নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সূর্য থেকে অসম্ভব শক্তিশালী আলোকরশ্মি চাঁদের উপর পড়ে। সে চাঁদ কিছুদিন জোছনা বিলায় আমাদের মাঝে।অমাবস্যায় কেউ চাঁদকে ভুলে যায় না।অপেক্ষা করে জোছনা ফিরে আসার ।সূর্য না হই ,মাঝে মধ্যে জোছনা হতে চাই।অমাবস্যায় হাহাকার হতে চাই মানব মনে।

আলমগীর জনি

গল্প বলি

আলমগীর জনি › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটগল্পঃ এ জার্নি বাই রিকশা

০৬ ই জুলাই, ২০২১ দুপুর ২:১৬


বাবা বললেন, রিকশার হুডটা তুলে দে তো ।

আমি হুড তুলব নাকি তুলবো না সেটা ভেবে একটু ইতস্তত করছিলাম।

প্রেমিকাকে পাশে বসিয়ে রিকশায় হুড তোলার প্রচলন আমাদের শহরে আছে কিন্তু বাবাকে পাশে বসিয়ে রিকশার হুড তোলার ব্যাপারটায় শহরটা কেমন জানি এক ধরণের আপত্তি জানায় ।

বাবা আবার বললেন, কিরে হুড তুলছিস না কেন ?
আমি রিকশাওয়ালা মামাকে বললাম , মামা হুডটা তুলে দাও তো।

তিন দিন ধরে ঢাকা শহরের রাস্তায় ঘুরাঘুরি করছি বাবাকে নিয়ে। কখনো ধানমণ্ডির রাস্তা তো কখন মিরপুরের রাস্তা। কিংবা কখনো যাত্রাবাড়ীর । আরো সহজ করে বললে এই রাস্তাগুলোর জ্যাম পেরিয়ে যেতে হয় এক একটা হাসপাতালে। কোথাও চোখের ডাক্তার তো কোথাও হার্টের ডাক্তার।

বাবা অসুস্থ অনেক দিন ধরেই। কখনো বলেন নি একবার ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যা আমাকে। কেন বলেন নি সেটা খুব স্বাভাবিক। কোন রকম দিন পার করা মানুষেরা চাইলেই ডাক্তার দেখাতে পারেন না। উনারা নিজেরাই এক একজন ডাক্তার। জ্বর কিংবা যে কোন ব্যাথায় প্যারাসিটামল আর একটু গ্যাস্ট্রিকের ব্যাথা হলে গ্যাস্ট্রিকের ট্যাবলেট তো আছেই। অবস্থাটা এমন দাঁড়িয়েছে কারো প্রচন্ড হার্টের ব্যাথা আর সেই লোক অনবরত গ্যাস্ট্রিকের বড়িই খেয়ে যাচ্ছেন। যেন, সব ব্যাথার ঐ একটাই সমাধান।

বাবার শরীরটা বেশি খারাপ ছিল। এই কয়েকদিনে বেশ কয়েকজন ডাক্তার দেখানো হয়েছে।ডাক্তারগণ অনেকগুলো টেস্ট দিয়েছেন যার জন্য বেশ কয়েক হাসপাতালে যেতে হয়েছে। বাবার শরীরটা এখন বেশ ভালো তবে প্রচন্ড দুর্বল। এতই দুর্বল যে বাবা আমাকে এতদিন ঝাড়ির উপর রাখতেন এখন কোন কিছু করার আগেই একবার আমার দিকে তাকান আরেকবার আকাশের দিকে।একটা সিগারেট খেতে চাইলে আমাকে যে কতবার অনুনয় করেন!

বাবা একদিন বলেছিলেন, ছেলেরা বড় হলে বাবা হয়ে যায় আর বাবারা ছেলে হয়ে যায়। আমি কি তবে বড় হয়ে গিয়েছি? আমার তো ঐ ছেলে হয়ে থাকাতেই বেশ আনন্দ ছিল।দিন দিন আমার মাথার উপর আকাশটাকে মেঘে মেঘে ঢেকে যেতে দেখছি। বাবা কি তবে একবার আকাশের দিকে তাকিয়ে ধীরে ধীরে নিজের অস্ত যাওয়া দেখছিলেন?

আমার বাবার প্রিয় যানবাহন রিকশা। বাবা বেশ রোমান্টিক মানুষ। এই কথা আম্মার কাছ থেকে শুনেছি যে বাবা সবসময়ই রিকশা পছন্দ করেন। রিকশা বসে ঢাকা শহরকে যত সুন্দর দেখা যায় আর কোন যানবাহনে বসে সেটা দেখা যায় না।

হুমায়ূন আহমেদ বলে গেছেন, "রিকশায় চড়ায় একটা রাজকীয় ব্যাপার আছে। মাথা সামান্য উচু করলেই আকাশ দেখতে দেখতে যাওয়া যায়।"

বাবাও কি ঐ রাজকীয়তা উপভোগ করতে পছন্দ করেন?

এবার ঢাকায় আসার পর তাই আমি চেয়েছি বাবাকে সবসময় রিকশায় করে নিয়ে যেতে। সিএনজিতে যেই ভাড়া তার চেয়ে কিছুটা কমে রিকশায় করে যায়। আর পাবলিক বাসে উঠার মত অবস্থা বাবার ছিল না। প্রথমে একদিন মিরপুর রোডে একটা পাবলিক বাসে করে গিয়েছিলাম। সিটিং সার্ভিস বাস অথচ আমরা কোন সিট পাই নি। বাবা বেশ কষ্ট করে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এরপর থেকে আমি আর বাবাকে নিয়ে আর পাবলিক বাসে উঠি নি।

আজকে ডাক্তার দেখিয়ে এখন রিকশায় করে ধানমণ্ডি থেকে মিরপুরে যাব আমি আর বাবা। ল্যাবএইড হাসপাতাল থেকে যখন আমরা বের হলাম তখন প্রায় রাত ১১ টা। এই সময়টায় ঢাকা শহরটাকে অদ্ভুত মায়াবী লাগে।আর এই সময়টায় ভি আই পি রোডগুলোতেও রিকশায় যাতায়াত করা যায়। সাধারণভাবে রিকশা এই রোড দিয়ে না গেলেও এই সময়টায় যায়। আমি একজন রিকশাওয়ালা মামাকে ১৫০ টাকায় ঠিক করলাম। ল্যাবএইড থেকে মিরপুর সাড়ে এগার পর্যন্ত। সিএনজিতে করে গেলে এই সময়ে হয়তো ২০০ টাকা লাগতো কিন্তু আমি বাবাকে নিয়ে রিকশায় যাব ঠিক করলাম।

বাবা রিকশায় বসে নানান গল্প জুড়ে দিলেন। কখনো ছোটফুফুর বিয়ের গল্প কখনো বা বড়ফুফুর বিয়ে ভেংগে যাওয়ার গল্প।ছোটফুফুর কেন জানি বিয়ে হচ্ছিল না। দাদা এই নিয়ে বেশ খারাপ ব্যবহার করতেন ফুফুর সাথে।সব দোষ নাকি ছোটফুফুর। একবার নাকি বাবা এই নিয়ে দাদার সাথে বেশ ভয়ংকর ভাবে রেগে গিয়েছিলেন। এরপর বাবা অনেকদিন দাদার সাথে কোন কথা বলেন নি। শেষমেশ বাবা উনার বন্ধু রফিক আংকেলের সাথে ছোটফুফুর বিয়ে দেন।বড়ফুফুর গল্পটা বলতে গিয়ে বাবা বেশ ক'বার চোখ মুছছিলেন। বড়ফুফুর গল্পটা বাবা শেষ করেন নি তাই অর্ধসমাপ্ত গল্পটা এখন বলছি না।

গল্প করতে করতে বাবা এক পর্যায়ে ঘুমিয়ে গেছেন। একটা সময় আমার দিকে হেলে পড়েন।বাবা এখন আমার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছেন। ছেলের কাঁধে বাবা ঘুমাচ্ছেন এই দৃশ্য হয়তো হ্যালির ধুমকেতুর মত ৭৫ বছর কিংবা তার চেয়েও বেশি বছর পর একবার দেখা যায়।

মিরপুর চলে আসার পর রিকশাওয়ালা মামা রিকশা থামাতে গেলে আমি ইশারা দিয়ে বলি সামনে যেতে। রিকশাওয়ালা মামা সামনের দিকেই যাচ্ছেন।কোথায় যাচ্ছেন আমরা কেউই জানি না। বাবা আমার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছেন।

রিকশা চলছে। চলুক!
বাবা ঘুমাচ্ছেন। ঘুমাক!

মন্তব্য ২৮ টি রেটিং +৮/-০

মন্তব্য (২৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই জুলাই, ২০২১ দুপুর ২:২৫

শায়মা বলেছেন: ছোটবেলাতে বাবার কাঁধে এমনি করেই ছেলেরা ঘুমায়।

০৬ ই জুলাই, ২০২১ দুপুর ২:৪১

আলমগীর জনি বলেছেন: আর বড় হয়ে বাবারা ছেলেদের কাঁধে এভাবে ঘুমায় যদি বাবা সেই সুযোগ দেন।

২| ০৬ ই জুলাই, ২০২১ দুপুর ২:৩৮

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: খুবই ভালো লাগলো। আল্লাহ আপনার বাবাকে নেক হায়াত দান করুন

০৬ ই জুলাই, ২০২১ দুপুর ২:৪১

আলমগীর জনি বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

৩| ০৬ ই জুলাই, ২০২১ দুপুর ২:৫৫

মাসউদুর রহমান রাজন বলেছেন: আহ। একদম নস্টালজিক হয়ে গেলামরে ভাই।

০৬ ই জুলাই, ২০২১ বিকাল ৩:১১

আলমগীর জনি বলেছেন: বাবার সাথে রিকশায় চড়া ব্যাপারটাই নস্টালজিক করে দেয়ার মত ।

৪| ০৬ ই জুলাই, ২০২১ দুপুর ২:৫৮

শায়মা বলেছেন: মন খারাপ করা ইমোশোনাল পোস্ট ভাইয়া.... :(

০৬ ই জুলাই, ২০২১ বিকাল ৩:১১

আলমগীর জনি বলেছেন: মন ভালো হয়ে যাওয়ার কথা !

৫| ০৬ ই জুলাই, ২০২১ বিকাল ৩:০৪

সন্ধ্যা রাতের ঝিঁঝিঁ বলেছেন: হৃদয়স্পর্শী লেখা। একটা এইজে এসে সব বাবা মা বোধহয় এমনই হয়ে যায়।

০৬ ই জুলাই, ২০২১ বিকাল ৩:১২

আলমগীর জনি বলেছেন: হুম

৬| ০৬ ই জুলাই, ২০২১ বিকাল ৩:০৫

অপু তানভীর বলেছেন: আহ ! দারুন অনুভূতিময় গল্প !

০৬ ই জুলাই, ২০২১ বিকাল ৩:১২

আলমগীর জনি বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে

৭| ০৬ ই জুলাই, ২০২১ বিকাল ৫:৩১

শেরজা তপন বলেছেন: বাপ -বেটার চিরায়ত রসায়নের গল্প ভিন্ন আঙ্গিকে প্রকাশ- চমৎকার

০৬ ই জুলাই, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:২০

আলমগীর জনি বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

৮| ০৬ ই জুলাই, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:০৭

ফুয়াদের বাপ বলেছেন: দারুন লিখেছেন বাপ-ছেলের ভালোবাসা। দোয়া করি আপনার বাবা সুস্থ্য থাকুক সবসময়।

০৬ ই জুলাই, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:২০

আলমগীর জনি বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।

৯| ০৬ ই জুলাই, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৪৫

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: সুন্দর।

০৬ ই জুলাই, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৫২

আলমগীর জনি বলেছেন: ধন্যবাদ

১০| ০৬ ই জুলাই, ২০২১ রাত ৯:১৭

কুশন বলেছেন: আজ ব্লগে অনেক গুলো লেখা পড়লাম। আপনার লেখাটার বেস্ট মনে হলো।

০৬ ই জুলাই, ২০২১ রাত ৯:২৮

আলমগীর জনি বলেছেন: অনেক বড় কমপ্লিমেন্ট ভাই। অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

১১| ০৬ ই জুলাই, ২০২১ রাত ৯:৫৬

আহমেদ জী এস বলেছেন: আলমগীর জনি,





অপূর্ব লেখা। কিছুই না আবার অনেক কিছুই বলে গেছেন । ছেলেদের বাবা হয়ে ওঠা আর বাবাদের ছেলে হয়ে যাওয়া দারুন মুন্সিয়ানায় বলে গেছেন। অনেক পাঠককেই হয়তো নিয়ে গেছেন নষ্টালজিয়ায়।

লাইকড..............

০৬ ই জুলাই, ২০২১ রাত ১১:১৭

আলমগীর জনি বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে

১২| ০৭ ই জুলাই, ২০২১ রাত ১২:৩৫

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনি বলছেন এটা ছোট গল্প
কিন্তু পাঠকের মন্তব্য্ আর আপনার প্রতিমন্তব্য পড়ে
মনে হলো আপনি পাঠকের কোমল অনুভূতিকে
নিজের ঝোলায় তুলে নিলেন!!
ভেবেচিলাম বাবার রিক্সার হুড তোলার রহস্য প্রকাশ
হবে কিন্তু তা অপ্রকাশিতই রয়ে গেল। এটি বাস্তব ঘটনা
হলে আপনার বাবার জন্য আন্তরিক শ্রদ্ধা আর রোগমূ্ি্ক্তির
জন্য প্রার্থনা। গল্প হলে কোমল অনুভূতিতে দাগ কাটার মতো
চমৎকার !!


০৭ ই জুলাই, ২০২১ রাত ১:৩৮

আলমগীর জনি বলেছেন: রিকশা চলছে....

অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।❤️

১৩| ০৭ ই জুলাই, ২০২১ দুপুর ২:১৬

হাবিব বলেছেন: পাওয়ারফুল লেখনী। ভালো থাকুক সকল বাবা।

০৭ ই জুলাই, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৫৮

আলমগীর জনি বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে ।

১৪| ০৭ ই জুলাই, ২০২১ বিকাল ৫:০১

ফড়িং-অনু বলেছেন: মন ছুয়ে গেলো।

০৭ ই জুলাই, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৫৮

আলমগীর জনি বলেছেন: ধন্যবাদ রইলো ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.