নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রতিনিয়ত নিজেকে শেখার চেষ্টা করছি :)

আলামিন মোহাম্মদ

১৯৮৮ সালের বন্যার কথা বলছি। নভেম্বর মাস কিন্তু এখনো বন্যার পানি পুরোপুরি সরে যায়নি। বন্যায় রাস্তা ঘাট ভেঙ্গে গেছে। সেই সময় টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর গ্রামের চান মিয়া খুবই চিন্তিত হয়ে আছেন। বাড়িতে পুরুষ ব্যক্তি বলতে একমাত্র সে। তার অনেক দায়িত্ব কারণ তার ভাগনির সন্তান হবে যেকোন মুহুর্তে ব্যথা উঠে যেতে পারে। আশেপাশে কোথাও ডাক্তার নেই, দাই একমাত্র ভরসা। দাইকে খবর দিয়ে রাখা হয়েছে। তিনি একবার আকাশের দিকে তাকাচ্ছেন আরেকবার রাস্তার দিকে তাকাচ্ছেন যদি হাসপাতালে নিতে হয় তাহলে তো মহা বিপদ। ভাগনির স্বামীও সাথে নাই। ঢাকায় কাজে গেছে। দুপুর গড়িয়ে সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়ছে। এমন সময় রসুই ঘর থেকে একটি বাচ্চার কান্নার আওয়াজ আসলো। পুত্র সন্তান হয়েছে আজান দেয়া লাগবে। কিন্তু আলাদা করে আজান দেয়া লাগে নাই। আসরে নামাজের জন্য আহবান করা চারদিকের সকল মসজিদের আজান যেন নতুন ভুমিষ্ট শিশুকে বরণ করে নিল। চান মিয়া আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানালেন। সন্তানের পিতাকে খবর জানানো দরকার। ঢাকায় গিয়ে চান মিয়া সন্তানের বাবাকে খুঁজে পেলেন না। তিনি চিন্তিত হয়ে পড়লেন। বাড়ির প্রতিবেশীকে খবর দিয়ে রাখলেন যাতে বাড়িতে আসা মাত্র টাঙ্গাইলে চলে যায়। পুত্র সন্তান হয়েছে আর পিতা কিনা দূরে তা কি করে হয়? এক সপ্তাহ পর শিশুর পিতা বাড়িতে আসলো এবং পুত্র সন্তানের খবর শুনেই টাঙ্গাইলের পানে ছুটলেন। শিশু পুত্রকে দেখতে চাইলেন কিন্তু গ্রাম্য রেওয়াজ বাধা হয়ে দাঁড়ালো।স্বর্ণ দিয়ে শিশু পুত্রের মুখ দেখতে হবে। শিশুর পিতার তখন এত সামর্থ্য ছিল না স্বর্ণ কেনার। তাহলে কি উপায়? স্বর্ণ ও হলুদ একই ধরনের ধরা হয়। তখন একটি হলুদের টুকরো হাতে নিয়ে শিশুর হাতে দিলেন। সেটি ছিল শিশুর প্রথম উপহার। সেই উপহারটিকে যত্ন সহকারে তার নানী সিকায় তুলে রাখলেন। এভাবে চলে যেতে থাকলো দিন মাস বছর। এভাবে যখন শিশুর আঠারো বছর পূর্ণ হল তখন শিশুর নানী তার হাতে একটি শীর্ণ ও শুকিয়ে যাওয়া একটি হলুদ তুলে দিলেন এবং সেদিনের কথাগুলো পুনব্যক্ত করলেন। ১৮ বছর আগের প্রথম উপহার পাওয়া সেই হলুদ এখন সযত্নে আছে দেখে সেই কিশোরবালক অনেক পুলকিত হল। এরপর লজ্জা পেল যখন সে নানীর বাসনার কথা জানতে পারলো। বাসনা অনুযায়ী এই হলুদ দিয়েই নাতির গায়ে হলুদ দিতে চান। গত ১০ নভেম্বর ২০১২ সেই কিশোরবালক ২৪ বছর অতিক্রম করে ২৫ এ পা দেয়। আজো সেই কিশোরবালক তার নানীর ইচ্ছা পুরণ করতে পারে নাই। আর সেই কিশোরবালক হচ্ছে এই আলামিন মোহাম্মদ

আলামিন মোহাম্মদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মাধুকরি!

০১ লা জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ২:৩১

মিরপুর-১০ এ গুণ চিহ্নের ন্যায় একটি ফুটওভার ব্রীজ আছে। যারা নিয়ম কানুন মেনে চলতে অভ্যস্ত বা কায়িক পরিশ্রম করতে ভালোবাসে তারা এই ফুট ওভার ব্রীজ ব্যবহার করেন। ফুট ওভার ব্রীজ যে শুধু নিরাপদে রাস্তা পার হবার জন্য ব্যবহৃত হয় সেটা নয় এর আরও অনেক ব্যবহার আছে। মিরপুর-১০ এ কেউ যদি কারও সাথে দেখা করতে আসে তাহলে বলে- আমি ফুট ওভার ব্রীজ এর উপর দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে থাকবো। আপনি তখন সেখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চলন্ত গাড়ি দেখে সময় পার করে দিতে পারবেন। এছাড়া যাদের মন খারাপ থাকে। খোলা আকাশের শুন্যতা দেখলে তারা ভাবে তাদের মন কিছুটা হলে ভালো হবে তারাও এই ফুটওভার ব্রীজ এর উপর দাঁড়িয়ে খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। যেসব লোলুপ ছেলেদের মেয়েদের বুকের স্পর্শ পাওয়ার ইচ্ছা তারাও এই ফুট ওভার ব্রীজ ব্যবহার করে। জনাকীর্ণ ফুটওভার ব্রীজ এর সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় আনমনে মেয়েদের বুকের সাথে ধাক্কা খেয়ে সাথে সাথে সরি বলে ফেললে মেয়েরা কিছু মনে করে না। তাছাড়া বর্তমান মেয়েরাও এটার সাথে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। এই ফুটওভার ব্রীজে নিশিরাতে অন্যরকম ব্যবহার চলে। দিনের বেলায় যে ব্রীজ দিয়ে সহজেই পাড় হওয়া যায় সেই ব্রীজ দিয়ে আবছা আলোর রাতে পাড় হতে গা ছমছম করে। সেই সময় দেহপসারী মেয়েদের আনাগোনা দেখতে পাওয়া যায়। স্বল্প টাকার বিনিময়ে সেখানে দাঁড়িয়েই আপনি বিভিন্ন আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন। কেউ আপনাকে কিছু বলবে না। সবাই দেখেও না দেখার ভান করে হেঁটে চলে যাবে। সবাই এই বিষয়টির সাথে অভ্যস্ত। আপনি যদি বিব্রতবোধ করেন তাহলে সেই সময় না যাওয়াই ভালো। আপনি বাসায় রাগ করে বের হয়ে এসেছেন, রাতে আর বাসায় ফিরবেন না। কোন বন্ধুর বাসায়ও উঠবেন না বলে ঠিক করেছেন। তখন আপনি চাইলে এই ফুটওভার ব্রীজে রাতটি কাটিয়ে দিতে পারেন। এই ফুটওভার ব্রীজ রাতেরবেলা গৃহহীন বিভিন্ন মানুষের নাক ডেকে ঘুমানোর নিরাপদ আশ্রয়। এই ফুটওভার ব্রীজে ছোট ছোট কাঠের বক্স নিয়ে কিছু লোক দেখবেন বিভিন্ন পন্যের পসরা নিয়ে বসে আছে। গৃহস্থালিও খুঁটিনাটি সামগ্রী সাধারণত সেখানে বেশি বিক্রি হয়। তারা সেইসব সামগ্রী বিক্রি করেই তাদের পেট চালায়।



এই ফুটওভার ব্রীজ অসাড় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। প্রতিদিন হাজারো মানুষের পদচারনার ভারে সাক্ষী হয়ে থাকা এই বোবা সাঁকো এর ভাষা কেউ বোঝে না। মানুষের পায়ের আঘাতে যখন ফুটওভার ব্রীজ ঠাস ঠাস আওয়াজ তোলে সেই আওয়াজ অনেক কিছু বলে। যারা কল্পনাপ্রবণ তারা সেই আওয়াজ থেকে গল্প বানিয়ে ফেলে। কোন গল্প বলার ক্ষেত্রে স্থান, কাল,পাত্রের বর্ণনা দিতে হয়। আমাদের আজকের গল্পের স্থান হচ্ছে মিরপুর-১০ এর এই ফুটওভার ব্রীজ। এই ফুটওভার ব্রীজ তার সীমিত পরিসীমায় যে অজস্র গল্প ফেঁদে আছে তা নিয়ে চিত্রায়ন করলে মেগা সিরিয়াল ড্রামায় রূপ নিবে। তবে আজ আপনাদের কোন মেগা সিরিয়াল ড্রামার কাহিনী বলবো না। সাপ্তাহিক নাটকের মত এক পর্বেই গল্প শেষ করবো তবে গল্পের মাঝে বিজ্ঞাপন বিরতি থাকতে পারে। আজকের গল্পের চরিত্র আমাদের কাছে সাদামাটা মনে হতে পারে কারণ আমরা তাদের কাছ থেকে পারতপক্ষে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করি। আর গল্পের যে স্থানের বর্ণনা দিয়েছি সেটাও অসম্পূর্ণ। বাংলাদেশের ফুটওভার ব্রীজগুলো একটি চরিত্র ছাড়া অসম্পূর্ণ। আর সেই চরিত্র হচ্ছে ভিক্ষুক। কোন ফুটওভার ব্রীজ ভিক্ষুক ছাড়া পাবেন না। আমরা তাদের কাছ থেকে এড়িয়ে চলি কিন্তু তাদেরও গল্প আছে।



ধর্মীয়ভাবে হালাল কিন্তু নিকৃষ্ট পেশা হচ্ছে ভিক্ষাবৃত্তি। ভিক্ষাবৃত্তিকে আমরা হেয় হিসেবে নিলেও দার্শনিক ভাষায় বললে এই পৃথিবীতে আমরা সবাই ভিক্ষুক। কেউ ফেইসবুকে লাইক ভিক্ষা করে, কেউ ভোট ভিক্ষা করে, কেউ প্রেমিকের ভালোবাসা ভিক্ষা করে। তবে আমরা দর্শনের দিকে না যাই। আমাদের আজকের গল্পের ভিক্ষুক কোন দর্শনের ভিক্ষুক নয়, বাস্তবের ভিক্ষুক। ভিক্ষাবৃত্তি করতেও আপনার দক্ষতা দরকার। পথচারীকে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হবে এরপর তাকে রাজি করাতে হবে আপনাকে কিছু অর্থদানের জন্য। এই রাজি করানোর জন্য আপনি বেশি সময় পাবেন না। চলার পথে আপনাকে অতিক্রম করতে যতটুকু সময় পাওয়া যায় সেই সময়টুকু। তাই আপনাকে এমন কোন কৌশল অবলম্বন করতে হবে যাতে পথচারী আপনার প্রতি আগ্রহী হয়। ভিক্ষাবৃত্তির উপর বিবিএ কোর্স চালু করা উচিত কারণ এখানেও শেখার অনেক কিছু আছে। ভিক্ষাবৃত্তির উপর কোর্স চালু হলে দাতা দেশ বা সংস্থা থেকে আমরা যে অর্থ সাহায্য পাই তা পেতে আরও সুবিধা হবে। আর যারা সফল ভিক্ষুক তাদের কাছ থেকেও মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা অনেক কিছু শিখতে পারেন।



আমি বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। প্রতিদিন যখন বাসা থেকে বের হই তখন আম্মার গৎবাধা একটি কথা থাকে তা হচ্ছে সাবধানে যেন রাস্তা পাড় হই, ফুটওভার ব্রীজ যেন ব্যবহার করি। শুধু আম্মা বলে দেখে আমি ফুটওভার ব্রীজ ব্যবহার করি সেটা নয়, আসলে উপর থেকে অনেক কিছু দেখা যায় যা নিচ থেকে দেখা যায় না। আমি প্রায়ই ফুটওভার ব্রীজ দিয়ে রাস্তা পাড় হলে কিছুক্ষণ ফুটওভার ব্রীজের মাঝখানে দাঁড়িয়ে থেকে চারপাশের দিকে তাকাই। চারপাশে কি ঘটে চলছে তা বোঝার চেষ্টা করি। ঈশ্বর যেমন উপরে বসে বসে আমাদের পর্যবেক্ষণ করছেন আমিও উপরের দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঈশ্বরের সৃষ্টি লীলা দেখি। চারপাশের ব্যস্ত মানুষের মুখের দিকে তাকিয়ে তাদের গল্প পড়ার চেষ্টা করি। ছাত্রজীবনের অবসান হয়েছে। হাতে বেশ ভালোই সময় আছে। আড্ডা দিয়ে, গল্প লিখে সময়টা পার করছি। আড্ডা দিতে প্রায়ই মিরপুরে যাই। আর মিরপুর-১০ এর ফুটওভার ব্রীজ যখন পাড় হই তখন ব্রীজের মাঝখানে দাঁড়িয়ে ব্যস্ত মানুষদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করি। সেই পর্যবেক্ষণ করার সময় আমি একটি ঘটনার সম্মুখীন হই। সেই ঘটনার আরও ভিতরে প্রবেশ করে আমি যে মূল্যবান জ্ঞান পেয়েছি সেই জ্ঞান নিয়েই আজ আপনাদের গল্প শোনাতে যাচ্ছি। এতক্ষণ স্থান আর কালের বর্ণনা দিলাম। এবার পাত্রের বর্ণনায় আসি।



যারা ভিক্ষাবৃত্তি করে পেট চালায় তারা বেশ অদ্ভুত। এদের শরীরে ফুসকরি হলে এরা তার চিকিৎসা করাবে না কারণ সেই ফুসকরি দেখিয়ে অন্যের সহানুভূতি পাওয়া যাবে আবার সেই ফুসকরি চুলকিয়ে আরাম পাওয়া যাবে। ভিক্ষাবৃত্তিতে যার যত শারীরিক সমস্যা থাকবে সে তত মানুষের সহানুভূতি পাবে। একসময় ভিক্ষুকদের অনেক সম্মান করা হত, ভিক্ষুকরা ছিল সাধু বাবার মত। আর তখনকার ভিক্ষুকরা নিজেদের ব্যস্ত রাখতেন তপস্যা সাধনায়, ভিক্ষাবৃত্তি তাদের কোন পেশা ছিল না ছিল শুধু পেটের ক্ষুধা মেটানোর এক মাধ্যম। তাদেরকে মুষ্ঠিবদ্ধ চাল দিয়ে বলা হত আমার জন্য দোয়া করবেন। কিন্তু বর্তমানের ভিক্ষুকরা ভিক্ষাবৃত্তিকেই পেশা বানিয়ে ফেলেছেন, তপস্যাকে নয়। এই ভিক্ষা করেই তারা চান বাড়ি-গাড়ি কিনে ফেলতে। ছোটবেলায় আম্মাকে কোন ভিক্ষুক আসলে বলতে দেখতাম- মাফ করেন। মাফ করেন কেন বলত? কারণ ভিক্ষুকরা ছিল সম্মানিত তারা যাতে মনকষ্ট না পান আমাদের অক্ষমতায় তাই মাফ চাওয়া হত। কিন্তু বর্তমানে আম্মাকে বলতে দেখি- অন্যদিকে যান। দুনিয়া পরিবর্তণ হয়ে গেছে। মিরপুর ফুটওভার ব্রীজের উপর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এই ধরনের উচ্চমার্গীয় কথা বার্তা চিন্তা করতে ছিলাম আর আশেপাশের ভিক্ষুকদের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। আমার ডান দিকে তাকালাম। এক ৬ বছর বয়সী ছোট ছেলেকে দেখলাম। সে পথচারীদের পা চেপে ধরছে। যতক্ষণনা পথচারী তার পকেটে হাত দিয়ে টাকা না বের করছে ততক্ষণ সে তার পা ছাড়ছে না। ছোট শিশুকে তার পা থেকে হাত সরাতে গেলে লাথি দিতে হবে, অনেক পথচারী সেই কাজ করার সাহস পাচ্ছে না। আবার যেসব পথচারী এইসব পেশাদার ভিক্ষুক দেখে অভ্যস্ত তারা সেই পা ধরা অবস্থায় হাঁটতে থাকে। শিশুটিও তার পা চেপে হেচড়িয়ে হেচড়িয়ে কিছুদূর যায়। এরপর যখন বুঝতে পারে এই লোকের পা চেপে লাভ নেই তখন সে তার পা ছেঁড়ে দেয়।



এইভাবে কিছুক্ষণ ভিক্ষুকদের ভিক্ষাবৃত্তির দিকে তাকিয়ে ফুটওভার ব্রীজ দিয়ে নিচে নেমে যাচ্ছিলাম আর চিন্তা করতেছিলাম কিভাবে বাংলাদেশ থেকে এই ভিক্ষাবৃত্তি দূর করা যায়, তারা কেন ভিক্ষাবৃত্তিতে নামে। সিঁড়ি দিয়ে যখন নামছিলাম তখন সিঁড়ির গোড়ায় আমার চোখ আটকিয়ে গেল একটি লেখার দিকে। সেখানে লেখা আছে- ‘আজকের দিনটি কত সুন্দর! কিন্তু আমি দেখতে পাচ্ছি না’ -ছোট দুইটি লাইন কিন্তু কত অর্থবহ। আমি স্থির হয়ে সেই লেখার পাশে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম। এরপর সেই লেখার পাশে যে লোকটি দাঁড়িয়ে আছেন সেই লোকটির দিকে তাকালাম। বয়স আনুমানিক ষাট বছর হবে। চোখে কালো চশমা। মুখে কোন কথা নেই। চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছেন। হাতে একটি সাদা ছড়ি আছে। তিনি সেই সাদা ছড়িতে একটি হাত রেখে সেই ছড়িতে আঙুল দিয়ে তুড়ি বাজাচ্ছেন। মুখে বেশ অমায়িক মুচকি হাসি। আজকের দিনটা আসলেই সুন্দর। পড়ন্ত বিকেল। সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়েছে। আকশে শুভ্র মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে। রাস্তার পাশের গাছের ডালে বসে পাখি একটু একটু পর ডেকে যাচ্ছে। অদূরে একটি কুকুর শুয়ে আছে আর একটি মাছি তাকে বিরক্ত করছে। কুকুরটি একটু পরপর মাথা নাড়িয়ে মাছি তাড়ানোতে ব্যস্ত। চারদিকে কত সুন্দর দৃশ্য কিন্তু সেই দৃশ্য এই ষাট বছরের পৌঢ় লোকটি দেখতে পাচ্ছেন না। আর তিনি যে দেখতে পাচ্ছেন না তা নিয়ে তিনি মোটেও বিচলিত নন। তাকে বেশ সুখী সুখী দেখাচ্ছে। রাস্তায় অনেক অন্ধ ভিক্ষুক দেখতে পাওয়া যায়। সেই ভিক্ষুকদের নিয়ে আমরা ভাবি না এমনকি আমিও ভাবি না। তবে আজ এই অন্ধ ভিক্ষুককে দেখে আমি নিজের চলার পথ রুদ্ধ করলাম। নিজেকে থামালাম এর কারণ সেই ভিক্ষুক নয়, এর কারণ সেই লেখা লাইন দুইটা। এই লাইন দুইটার অর্থ অনেক গভীর। এত গভীর অর্থবহ লেখা তিনি কিভাবে লিখলেন তা জানার কৌতূহল থেকে আমি ঐ অন্ধ ভিক্ষুকের সাথে কথা বলার ইচ্ছা সংবরণ করতে পারলাম না।

আমি ব্যক্তিগতভাবে ভিক্ষাবৃত্তিকে পছন্দ করি না এবং কোন ভিক্ষুককেও ভিক্ষা দেই না। তবে আজ ঐ দুইটা লাইন দেখে নিজের পকেট থেকে পঞ্চাশ টাকা বের করে ঐ লোকের হাতে দিলাম। লোকটি টাকাটা হাতে নিয়ে এর উপর হাত বুলাল এবং কেমন করে যেন ধরে ফেলল এটি পঞ্চাশ টাকা।



আমাকে জিজ্ঞেস করলেন- কত টাকা ফেরত দিব?

আমি বললাম-ফেরত দেয়া লাগবে না। পুরো টাকাটাই রাখেন।

এরপর তিনি আমাকে যে কথাটি বললেন- সেই কথাটি শুনে আমি দ্বিতীয়বারের মত এই লোকের প্রতি আরও আগ্রহী হয়ে উঠলাম। তিনি ইংরেজিতে বললেন- হ্যাভ এ গুড ডে।



আমি কৌতুহলি হয়ে জিজ্ঞেস করলাম- আপনি ইংরেজি জানেন?

তিনি বললেন- ক্লাস সিক্স পর্যন্ত পড়তে পেরেছিলাম। ইংরেজি কয়েকটা লাইন পাড়ি।



এরপর আমি জিজ্ঞেস করলাম- কত বছর ধরে ভিক্ষা করছেন?



তিনি বললেন- চোখ হারালাম ১০ বছর হল। ঐত ধরেন ১০ বছর ধরে ভিক্ষা করছি।



এরপর আমি প্রশ্ন করলাম- আপনি তাহলে জন্মান্ধ নন? চোখ হারালেন কি করে?



আমার এই প্রশ্ন শুনে তিনি মনে হয় মর্মাহত হলেন। কারণ ওনার মুখে যে সুখী সুখী হাসি ছিল তা উধাও হয়ে গেল। আঙুল দিয়ে সাদা ছড়িতে যে তুড়ি বাজাচ্ছিলেন সেটাও বন্ধ হয়ে গেল। তিনি মুখ গম্ভীর হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। আমি বুঝতে পারলাম এই প্রশ্নের উত্তর হয়ত পাওয়া যাবে না। আমি ওনাকে বিব্রত হতে দেখে ওনার উত্তরের কোন প্রতীক্ষা না করে সেখান থেকে চলে আসলাম। তবে চলে আসার পর মনের ভেতর একটা কৌতূহল কেমন যেন খোঁচা দিতে লাগলো। একজন লোক মাধুকরী করে জীবন নির্বাহ করে। কিন্তু কত ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন। সেই মাধুকরীর মাধ্যমে তিনি সবার মাঝে একটি বার্তা দিয়ে যাচ্ছেন। ওনার চোখ নেই, এছাড়াও আছে না বলা কত দুঃখ কিন্তু এরপরেও তিনি কত সুখী। মুখের ভেতর শোভা পাচ্ছে সুখী সুখী হাসি।



আমি বাসায় ফেরার পর নিজের কাজে মনযোগী হয়ে পড়লাম। নিজের জীবন নিয়ে সুখী হওয়া সেই মাধুকরের কথা আমি ভুলে গেলাম। পরের দিন মিরপুরে আড্ডা দিতে গেলাম আর যখন সেই ফুটওভার ব্রীজ পাড় হচ্ছিলাম তখন আবার সেই মাধুকরের সাথে দেখা। সেই দুইটি লেখা লাইন নিয়ে তিনি আজো নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে আছেন আর সাদা ছড়িতে আঙুল দিয়ে তুড়ি বাজাচ্ছেন। আমি চারদিকের সৌন্দর্যের দিকে একবার তাকালাম। এই সৌন্দর্য্য তিনি দেখতে পাচ্ছেন না তারপরেও ওনার মুখে একটি সুখী হাসি শোভা পাচ্ছে। আমি আজ পকেট থেকে বিশ টাকা বের করে ওনার হাতে দিলাম। তিনি বিশ টাকা হাতে নিয়ে কিছুক্ষন হাত বুলালেন তারপর আমাকে অবাক করে দিয়ে বললেন- গতকাল ফেলে আসা স্মৃতি চিন্তা করতে গিয়ে কেমন যেন চুপ আর বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। আপনি দেখি হঠাৎ করে চলে গেলেন। আমি আমার আচরণে একটু লজ্জিত হয়ে ইয়ে মানে ইয়ে মানে করতে লাগলাম। এরপর তিনি আমাকে বললেন- চলেন এখানে দাঁড়িয়ে কথা না বলে কোথাও বসে চা খাই। একজন মাধুকর আমাকে চা খাওয়ার নিমন্ত্রণ করেছে বিষয়টা অন্যদের কাছে অবাক করার বিষয় হলেও আমি বুঝতে পারলাম এই মাধুকরের মাধুকরীর পিছনে যে ঘটনা আছে তার শ্রুতিমূল্য অনেক আর এর পিছনে লুকিয়ে আছে হয়ত নানা জীবন দর্শন। তাই আমি ওনার আচরণে অবাক না হয়ে ওনার প্রস্তাবে রাজি হলাম আর বললাম- চলেন কোথাও বসে চা খাই।



গরীব লোকের কাছে সবচেয়ে বড় বীমা হচ্ছে তার পুত্র সন্তান। যখন একটি পুত্র সন্তান জন্মায় তখন গরীব বাবা-মায়ের চেষ্টা থাকে এই সন্তানকে মানুষের মত মানুষ করা যাতে সে বৃদ্ধ বয়সে তাদের দেখাশোনা করতে পারে। ঠিক তেমনি আজমল এর যখন একটি পুত্র সন্তান জন্মালো তখন সে আর সন্তানের প্রত্যাশা না করে তার এই একটি সন্তানকেই শিক্ষিত করে মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চাইল। আজমল যিনি বিধাতার নিয়মে একটি গরীব বর্গাচাষী ঘরে জন্মেছিল। সেই গরীব বর্গাচাষী পিতা তার সন্তান আজমলকে পড়াশোনা শিখিয়ে বড় সাহেব বানাতে চেয়েছিল যাতে সবাই তাকে বড় সাহেবের বাপ বলে ডাকে। কিন্তু ভাগ্যবিধাতা তা চাননি। আজমলকে ক্লাস সিক্স পর্যন্ত পড়িয়েই সে ইহকাল ত্যাগ করল। সংসারের ঘানি টানতে গিয়ে পড়াশোনার পাট সেখানেই চুকে গেল। আজমলের পিতার সেই স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল। পৃথিবীতে টিকে থাকাই যেখানে বড় দায় সেখানে এই ধরনের স্বপ্ন দেখা বিলাসিতা মাত্র। নুন আনতে পান্তা ফুরিয়েছে। ভালো খাবারের ঘ্রাণ হোটেলের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় পেলেও তা কখনো খেয়ে দেখা হয়নি। মানুষ তার জীবনকে সুখী করতে কত আমোদ-ফুর্তি করে। আজমল সেই আমোদ ফুর্তি, ভালো ভালো খাবার এর নাম শুনে আসলেও তা ছিল তার কাছে স্বপ্নের মত। তবে সে স্বপ্ন দেখত একদিন এই আমোদ-ফূর্তি, ভালো ভালো খাবার সে ভোগ করবে। তার একটি সন্তান হবে আর সেই সন্তান তার সকল স্বপ্ন পূরণ করবে। আজমলের পিতাও তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিল কিন্তু তার পিতার অকাল প্রয়াণে সেই স্বপ্ন অধরাই থেকে গিয়েছিল। তার সন্তানের বেলায় যেন এই ধরনের কোন ঘটনা যাতে না ঘটে তাই আজমল বিয়ের আগেই পুত্রের পড়াশোনার জন্য টাকা জমিয়ে রেখেছিল।



রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে তার মধ্যেই রিকশা চালিয়ে আজমল অল্প অল্প করে টাকা সঞ্চয় করত। রিকশার প্যাডেল চালাতে চালাতে পা যখন অসার হয়ে যেত তখন তার অনাগত সন্তানের মুখ ভেসে আসত। হোটেলে খেতে গিয়ে সুস্বাদু বিরিয়ানির গন্ধে তার মুখে পানি জমে যখন তা গলা দিয়ে নিচে নামত তখনো সে বিরিয়ানি খেত না, ভর্তা ভাজি অর্ডার করত। সে স্বপ্ন দেখত তার সন্তান হবে তার বৃদ্ধ বয়সের বীমার মত আর এই যে কষ্ট এগুলো বীমার সেলামী। আজমলের বর্গাচাষী পিতা যেমন স্বপ্ন দেখেছিল তাকে সবাই বড়সাহেবের বাপ বলে ডাকবে ঠিক তেমনি রিকশাচালক আজমল স্বপ্ন দেখত তার ছেলেও বড় জায়গায় চাকরি করবে তাকে আর রিকশাচালক ডাকবে না, বড় সাহেবের বাপ বলে ডাকবে।



ভাগ্যবিধাতা আজমলের এই পরিশ্রম,ত্যাগ দেখে হয়ত একটু কৃপা হয়েছিলেন কারণ আজমল যখন বিয়ে করে তখন বিয়ের এক বছরের মাথায় তাদের ঘর আলোকিত করে একটি পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করে। কিন্তু ভাগ্যবিধাতা তার সেই স্বপ্নপূরণে একটু জটিলতা দিয়ে দেন। সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে আজমলের স্ত্রী শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। সে অন্যকোন নারীর দ্বারগ্রহ না হয়ে নিজেই তার সন্তানের পিতা-মাতার ভূমিকায় অবতারণা করল। তার বৃদ্ধ বয়সের শেষ আশ্রয় এই সন্তানকে মানুষের মত মানুষ করার জন্য তার সঞ্চিত অর্থ দিয়ে তাকে পড়াশোনা করাতে লাগল। পুত্রের কোন ইচ্ছা বা বায়না সে অপূর্ণ রাখেন নি। ক্লাস এইটে তার পুত্র বায়না করেছিল বৃত্তি পেলে তাকে সাইকেল কিনে দিতে হবে। আজমল খেয়ে না খেয়ে তার পুত্রের সেই ইচ্ছা পূরণ করেছিল। তার চোখে ছানী ধরা পড়ে কিন্তু সে তার অপারেশন করেনি কারণ অনেকগুলো টাকা খরচ হয়ে যাবে। তার ইচ্ছা ছিল তার পুত্র বড় পাশ দিয়ে তার চোখের চিকিৎসা করাবে।



রিকশাচালক আজমল তার ছানীপড়া চোখে অনবরত স্বপ্ন দেখে যায়। তার পুত্র বাড়ি বানাবে। সেই বাড়িতে সে প্রতিদিন মুরগির রোস্ট খাবে। আরাম আয়েশ করে তুলতুলে নরম বিছানায় ঘুমাবে। ভাগ্যবিধাতা আজমলের সেই স্বপ্ন অপূর্ণ রাখেননি। দেশের নামকরা একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বড় পাশ করে আজমলের পুত্র আজ বড় একটি কোম্পানিতে চাকরি করে। কিন্তু ততদিনে আজমলের চোখের ছানী আরও বেড়ে গেল। আজমল তার পুত্রকে বলতে গেলে তার পুত্র বলে- আব্বা, বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন একটি মেয়েকে ভালোবাসতাম। মেয়েটি অনেক ধনী। তাকে বিয়ে করার জন্য একটি ভালো চাকরি দরকার ছিল। আজ যেহেতু চাকরি পেয়েছি তাহলে আগে বিয়ে করে ফেলি, না হলে ঐ মেয়ের অন্যত্র বিয়ে হয়ে যাবে। আর বিয়ে করতে অনেক খরচ। বিয়ের পর চোখের চিকিৎসা করানো যাবে। পুত্রের এই প্রস্তাবে আজমল মোটেও দুঃখিত হয় নাই। তার পুত্র বিয়ে করবে, সে পুত্রবধু পাবে। তার পুত্রবধু তাকে অনেক আদর যত্ন করবে। আজমল তার চোখের সেই নিভু নিভু আলোতেই স্বপ্ন দেখে যেতে লাগল।



কিন্তু আজমলের এতদিনের স্বপ্ন যখন পাকা ধানে রুপান্তর হয়েছে আর কয়েকদিন পরেই সে সেই পাকা ধান ঘরে তুলবে ঠিক তখন সেই পাকা ধানে মই দেয়ার মত অবতীর্ণ হল তার পুত্রের স্ত্রী। আজমলের সংসার হয়ে গেল তার পুত্রবধুর সংসার। আর সেই পুত্রবধুর সংসারে আজমল যেন এক বোঝা হিসেবে অবতারণ হল। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে তিক্ত কথা যখন তার পুত্র বধু বলত তখন আজমল বুঝতে পারল তার এতদিনের স্বপ্নের লাগানো পাকা ধান আজ তার ঘরে উঠবে না, তার পুত্র আর পুত্র বধু ভোগ করবে। সে রোদ বৃষ্টি মাথায় নিয়ে সেই স্বপ্নের ধানের পরিচর্যা করল কিন্তু আজ সে নিগৃহ। বিয়ের পর তার পুত্র তার অচেনা হয়ে যেতে লাগল। সে স্বপ্ন দেখত সে মুরগির রোস্ট খাবে, আরাম আয়েশ করে ঘুমাবে কিন্তু সেই ইচ্ছা গুড়ে বালিতে রুপ নিল।



একদিন তার পুত্রবধু আর তার পুত্র গোপনে সলাপরামর্শ করছিল তাকে কোন এক বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসবে। তার মত কানা শ্বশুর তার পুত্রবধুর কাছে ঝামেলার বিষয়। তখন আর সইতে না পেরে সেই বাসা থেকে কাউকে না বলে চলে আসল। ঠিক করেছিল সেইদিনই কোন ট্রেনের নিচে আত্মাহুতি দিবে। কিন্তু আত্মাহুতি দেবার আগে তার মনে হল অন্তত একদিনের জন্য হলেও বিলাসিতার স্বাদ নেয়া দরকার। দামী হোটেলে একদিন থাকবে, দামী দামী খাবার খাবে, ভালো ভালো পোশাক পড়বে। একদিন এই আরাম আয়েশ করে সে পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে চায়। সেই একদিনের আরাম-আয়েশ করার জন্য সে মাধুকরি বৃত্তিকেই বেঁছে নিলেন। ভিক্ষার টাকা জমিয়ে সে একদিনের জন্য বিলাসবহুল জীবন কাটাতে চায়। এরপর আর বেঁচে থেকে তার কি হবে? সেই বিলাসিতার স্বাদ নিয়ে সে পৃথিবী থেকে স্বেচ্ছায় বিদায় নিতে চায়।



চায়ের দোকানে বসে একসময়ের রিকশাচালক যে বর্তমানে একজন মাধুকর তার জীবন কাহিনী শুনছিলাম। শুনতে শুনতে কখন যে চোখে পানি চলে আসলো তা টের পাইনি। তিনি আর আজমল নন, আজমল সাহেব। ওনার কাহিনী শুনে কি যে সান্ত্বনা বাক্য বলবো তা বুঝে উঠতে পারলাম না। হঠাৎ করে কেমন যেন বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। মাধুকরি করে একদিনের জন্য বিলাসিতার স্বাদ নিতে চান। এই বিলাসিতা পাওয়ার জন্য সারাজীবন কত কষ্ট করে গেছেন। আমি অনেক আবেগ প্রবণ। নিজের আবেগ কে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে সেখান থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসি।



সেখান থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসলেও মাথায় শুধু মাধুকর আজমল সাহেব এর কথা মাথায় ঘুরছিল। টিউশনি করে দশ হাজার টাকা সঞ্চয় করেছিলাম। ঠিক করলাম এই দশ হাজার টাকা মাধুকর আজমল সাহেবকে দিবো তার সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য। পরের দিন যখন মিরপুর-১০ এর ফুটওভার ব্রীজ পাড় হচ্ছিলাম তখন আর মাধুকর আজমল সাহেবকে সেখানে পেলাম না। আমি বেশ চিন্তিত হয়ে উঠলাম। তবে কি তিনি ওনার বিলাসিতা করার টাকা মাধুকরি করে জোগাড় করে ফেলেছেন? এরপরের দিন আবারও যখন মিরপুর ফুট ওভার ব্রীজ পাড় হচ্ছিলাম তখনো সেই জায়গায় আর মাধুকর আজমল সাহেবকে খুঁজে পেলাম না। মাধুকর আজমল সাহেবের জায়গায় অন্য আরেকজন মাধুকর দাঁড়িয়ে আছে। আমি ফুট ওভার ব্রীজের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আশেপাশে তাকাতে লাগলাম আর চিন্তা করতে লাগলাম এই ফুট ওভার ব্রীজ কত ঘটনার নিরব সাক্ষী হয়ে আছে।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ২:৩১

আজীব ০০৭ বলেছেন: ফুট ওভার ব্রীজ কত ঘটনার নিরব সাক্ষী হয়ে আছে।

............................?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.