আলী আকন্দ

১৯৮৭ সালে আইনজীবী হিসাবে ময়মনসিংহ বারে এবং পরে ঢাকা বারে যোগদান করি। ১৯৯২ সালে সুপ্রিম কোর্ট বারে যোগ দেই।

মোহাম্মদ আলী আকন্দ › বিস্তারিত পোস্টঃ

কুর্দি: রাষ্ট্র ছাড়া একদল মানুষ

১১ ই জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১২:৩৮

কুর্দিরা একটি রাষ্ট্রহীন জাতি যার জনসংখ্যা সাড়ে চার কোটি। এই কুর্দিরা রাষ্ট্র ছাড়া বিশ্বের বৃহত্তম জাতিগোষ্ঠী। তারা প্রধানত সুন্নি মুসলমান এবং কুর্দি ভাষায় কথা বলে। কুর্দিরা কুর্দিস্তানের আদিবাসী। কিন্তু ৪টি মুসলিম দেশ অর্থাৎ তুরস্ক, ইরাক, ইরান এবং সিরিয়া চার টুকরা করে কুর্দিস্তান দখল করে নিয়েছে।

কুর্দিদের একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস এবং সংস্কৃতি রয়েছে যা হাজার হাজার বছরের পুরাতন। তারা তাদের ইতিহাস জুড়ে নিপীড়ন ও উৎপীড়নের শিকার হয়েছে, কিন্তু তারা একটি ধৈর্যশীল এবং দৃঢ়প্রতিজ্ঞ মানুষ হিসেবে নিজেদের ধর্ম, সংস্কৃতি এবং ভাষা নিয়ে দখলদার তুরস্ক, ইরাক, ইরান এবং সিরিয়ার বিরুদ্ধে অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯২০ সালের ১০ অগাস্ট ফ্রান্সে মিত্রশক্তি এবং ওসমানী খিলাফতের মধ্যে সেভার্স চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির মাধ্যমে ওসমানী খিলাফত কর্তৃক জবর দখলকৃত কুর্দিস্তানকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকার করে নেয়া হয়। তুরস্ক তিন বছরে মাথায় চুক্তিটি ভঙ্গ করে। তুরস্কের তালবাহানা কারণে চুক্তিটি কখনই সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত হয়নি বরং চারটি মুসলিম দেশ তুরস্ক, ইরাক, ইরান এবং সিরিয়া কুর্দিস্তানকে চার টুকরা করে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে জবরদখল করে নেয়। কুর্দিরা বর্তমানে এই চারটি দেশে কর্তৃক অধিকৃত অঞ্চলে বসবাস করছে।

তখন থেকেই কুর্দিরা তাদের অধিকার ও আত্মনিয়ন্ত্রণের জন্য লড়াই করে আসছে। কুর্দিরা সংখ্যাগরিষ্ঠ সুন্নি মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও মুসলিম দেশ তুরস্ক, ইরাক, ইরান এবং সিরিয়া সরকারের কঠোর প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়েছে। এই চারটা মুসলিম দেশ কুর্দি সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম কুর্দিদের মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা অস্বীকার করেছে এবং নির্মম অত্যাচার করছে। স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম রত কুর্দি মুক্তিযোদ্ধাদেরকে তুরস্ক, ইরাক, ইরান এবং সিরিয়া সন্ত্রাসী বাহিনী হিসাবে ঘোষণা করেছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে কুর্দিরা তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের সংগ্রামে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। সাদ্দাম হোসেন কুর্দিদেরকে নির্মম হত্যা করে এবং নিপীড়ন চালায়। সাদ্দাম হোসেনের পতনের পর ইরাকের কুর্দিস্তান অঞ্চলে কুর্দিরা একটি নিজস্ব সরকার, সংসদ এবং সামরিক বাহিনী সহ একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে। সিরিয়ার কুর্দিরাও দেশটির উত্তরে একটি আধা-স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করেছে।

তবে কুর্দিরা এখনও অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। তারা চারটি দেশের মধ্যে বিভক্ত এবং তারা প্রায়ই এই চারটি দেশের সরকার কর্তৃক সহিংসতা ও নিপীড়নের শিকার হয়। উদাহরণস্বরূপ তুরস্কের কুর্দিরা তাদের ভাষায় কথা বলার এবং স্কুলে তাদের সংস্কৃতি শেখানোর অধিকার থেকে বঞ্চিত। বর্তমান এরদোগান সরকার তুরস্কে অবস্থিত কুর্দিদের উপর অত্যাচার এবং নিপীড়ন অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে।

মুসলিম দেশগুলি থেকে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম কুর্দিরা ভবিষ্যতের জন্য আশাবাদী। তারা একটি স্বাধীন কুর্দি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য অর্জনে বদ্ধপরিকর।

কুর্দিরা বিজ্ঞান, সাহিত্য এবং শিল্পকলা সহ অনেক ক্ষেত্রে বিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। তারা প্রতিকূলতার মুখে তাদের সাহস এবং দৃঢ়তার জন্যও পরিচিত।

কুর্দিরা আত্মমর্যাদা সম্পন্ন এবং দৃঢ় মানুষ; তারা তাদের নিজ ভূমিতে স্বাধীন জাতি হিসাবে এবং শান্তিপূর্ণ ভাবে বসবাস করার অধিকারী। তাদের নিজস্ব রাষ্ট্রের অধিকার রয়েছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের সংগ্রামকে সমর্থন করা।

কয়েকজন বিখ্যাত কুর্দি:

১. সালাউদ্দিন (সালাদিন) :
তিনি ছিলেন একজন কুর্দি মুসলিম সামরিক নেতা যিনি মিশর ও সিরিয়ার প্রথম সুলতান হয়েছিলেন। তিনি ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে তার বিজয় এবং জেরুজালেম পুনরুদ্ধারের জন্য বিখ্যাত।

২. জালাল তালাবানী:
তিনি একজন কুর্দি রাজনীতিবিদ ছিলেন যিনি ২০০৫ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ইরাকের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি কুর্দিস্তানের দেশপ্রেমিক ইউনিয়নের (Patriotic Union of Kurdistan ) প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন এবং কুর্দি রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

৩. মাসুদ বারজানি:
তিনি একজন কুর্দি রাজনীতিবিদ যিনি ২০০৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ইরাকের কুর্দিস্তান অঞ্চলের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধীনতার জন্য কুর্দি সংগ্রামের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন।

৪. আবদুল্লাহ ওকালান:
তিনি একজন কুর্দি জাতীয়তাবাদী নেতা যিনি কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি (পিকেকে) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, কুর্দিদের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করা একটি মুক্তি সংগঠন। বর্তমানে তিনি তুরস্কে বন্দি রয়েছেন।

৫. লায়লা জানা:
তিনি একজন কুর্দি রাজনীতিবিদ এবং মানবাধিকার কর্মী যিনি তুর্কি পার্লামেন্টে নির্বাচিত প্রথম কুর্দি মহিলা। কুর্দিদের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম করার জন্য তাকেও এরদোগান কারারুদ্ধ করেছে।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই জানুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ১২:১৯

বাকপ্রবাস বলেছেন: শিখ, কুর্দি, কাশ্মির এমন সব জাতিগুলো কখন নিজেদের সরকার পাবে জানিনা, আধুনিক রাষ্ট্র এসব ব্যাপারে ব্যাপক নিপিড়ন চালানোকে বৈধ মনে করে

১১ ই জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১১:০৬

মোহাম্মদ আলী আকন্দ বলেছেন:



মানুষ স্বভাবগত ভাবে স্বার্থপর।
নিজের স্বার্থে নিজের জন্য পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্র গড়ে তুলেছে।
নিজের পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রে বাইরে যারা আছে তারা তাদের কমপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বী বা চূড়ান্ত পর্যায়ে শত্রু।

এই কারণে শিখ, কুর্দি, বা কাশ্মীর তাদের স্বার্থ দাবি করলে তাদেরকে সন্ত্রাসী, আতঙ্কবাদী, বিদেশী চর, ইত্যাদি আখ্যায়িত করে নির্যাতন এবং হত্যা করা হয়।

স্বার্থের কারণে অধিকাংশ মানুষ এই সব অন্যায়কে সমর্থন করে।

২| ১১ ই জানুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১

হাসান মাহবুব বলেছেন: আরব বিশ্বে এরকম প্রচুর অভ্যন্তরীণ সমস্যা আছে। শাসকরা এগুলি ঢাকার জন্যে ইজরায়েলকে মূল প্রতিপক্ষ বানিয়ে ফেলেছে।

১১ ই জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১১:২৮

মোহাম্মদ আলী আকন্দ বলেছেন:


আরবরা মূলত গোত্র প্রথায় বিশ্বাস করে।

রাসূল (সঃ) যতদিন রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিলেন ততদিন এটা চাপা দিয়ে রাখতে পেরেছিলেন।

রাসূল (সঃ) মৃত্যুর সাথেই সাথেই (মৃত্যুর দিন থেকেই) আবার গোত্র বিরোধ মাথা চারা দিয়ে উঠে।

আবু বকর খলিফা হলে আলীর সমর্থক বা আলীর দল বা শিয়ারা (শিয়া মানে দল) তাকে খলিফা হিসাবে মানতে পারেন নাই, এই গোত্রের কারণেই।
যদিও শিয়ারা তাদের দাবিকে যুক্তিসঙ্গত করার জন্য নানান প্রসঙ্গ বিহীন হাদিসের ভুল ব্যাখ্যা উপস্থাপন করে।

এরপর গোত্রীয় কোন্দলের কারণে একে একে ওমর, উসমান, আলী, আলীর দুই ছেলে হাসান এবং হোসেন সবাই সরাসরি বা গুপ্তঘাতকের হাতে নিহত হন।

চার খলিফার পর উমাইয়া খিলাফত এবং উমাইয়া খিলাফতকে ধ্বংস করে আব্বাসীয় খিলাফত এই গোত্র প্রথা থেকেই সৃষ্টি হয়।

এই গোত্র প্রথা এখনো ঠিক আগের মতোই বিদ্যমান।
ইরান বনাম আরব, শিয়া বনাম সুন্নি বিরোধ মূলত গোত্র বিরোধের আধুনিক বা পরিবর্তিত রূপ।

মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত, সংঘর্ষ, জটিলতার মুলে একই গোত্র বিরোধ।
এই বিরোধ কখনই মীমাংসা হবে না।
নানান ফর্মে চলতে থাকবে।
বড় ধরণের কোন ঘটনা বা বিপর্যয় ঘটলে সাময়িক ভাবে স্তিমিত থাকবে।
কিন্তু পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলেই আবার চলতে থাকবে।

আরবদের সাথে ব্যক্তি পর্যায়ে কথা বলে দেখতে পারেন তারা ফিলিস্তিনদের পছন্দ করে না।
জর্দান থেকে তাদেরকে বের করে দেয়া হয়েছে, তারপর লেবানন থেকে, তারপর সিরিয়া থেকে তারপর মিসর থেকে।
মূল কারণ গোত্র বিরোধ।

৩| ১১ ই জানুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৩:৪২

বিজন রয় বলেছেন: হাসান মাহবুব বলেছেন: আরব বিশ্বে এরকম প্রচুর অভ্যন্তরীণ সমস্যা আছে। শাসকরা এগুলি ঢাকার জন্যে ইজরায়েলকে মূল প্রতিপক্ষ বানিয়ে ফেলেছে।

সহমত।

তাছাড়া আরবদের আরো লেখাপড়া করার দরকার।
আর কতদিন তেল বেঁচে খাবে।

১১ ই জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১১:৩৬

মোহাম্মদ আলী আকন্দ বলেছেন:


নিজেরা তেল উত্তোলন করে সেই তেল বিক্রি করে খেলেও কিছু উপকারে আসতো।

আমেরিকানরা এই তেল আবিষ্কার করে, উত্তোলন করে, বিপণন করে।
তারা বিনা পরিশ্রমে টাকাটা পায়।

বিনা পরিশ্রমে উপার্জিত টাকার কোন মূল্য নাই।
কারণ সে এটা যথাযথ ভাবে ব্যবহার করার কৌশল জানে না।

৪| ১১ ই জানুয়ারি, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৪

রাজীব নুর বলেছেন: তিতুমীর কি কুর্দি ছিলেন?

১১ ই জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১১:৪২

মোহাম্মদ আলী আকন্দ বলেছেন:


সৈয়দ মীর নিসার আলী তিতুমীর ১৭৮২ সালের ২৭ জানুয়ারি (১৪ মাঘ ১১৮২ বঙ্গাব্দ) ২৪ পরগনা জেলার বসিরহাট মহকুমার বাদুড়িয়া থানার বাগজোলা গ্রাম পঞ্চায়েতের হায়দারপুর (মতান্তরে বাদুড়িয়া থানার বাগজোলা গ্রাম পঞ্চায়েতের চাঁদপুর) গ্রামে একটি সুন্নী মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম সৈয়দ মীর হাসান আলী এবং মাতার নাম আবিদা রুকাইয়া খাতুন। তিতুমীরের পরিবারের লোকেরা নিজেদের হযরত আলীর বংশধর বলে দাবি করতেন। তার এক পূর্বপুরুষ সৈয়দ শাহাদত আলী ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে আরব থেকে বাংলায় আসেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.