নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সূর্য থেকে অসম্ভব শক্তিশালী আলোকরশ্মি চাঁদের উপর পড়ে। সে চাঁদ কিছুদিন জোছনা বিলায় আমাদের মাঝে।অমাবস্যায় কেউ চাঁদকে ভুলে যায় না।অপেক্ষা করে জোছনা ফিরে আসার ।সূর্য না হই ,মাঝে মধ্যে জোছনা হতে চাই।অমাবস্যায় হাহাকার হতে চাই মানব মনে।

আলমগীর জনি

গল্প বলি

আলমগীর জনি › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটগল্পঃ ঈদ গিফট

২৯ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ৮:০৯



একদিন মা কে বললাম, মা, আমার স্কুল ড্রেসের প্যান্টটা কত ছোট হয়ে গেছে।কি অবস্থা দেখো! বাবাকে বলো,আমাকে একটা প্যান্ট কিনে দিতে।

মা কি জানি ভেবে আমার কাছে এসে চুলে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন,

'রুমেল, তুই তো অনেক লম্বা হয়ে গেলিরে বাবা।কবে এত বড় হইলি তুই ! মাশাআল্লাহ , মাশাআল্লাহ।আল্লাহ আমার পোলাডারে ভালো রাখুক।আল্লাহ আমার পোলাডারে অনেক বড় করুক। ফুঁ দিয়ে দিলাম যা।'

আমি মাকে কি বলব বুঝতে পারি নি সেদিন।মা খুব ভালো করেই জানেন এই প্যান্ট এভাবে পরা যায় না।টাকনু পার হয়েছে অনেক আগেই। সম্ভবত আরো কিছুদিন পরলে হাঁটু অতিক্রম করবে এমন অবস্থা!

মায়ের সে শক্তি নাই যে বাবাকে বলবেন আমাকে একটা প্যান্ট কিনে দিতে।সংসার চালান বাবা।বাবার ছোট্ট মুদি দোকানে যা ইনকাম হয় তা দিয়ে আমাদের পেট ভরলেও মন ভরে না কখনোই।বাবাকে কি বলব? গত দুইবছরে বাবা নিজেই ওই একই ফতুয়া পরে দোকানে বসেন।একটা ফতুয়া আর একটা লুংগি।প্রতি ঈদে আত্মীয়দের কেউ না কেউ বাবাকে একটা লুংগি দেয়।সেই সূত্রে বাবার লুংগিটাই শুধু পরিবর্তন হয়।

আর ঐ ফতুয়ার কথা জিজ্ঞেস করলে বাবা বলেন,

'এইটা আমারে অনেক মানায় রে। ময়লা জমে ফতুয়াটা কেমন জানি কালচে হয়ে গেছে।'

আর মা? সেই কবে নতুন শাড়ি কিনেছেন বলতে পারব না।মায়ের শাড়িগুলো ছিঁড়ে গেলে মা বেশ যত্ন করে সেলাই করে পরেন।মাস দুয়েক আগে পাশের বাড়ির রিমি আপুর বিয়ে হয়।উনার স্বামী আত্মীয় স্বজনদের শাড়ি দিয়েছি শুনেছি। মাকেও একটা শাড়ী দেন। আমরা বিয়েতে যাই নি।কেন যাইনি সেটা আর বলতে হবে? আমরা না যাওয়ার পরও রিমি আপু মায়ের জন্য ঐ শাড়িটা পাঠিয়েছিলেন।

রিমি আপু আমাদের পাশের বাড়িতে থাকেন।উনার কোন ভাই-বোন নেই। উনি সেই ছোটবেলা থেকেই আমাকে অনেক আদর করেন। রিমি আপু বিয়ের আগে আমাকে পড়াতেন।বলতে গেলে ফ্রিতেই।

রিমি আপুর বিয়ের কিছুদিন পর উনার সাথে দেখা হয় আমার সাথে।

-কিরে।কেমন আছিস?
-ভালো।তুমি?
-হ্যাঁ ভালোই আছি।তোর পড়ালেখা কেমন চলছে?
-ভালো।একা একা পড়তে হচ্ছে আর কি।
-তুই আমার শ্বশুরবাড়ি এসে পড়তে পারবি?
-তুমি বললে পারব না আবার!
-তাহলে কাল থেকে আসবি।

আমি 'আচ্ছা' বলে উনাকে বিদায় জানালাম।

এরপর, আমি রিমি আপুর শ্বশুর বাড়িতেই পড়তে শুরু করলাম। আমাদের গ্রামের পাশের গ্রামেই রিমি আপুর শ্বশুর বাড়ি। রিমি আপুর স্বামী অত্যন্ত ভালো মানুষ।বলতে গেলে উনাদের পুরো পরিবারই অসাধারণ। আমি যখনই পড়তে যেতাম রিমি আপুর শ্বাশুড়ি আমাকে কিছু না কিছু খেতে দিতেন। আমার খুব ভালো লাগতো। খাবারের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্ভবত আর নাই। যার পেটে খাবার নাই তার কাছে বাকি সব অর্থহীন- "ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়"।

একদিন রিমি আপু বললেন,তুই একটু সকাল সকাল আসতে পারবি?
আমি বললাম,পারব।
আপু বললেন,একেবারে রেডি হয়ে চলে আসবি। পড়া শেষ করে স্কুলে চলে যাবি।
আমি বললাম, আচ্ছা।

পরদিন আমি যথারীতি স্কুল ড্রেস পড়ে রিমি আপুর কাছে পড়তে গেলাম।আপুর কাছে পড়া শেষ করে এরপর চলে যাব স্কুলে।পড়ানো শুরু করার পর রিমি আপু বারবার আমার দিকে তাকাচ্ছিলেন। আমি বুঝলাম আমার সেই ছোট হওয়া প্যান্টের দিকে উনার নজর। আমাকে কিছু বলতে চেয়েও উনি বললেন না। আমি কেন জানি বেশ লজ্জা পেলাম। এরপর টানা একমাস আর রিমি আপুর কাছে আমি পড়তে যাই নি। আপু উনার বাবার বাড়ি এসেছে শুনলে আমি আমার খালার বাড়ি চলে যেতাম। আম্মা বলতো, রিমি তোকে খুঁজতে আসছিল। আমি ও আচ্ছা বলে পাশ কাটিয়ে যেতাম।

এরপর ঈদ চলে এল। ঈদের ঠিক আগেরদিন দেখলাম রিমি আপু আমাদের বাড়িতে হাজির।ব্যাপারটা আগে আঁচ করতে পারি নি।উনার কথা শুনেই আমি ঘর থেকে পালানোর চেষ্টা করলাম।

আমাকে ডেকে বললেন,'এই এদিকে আয়। কই যাচ্ছিস?'

আমি কিছু বলতে যাওয়ার আগে আবার বললেন,

'এইটা ব্যাগটা রাখ। তোর ঈদের গিফট। আর ঈদের পর স্কুল খুললে অবশ্যই পড়তে আসবি। ফাঁকিবাজি করবি না একদম।

আম্মাকে ডেকে বললেন,

'চাচী, রুমেল যাতে ঠিকমতো পড়ালেখা করে।যাই চাচী, আমার আবার শ্বশুর বাড়ি যাওয়া লাগবে। '

মার সাথে কিছু কুশল বিনিময় আর কিছুক্ষণ শ্বশুর বাড়ির গল্প করলেন।এরপর রিমি আপু চলে গেলেন।

মা বললেন, কি রে এইটা ।
আমি বললাম, ঈদ গিফট।
মা বললেন, দেখি। আমি বললাম, না, কালকে সকালে। ঈদের নামাজ পড়তে যাব তখন দেখবা।এখন দেখলে পুরান হয়ে যাবে!

ঈদের দিন সকাল বেলা, শপিং ব্যাগ খুলে দেখলাম একটা নেভি ব্লু প্যান্ট আর একটা সাদা শার্ট।একদম নতুন, চকচকা।আমার স্কুল ড্রেস। কাপড়ের চকচকা ভাবটা দেখে মার চোখের কোণাটা চকচক করা শুরু করলো।মা কেঁদে দিলেন। আমিও কেঁদে দিলাম।বাবা ব্যাপারটা দেখেন নাই। বাবাও কি কেঁদে দিতেন?

আমার রিমি আপুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে মন চাইছিল। হঠাত দেখি মা আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিলেন। রিমি আপু ব্যাপারটা দেখলে ভালো হতো। অবশ্য সমস্যা নাই। আল্লাহ তা'আলা তো দেখেন সবকিছুই।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ৯:২১

মা.হাসান বলেছেন: মানবিকএই গল্পটিতে অনেক ভালো লাগা।
একটু চেষ্টা করলে অন্তত একজন লোকের মুখেও হাসি ফুটিয়ে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নেয়া যায়।

২৯ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ১১:০০

আলমগীর জনি বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ।

সব আনন্দই কিন্তু ভাগ করা যায় ।

২| ০৫ ই মে, ২০২১ রাত ১২:৫৯

রাজীব নুর বলেছেন: চমৎকার গল্প।

০৯ ই মে, ২০২১ বিকাল ৫:০৫

আলমগীর জনি বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.