নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আকিতা খানম

আকিতা খানম › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভূঁইয়া ভিলা

২৫ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৩

ভূঁইয়া ভিলা
লেখিকা : আকিতা খানম
{সূচনা পর্ব}
পৃথিবীতে আল্লাহ তায়ালা অসংখ্য নবী-রাসুল পাঠিয়েছেন। সারা জাহানের বিশ্ব নবী ও সর্বশেষ নবী হচ্ছেন হযরত মুহাম্মদ (সা.)। সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হওয়া সত্তে ও কষ্ট,যাতনা, দুঃখের দহন তাঁর মধ্যেও ছিলো। মহানবী (সা.) এর স্ত্রী তথা সমগ্র জান্নাতি নারীকুলের শ্রেষ্ঠ নারী হযরত খাদিজা (রা:) এবং নবী করিম (সা.) এর প্রাণ প্রিয় চাচা ইন্তেকালের পর নবীর মন যেন অধিক বেদনাবিধুর হয়ে পড়ে তখনই মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় নবীকে সান্ত্বনা দিতে সূরা ইউসুফ রচনা করেন। হযরত ইউসুফ (আ.) এর জীবনাধীন সকল ঘটনা কারিশমা, তিমিরাবগুণ্ঠিত কষ্টপ্রহর এবং নবীর আদর্শ ও সৎসহিত জীবন উঠে আসে। তিনি ছিলেন আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের মধ্যে একজন। এজন্য আমার কাছে সূরা ইউসুফ অধিকতর প্রিয় একটি সূরা আর প্রিয় দেশ বলতে মক্কা-মদিনার পর মিশরকেই আমি আমার তালিকার ঝুলিতে রাখবো। এহেন সব ঘটনা আমার শ্রদ্ধেয় দাদীর মুখ থেকে আমি শুনে থাকি। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় পৃথিবীব্যাপী সকল প্রাানীর ন্যায় তিনিও ইন্তেকাল করেন পূর্ববর্তী মাহে রমজানের শুরুতে। তিনি ছিলেন আমাদের গৃহস্থাশ্রমের একমাএ বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যাক্তি। তাঁর এমন বিদায়ে আমরা সকলেই ব্যথিত হই। বিশেষ করে আমি ছিলাম নানীর অত্যন্ত সুমিষ্ট নাতি।


সময়ের স্রোতে বছর ঘুরেফিরে এখন হিজরী তারিখ ১- রমজান ১৪২৫ এবং ইংরেজি তারিখ ২৫ শে অক্টোবর ২০০৪। পবিএ মাহে রমজানের ১০ দিন সোমবার আজ। অন্যান্য দিনের ন্যায় আজও মধ্যরাতে সেহেরী করতে তৈরী হই। মধ্যরাতের সময় তখন সব মানুষ ঘুমন্ত অবস্থায় থাকলেও জীবজন্তুদ্বয় সবই সজাগ থাকে বিশেষ করে কুকুর বিড়াল তাদের স্বভাবসুলভ চিৎকার আওয়াজ মারামারি ছোটাছুটি করেই থাকে। তিমির রং ধারণকারী আকাশের বুকে চন্দ্রচূড় মহমান্বিত ক্ষিণ প্রজ্বলিত আলোকারাশি সমাহিত করে রেখেছে পুরো শহর জুড়ে। ধুলোবালির ইট পাথুরে গড়া এই প্রাণহীন অনির্বাণ ঢাকা শহরের আমিন বাজারের মধ্যস্থলে জায়গাএ জুড়ে দ্বিলিপিরূপ দ্বিতল বিশিষ্ট শেওলা ঘেরা কিঞ্চিত ভাঙা এক বাড়িটিই হচ্ছে আমাদের। বাহিরের গেটের উপরে বড় করে সুন্দর হস্তসিদ্ধি নাম ফলক ঝুলছে যাতে গোটা গোটা করল বড় বড় অক্ষরেই লিখা ভূঁইয়া ভিলা। আমার শ্রদ্ধেয় মরহুম দাদাজান আজমির ভূঁইয়ার পর আমার পিতা বহরুল ভূঁইয়া-ই এখন এই ভুঁইয়া ভিলার প্রধান সদস্য এবং গৃহের মজক বললেও চলেই।

আমার প্রিয় আম্মাজান হাজেরা খাতুন এবং তার পাঁচ পুএ কন্যার মধ্যে আমি পঞ্চম অর্থাৎ কনিষ্ঠ জন। হাতের পাঁচ আঙুলের মতো বৃদ্ধাঙ্গুলি হচ্ছে আমার বড়আপা। যার নাম সাইয়েদা ভূঁইয়া। ওনার ডাক নাম বাতুল। এটি ফাতেমা (রা.) এর ডাক নাম ছিলো। এর নামটি রাখা হয়েছিল হযরত ফাতিমা (রা.) সকল পার্থিব সুখ শান্তি বিসর্জন দিয়ে কষ্টসহিষ্ণু সকল অভাবী এতিম অনাথ, আত্মীয় পরিজন, স্বামী সন্তানদের চিন্তায় মগ্ন থাকতেন। আমার বড় আপাও তেমনই। তার দুই মেয়ে এবং স্বামী সহ ছোট একটা সংসার। আমার আম্মা যেমন ধার্মিক নরম কোমলাময়ী, ঘরসহুষ্রী, গুণবতী, অমায়িক তেমনি আমার আপাও। আমার আব্বাও তেমনি রাগহীন পরোপকারী একটু ঠান্ডা মেজাজের খুব চিন্তাসীল বিদ্যান বুদ্ধিবৃত্তিক ঘরকুণে নির্লিপ্ত হৃদয়ের নির্বিকারত্ব মানুষ। তবে বেশীই ভাবলেশহীন, ইকটু বোকাসোকা। আব্বা
চাকরী করতেন বাংলা ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনে। সরকারী চাকুরি তাই চাকরি থেকে অব্যাহতির পর ভালোই পেনশন পান। তবে দীর্ঘ সাত বছর ধরে তিনি চক্ষুহীন অন্ধ মানব। আমার বয়স যখন ১০ তখনই আব্বা খবরের কাগজের এক বৃদ্ধাশ্রমী লোককে চোখ দান করেন। ঐ লোকের পুএ কন্যা থাকার পরেও তাকে বৃদ্ধাশ্রমে থাকা লাগে। ভাগ্যের এমন নির্মম পরিহাস এবং বৃদ্ধের আকুল কান্নাময় বেদনাদায়ক জীবনি শুনে আব্বার মন এতটাই ব্যাথিত হয় যে ঐদিনি তিনি চোখদুটো দান করেন। আম্মাকে না জানিয়ে এমন অতি ভালোমানুষি বোকামিঠাসা কাজের জন্য একমাস আব্বার সাথে কথা বলা বন্ধ রাখেন। সেসময় আব্বার অবস্থা দেখে না বুঝে আমিই বা এমন কান্না করেছিলাম যে
মনে হচ্ছিলো আব্বা ইহলোক ত্যাগ করবেন। তবে চোখ না থাকলেও আব্বা এই সাত বছরে সবকিছু নখদর্পনে করে রাখেন। আম্মারও এতে গুরুত্ব ছিলো অপরিস্ফুট। আম্মার হাত ধরেই এ গলি ও গলি করে কয়েকটা গলি চিনে রাখেন আর বাড়ির সবকিছুই প্রত্যক্ষভাবে মাথায় গেঁথে রাখেন। তবে এমন কাজের জন্য আব্বার বিন্দুমাত্র আফসোস ছিলোনা। আব্বার এক কথা পুরো শরীর তো একদিন পচে গলে কঙ্কালসার হবেই চোখ দুটো অপর এক অভাগা বৃদ্ধাকে দান করলে ক্ষতিই বা কী। দাদী আম্মাসহ সব্বাই এমন কাজের জন্য আব্বার সাথে কথাবার্তা এক প্রকার বন্ধই করে দিয়েছিলো। এরপর আসে তর্জনী অর্থাৎ আমার বড় ভাইজান আতিফুর আহরার ভুঁইয়া। ছোটখাটো একটা চাকুরি করে। অনেক গম্ভীর, একগুঁয়ে রাগচটা স্বভাবের যা আব্বার একেবারেই বিপরীত। আব্বার চক্ষু দান কর্মসূচির পর থেকে আমার বড় ভাইজান আব্বার সাথে তেমন একটা ভাববিনিময় করেনা। তবে আব্বা আর আম্মা ভাইজানের বিয়ের ব্যাপারে কয়েকদিন ধরেই ইকটু নড়ে-চড়ে আছেন। তারা চাচ্ছেন অতি দ্রুতই যেন আমাদের বাড়ির একজন নতুন নারী সদস্য পদার্পণ করেন এবং ভাইজানের এই স্বভাবকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেন। আব্বা, আম্মার বিয়েটাও ইকটু অদ্ভুতভাবেই হয়েছে। এমনকি তারা একে অপরের নাম পর্যন্ত জানতো না। ঘটনাটার সূচনা এভাবে হয় যে, দাদাজান আর নানাজান ছিলেন অতিসয় দু'জন প্রিয়মিএ। একবার কোনো এক শবে কদরের রাতে মসজিদে দুইজন বসে খোশ গল্পে মেতে ছিলেন। হঠাৎ আমার নানাজান দুঃখভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে বলেছিলো, আমার মেয়েটার জন্য একজন ভালো পাএের খোঁজ করছি। বিয়ের তো এখনই সময় হ'য়েছে নাহয় কবে দিবো বিয়ে। খুবই চিন্তালব্ধ জটিলতায় ভুগছি আজমির। আমার দাদাজান ও ওনার সন্তান নিয়ে ভাবনায় ছিলেন এই অতি শুভ কাজের জন্য। দু'জনেই যখন বিবাহ বিড়ম্বনায় মগ্নচৈতন্যতায় ডুবে যাচ্ছিলেন তখনই আমার দাদাজান আনন্দচিত্তে বলে উঠেন, আমার অতি সাধারণ ভোলাভাালা ছেলেটার সঙ্গী হিসাবে যদি তোর রুপবতী সুনয়নী গুণবতী মেয়ে পায় তাহলো তা আমার ছেলের সৌভাগ্য। নানাজান এতক্ষণ খুবই বেদনার্ত মন নিয়ে আকাশপানের দিকে দুই আঁখিপাতা অশ্রুসিক্ত করলেও পরক্ষণেই রঙিন আকাশের ন্যায় পুলকিত হয়েউঠলেন। হয়তবা এতক্ষণ এরকম কিছু বাক্য শ্রবণেন্দ্রিয়তায় বিভোর ছিলেন। নানাজান তৎক্ষনাৎ দিন তারিখ বার সব ঠিক করল শুভ কাজের জন্য শুকরিয়া আদায় করলেন। গৃহে এ কথা আম্মা তখনও জানতেন না। এক ঝড় শ্রাবণবর্ষণ রাএিতে প্রকৃতি যখন বারিধারায় স্নিগ্ধকর রুপে সজ্জীভূত তখন আমার আম্মা তার শয়নকক্ষে দুই নয়নকে সেই শ্রাবণধারায় ধারাবাহিত করেছিলো। হযরত আইয়ুব (আঃ) এবং বিবি রহিমার সেই নিদারুণ কষ্টসহিষ্ণু রজনী এবং মহীয়সী নারী বিবি রহিমার স্বামীর প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা স্বামী সেবা। শয়তানের প্ররোচনার সাথে মোকাবেলা অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে ঘুরেফিরে মানুষের দ্বারে দ্বারে আশ্রয় ও খাবার জলযোগের অসহনীয় চেষ্টা, কষ্ট সবকিছুই পড়ার পর আম্মা মনে অনেক ব্যাথা পায় এবং তখনই তিনি তার নেএ দিয়ে বারিধারা বর্ষণ করেন। আব্বা তখনই তার কাছে শুভ বিবাহের প্রস্তাব পেশ করলে আম্মা কোনো কিছু না ভেবেই তাতে সম্মতি প্রদান করেন। অবশ্য নানাজান ছিলেন বাহির থেকে কঠোর কাঠরক্ষা, রাগচটা রাগী ও সত্য বলার এক কথার মানুষ। তার সামনে আম্মা কখনো না বলতে পারেন নাই। আম্মা - নানীর মনেও ভয় ভীতি ছিলো এবং ঘরের কর্তার কথা ফেলবার বা না বলার অমন বেয়াদবি বা আদব কায়দা হীনতা তখন ছিলোনা।

চলবে....?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.