![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অবস্থান মৌনতায়,.....
শীত যাচ্ছে, আসছে বসন্ত, এরপরই আসবে হয়তো বা প্রচন্ড গরমের গ্রীষ্মকাল। আবহমান কাল থেকেই ঋতুর এই পরিবর্তন চলে আসছে এবং চলতেই থাকবে। এই পরিবর্তনের সাথে সাথে আমাদের স্বাস্থ্যের পরিবর্তন বা রোগব্যাধি হওয়াটাই স্বাভাবিক। তাই আমাদের সবাইকে হতে হবে সচেতন, নিতে হবে কিছু প্রতিরোধমূরক ব্যবস্থা।
ঋতু পরিবর্তনের সময় সবচেয়ে বেশি রোগব্যাধির প্রকোপ যায় স্বাসতন্ত্রের উপর। বেশি দেখা দেয় ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত সবার সর্দি-কাশি বা কমন কোল্ড। বিশেষ করে শীতের শেষে আর গরমের শুরুতে তাপমাত্রা পরিবর্তনের সময়টাতেই এর প্রাদুর্ভাব বেশি। প্রায়ই দেখা যায় দুই তিন দিন নাক বন্ধ থাকে বা নাক দিয়ে পানি ঝরে।
গলাব্যথা করে, শুকনা কাশি থাকে, জ্বরও থাকতে পারে। এগুলো বেশিরভাগই ভাইরাসজনিত, লক্ষণ ভিত্তিক কিছু চিকিত্সা, এমনকি কোন চিকিত্সা ছাড়াই ভালো হয়, কোন অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হয়না। তবে শুকনা কাশিটা কয়েক সপ্তাহ ভোগাতে পারে। ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ, এন্টি হিস্টামিন খেতে হবে। আর গরম পানিতে গড়গড়া করতে হবে। গরম গরম চা বা গরম পানিতে আদা, মধু, লেবুর রস, তুলসি পাতার রস ইত্যাদি পান করলে উপকার পাওয়া যায়। অনেক ক্ষেত্রে ভাইরাসের পরপরই ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করতে পারে। কাশির সঙ্গে হলুদ বা সবুজ রংয়ের কফ বের হলে সাথে জ্বর থাকলে ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে। সেক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হয়।
এই সময়টাতে আরও একটি ভাইরাস রোগের প্রাদুর্ভাব হতে পারে, যাকে বলে সিজনাল ফ্লু। এই রোগের লক্ষণগুলোও কমন কোল্ডের মতোই। আলাদা কোনো চিকিত্সারও প্রয়োজন হয় না, উপরের কমন কোল্ডের মতোই উপসর্গ ভিত্তিক চিকিত্সা দিলেই ঠিক হয়ে যায়। জলবসন্তর মত রোগের প্রকোপও এই সময়ে বেশি বেশি হয়। প্রথমে একটু জ্বর-সর্দি, তারপর গায়ে ফোস্কার মতো ছোট ছোট দানা। সঙ্গে থাকে অস্বস্তিকর চুলকানি, ঢোক গিলতে অসুবিধা। গায়ে ব্যথা থাকতে পারে। এটাও কোনো মারাত্মক অসুখ নয়। জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল, শরীর চুলকালে অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ, ক্যালামিন লোশন ইত্যাদি ব্যবহার করলেই রোগের প্রকোপ কমে আসবে। আর সংক্রমণ হলে অবশ্যই চিকিত্সকের পরমার্শ নেয়া উচিত।
সাইনুসাইটিস এবং টনসিলাইটিস জাতীয় রোগগুলোও এই সময়ে দেখা দিতে পারে। টনসিলের সমস্যা যে কারোরই হতে পারে, তবে ছোট বাচ্চারাই বেশি আক্রান্ত হয়। হঠাত্ শীত চলে যাবার প্রক্কালে গরমের শুরুতে ঠান্ডা পানীয় বা আইসক্রিম খাওয়ার প্রবণতার কারণে, এমনকি বাচ্চারা স্কুলে বা অন্যান্য যায়গায় ধুলাবালিতে খেলাধূলা করলেও এসমস্ত রোগ বাড়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া যারা হাঁপানি, ব্রংকাইটিস বা শ্বাসজনিত অন্যান্য রোগে ভোগেন, তাদের এ রোগের প্রকোপ শীতের পর বসন্তে এমনকি গরমের শুরুতে বাড়তে পারে। আরো কিছু কিছু রোগ হওয়ার প্রাদুর্ভাব লক্ষ করা যায়, যেমন প্রচন্ড গরমে পিপাসার কারণে রাস্তাঘাটে পানি বা শরবত খাওয়া আর খাবার দ্রুত নষ্ট হয়ে যাওয়া খাদ্যদ্রব্য, ফলমূল গ্রহণ করার ফলে প্রায়ই ডায়রিয়াজনিত রোগব্যাধি দেখা দেয়। এমনকি এসব গ্রহণ করার কারণে টাইফয়েড, প্যারাটাইফয়েড, জন্ডিস, সাধারণ আমাশয়, রক্ত আমাশয়ও হতে পারে। আবার তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অতিরিক্ত তাপমাত্রায় হিট স্ট্রোক বা হিট এক্সহসশানের মতো জটিল সমস্যার প্রকোপও দেখা দিতে পারে।
শীতের শেষে গ্রীষ্মের আগমনে স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা থেকে বাঁচার জন্য কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলেই মোটামুটি সুস্থ থাকা সম্ভব।
ধূলাবালি পরিহার করতে হবে, অতিরিক্ত গরমে যাওয়াও এড়িয়ে চলুন। ঘাম হলে মুছে ফেলুন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ঠান্ডা পানি বা খাবার খাওয়া, ধূলাবালিতে যাওয়া ইত্যাদি পরিহার করলে এসব রোগ থেকে নিরাপদ থাকা সম্ভব। ভাইরাসজনিত অসুখে আক্রান্ত রোগীর কাছ থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকতে হবে। সব সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। যেখানে-সেখানে দুষিত পানি বা অন্যান্য পানীয় খাওয়া বর্জন করতে হবে। পানি বা অন্য তরল জাতীয় পান করুন অন্য সময়ের চেয়ে একটু বেশি, শুধু যেন হয় বিশুদ্ধ। বিশেষ করে যারা অতিরিক্ত গরম পরিবেশে কাজকর্ম করেন তাদের বেলায় তরল পানীয়ের সঙ্গে লবণ মিশিয়ে নেবেন। ওরস্যালইনও খেতে পারেন। ঋতু পরিবর্তন চিরন্তন। সময়ের সঙ্গে আসবে গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরত্, মেহন্ত। প্রকৃতি সেজে উঠবে অপরূপ সাজে। আর এর সঙ্গে একেক সময় একেক রোগ ব্যাধির প্রকোপ হতে থাকবে। সে অনুযায়ী প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। মনে রাখতে হবে প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম
লেখক:ডীন, মেডিসিন অনুষদ
অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ।
©somewhere in net ltd.