![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মানুষ মানুষের জন্য , জীবন জীবনের জন্য একটু সহানুভুতি কি মানুষ পেতে পারেনা...ও বন্ধু...
বাংলাদেশ। একটা সময় যার নাম উচ্চারণ মানেই ছিল উন্নয়নের বিস্ময়, দক্ষিণ এশিয়ার রোল মডেল,নারীর ক্ষমতায়নের উদাহরণ। শহর থেকে গ্রাম রাস্তা, বিদ্যুৎ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রযুক্তি সবখানেই একটানা এগিয়ে চলার গল্প। এক সময় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যখন অর্থনীতি হোঁচট খাচ্ছিল, তখন বাংলাদেশ যেন বলছিল, “আমরাও পারি”এমন আত্মবিশ্বাসে ভরপুর ছিল জাতি।
এই উন্নয়নের পেছনে ছিল নেতৃত্বের স্থিতিশীলতা, পরিকল্পনা, এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রগতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি। সমাজে ধর্ম থাকবে, কিন্তু রাজনীতিতে নয় এই ছিল মূল দর্শন। সেই দর্শনেই জন্ম নিয়েছিল নারী কর্মসংস্থানের ঢেউ, গ্রামীণ অর্থনীতির উত্থান, ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন, এবং মানবিক মূল্যবোধের পুনঃপ্রতিষ্ঠা।
প্রায় দেড় দশক ধরে দেশটি ছিল অর্থনৈতিক সূচকের ধারাবাহিক উত্থানে। মাথাপিছু আয় তিন গুণ বেড়েছে, দারিদ্র্য হ্রাস পেয়েছে, গড় আয়ু বেড়েছে, মেয়েদের শিক্ষা ও কর্মসংস্থান বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে।
গ্রামে-গঞ্জে আলোর ছোঁয়া পৌঁছেছে, নদীর ওপর একের পর এক সেতু, আর শহরে উড়ালসড়ক সবকিছু মিলিয়ে এক নতুন আত্মবিশ্বাসের প্রতীক ছিল বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে (The Economist, 2022) দেশের প্রবৃদ্ধিকে “miracle of South Asia” বলা হয়েছিল।
সময়ের স্রোত বদলাতে বেশি সময় লাগে না। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে দৃশ্যপট বদলে গেল। বাজারে আগুন, বৈদেশিক রিজার্ভে ধস, শিল্পে স্থবিরতা, কর্মসংস্থানে ভাটা। যেখানে আগে মানুষ উন্নয়ন নিয়ে বিতর্ক করত, এখন করে চাল-ডাল-তেলের দাম নিয়ে। যেখানে তরুণরা স্টার্টআপ খুলে স্বপ্ন দেখত, এখন তারা বিদেশ যাওয়ার উপায় খোজে।
এই এক বছরে সংবাদপত্রের শিরোনামগুলো যেন একটাই বার্তা দেয়—আশা হারানোর গল্প। (প্রথম আলো, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫: “বেকারত্ব বেড়েছে, বিনিয়োগ হ্রাস”) (বাংলাদেশ প্রতিদিন, ১৪ জুলাই ২০২৫: “গ্রামীণ অর্থনীতি থমকে গেছে”)
যেখানে শূন্যতা, সেখানেই অন্ধকার জায়গা নেয়। সমাজবিজ্ঞান বলে যখন মানুষ হতাশ হয়, অনিশ্চয়তায় পড়ে, তখন ধর্মীয় চেতনা সহজেই রাজনৈতিক রূপ নেয়। বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। যখন কর্মসংস্থান নেই, যখন রাষ্ট্রীয় দিকনির্দেশনা দুর্বল, তখন মানুষ নতুন রক্ষাকারী খোঁজে। এই সুযোগেই উত্থান ঘটে মৌলবাদি রাজনীতির যা ধর্মের আবেগকে ব্যবহার করে রাজনীতির মাঠ দখল করতে চায়। তাদের বক্তব্য: “সব খারাপ হয়েছে কারণ সমাজ ধর্ম থেকে দূরে গেছে।”এই এক বাক্যেই হতাশ মানুষদের বিশ্বাস জয় করা সহজ।
আর সেই বিশ্বাসই এখন ধীরে ধীরে পরিণত হচ্ছে সংগঠিত শক্তিতে। (দৈনিক যুগান্তর, ১১ আগস্ট ২০২৫: “ধর্মভিত্তিক সংগঠনের কার্যক্রম বেড়েছে গ্রামীণ এলাকায়”)
বাংলাদেশের সামাজিক চরিত্র সবসময়ই উদার ও সহিষ্ণু ছিল। কিন্তু অর্থনৈতিক চাপ, কর্মসংস্থানের সংকট, ও রাজনীতির অনিশ্চয়তা সমাজের মানসিক ভারসাম্য নষ্ট করছে। ধর্মীয় প্রতীকগুলো এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি রাজনৈতিক অর্থ বহন করছে। বিপজ্জনক বিষয় হলো এই মানসিক পরিবর্তন ধীরে ধীরে তরুণ সমাজকে বিভাজিত করছে। একদল স্বপ্ন খুঁজে ফেরে উন্নয়নে, আরেক দল মুক্তির খোঁজে অতীতে ফিরে যেতে চায়।
দেশে এখন সবচেয়ে বড় অভাব দিকনির্দেশনার। যে আত্মবিশ্বাসে মানুষ এক সময় বলতঃ ‘বাংলাদেশ পারবে‘ সেই আত্মবিশ্বাস হারিয়ে যেতে বসেছে। নেতৃত্ব এখন খণ্ডিত, প্রশাসন অনিশ্চিত, আর রাজনৈতিক মাঠ চরম উৎকন্ঠায় ভরা। এই শূন্যতাই মৌলবাদি রাজনীতির সবচেয়ে বড় সুযোগ।
যে দেশে একসময় ডিজিটাল বাংলাদেশ ছিল গর্বের প্রতীক, যে জাতি মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠিয়েছিল, যে দেশে তরুণরা কোডিং শেখে ভবিষ্যৎ গড়তে ব্যাস্ত যে দেশে লোডশেডিং কি তা ভুলে গেছিলো মানুষ সেই দেশে এখন বিদ্যুৎ বিভ্রাটে হাসপাতালের অপারেশন বন্ধ” (কালের কণ্ঠ, ২২ জুন ২০২৫)। সেই দেশে উন্নয়নের সোনালি রথটা হঠাৎ করেই বালুচরে আটকে গেছে।
বাংলাদেশ কি আবার প্রগতিশীল রাজনীতির ধারায় ফিরবে? নাকি মৌলবাদি আবেগের ঢেউ সমাজকে আরও বিভক্ত করবে? এই প্রশ্নের উত্তর নির্ভর করছে নাগরিক সচেতনতার ওপর। তবে যতদিন মানুষ বিশ্বাস করবে যে উন্নয়নই মুক্তির পথ, ততদিন প্রগতিশীলতার বাতি নিভবে না।
বাংলাদেশ অনেক কিছু হারাতে পারে অর্থনীতি, বিদেশি বিনিয়োগ, রাজনৈতিক স্থিতি কিন্তু সবচেয়ে ভয়ংকর হবে বিশ্বাস হারানো। কারণ বিশ্বাসই ছিল এই জাতির সবচেয়ে বড় শক্তি। আজ যদি সেই বিশ্বাস ফিরিয়ে আনা যায়, তবে মৌলবাদি রাজনীতি টিকবে না। কারণ বাংলাদেশ নামের দেশটা গড়ে উঠেছিল এক মুক্তির আদর্শে যেখানে ধর্মের স্বাধীনতা থাকবে, কিন্তু ধর্ম রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করবে না।
এখন সময় আছে সেই বিশ্বাসে ফেরার তা না হলে হয়তো একদিন ইতিহাস বইয়ে লেখা থাকবে, “এক দেশে উন্নয়নের আলো ছিল, কিন্তু তারা তা সংরক্ষণ করতে পারেনি।”
ঢাকাঃ
২৮ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ছবিঃ অন্তর্জাল
১৩ ই অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭
মোগল সম্রাট বলেছেন:
যদি আমরা উন্নয়ন ফিরিয়ে আনতে চাই, তা হলে নীতিনির্ধারণ, স্বচ্ছতা ও সামাজিক সংহতিতে মনযোগ দিতে হবে । একজন নেতা গুরুত্বপূর্ণ তবে দেশের অগ্রগতিতো শুধু একজন ব্যক্তির ওপর নির্ভর করে না।
২| ১৩ ই অক্টোবর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:০৪
মেঠোপথ২৩ বলেছেন: বাংলাদেশের ভাগ্যে সামনে গুম , বিচারবহির্ভুত হত্যাকান্ড থাকবে না, মিডনাইট/ ডামি ইলেকশন থাকবে না, বিদেশে হাজার কোটি টাকা পাচার থাকবে না, সিন্ডিকেট ব্যবসা থাকবে না --------
এই এত এতকিছু না থাকাটা কোনভাবেই মাইনা নেয়া যায় না। সবাই মিলে আন্দোলনে নামা দরকার এই সব কিছু আবারো ফিরে আনার দাবিতে!!
১৩ ই অক্টোবর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪০
মোগল সম্রাট বলেছেন:
ঠিক বলেছেন। বাংলাদেশের ভাগ্যের ফল গত ১ বছরে যা দেখছি তাতে সামনে জান্নাতুল ফেরদৌসের ডামি ভার্ষন হয়ে যাবে দেশ ইনশাল্লাহ। দিনে দুপুরে পাথর দিয়ে সবার চোখের সামনে মানুষ মার্ডার করা হবে। আধ পাগল কাউকে খাওয়া দিয়ে বলা হবে দিস ইজ লাষ্ট সাফার, কেউ কিছু বলবে না। গত এক বছর কোন টাকা পাচার হয়নাই। শুধু উপদেষ্টাদের পিএসরা কতো কোটি টাকার জানি মালিক হইছে মাত্র কয়মাসে। এসলামিক নতুন নাপিত নাজেল আরো হবে। রাস্তা দিয়া ধরে নিয়ে বলা হবে -কাপড়া উতার, তেরা বাল সফেদ হো গ্যায়া আবি সাফ কার দেগা।
৩| ১৩ ই অক্টোবর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৫২
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: এখন কি করা লাগবে ? শেখ হাসিনাকে আনতে বিমান পাঠামু ? কয়ে ফেলেন ।
৪| ১৩ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ৮:২৬
কামাল১৮ বলেছেন: শেখ হাসিনার শাসন আমলে শিক্ষার মান কমেছে,মসজিদ মাদ্রাসা বেড়েছে মৌলবাদের বিকাশ হয়েছে।
১৩ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ৯:১৭
মোগল সম্রাট বলেছেন:
শিক্ষার মান কমেছে এটা ঠিকই বলেছেন। কিন্তু যে আমলে শিক্ষার মান অনেক উচুতে ছিলো সেই আমলের কয়জন মেধাবী দেশে ছিলো? সবইতো বিদেশে গিয়ে শ্রমিক মৌমাছির জীবন বেছে নিয়েছে। দেশে সেই ব্যাক বেঞ্চারেরাই রয়ে গেছে তারাই দেশের অগ্রগতিতে ভুমিকা রাখছে।
৫| ১৩ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ৯:৪০
মেঠোপথ২৩ বলেছেন: সামনে যারাই পাওয়ারে আসবে তাদের একটা রাস্তাই খোলা- সুশাষন প্রতিষ্ঠা করা। জনগনের চোখ খুলে গেছে। দুঃশাষনের পথে হাটলে হেলিকপ্টারে চড়ে পালাবার পথও দেবে না জনগন।
৬| ১৩ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১০:১৩
সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন:
লেখক বলেছেন -দেশে সেই ব্যাক বেঞ্চারেরাই রয়ে গেছে তারাই দেশের অগ্রগতিতে ভুমিকা রাখছে।
=======================
ঠিক বলেছেন?
©somewhere in net ltd.
১|
১৩ ই অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৫:৪৩
ভুয়া মফিজ বলেছেন: আসলে আপা দিল্লী চলে যাওয়ার পর থেকে সবকিছু থমকে গিয়েছে। চলেন, আমরা সবাই আপাকে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে একদফা আন্দোলন শুরু করি। আপা ছাড়া এই দেশ ও জাতি একেবারেই অচল!!!
জয় বাংলা!!!