![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জরিপের রঙ্গ-রস
কথায় আছে, মানুষ বাঁচে সুখে-দুঃখে। কিন্তু আধুনিক গণতন্ত্রে মানুষ আরেকটা জিনিস নিয়েও বেঁচে থাকে—সেটা হলো জরিপ!
চলুন, কিছু জরিপের ফলাফল দেখে আসা যাক।
প্রাচীন মিশরীয় জরিপ
অনেক ইতিহাসবিদদের মতে, পৃথিবীর প্রথম জরিপ হয়েছিল মিশরে। প্রশ্নটি ছিল বেশ গুরুতর—"ফেরাউনের জন্য পিরামিড বানানো বেশি কঠিন, নাকি নিজের স্ত্রীকে খুশি রাখা বেশি কঠিন?"
শোনা যায়, পিরামিড বানাতে থাকা শ্রমিকদের মধ্যে বেশিরভাগই গোপনে উত্তর দিয়েছিলেন, "পিরামিড বানানোই সহজ” তবে শ্রমিকদের স্ত্রীগণ জানতো তাদের স্বামী পিরামিড বানানোর জন্য বেশি কষ্ট করে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের জরিপ
একবার এক তত্ত্বাবধায়ক সরকার বেশ চিন্তায় পড়ে গেল। যাদের সরিয়ে ক্ষমতায় আসা হয়েছে, তারা আবার ফিরে এসে কোনো ঝামেলা করবে কি না, তাই সরকারে জনপ্রিয়তা বুঝতে একটি জরিপ চালানো হলো।
[
জরিপের প্রশ্ন ছিল: "জনগণ কি আমাকে ভালোবাসে, নাকি পূর্বের সরকারকে জনগণ যেভাবে ভয় পেতো আমাকে সে ভাবে ভয় পায়?"
ফলাফল এলো বেশ চমকপ্রদ:
•১২% মানুষ বললো, তারা সরকারকে "ভালোবাসে"।
• ৭০% মানুষ কোনো উত্তরই দেয়নি।
• বাকি ১৮% বলেছে, "এই প্রশ্নটা না করলেই ভালো হতো।"
পরে এক গোপন অনুসন্ধানে জানা গেল, যারা "ভালোবাসে" বলেছিল, তাদের ১০% আসলে বর্তমান সময়ে তারা বিভিন্ন ভাবে সুবিধা পাওয়ায় ভালোবাসি বলেছিল। বাকিদের মধ্যে ৫০% কোনো কারণ ছাড়াই উত্তর দিয়েছিলো, আর ৪০% রাজার নেক নজর পাওয়ার জন্য ভালোবাসার কথা বলেছিলো।
আরও পরে জানা গেলো যারা চুপ ছিল, তাদের প্রায় সবাই আসলে বলতে চেয়েছিল, "আগের দিনগুলোই ভালো সেটা বলবে কি না, তা মুখ ফুটে বলার সাহস করেনি।
" আর যে ১৮% প্রশ্নটি এড়িয়ে গিয়েছিল, তারা আসলে বর্তমান নিয়ে হতাশ হলেও ভবিষ্যত নিয়ে তাদের আশা ছিলো এই যে, পূর্বে হেরে যাওয়া রাজার চেয়ারে তারা কিছুদিন পরে বসতে পারবে।
জেন-জি প্রজন্মের উপর জরিপ
আজকের তরুণ প্রজন্মের ওপর চালানো একটি জরিপের কিছু প্রশ্ন ও উত্তর ছিল এরকম:
• প্রশ্ন: আপনি ফোন ছাড়া কতদিন থাকতে পারবেন?
উত্তর: ফোন ছাড়া তো কয়েক দিন থাকাই যায়, কিন্তু চার্জার আর রিল্স ছাড়া এক ঘণ্টাও থাকা সম্ভব না।
•প্র শ্ন: আপনি কি কোনো সফটওয়্যার ইনস্টল করার আগে সব শর্ত (Terms & Conditions) পড়ে ‘Agree’ বাটনে ক্লিক করেন?
oউত্তর: না, আমি শুধু ‘Agree’ শব্দটা দেখি। বাকি লেখাগুলো পড়ার ব্যাপারে আমি পুরোপুরি ‘Disagree’।
• প্রশ্ন: আপনার প্রিয় খাবার কী?
oউত্তর: এটা নির্ভর করে ফেসবুক ট্রেন্ড-এর উপর; তবে রিলস দেখে এমন অবস্থা হয়েছে যা খেতে চাই বা যাই করতে চাইনা কেনো তা ২ মিনিটের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়; অত:পর খাওয়া শেষ করে আবার রিলসে ফিরে যায়।
এইবার জরিপের পক্ষে একটি জরিপ:
এক দেশে একবার জরিপ করে জানতে চাওয়া হলো—"আপনি কি জরিপে অংশ নিতে ভালোবাসেন?"
অর্ধেক মানুষ উত্তর দিলো "হ্যাঁ" আর বাকি অর্ধেক বললো "না" এবং কখনও কোন জরিপে অংশগ্রহণ করতে চাইনা। কিন্তু যারা "না" বলেছিল, তারা বুঝতে পারেনি যে, তারা সবেমাত্র একটি জরিপে অংশগ্রহণ করলো।
এবং পতিতালয়ের জরিপ...
একবার এক পতিতালয়ে জরিপ চালানো হলো, এখানকার খদ্দেরদের আসার পেছনের কারণ জানতে চাওয়া হলো।
• প্রশ্ন: আপনি এখানে কেন আসেন?
o ২০% উত্তর দিলো: "স্ত্রীর কাছ থেকে পালিয়ে একটু বিশ্রাম নিতে আসি"
o ৩০% উত্তর দিলো: "আমি একটু ওয়াইন পান করতে পছন্দ করি তাই এখানে মাঝে মাঝে আসি"
o অবশিষ্ট ৫০% উত্তর দিলো: " ভাই আমি একজন রাজনীতিবিদ, জনদরদী মানুষ, তাই এখানে দেখতে আসি এদের কোন সমস্যা হচ্ছে কি না"। এই ৫০% কে আর একটি প্রশ্ন করা হলো , “ভাই আপনি এদের খোঁজ নিতে আবার কবে এখানে আসবেন?” প্রশ্ন শুনে রাজনীতিবিদ বিরক্ত হয়ে বল্লেন "ভাই, এত প্রশ্ন করেন কেন?"
গবেষকরা শেষোক্ত ৫০% এর উপরোক্ত উত্তর পেয়ে খুশি হতে পারলেন না, তাই কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে কয়েক ঘন্টা চুপচাপ বসে থাকলেন।
অত:পর জরিপকারীগণ কিছুক্ষণ পরে খেয়াল করলেন, চুপচাপ থাকলেই বরং জনদরদীদের ব্যাপারে বেশি তথ্য পাওয়া যায়!
সর্বশেষ নির্বাচনী জরিপ :
বাংলাদেশের মানুষ নির্বাচনের আগে একেক জরিপে একেক রকম ফলাফল দেখে বিভ্রান্ত হচ্ছিল। এই দেখে কয়েকজন গবেষক প্রকৃত বিষয় বোঝার জন্য একটি জরিপ চালানোর সিদ্ধান্ত নিলেন।
এই জরিপের প্রশ্নপত্র এমনভাবে সাজানো হয়েছিল যে—
• প্রথম প্রশ্নের উত্তর যদি “না” হয়, তবে দ্বিতীয় প্রশ্ন করার দরকার নেই।
• দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর যদি “না” হয়, তবে তৃতীয় প্রশ্ন করার প্রয়োজন নেই।
এভাবেই মোট ১০টি প্রশ্নপত্র নিয়ে জরিপ শুরু হলো।
কিন্তু জরিপ শেষে দেখা গেল, ১০০% মানুষের ক্ষেত্রেই দ্বিতীয় বা পরবর্তী প্রশ্ন করার প্রয়োজন হয়নি।
কারণ প্রথম প্রশ্নটিই ছিল—
“আপনি কি ইতিপূর্বে আগামী নির্বাচনের ফলাফল বিষয়ক কোনো জরিপে অংশগ্রহণ করেছেন?”
©somewhere in net ltd.
১|
১৮ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ৯:১১
বিজন রয় বলেছেন: বাহ! দারুন বিশ্লেষণ।
আপনার অনেক মেধাবী।