![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মুক্ত চিন্তা করুন, অন্যকে মুক্ত চিন্তা করার স্বাধিনতা দিন এবং সকলকে ভাল বাসুন।
আমি যে গ্রামটিতে বড় হয়েছি সেটি বেশ বড় একটি গ্রাম। জনসংখ্যার দিক থেকেও গ্রামটি বেশ বড়। যে পাড়াতে বড় হয়েছি সেটি একদম গ্রামের ভেতরের দিকে এবং সেই পাড়াটি বনজঙ্গলে ঘেরা। সেই সময়টিতে রাস্তা ছিল কাচা এবং রাস্তার দুই পাশে বড় বড় গাছপালাগুলো মাথা উঁচু করা গ্রামের অস্তিত্ত্ব জানান দেয়। এর মধ্যে অপেক্ষাকৃত একটি বড় গাছ ছিল চারিদিকে ডালপালা সমানভাবে বিস্তার করে বিরাট বড় ব্যাঙের ছাতার মত আকৃতি ধারন করেছিল। বিকাল গড়ালেই রাস্তার যে জায়গাটিতে গাছটি দাঁড়িয়ে ছিল সেখানটিতে অন্ধকার নেমে আসত এবং মাগরীবের আজানের সময়ই একদম ঘুটঘুটে অন্ধকার নেমে আসত। সাধারণত একা কেউ মাগরীবের আযানের পরে ওই গাছের নিচ দিয়ে যাওয়া আসা করত না। বিশেষ করে যারা ভূতের ভয় করত তারাতো কোনভাবেই এই গাছের নিচ দিয়ে যাওয়া আসা করত না। কারণ গ্রামের এমন কোন ব্যক্তি ছিলনা যে জানতনা এই গাছে ভূত আছে। গ্রামের অনেক মানুষ আছে যারা বিভিন্ন সময়ে সেই ভূতের ভয়াবহ সাক্ষাৎ পেয়েছে। যারা ভূতের সাক্ষাৎ পায়নি তারা সাক্ষাৎ যারা পেয়েছে তাদের কাছে গল্প শুনেই ঐ ভূতের মুখোমুখি হওয়ার সুযোগ আসুক তা কোনদিন চায়নি।
গল্প শোনা যেত অনেকেই ঐ ভূত দেখার পর বাড়ীতে ফিরে পেটে ব্যাথার যন্ত্রণায় মারাও গেছে। আমি যে স্কুলে পড়তাম সেই স্কুলে যেতে হলে এই গাছের নিচ দিয়ে যেতে হত। ভূতের ব্যাপারে আমার বিশ্বাসটা আবার একটু অদ্ভূত ধরনের । ভুতকে আমি কখনও বিশ্বাস করিনি কিন্তু ভূতের ভয় কখনও আমার পিছু ছাড়েনি। যাই হোক একদিন স্কুলের মাঠ থেকে খেলা দেখে ফিরতে দেরী হয়ে গেলো। খেলার মাঠ থেকেই মাগরীবের আযান দিয়ে দিয়েছিল ফেরার সেময় যখন গাছটির সামনে এসে পৌঁছালাম ভূতের ভয়ে বুকের ধুকপুকানি শুরু হয়ে গেলো। ভূতের ভয় এড়াতে হলে রাস্তার ধারে পাশের বাড়ীর ভেতর দিয়ে যাওয়া যেতো। কিন্তু তখন যে বয়স ছিল ভূতের চেয়ে সুন্দরী মেয়েদের দেখে বেশী ভয় হতো। তাই সিদ্ধান্ত নিতে সময় লাগছিল বাড়ীর মধ্য দিয়ে যাব না গাছের নিচ দিয়ে যাবো। জলে কুমির ডাঙ্গায় বাঘ প্রবাদটি এই রকম মনে হচ্ছিল ডানে সুন্দরী মেয়ে বামে ভূত। যাই হোক শেষ পর্যন্ত ভূতের ভয়েই কম ভীত হলাম গাছের নিচ দিয়ে আসার চূড়ান্ত সিদ্ধান নিয়ে নিলাম। তাতে যা হয় হবে।
মাদুরে উপরে পাতা বালিশটি আমার মাথায় ঢালা পানিতে ভিজে গেছে। চারপাশে লোকজনের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। গলায় কাল সুতা দিয়ে মাদুলি বেধে দেওয়া হয়েছে। উঠে বসলাম। সবাই জিজ্ঞেস করল কি হয়েছে। কি বলব বুঝতে পারছিনা। তবে এইটুকু মনে আছে-গাছের নিচ দিয়ে যখন হাটতে শুরু করেছিলাম তখন অদ্ভূত ধরনের শব্দ শুনতে পেয়েছিলাম, গাছের পাতা ভর্তি ডালের দিকে চোখ পড়েছিল এবং সাদা মানবী আকৃতি কি যেন চোখে পড়েছিল। তার পর আর কিছু মনে নেই। (এই ঘটনার পর আমাকে দেরীতে বাড়ী ফেরার জন্য কখনও বকা শুনতে হয়নি)।
গাছটির মাহাত্ম অনেক আগে থেকেই সবার জানা ছিল। রোগমুক্তি কামনা করে অনেকেই জিয়াপত দিত এবং তাতে নাকি অনেকেরই রোগমুক্তি হতো। তাই যদি হতো সেই জিয়াপত খেয়ে রোগমুক্তির ব্যাপার আামিও অনেক ভূমিকা রেখেছি। কিছুদিনের মধ্যেই মানুষের সহজ এই রোগমুক্তির বিনে পয়সার ওঝাকে কেটে ফেলা হবে। গাছের পাশের বাড়ীর মালিক গাছটি কেটে বিক্রি করে দিবে। যে ব্যক্তি গাছটি বিক্রিয় করবে তার নাম গণি বিশ্বাস। কিন্তু গণি বিশ্বাস গাছটি কাটার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে প্রচন্ড ভয় পাচ্ছে। এর আগে যারা গাছটি কাটতে চেয়েছিল তাদের প্রত্যেকেই কোন না কোন ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তাই গাছটি কাটার সিদ্ধান্ত নেওয়া খুবই কঠিন ব্যাপার। গাছের যা বাজার মূল্য হবে তা দিয়ে নাকি নিশ্চিত ভাবেই মাঠের 10 কাঠা কৃষি জমি ক্রয় যাবে। একদিকে টাকার লোভ অন্যদিকে ভূতের ভয়। চিন্তা করছে গাছ বিক্রির কিছু টাকা মসজিদে দিয়ে দিবে যাতে ভূতে কোন প্রকার ক্ষতি করতে না পারে। সিদ্ধান্ত নিল আগামী শুক্রবারে গাছটি বিক্রি করে দেবে। একদিন ওয়াজে শুনেছে শুক্রবার পবিত্র দিন জুমআর দিন এই দিন শয়তানে সহজে মানুষকে ক্ষতি করতে পারেনা। সেই হিসাবে আসছে শুক্রবার গাছ কাটার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিল। হায়! একি হলো! গণি বিশ্বাসের বড় ছেলের বৃহস্পতিবার রাতে প্রচন্ড জ্বর হলো। গণি বিশ্বাসের স্ত্রী প্রচন্ড ক্ষেপে স্বামীকে বকা দিল এবং সন্তানের জ্বরের জন্য সম্পূর্ণ রুপে স্বামীকে দায়ী করল, সে যেন কালকে গাছ না কাটে সে ব্যাপারেও সতর্ক করে দিল। গণি বিশ্বাসও সিদ্ধান্ত নিল গাছটি কাটবেনা।
শুক্রবার সকাল, গ্রামের করিম শাহ ওঝাকে ডেকে আনা হয়েছে। করিম শাহ গণি বিশ্বাসের ছেলের গলায় মাদুলী বেঁধে দিল কিন্তু জ্বরের কোন উন্নতি হলো না। সবার পরামর্শে গণি বিশ্বাস ছেলেকে জেলা শহরের সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলো। ডাক্তারে ভাল করে দেখল প্রয়োজনীয় ঔষুধ দিল কিন্তু জ্বরের তেমন কোন উন্নতি হলো না। তিন দিন হাসপাতালে ভর্তি থাকল অবশেষে জ্বর কমতে শুরু করলো। গণি বিশ্বাস ছেলেকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়ী ফিরল এবং চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিল গাছটি আর কাটবেনা। এভাবে কয়েকদিন যাবার পর আবার গণি বিশ্বাসের ছেলের প্রচন্ড জ্বর আসল যথারীতি শহরে নিয়ে গেলো এবং বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষাসহ জ্বর ভাল করতে বেশ কিছু টাকা খরচ হয়ে গেলো তাতে বাড়ীতে থাকা ছাগল গরু যা ছিল সব বিক্রি করে দিতে হলো। শেষ পর্য্ন্ত সামান্য পরিমাণ জমিও বিক্রি করতে হলো। ছেলে চিকিৎসা করতে একদিকে যেমন প্রচুর সম্পদ খোয়াতে হলো অন্য দিকে চাষ-আবাদ করতে না পারায় প্রচন্ড অভাবে পড়ে গেলো। ভূতের উপর গণি বিশ্বাসের প্রচন্ড রাগ হলো।
যারা গাছের ব্যবসায়ী গণি বিশ্বাস তাদেরকে নিয়ে গাছটি কাটার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। গণি বিশ্বাসের স্ত্রী, সন্তান সকলে বাধা দিচ্ছে। গণি বিশ্বাসের একই কথা ভুতের গোষ্টিসহ বিনাশ করে দেবো। কারওর কোন কথা শুনলনা। গাছটি কাটা শুরু করল। গণি বিশ্বাসের ছেলেটি আবার অসুস্থ হয়ে গেলো। গণি বিশ্বাসের স্ত্রী খুবই কান্নাকাটি করছে।
গাছটি বিক্রি করে যে টাকা হলো গণি বিশ্বাসের ছেলের পেছনে যে টাকা খরচ হয়েছিল তা পুরোপুরি উঠে আসল। গণি বিশ্বাসের ছেলেও এখন পুরোপুরি সুস্থ। ভুতের আছর থেকে রক্ষা পেয়ে এবং সুস্থ হয়ে সে এখন খেলে বেড়াচ্ছে। গ্রামের সকলেই এখন ভূতের আছরমুক্ত। এখন আর কউ ভয় পাবেনা। গ্রামের মধ্যে এ বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেলো। যারা জিয়াপত দিয়ে সুস্থ্য হত তারা ক্ষোভ জানাল এবং যারা ভুত বিশ্বাস করত না কিন্তু ভূতের ভয় করত তারা খুব খুশি হল।
উপসংহার : আমাদের গ্রামের সেই ভূত আজ জামায়াতের ঘাড়ে আছর করে আছে বলে আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে কিন্তু আওয়ামীলীগ গণি বিশ্বাসের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারছে না।
এই ঘটনাটি সত্য কিন্তু চরিত্রগুলো কাল্পনিক।
আলমগীর কবির
17 এপ্রিল 2013
রাত 1 টা 37 মিনিট
দর্শনা।
২| ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ৯:৫৮
আরিফ নাওগাঁ বলেছেন:
:
©somewhere in net ltd.
১|
১৭ ই এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ৮:৪৬
এস দেওয়ান বলেছেন: