নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রতিনিয়ত নিজেকে শেখার চেষ্টা করছি :)

আলামিন মোহাম্মদ

১৯৮৮ সালের বন্যার কথা বলছি। নভেম্বর মাস কিন্তু এখনো বন্যার পানি পুরোপুরি সরে যায়নি। বন্যায় রাস্তা ঘাট ভেঙ্গে গেছে। সেই সময় টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর গ্রামের চান মিয়া খুবই চিন্তিত হয়ে আছেন। বাড়িতে পুরুষ ব্যক্তি বলতে একমাত্র সে। তার অনেক দায়িত্ব কারণ তার ভাগনির সন্তান হবে যেকোন মুহুর্তে ব্যথা উঠে যেতে পারে। আশেপাশে কোথাও ডাক্তার নেই, দাই একমাত্র ভরসা। দাইকে খবর দিয়ে রাখা হয়েছে। তিনি একবার আকাশের দিকে তাকাচ্ছেন আরেকবার রাস্তার দিকে তাকাচ্ছেন যদি হাসপাতালে নিতে হয় তাহলে তো মহা বিপদ। ভাগনির স্বামীও সাথে নাই। ঢাকায় কাজে গেছে। দুপুর গড়িয়ে সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়ছে। এমন সময় রসুই ঘর থেকে একটি বাচ্চার কান্নার আওয়াজ আসলো। পুত্র সন্তান হয়েছে আজান দেয়া লাগবে। কিন্তু আলাদা করে আজান দেয়া লাগে নাই। আসরে নামাজের জন্য আহবান করা চারদিকের সকল মসজিদের আজান যেন নতুন ভুমিষ্ট শিশুকে বরণ করে নিল। চান মিয়া আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানালেন। সন্তানের পিতাকে খবর জানানো দরকার। ঢাকায় গিয়ে চান মিয়া সন্তানের বাবাকে খুঁজে পেলেন না। তিনি চিন্তিত হয়ে পড়লেন। বাড়ির প্রতিবেশীকে খবর দিয়ে রাখলেন যাতে বাড়িতে আসা মাত্র টাঙ্গাইলে চলে যায়। পুত্র সন্তান হয়েছে আর পিতা কিনা দূরে তা কি করে হয়? এক সপ্তাহ পর শিশুর পিতা বাড়িতে আসলো এবং পুত্র সন্তানের খবর শুনেই টাঙ্গাইলের পানে ছুটলেন। শিশু পুত্রকে দেখতে চাইলেন কিন্তু গ্রাম্য রেওয়াজ বাধা হয়ে দাঁড়ালো।স্বর্ণ দিয়ে শিশু পুত্রের মুখ দেখতে হবে। শিশুর পিতার তখন এত সামর্থ্য ছিল না স্বর্ণ কেনার। তাহলে কি উপায়? স্বর্ণ ও হলুদ একই ধরনের ধরা হয়। তখন একটি হলুদের টুকরো হাতে নিয়ে শিশুর হাতে দিলেন। সেটি ছিল শিশুর প্রথম উপহার। সেই উপহারটিকে যত্ন সহকারে তার নানী সিকায় তুলে রাখলেন। এভাবে চলে যেতে থাকলো দিন মাস বছর। এভাবে যখন শিশুর আঠারো বছর পূর্ণ হল তখন শিশুর নানী তার হাতে একটি শীর্ণ ও শুকিয়ে যাওয়া একটি হলুদ তুলে দিলেন এবং সেদিনের কথাগুলো পুনব্যক্ত করলেন। ১৮ বছর আগের প্রথম উপহার পাওয়া সেই হলুদ এখন সযত্নে আছে দেখে সেই কিশোরবালক অনেক পুলকিত হল। এরপর লজ্জা পেল যখন সে নানীর বাসনার কথা জানতে পারলো। বাসনা অনুযায়ী এই হলুদ দিয়েই নাতির গায়ে হলুদ দিতে চান। গত ১০ নভেম্বর ২০১২ সেই কিশোরবালক ২৪ বছর অতিক্রম করে ২৫ এ পা দেয়। আজো সেই কিশোরবালক তার নানীর ইচ্ছা পুরণ করতে পারে নাই। আর সেই কিশোরবালক হচ্ছে এই আলামিন মোহাম্মদ

আলামিন মোহাম্মদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

জীবন্ত উপহার!

১১ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১২:৫১

ঢাকা শহরের জমি সোনার চেয়েও দামী। কেউ এক ইঞ্চি জায়গা ছাড়তে চায়না। এমনভাবে বাড়ি বানায় যেন একছাদ থেকে অন্যছাদে লাফ দিয়েই যাওয়া যাবে। গায়ে ঘেষা এই সব বাড়ি লোকজনও গায়ে ঘেষা ঘেষি করে থাকে। ছাদে উঠলে অন্য ছাদে কি হচ্ছে তা না চাইলেও চোখে পড়ে। রান্নাঘরে তেলেভাজার শব্দ ও ঘ্রাণ পাশের বাড়ি থেকেও পাওয়া যায়। অনেকসময় পার্থক্য করা কঠিন হয়ে পড়ে কার বাসায় কি রান্না হচ্ছে। ঘরের আলো জ্বালালে পাশের বাড়িতেও সেই আলো অনেকখানি চলে যায়। জানালার কপাট খুললে অন্যবাড়ির জানালা চোখ বড় করে তাকিয়ে থাকে। সেই চোখে অনেক চোখাচোখি হয়। এই চোখাচোখি থেকে ঘটে যায় পারস্পরিক সংঘর্ষ। এই সংঘর্ষ কখনো ভালোবাসার স্ফুলিঙ্গ ঘটায় আবার কখনো বিকর্ষণ ঘটিয়ে দূরত্ব সৃষ্টি করে। আমাদের আজকের গল্প ঢাকা শহরের এমন গায়ে ঘেষাঘেষি দুটি বাড়ি নিয়ে।



জামাল সাহেব সামরিকবাহিনী থেকে অবসর নিয়েছেন। জাতিসংঘের শান্তিবাহিনীতে গিয়ে এবং অবসরকালীন প্রভিডেন্ট ফান্ড একত্র করে ঢাকা শহরে কোনমত দোতালা একটা বাড়ি করেছেন। তিনকাঠার উপর বাড়ি। একটু জায়গা ছেড়ে দিলে মনমত বাড়ি করা যায় না। তাই সীমানা ঘেষেই বাড়ি করেছেন। ওনার প্রতিবেশী আওয়াল সাহেবের একই অবস্থা। সীমানা ঘেষে দোতালা বাড়ি করেছেন। দুইজনের বাড়ি গা ঘেষাঘেষি করে থাকলেও জামাল সাহেব আওয়াল সাহেবকে এড়িয়ে চলেন। প্রতিবেশী হিসেবে আওয়াল সাহেবকে জামাল সাহেবের পছন্দ না। এর প্রধান কারণ হচ্ছে আওয়াল সাহেবের দ্বৈত বিবাহ। তিনি দুই ফ্লাটে দুই স্ত্রী রেখে বসবাস করছেন। একটি পুত্র সন্তানের আশায় আওয়াল সাহেব তার দুই স্ত্রীর উপর প্রতি বছর অত্যাচার করছেন। তার দুই স্ত্রী মিলে মোট ছয়টি কন্যা সন্তান জন্ম দিয়েও আওয়াল সাহেবের মুখে হাসি ফুটাতে পারে নাই। তার এই পুত্র সন্তান প্রীতির জন্য দ্বৈত বিবাহ জামাল সাহেবের পছন্দ না। তাই তিনি আওয়াল সাহেবকে এড়িয়ে চলেন। তার দুই সন্তান মামুন ও কামাল দুইজনকেই তিনি বিশেষভাবে বলে দিয়েছেন পাশের বাড়ির কারো সাথে মিশতে না। তাদেরকে এড়িয়ে চলতে। এখন গায়ে ঘেষাঘেষি বাড়ি চাইলেও এড়িয়ে চলা সম্ভব না।



জামাল সাহেবের দুই পুত্র মামুন ও কামাল। কামাল কলেজে ২য় বর্ষে পড়ে আর মামুন ক্লাস সেভেনে পড়ে। কামাল বাড়ির দোতালায় একা থাকে। আর তার বাবা-মা এবং ছোট ভাই মামুন নিচতলায় থাকে। তার জানালা দিয়ে পাশের বাড়ির জানালা অনেকখানি দেখা যায়। গায়ে ঘেষাঘেষি বাড়ি হবার কারণে জানালা খুললে আলো বিশেষ আসে না তাই জানালা খোলা হয় না। কামালের তখন টেস্ট পরীক্ষা চলছে। রাত পোহালে পরীক্ষা। অনেক রাত পর্যন্ত জেগে পড়ছে। পড়া শেষে যখন ঘুমাতে যাবে তখন সে কেমন যেন মিহি গলায় কেমন যেন শব্দ শুনতে পেল। একা ঘরে এই অস্পষ্ট শব্দ গুনুর গুনুর করে তার কানে বাজতে লাগলো।



তারা এই নতুন বাসায় এক মাস হল উঠেছে। এতদিনে কোন শব্দ সে শুনতে পাইনি আজ হঠাৎ করে কেমন যেন মিহি গলায় অস্পষ্ট শব্দ তার কানে বেজে উঠছে। একটা শীতল বায়ু তার সারা শরীরে প্রবাহিত হয়ে গেল। একটা ভয় তার মনে উঁকি দিল। একটু খেয়াল করে সেই অস্পষ্ট শব্দ শোনার যখন চেষ্টা করলো তখন তার মধ্যে আরও ভয় ঢুকে গেল। একটু আগে সে হৈমন্তীর চরিত্র বিশ্লেষণ কর প্রশ্নটি পড়েছে। সেই একই প্রশ্ন মেয়েলি গলায় কে যেন পড়ে যাচ্ছে। প্রচন্ড ভয় পেলে মানুষের প্রস্রাবের বেগ পায়। কামালের একইভাবে প্রস্রাবের বেগ পেয়েছে। এতই বেগ যে যেকোন সময় বের হয়ে আসবে। এই বেগ নিয়ে বিছানায় ঘুমানো যাবে না। সমস্যা হল নতুন বাসার দোতালায় এখনো বাথরুমের সংযোগ দেয়া হয়নি তখনো। বাথরুম করতে হলে নিচতলায় যেতে হবে। এই মধ্যরাতে এমন ভুতুরে আওয়াজের মধ্যে তার সাহস হল না দরজা খুলে নিচতলায় গিয়ে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে।



এইদিকে প্রস্রাবের বেগ বাড়ছে। সে চিন্তা করতে লাগলো কিভাবে এই প্রস্রাবের বেগকে মুক্ত করা যায়। তখনই তার নজর জানালার দিকে চলে গেল। জানালা সামান্য একটু খুলে সেখান দিয়ে প্রস্রাব করা যায়। এতে দরজা খুলে আর বাইরে যাওয়া লাগবে না। সে ধীরে ধীরে জানলার দিকে গেল। জানালা একটু খুলে সে পাশের বাসার জানালার দিকে তাকালো। পাশের বাসায় আলো নিভানো এবং জানালা বন্ধ করা। সে পরম নিশ্চিন্তে প্যান্টের চেইন খুলে তার হাত চেইনের ভেতর ঢুকিয়েছে আর ঠিক তখনই পাশের বাসার জানালা খুলে গেল এবং আলো জ্বলে উঠলো। কামালের বুক কিছুক্ষণের জন্য পিলে চমকানোর মত আটকে গেল। সে ভুলে গেল চেইন থেকে তার হাত বের করতে। সেই অবস্থায় সে কিছুক্ষণ ঘটনার আকস্মিকতায় বিহবল হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। তার হুঁশ হল যখন পাশের বাসার জানালা একটি ঢেউ খেলানো হাসি দিয়ে সজোরে বন্ধ হয়ে গেল। সে সাথে সাথে তার হাতের অবস্থান দেখে জিহবায় কামড় দিয়ে ফেললো।



একটু হলেই সে বড় কেলেঙ্কারিতে পড়ে যেত। প্রস্রাবের বেগের কথা ভুলে সে ব্যস্ত হয়ে পড়লো জানালা দিয়ে উঁকি মারার খেলায়। জানালা একটুখানি ফাঁক করে পাশের বাড়িতে খেয়াল করা। সে যখন জানালা খুলে উঁকি মারে তখন পাশের বাসার জানালা বন্ধ হয়ে যায় আবার সে যখন জানালা বন্ধ করে তখন পাশের বাসার জানালা খুলে যায়। এভাবে জানালা খোলাবন্ধ করে উঁকি মারার খেলা কিছুক্ষণ চলল। কিছুক্ষণ আগে যে ভয়ের পরিবেশ তার মধ্যে দোল খেয়েছিল তার উৎস এই পাশের বাড়ির জানালা এটা জানার পর থেকে তার ভয় উধাও হয়ে গেছে। এক অন্যরকম আবিষ্কার জয়ের আনন্দে সে আত্মহারা হয়ে গেল।



চুম্বকের বিপরীত দুটি মেরু কাছাকাছি আসলে পরস্পরকে আকর্ষণ করে। এক জানালা হতে অন্য জানালার ব্যবধান মাত্র একহাত। এই এক হাত ব্যবধানে দুটি ভিন্ন লিঙ্গের মানুষ বসবাস করে। তাদের মধ্যে পারস্পরিক আকর্ষণ ঘটবে এটাই স্বাভাবিক। তবে তাদের এই আকর্ষণে একটা লুকোচুরি ছিল। কামালের পাশের বাসায় তারই বয়সী এক সুদর্শনা নারী থাকে অথচ সে একমাসেও আবিষ্কার করতে পারেনি এরজন্য সে নিজেকে বারবার ধিক্কার দিচ্ছিল। এখন যেহেতু জেনেই ফেলেছে তার জানালার ঠিক একহাত সামনেই এক বিপরীত লিঙ্গ বসবাস করে তাই চুম্বকের ধর্ম অনুযায়ী তার মধ্যে প্রবল আকর্ষণ অনুভূত হল। কিন্তু সমস্যা হল দুইজন একটু কাছে যেতে চাইলে দুইজনেই লজ্জায় পরস্পরের আড়ালে চলে যায়। এরপর আড়াল থেকে চলে লুকোচুরি। এই লুকোচুরি খেলা বন্ধ করতে চাইলেও কামাল বন্ধ করতে পারছে না। সে এখন পর্যন্ত মেয়েটির নাম পর্যন্ত জানতে পারলো না। দুইজন দুইজনের সামনে গেলেই প্রথম সাক্ষাতের সেই অস্বস্তিকর দৃশ্যর কথা মনে পড়ে আর দুইজনেই হাসি দিয়ে আড়াল হয়ে যায়।



মুখের ভাষা যেখানে লজ্জা পায় সেখানে চিঠি সেই লজ্জা দূর করে। কামাল ছোট একটা চিরকুটে তার নাম এবং সেদিনের ঘটনার জন্য সরি লিখে জানালা দিয়ে ছুড়ে মারলো। এরপর কামালের শুরু হল অন্তিম অপেক্ষা। জানালার পাশে বসে সে অপেক্ষা করতে থাকলো কোন কিছু ছুড়ে আসে কিনা। এই অপেক্ষার মুহুর্ত তার মধ্যে এক ভালোলাগার অনুভূতি সৃষ্টি করলো। অপেক্ষার প্রহর যতই দীর্ঘ হচ্ছে তার মনের অস্থিরতা ততই বাড়ছে। তবে একসময় এই অপেক্ষার প্রহর শেষ হল। জানালার ঐপাশ থেকে আরেকটি চিরকুট ছুড়ে মারা হল। চিরকুটে কি লেখা আছে এটা পড়ার ভাবী আনন্দে কামালের চোখে আনন্দে ছলমল করে উঠলো। সময়ক্ষেপণ না করে সে বেশ দ্রুততার সাথে চিরকুটের ভাজ খুললো। সেখানে একটি হাসির ইমোটিকোন সহ তিন বর্ণের যে শব্দটি ছিল এই শব্দটি যে একসময় তার হৃদয় মাজারে আসন গেড়ে বসবে তা তখনো কামাল বুঝতে পারেনি।



সেই তিন বর্ণের নামটি ছিল মিথিলা। নিজের মনেই কয়েকবার মিথিলা বলে উচ্চারণ করে সে আবার চিরকুট লিখে ছুড়ে মারলো। সেখানে লিখে দিল তুমি কোন কলেজে পড়াশোনা কর? এরপর আবারও শুরু হল অপেক্ষা। কখন চিরকুটের উত্তর আসে। কিছুক্ষণ পর আবারও উত্তর আসলো। সেই চিরকুটে লেখা ছিল তিনটি বর্ণ। ভিএনসি। এভাবেই মুখের ভাষা চিরকুটে স্থান পেয়ে তাদের যোগাযোগ চলছিল। কামালের কাছে চিরকুট আদান প্রদানের এই খেলা ছিল জগতের সবচেয়ে আনন্দের খেলা। এই খেলায় আছে টানটান উত্তেজনা এবং কি ঘটবে তা জানার আগ্রহ। এই জিনিস সব খেলায় পাওয়া যায় না।



প্রতিবেশীর প্রতি জামাল সাহেবের অনেক বিরাগ ছিল। পাশের বাড়িতে ছয়টি যুবতী মেয়ে। যেকোন সময় যেকোন অঘটন ঘটে যেতে পারে। বিকালে পাশের বাসার সেই যুবতী মেয়েরা ছাদে আড্ডা দিতে আসে তাই জামাল সাহেব তার পুত্রদ্বয়কে ছাদে উঠতে নিষেধ করেন। সেই উঠতী ছয় যুবতী কন্যা থেকে যথা সম্ভব নিরাপদে রাখার চেষ্টা করেন তার ছেলেদেরকে। একদিন পাশের বাড়ির আওয়াল সাহেবের দুই মেয়ে ভাপা পিঠা নিয়ে তাদের বাসায় আসলো। জামাল সাহেব তার পুত্রদ্বয়কে তাদের ঘর থেকে বের হতে দিলেন না। ঘরেই বন্দী করে রেখে ঐ দুই মেয়েকে বিদায় করলেন। এছাড়াও ছেলেদের মোবাইলে বেশি টাকা ভরে দিতেন না। মোবাইলে কার সাথে কথা বলছে তাই প্রায়ই খতিয়ে দেখতেন। এত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও শেষ রক্ষা হল না। জানালার মাধ্যমে যে চিরকুটের আদান প্রদান ঘটছে তা জামাল সাহেবের চোখের অগোচরেই ঘটে গেল।



চিরকুটের নিষ্প্রাণ ভাষা একদিন প্রাণ পেল। চিরকুটের মাধ্যমে কামাল একদিন জানালো সে ভিকারুননিসা নূন কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে থাকবে। সে যেন তার সাথে দেখা করে। কামালের ঐ প্রস্তাবে অপর পক্ষের মৌন সম্মতি ছিল। এই সম্মতি দেখে কামালের মধ্যে বিজয়ের হাসি ফুটে উঠলো। প্রথম যেদিন তাদের দেখা হয় সেদিন তারা অনেকক্ষণ কথা বলতে পারলো না। এতদিন চিরকুটে ভাবের আদানপ্রদান ঘটেছে হঠাৎ করে আজ প্রথম তার সাথে কথা বলতে যাবে। এখন কি দিয়ে শুরু করবে কেউ বুঝে উঠতে পারছে না। পাশাপাশি কিছুক্ষণ হেঁটে তারা বেইলী রোডে বসলো। নিরবতার মাধ্যমেই তারা মনে মনে কিছুক্ষণ কথা বলল। কামাল মনে মনে বলল

- আজ তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে

মিথিলা এই কথা বুঝতে পেরে একটা হাসি দিল। এরপর কামালের দিকে তাকিয়ে তার শার্টের বোতামের দিকে তাকালো। এরপর সে মনে মনে বলল- শার্টের বোতাম সব লাগিয়ে রেখেছো কেন? একটা খুলো।

কামাল গরম লাগছে এই ভঙ্গী করে তার শার্টের একটা বোতাম খুলে ফেললো। এরপর কামাল মনে মনে বলল, তুমি এত সুন্দর কেন?

- তুমি সুন্দর করে তাকিয়ে থাকো তাই

- তোমাকে প্রতিদিন দেখতে ইচ্ছে করে কিন্তু আব্বু সমস্যা করে

- কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে থাকলেই তো পারো

- তুমি কিছু মনে করবে নাতো?

- আমি কিছুই মনে করবো না

- আচ্ছা, আমি কখনো এভাবে কোন মেয়ের সাথে দেখা করিনি। আজকেই প্রথম

- আমারও আজকে প্রথম

- আমাদের এখন কি করা উচিত

- কোথাও খেতে গেলে মন্দ হয় না। এখানে সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে

- মন্দ বলোনি। কি খাওয়া যায়?

- আইসক্রীম

এতক্ষণের নিরব কথোপকথন কামালের সশব্দে ভেঙ্গে গেল। আর এতে মিথিলা চূড়ান্ত পর্যায়ে অবাক হল কারণ কামাল বলে উঠলো- চলো আইসক্রীম খেতে যাই। তাদের মনের এই অপরূপ যোগাযোগে মিথিলা অবাক হয়ে চিন্তা করতে লাগলো সেই কি তার মনের পুরুষ যার জন্য মেয়েরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকে।



লেখকরা স্পেডকে যদি স্পেড বলতে না পারে তবে সমাজের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন সাধিত হয় না। মিথিলা ও কামালের ভালোবাসার পূর্ণতা যখন পাচ্ছিল তখন একটি ঘটনা গল্পের ঘটনাপ্রবাহকে পরিবর্তণ করে ফেলে আর তা পাঠকদের অস্বস্তিতে ফেলে দিবে। এখন স্পেডকে স্পেড বলার খাতিরে তা প্রকাশ করতেই হচ্ছে। কারণ আমাদের সমাজের চিত্রটাই এমন। আওয়াল সাহেব বিষয় সম্পত্তি ভালোই করেছেন। যে বিষয় সম্পত্তি তিনি করেছেন তা দিয়ে তার মনের সকল সাধ পূরণ করতে পারবেন কিন্তু একটি ছেলে সন্তানের আশা তার পূরণ হল না। দুইটি বিয়ে করেছেন। ১ম স্ত্রীর ঘরে চারটি মেয়ে হয়েছে। এরপর এই ঘর থেকে পঞ্চম সন্তান নেয়ার সাহস না করে ২য় বিবাহ করে ফেলেন। দ্বিতীয় ঘরে এখন পর্যন্ত দুটি কন্যা সন্তান জন্ম নিয়েছে। মিথিলা প্রথম ঘরের সন্তান।



আওয়াল সাহেবের ২য় স্ত্রীর নাম সাবিতা। যেমন রূপ তেমন তার চলন। সবার কাছে সাবিতা ভাবী নামেই পরিচিত ছিল। তার রূপ ও সৌন্দর্যের প্রশংসা আশেপাশের সব পুরুষ মানুষের মুখেই শুধু ছিল না অনেক উঠতি যুবকের মুখেও ছিল। সবার একটা বাসনা ছিল সাবিতা ভাবীর মত একটা বৌ পেলে জীবনে আর কি চাই? তবে সবার একটা আক্ষেপ ছিল শুধু মাত্র একটা পুত্র সন্তানের আশায় আওয়াল সাহেব এত সুন্দরী একটা হুর পরীকে বিয়ে করে ঘরে এনেছেন। পুত্র সন্তানই যখন মুখ্য তখন এত সুন্দরী বউ কেন আনার দরকার ছিল? তাও আবার দুইটা বউ। টাকা থাকলে মানুষ কত কিছুই না করতে পারে। এলাকার মানুষ আওয়াল সাহেবের উদাহরণ দিয়ে বলে- আল্লাহ যারে ধন দেয় তারে জন দেয় না। কত কবিরাজ আর হেকিমের শরণাপন্ন হয়েও একটা পুত্র সন্তানের মুখ দেখতে পারলো না।



সাবিতা একদিন কেনাকাটা করে বাসায় ফেরার জন্য সিএনজি খুঁজছিল। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেও একটা সিএনজি পাচ্ছিল না। ঠিক তখন জামাল সাহেব ঐ রাস্তা দিয়ে সিএনজি করে যাচ্ছিলেন। সাবিতা ভাবীকে একা পেয়ে জামাল সাহেব আকাশের চাঁদ যেন হাতে পেয়ে বসলেন। সাবিতার ঠিক সামনে গিয়ে সিএনজি থামিয়ে বললেন

- আরে সাবিতা ভাবী যে, কোথায় যাবেন?

- দেখন তো ভাই, বাসায় যাব কিন্তু বিশ মিনিট ধরে অপেক্ষা করেও সিএনজি পাচ্ছি না

- সিএনজি পাচ্ছেন না এটা কোন কথা হল, আপনি কোমল চোখে হাত দিয়ে একটু ইশারা করলে সবাই আপনাকে লিফট দিতে ছুটে চলে আসবে

- এখন কি আপনাকে কোমল চোখে হাত দিয়ে ইশারা করতে হবে ?

- হা হা, কি যে বলেন ভাবী। আমাকে ইশারা না করলেও আমি চলে আসবো

- আপনি কি বাসার দিকে যাচ্ছেন?

- আপনি যেহেতু বাসায় যাবেন এখন বাসায় না গেলেও আপনাকে নিয়ে বাসায় ফিরতে হবে

সাবিতা কথা না বাড়িয়ে সিএনজিতে উঠে পড়ল। সে যখন সিএনজিতে উঠতে যাচ্ছিল তখন তার ধবল পেটের অনেকখানি দেখা যাচ্ছিল। সেখানে ঢেউ খেলা করছে। জামাল সাহেবের চোখ সেই ঢেউতে আছরে পড়ল। নিজেকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করে সে একটু সরে বসে সাবিতাকে বসতে দিল। জামাল সাহেব নিজেকে অনেক ধন্য মনে করছে। এলাকার মানুষ যার জন্য পাগল। যার রূপের প্রশংসা সবার মুখে মুখে সেই সাবিতা ভাবী তার পাশে বসে আছে। এই ঘটনা ঢোল পিটিয়ে সবাইকে জানাতে ইচ্ছে করছে কিন্তু কামালের মা জানতে পারলে তাকে ঝাড়ু পেটা করে বাসা থেকে বিদায় করবে। জগতের এই এক কঠিন নিয়ম। সকল উচ্ছ্বাস ঢোল পিটিয়ে বলা যায় না।



জামাল সাহেব মনে মনে কথা সাজাচ্ছেন। কিভাবে কথা শুরু করবেন। এরপর মুখে হাসিমুখ এনে তিনি জিজ্ঞেস করলেন

- ভাবীকে দেখলাম ছাদে বড়ই শুকিয়ে দিয়েছেন

- জ্বী ভাই, আঁচার বানাবো

- ভাবী মনে হয় ভালো আঁচার বানাতে পারেন।

- ভালো এই কথাটা আপনিই প্রথম বললেন। ভালো আঁচার বানিয়েও আপনার আওয়াল সাহেবের মন পেলাম না

- ওনার মন পেতে হলে ওনাকে পুত্র সন্তান উপহার দিতে হবে

- কিন্তু ভাই, ওটা কি আমার হাতে? ভাই তো মনে হয় জানেন, এক্স এক্স আর এক্স ওয়াই এর কাহিনী।

- সেটাতো জানি

- কিন্তু এই জিনিসটা তো আপনাদের ভাই বুঝতে চায় না। কন্যা সন্তান হলে আমার উপর দোষ দেয়। তার যে ওয়াই শুক্রানু দুর্বল সেটা সে বুঝতে চায় না। আমাকে লোভ দেখিয়ে পুত্র সন্তান সে চায়। বলে পুত্র সন্তান উপহার দিতে পারলে সে উত্তরায় একটা ফ্লাট কিনে দিবে।

- ভাবী, আমি আপনার দুঃখটা বুঝি। আপনার এত রূপ লাবণ্য কিন্তু আওয়াল সাহেব এর দামই দিচ্ছে না।

- আমার দুঃখটা কেউ বুঝতে চায় না বুঝলেন ভাই। সবাই ভাবে সাজগোজ করে ঘুরে বেড়াচ্ছি, কেনাকাটা করছি, আমি অনেক সুখে আছি। আমি ভাই সুখে নাই।

- বুঝতে পেরেছি ভাবী।

এভাবে কথা বলতে বলতে সিএনজি যখন এলাকার কাছাকাছি এলো তখন জামাল সাহেব সিএনজি থেকে নেমে পড়লেন এরপর বললেন- ভাবী, একা যান, এলাকার মানুষ দেখলে খারাপ কিছু ভাববে।

সাবিতা জামাল সাহেবের ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে গেল। একটা অমায়িক হাসি দিয়ে সেখান থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল। আর এদিকে জামাল সাহেবের বুকে একটা চিনচিন ব্যথা অনুভূত হল। এই ব্যথা হৃদয়ক্ষরণের ব্যথা।



একদিন জামাল সাহেব বাসায় একা ছিলেন। তখন দরজায় একজন কলিংবেল বেজে উঠলো। জামাল সাহেব পিপহোল দিয়ে উঁকি মেরে দেখলেন পাশের বাসার সাবিতা ভাবী। জামাল সাহেব যেন আবারও আকাশের চাঁদ হাতে পেয়ে গেলেন। দরজা খুলে হাসিমুখে বলে উঠলেন,

- আরে সাবিতা ভাবী যে

- বড়ই আঁচার নিয়ে আসলাম। প্রতিবেশী মানুষ আপনারা। আপনাদের না দিয়ে কিভাবে খাই?

- প্রতিবেশি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বললে সেটা ঘরের জন্য অমঙ্গল। আগে ঘরে আসেন, বসেন তারপর কথা বলি

- হাহা, মঙ্গল, অমঙ্গল বুঝনে দেখি। তা ভাবী কোথায়? ওনাকে তো দেখি না। শুধু আপনার সাথে বেশি কথা হয়।

- ছেলেসহ আপনাদের ভাবী তার ভাইয়ের বাসায় গিয়েছে

- তা, আপনি গেলেন না

- নতুন বাড়ির কাজ ধরেছি। দেখাশোনা করা লাগে

সাবিতা সোফায় গিয়ে বসল। জামাল সাহেবও তার পাশে গিয়ে বসল। সাবিতার দিকে তাকিয়ে একটু পর পর মুচকি হাসি দিয়ে এক প্রাগৈতিহাসিক বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করছিল তা সাবিতা বুঝতে পারছিল না কিনা তা বোঝা যাচ্ছিল না। সাবিতা আঁচারে বাটি সামনে রেখে বলল,

- ভাই, একটু আঁচার চেখে দেখেন তো কেমন হল?

জামাল সাহেব অন্যমনস্ক হয়ে আঁচার তুলতে গিয়ে আঁচারের ঝোল চোখে লাগিয়ে ফেলে। চোখের জ্বালা পোড়ায় যখন উহ আহ করছিলেন তখন সাবিতা গ্লাস থেকে পানি ঢেলে চোখ মুছে দিল এরপর আঁচল দিয়ে চোখ মুছে দিল। সাবিতা যখন চোখ মুছ ছিল তখন তার পুরুষ্ট বুক জামাল সাহেবের মুখের কাছাকাছি চলে আসছিল। সাবিতার উষ্ণ পরশে জামাল সাহেবের নিঃশ্বাস ভারি থেকে ভারি হল। এই ভারি নিঃশ্বাসের অর্থ সকল মানুষই বুঝতে পারে। এরপর কি করতে হবে এরজন্য কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রয়োজন নেই। মানুষের মস্তিষ্কে তা জন্মের পরেই গেঁথে থাকে। জামাল সাহেব ও সাবিতা সেই জন্মসূত্র জ্ঞানের পূর্ণ প্রতিফলন দেখালো।



আচ্ছা প্রেম কিভাবে হয়? পাশাপাশি একসাথে চললে, কথা বললে, একসাথে খেলে তবে কি প্রেম হয়? না, প্রেম এভাবে হয় না। প্রেম শুরু হয় চোখ থেকে। একজন আরেকজনের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকবে। দুইজনের চোখাচুখি যখন হবে তখন দুইজন একটি হাসি দিয়ে চোখ সরিয়ে ফেলবে এরপর আবার চোখাচুখি হবে। এই চোখাচুখি থেকে প্রেমের শুরু হয়। আর যে প্রেম চোখ থেকে শুরু হয় সেটাই প্রকৃত প্রেম কারণ চোখ যে মনের কথা বলে। কামাল আর মিথিলার প্রেম এভাবেই শুরু হয়েছিল। আর তাদের প্রেমের নিরাপদ স্থান ছিল তাদের ঘরের বাতায়ন। এই বাতায়ন দিয়ে দুটি চোখের যে ভাষা আদানপ্রদান হত তার অর্থ শুধু এই দুটি প্রানীই বুঝত।



প্রেম আর ধূমপানের অভ্যাস কখনো গোপন রাখা যায় না। এই গোপনীয়তা ফাঁস হয় প্রেমের প্রশ্রয় থেকে। কামাল ভালো গিটার বাজাতে পারত। প্রায়ই জানালার পাশে দাঁড়িয়ে মিথিকে গিটার বাজিয়ে শোনাত। সেদিন ছিল পূর্ণিমা। চাঁদের আলোয় চারিদিকে যেন বাণ ডেকেছে, চারদিকে আলো ছড়িয়ে পড়ছে। এই চাঁদকে বলা হয় প্রেমের চাঁদ। এই চাঁদের আলো হৃদয়কে অনেক আবেগ তাড়িত করে। এই আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে এর চূড়ান্ত ফলাফল হয় কামলীলা। এক হাত ব্যবধানের জানালার পাশে দাঁড়িয়ে সেদিন কামাল মিথিকে গিটার বাজিয়ে শোনাচ্ছিলো কিন্তু মিথির মন পড়ে ছিল আকাশের চাঁদের দিকে। সে বলে উঠল



- আকাশে কি সুন্দর চাঁদ উঠেছে। মনে হচ্ছে চাঁদের আলোয় নিজেকে সপে দেই। চলো না ছাদে যাই?

- মাথা খারাপ, এত রাতে কেউ ছাদে যায়?

- আমি চাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকবো আর তুমি আমাকে গিটার বাজিয়ে শোনাবে

- পাগলামী করো না

- এটাকে তুমি পাগলামী বলছো কেন? তুমি ভালোবাসার কিছুই বোঝ না। তুমি আমি পাশাপাশি বসে চাঁদ দেখবো। তুমি গিটার বাজাবে আমি গুণগুণ করে গান গাবো- চাঁদের হাঁসি বাধ ভেঙ্গেছে, উছলে পড়ে আলো ও রজনী গন্ধা তোমার গন্ধ সুধা ঢালো। উফ ভাবলেই কেমন যেন ভালোবাসা জেগে উঠছে।

- এত রাতে কেউ আমাদের দেখে ফেললে সমস্যা হবে। তুমিই আমার চাঁদ। তোমাকে দেখলেই আমার চাঁদ দেখা হয়ে যাবে। আকাশের চাঁদ আর দেখা লাগবে না।

- হয়েছে ভীরু কোথাকার। আসলে তোমার সাহস নেই। আর এত রাতে কে ছাদে আসবে? চলো না দুইজন মিলে চাঁদ দেখি?

- তোমাকে নিয়ে আর পারা গেল না। আচ্ছা চল কিন্তু একটা শর্ত আমাকে চুমু খেতে হবে

- চাঁদের আলোয় চুমু! এই আইডিয়া আমার মাথায় আসেনি। তুমিও দেখি অনেক রোমান্টিক!



আকাশের চাঁদের কারণে জোয়ার ভাটা হয়। সে তার আকর্ষণে পৃথিবীর জলকে তার দিকে টেনে নেয়। এই আকর্ষণে মানুষের হৃদয় গহীনে জমে থাকা দুঃখের জল, প্রেমের জল তারাও আকর্ষিত হয়। তাই পূর্ণিমা রাতে দুঃখী এবং প্রেমী এই দুই ধরনের মানুষ দেখতে পাওয়া যায় যারা চাঁদের আকর্ষণে ছুটে আসে। কামাল আর মিথিলা ছুটে এসেছে কারণ তাদের হৃদয় গহীনে প্রেমের জল সঞ্চিত আছে কিন্তু তাদের বাসাতে একজন মানুষ আছে যে দুঃখের জল বহন করে চলছে তা তারা জানতেও পারেনি। জানলে হয়ত চাঁদের আকর্ষণে ছাদে আসত না।



আকাশে চাঁদ তার আলোর বন্যা চারদিকে ছড়িয়ে দিয়েছে। এই আলোর বন্যায় গোসল করছে পাশাপাশি ছাদে থাকা দুই কপোত-কপোতী। এইদিকে রূপ ও সৌন্দর্যে ভরপুর সাবিতা তার রূপের মূল্য না পেয়ে দুঃখের জল খুলে বসেছে। চাঁদের আকর্ষণে তার দুঃখের জল আকর্ষিত হয়ে তাকে ছাদে টেনে নিল। তার ইচ্ছা ছিল ছাদে বসে বসে চাঁদের সাথে দুঃখ ভাগাভাগি করবে। কিন্তু ছাদে যে তারজন্য এমন চমক থাকবে সে বুঝতেও পারেনি। ছাদে উঠে সে চুম্বনরত দুই ছায়া দেখতে পেল। প্রথম দিকে এই দৃশ্য দেখে তার দুঃখ চলে গেলেও পরক্ষণে তার প্রেমের জল যখন আকর্ষিত হল তখন তার আবার দুঃখ ফিরে এল। তার প্রেমের জলে সাঁতার কাঁটার মত এখন কেউ নেই। সেই জলে এখন শ্যাওলা জমে গেছে।



তাদের আলিঙ্গণে কোন বাঁধা না দিয়ে সাবিতা নীরব দর্শক হয়ে কিছুক্ষণ থেকে সেখান থেকে বিদায় নিল। এরপরেই তার মনে হল এর পরিণতি শুভ নয়। তাই সে কামালের বাবা জামাল সাহেবকে সব কিছু খুলে বলল। জামাল সাহেব ছেলের এমন পরিণতি দেখে বিস্মিত হলেন। এই সম্পর্ক কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না। যে বাড়ির বউ এর সাথে তিনি নিজেই সহবাস করেছেন এখন সেই বাড়ির মেয়ের সাথে তিনি নিজের ছেলের বিয়ে দিবেন? এটা বিবেকে বাধে। রুচিতেও আসে না। কিন্তু এই কথা শুধু কামাল কেন কাউকে বলা যাবে না। এটা রাখতে হবে অতি গোপন।



চাঁদের আলো প্রেমের গভীরতা বাড়াতে অনেক সাহায্য করে। সেদিনের চাঁদের আলোয় তাদের প্রেম গভীরতা পেলেও এখন এই বিষয়ে সবাই জেনে গেছে। জামাল সাহেব মিথির বাবাকে সব কিছু খুলে বললেন। আওয়াল সাহেব সাথে সাথে মিথির ঘর পরিবর্তণ করে দিলেন। ফলে জানালা দিয়ে প্রতিদিন যে চোখাচুখি হত, ভাবের আদান প্রদান হত তা বন্ধ হয়ে গেল। কামাল আর মিথির প্রেমে ঝড় শুরু হল তখন। সেই সাথে কামালের প্রেমের পরীক্ষা শুরু হল।



কামালের প্রেমের পরীক্ষা দিন দিন কঠিন থেকে কঠিনতর হল। প্রতিদিনের হাত খরচের জন্য যে টাকা দেয়া হত সেটা কমে গেল। জানালার পাশে দাঁড়িয়ে যে নিরাপদ কথাবার্তা হত তা বন্ধ হয়ে গেলে ফলে তারা কলেজের সামনে গিয়ে কথা বলত। কিন্তু হাত খরচ না দেয়ার কারণে কামালের জন্য কষ্ট হয়ে যেত।



প্রেমের ক্ষেত্রে ছোট ভাই বা বোন অনেক উপকারে আসে। কামালের হাত খরচ যখন কমিয়ে দেয়া হল তখন কামালের ছোট ভাই মামুন বাবার পকেট থেকে টাকা চুরি করে তা বড় ভাইকে দিত। এভাবেই চলছিল তাদের প্রেম। কিন্তু প্রেমে যখন একবার ঝড় আসে তার রেশ থেকেই যায়। একদিন জামাল সাহেব রিকশায় মিথি আর কামালকে দেখে ফেলে। এরপর ছেলেকে শাসন করতে গেলে ছেলেও প্রতিবাদী হয়ে উঠে। মিথিকেই সে বিয়ে করবে বলে বাবাকে কড়া ভাষায় জানিয়ে দেয়। তাদের এই সম্পর্ক মেনে নেয়া কখনো সম্ভব নয়। কেন সম্ভব নয় এই প্রশ্ন যখন কামাল জিজ্ঞেস করে তখন জামাল সাহেব থতমত খেয়ে যান। কেন সম্ভব নয় তাতো অতি গোপন। এই তথ্য ফাঁস হয়ে গেলে তার সংসারই থাকবে না। তাই তিনি বানিয়ে বানিয়ে বলতেন- আওয়াল সাহেব লোকটা ভালো না। দুইটা বিয়ে করেছে। তখন কামাল বলত- দুইটা বিয়ে করেছে তো কি হয়েছে। বৈধভাবেই বিয়ে করেছে। আর এমন না যে দুই বউকে খাওয়াতে পারছে না। আওয়াল সাহেব কেমন তাতো আমার জানা দরকার নেই। মিথি ভালো মেয়ে এটাই আমার জানা দরকার।



কামালের যুক্তিতে ও পছন্দে কামালের মা সায় দিলেও জামাল সাহেব সায় দিচ্ছিল না। এরপর কামাল রাগ করে বাসা থেকে চলে যায়। দুইদিন পরেও যখন কামাল বাসায় ফিরছিল না তখন কামালের মা ঘরে অনশন শুরু করেন। তিনি কামালের সাথে মিথির বিয়ে দিবেন। কামালের মায়ের পীড়াপীড়িতে জামাল সাহেব অবশেষে রাজি হলেন। কিন্তু বিবেকের দংশনে বারবার জ্বলছিলেন। তিনি নিজেকে স্বান্তনা দিয়ে যুক্তি দাঁড় করালেন- সাবিতা ভাবী মিথির সৎ মা। তার সাথে সেদিন কি ঘটেছে এটা নিছক দূর্ঘটনা। তারা পরিস্থিতির শিকার। সাবিতা ভাবী আর তাদের সম্পর্ক মিথি আর কামালের মাঝে বাঁধা হয়ে দাঁড়ানো উচিত না।



নিজের মনকে নিজের যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে তিনি কামালকে খুঁজে নিয়ে আসলেন। কামালকে বললেন- মিথির সাথেই তার বিয়ে দিবেন কিন্তু শর্ত আগে এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হবে এরপর ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর তিনি মিথির বাবার কাছে প্রস্তাব নিয়ে যাবেন। কামাল পিতার প্রস্তাবে সায় দিয়ে পড়াশোনায় মনোনিবেশ করলো।



এভাবে তিন চারমাস কেটে যাবার পর একটি বিরাট ঘটনা ঘটে গেল। এলাকার সবার মুখে মুখে সেই ঘটনা। আওয়াল সাহেব রবার্ট ব্রুস এর মত ছয়বার ব্যর্থ হয়ে সাত বারের মাথায় বিজয়ী হয়ে পুত্র সন্তানের বাবা হতে যাচ্ছেন। পুত্র সন্তানের আগাম সংবাদে এলাকার সবাইকে মিষ্টিমুখ করানো হল। সবার মুখে মুখে আওয়াল সাহেব এর বন্দনা। যাক এতদিনে আওয়াল সাহেব এর সম্পত্তির একটা কূল কিনারা হল। তার বংশ রক্ষা হবে। আর এই বংশ রক্ষা যে করলো সেই সাবিতা ভাবীর প্রশংসাও থেমে থাকলো না। যাক সাবিতা ভাবী তাহলে উত্তরায় একটা ফ্ল্যাট পাচ্ছেন। পুত্র সন্তানের খবরে এলাকার সবাই খুশি হলেও দুইজন মানুষ খুশি হতে পারেনি। এই দুইজন মানুষ হল সাবিতা ভাবী আর জামাল সাহেব। একদিন সাবিতা জামাল সাহেবকে জানালো তার গর্ভের পুত্র সন্তানের জনক হচ্ছে সে। জামাল সাহেব এই খবরে বড়ই চিন্তিত হয়ে পড়লেন। দুঃখ বিষাদে ওনার মনে ভরে উঠল।



মানুষ পালিয়ে বেড়ায় অপরাধবোধ থেকে বাঁচতে। জামাল সাহেব তার যৌন চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে সাবিতা ভাবীর প্রতি যে অপরাধ করে ফেলেছে এরজন্য তিনি সাবিতার কাছ থেকে পালিয়ে বাঁচতে চাইলেন। ঐ বাড়িতে ছেলের বিয়ে দিলে আরও কাছে আসা হবে। তাই তিনি হিসাব নিকাশ করতে লাগলেন কিভাবে ছেলেকে এই প্রেম থেকে ফেরানো যায়। কামালের মা এই বিয়েতে রাজি কিন্তু তিনি যে রাজি না এই কথা বোঝাতে পারছেন না।

কামালের পরীক্ষা শেষ হল এরপর সে একটা ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিও হল। এদিকে আওয়াল সাহেবেরও পোয়া ভারি। তার ঘরে পুত্র সন্তান এসেছে এখন তিনি সংসারের প্রতি নাকি মনোযোগ দিচ্ছেন। মেয়েদের বিয়ের ব্যপারে তোরজোড় শুরু করেছেন। পুত্রকে দেয়া প্রতিশ্রুতির মত তিনি কামালের মা সহ মিষ্টি নিয়ে গেলেন আওয়াল সাহেব এর বাসায়। মিষ্টি হাতে দেখে আওয়াল সাহেব বলে উঠলেন

- আরে জামাল ভাই যে, মিষ্টি আপনি এনেছেন কেন? মিষ্টি তো দিবো আমি

- এত সাধনার জিনিস আর খুশির খবর মিষ্টি ছাড়া কি দেখতে আসা যায়

- হা হা, তা বলেছেন ভাই, সাত বারে গিয়ে সফল হলাম। পুত্র সন্তান ছাড়া বংশ রক্ষা হবে কি করে?

- তা পুত্রকে দেখান। দেখি পুত্রের চাঁদমুখ খানা

- কই গো সাবিতা, আমাদের চাঁদের কনাকে এখানে নিয়ে আসো

সাবিতার নাম শুনেই জামাল সাহেব কেমন যেন ইতস্তত করে উঠলেন। এতক্ষণ আত্মবিশ্বাসের সাথে যে অভিনয় করলেন তা কেমন যেন ম্লান হয়ে গেল। সাবিতাও ধীরে ধীরে তার সন্তানকেও নিয়ে আসলো। জামাল সাহেব ভুলে যেতে চাইলেও ভুলতে পারছেন না এই সন্তানের জনক হচ্ছেন তিনি। তার বীর্য থেকে এই সন্তান ধীরে ধীরে বড় হয়েছে। নিজের বীর্যের প্রতি একটা আকর্ষণ তো অবশ্যই থাকবে। তিনি যতই চাচ্ছেন এই আকর্ষণ উপেক্ষা করতে কিন্তু পারছেন না। নিজেকে ব্যস্ত রাখার জন্য তিনি শরবৎ এর গ্লাস মুখে নিলেন। ধীরে ধীরে শরবৎ চুমুক দিচ্ছেন। কামালের মা বাবুটিকে কোলে নিয়ে চুমু দিলো এরপর যখন বললো



- কার মত দেখতে হয়েছে ?



তখনই জামাল সাহেব এর গলায় শরবৎ আঁটকে গেল। অনবরত হেচকি উঠতে লাগলো। পানি খেয়েও হেচকি তিনি থামাতে পারছেন না। এই দেখে আওয়াল সাহেব বললেন

- কি ভাই, আমার চাঁদের কণার সৌন্দর্য দেখে হেচকি উঠে গেল নাকি?

জামাল সাহেব হেচকি থামিয়ে বললেন- জ্বী ভাই, আসলেই চাঁদের কনা। আল্লাহ আপনার ঘর আলো করে ওকে পাঠিয়েছে।

- আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। সাত বারের চেষ্টায় সফল হয়েছি। আমার টাকা পয়সার সমস্যা নাই। বেশি সন্তান নিলে সমস্যা কি? ভাই একটু কোলে নিয়ে দোয়া করে দেন।

জামাল সাহেব শিশুটিকে কোলে নিলেন। এই সন্তান হচ্ছে তার। ঠিক তার মত চেহারা হয়েছে। তিনি শিশুটির দিকে তাকিয়ে রইলেন। শিশুটিও হয়ত বুঝতে পেরেছে সে তার বাবার কোলে উঠেছে কারণ শিশুটি তার বাবার কোলে হিসু করে দিল। জামাল সাহেব এই দেখে হাসি দিয়ে বললেন- আমার দুষ্টু বাজান, শিখে গেছে কার কোলে হিসু করতে হবে। এই কথার অর্থ শুধু সাবিতা ভাবী আর জামাল সাহেবই বুঝলেন। এরপর শিশুটিকে সাবিতার কোলে তুলে দিলেন তখন কামালের মা আওয়াল সাহেবের উদ্দেশে বলে উঠলো,

- ভাই সাহেব, আমরা আরেকটা কারণে আপনার বাসায় এসেছি।

- কি কারণ ভাবী?

- আমাদের মিথি মামুনীকে আমাদের ঘরে তুলে নিতে চাই

এই প্রস্তাব শুনে আওয়াল সাহেব মুখ কালো করে ফেললেন। আওয়াল সাহেবের মুখ ভার দেখে জামাল সাহেবের মন হাসিতে ভরে উঠলো। যেভাবেই হোক এই বিয়ে আটকাতে হবে। এই বাড়ি থেকে যতই দূরে থাকা যায় ততই ভালো। মায়ার বাধনে আঁটকে গেলে একদিন আসল সত্য ফাঁস হয়ে যাবে। আওয়াল সাহেবের মুখ গম্ভীর দেখে কামালের মা বলে উঠল,

- আমরা প্রতিবেশী মানুষ, কাছাকাছি থাকলাম। আর আমাদের কামাল এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। দেখতে মাশাআল্লাহ। দুইজনকে ভালোই মানাবে।

আওয়াল সাহেব বলে উঠলেন, দেখুন ভাবী। আমি সোজা কথার মানুষ। সোজা ভাষায় সরাসরি বলে দেই। এই বিয়ে সম্ভব না। আপনারা প্রতিবেশী মানুষ প্রতিবেশী হয়েই থাকেন। মিথির বিয়ে আমি ঠিক করে রেখেছি অন্য জায়গায়। আমরা মন্ডল বংশের লোক। আমাদের মুখের জবানের একটা দাম আছে। বন্ধুর পুত্র এর সাথে বিয়ে দেবার জন্য বন্ধুকে জবান দিয়ে রেখেছি। কামালের মা বললেন,



- কিন্তু মিথি আর কামাল একজন আরেকজনকে পছন্দ করে।

- এই রকম প্রেম বিয়েও আগে আমিও অনেক করেছি। বিয়ের পর সব ঠিক হয়ে গেছে। মিথি বাচ্চা মাইয়া। ও প্রেমের কি বুঝে

এতক্ষণ পর জামাল সাহেব কথা বলে উঠলেন। তিনি জোর না দিয়ে ভদ্রতা করে বলে উঠলেন- জবান অবশ্যই রক্ষা করা উচিত। তবে মিথির সাথে কামালের বিয়ে হলে দুইজনেই সুখে থাকত।

- ভাই, সুখ হল মনের ব্যপার। মনকে বুঝালেই সুখে থাকা যায়। আর সত্য কথা বলি, আপনার ছেলেকে আমার বিশেষ পছন্দ না। মুরুব্বি দেখলে সালাম দেয় না

- আধুনিক ছেলেতো

- হোক আধুনিক, ওর বাপ মা ওরে আদব কায়দা শেখাবে না ?

- ভাই, আপনি কিন্তু আমাকে অপমান করছেন।

- অপমান কিসের। উচিত কথা বলছি। আমার সাতটা সন্তান। আল্লাহর রহমতে কেউ বলতে পারবে না, আমার মেয়েগুলো খারাপ। আদব কায়দা জানে। মুরুব্বিদের সালাম দেয়।

- বিয়ে দিবেন না ভালো কথা, জ্ঞান দিতে আসেন কেন? নিজে হাঙ্গা করে বসে আছেন আর আমাকে জ্ঞান দিতে আসেন।

এরপর পারস্পরিক যে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি হয় তা শালীন ভাষায় এখানে প্রকাশ করা সম্ভব না। আর এই অশ্রাব্য ভাষা ব্যবহারে জামাল সাহেব মুখিয়ে ছিলেন। তিনি একটা সুযোগ খুঁজতেছিলেন এগুলো প্রয়োগ করার।



ঘটনার সাথে সাথেই মিথি আর কামাল জেনে গেল তাদের দুই পরিবারের ঝগড়ার কথা। তাদের বিয়ে যে এত সহজ নয় তারা বুঝে গেল। এখন তারা কি করবে? অধিকাংশ ক্ষেত্রে মেয়েরা এই ক্ষেত্রে যে কৌশলের আশ্রয় নেয় তা হচ্ছে নিজের উপর অত্যাচার। এতে অভিভাবক ভয় পেয়ে যায়। আর ভয় পেয়ে রাজি হয়ে যায়। মিথিও সেই কৌশলের আশ্রয় নিল। সে সাতটা ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে মরার মত ঘুম দিল। আর এদিকে কামাল বাসা থেকে আবারো পালালো।



এক পুরুষে করে ধন, এক পুরুষে খায়, আরেক পুরুষ এসে দেখে খাবার কিছু নেই। জনপ্রিয় এই গান আমাদের জীবনের প্রতিচ্ছবি। আওয়াল সাহেব তিন পুরুষ গানের ১ম পুরুষের মত ধন করলেও ওনার ২য় পুরুষ ছিল না যে এই ধন খেয়ে শেষ করে যাবে। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে তিনি এই ধন সম্পত্তি করেছেন। তার বাবার কিছুই ছিল না। সব নিজেই করেছেন। তবে একজন মানুষের কাছে তিনি ঋণী। তার বাল্য বন্ধু কাওসার যে তাকে ব্যবসা করার জন্য তার জমানো টাকা ধার দিয়েছিল। সেই সময়ে ঐ ধার না পেলে তিনি ব্যবসাই শুরু করতে পারতেন না।



বাল্য বন্ধুর এই উপকার তিনি কখনোই ভুলতে পারবেন না। তাই যখন তার পুত্র সন্তান হচ্ছিল না তখন বাল্য বন্ধুর ছেলেকেই নিজের সন্তানের মত মনে করেছেন। বন্ধুকে কথা দিয়েছেন তার এই বিশাল সম্পত্তি বন্ধুর ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে রক্ষা করবেন। সেই প্রতিশ্রুতি পূরণে তিনি কোনভাবেই পিছপা হবেন না। কিন্তু তার মেয়ে বাংলা সিনেমার মত ঘুমের বড়ি খেয়ে এমন কাজ করে বসবে তিনি বুঝতে পারেননি। সিনেমার ভাষায় এখন তিনি খলনায়ক। সিনেমাতে খলনায়কের পরাজয় হলেও তিনি পরাজয় মেনে নিতে চাননা। তিনি চান নায়ক যাতে হেরে যায়। তাই তিনি সম্ভাব্য সকল ব্যবস্থাই নিয়ে রাখতে চাচ্ছেন।



বাংলা সিনেমায় দেখা যায় খলনায়ক একজন থাকে। এই ক্ষেত্রে দুইজন খলনায়ক থাকলে নায়ক পরাস্ত হবে। আওয়াল সাহেব চিন্তা করছেন আর কাকে খলনায়ক বানানো যায়। কামালের বাবা নিজেই বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছে তিনি হয়ত ছেলের পক্ষ নিয়ে ছেলেকে সাহায্য করবেন। এখন কামালের বাবাকে খলনায়ক বানাতে হবে। ওনার সাথে যেচে ঝগড়া করতে হবে। কিন্তু কি নিয়ে ঝগড়া করা যায়?



হাসপাতালের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আওয়াল সাহেব চিন্তায় মগ্ন। মিথিকে সময়মত হাসপাতালে আনার ফলে সে বেঁচে গেছে। তবে অনেক টাকাই গচ্চা গেল। আওয়াল সাহেব টাকা নিয়ে চিন্তা করছেন না, তিনি ভাবছেন কিভাবে জামাল সাহেবকে খলনায়ক বানানো যায়। সেদিন জামাল সাহেব তাকে হাঙ্গা করেছি বলে মন্তব্য করলে তিনিও অনেক অশ্রাব্য ভাষায় গালি দেন এরপর জামাল সাহেব শুরু করেন। তবে জামাল সাহেব মনের ঝাল মিটিয়ে তাকে গালি দিতে পারেনি এর আগেই কামাল এসে তাকে নিয়ে যায়। কামাল তার বাবাকে তার দলে ভিরিয়ে মিথিকে নিয়ে পালায় কিনা তিনি সেই ভয়ে আছেন। তিনি চাচ্ছেন যতদ্রুত পারা যায় কাওসার এর ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে দিতে। কাওসারকে ইতিমধ্যে তিনি জানিয়েও দিয়েছেন বিয়ের সব আয়োজন করতে।



জামাল সাহেবকে খলনায়ক বানানোর জন্য আওয়াল সাহেব বুদ্ধি করে ঠিক করলেন তার সাথে আপোষে যাবেন। তার সাথে সেদিনের ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে তার সহায়তা চাবেন। তাই তিনি ছুটলেন জামাল সাহেবের বাসায় কিন্তু সেখানে গিয়ে তিনি যে এত বড় সুযোগ পেয়ে যাবেন তা ভাবতেও পারেননি। ঐ বাড়িতে গিয়ে তিনি সাবিতাকে আবিষ্কার করলেন। সাবিতাকে দেখেই তিনি কড়া ভাষায় প্রশ্ন করলেন

- কি ব্যপার সাবিতা, তুমি এখানে কেন?

- একটু কাজে এসেছিলাম

- কি কাজ?

- জামাল ভাই, বাবুর জন্য জামা কিনেছিলেন কিন্তু ঐদিন নিতে ভুলে গিয়েছিলেন তাই নিতে আসলাম

- বাবু কি ওনার যে তিনি বাবুর জামা কিনে দিবে?

- প্রতিবেশী হিসেবে দিতে পারে না?

- না, এইসব ফালতু লোকের জিনিস নিতে হবে না

জামাল সাহেব এতক্ষণ নিরব দর্শক হয়ে ছিলেন কিন্তু ফালতু শব্দ শুনে মুখ খুললেন

- ভাই, আপনাদের প্রতিবেশি মনে করি দেখেই জামা কিনেছি

- যে প্রতিবেশির ছেলে পাশের বাড়ির প্রতিবেশির মেয়ের দিকে নজর দেয় সেইরকম প্রতিবেশি আমার দরকার নেই।

এরপর কড়া ভাষায় সাবিতাকে বললেন, তুমি এখনই বাসায় যাও। সাবিতাও সাথে সাথে চলে গেল।

সাবিতা চলে যাওয়ার পরেই আওয়াল সাহেবের মাথায় এক দুষ্ট বুদ্ধি চাপলো। তিনি জামাল সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললেন- জামাল সাহেব আপনি ধার্মিক মানুষ আর আপনার এলাকায় মান সম্মান আছে। আপনি নিশ্চয়ই চান না এলাকায় আপনার দূর্নাম ছড়াক।



জামাল সাহেব একটু ইতস্তত করে বললেন- আপনি কি বলতে চাচ্ছেন?

- আল্লাহ আমার টাকা পয়সা ভালোই দিয়েছে। যে টাকা আছে তা দিয়ে চারটা বৌকে খাওয়াতে পারবো। আপনার বাসায় কেউ নেই আর সাবিতা আপনার বাসায়। এখন আমি যদি এটা নিয়ে সমাজে দুর্নাম ছড়াই তাহলে আপনার এতদিনে সংসার কিন্তু থাকবে না।

আওয়াল সাহেব বানিয়ে বললেও জামাল সাহেবতো জানে আসল ঘটনা। তিনি আরও ইতস্তত করে বললেন, আপনি যা ভাবছেন তা ঠিক নয়।

- ঠিক বেঠিক জানি না। আপনার ছেলেকে দেখে রাখবেন। আমার মেয়ের দিকে যাতে হাত না বাড়ায় নাহলে আপনার নামে দূর্নাম ছড়াবো।

জামাল সাহেব হাত জোর করে বললেন, দয়া করে এইসব নোংরা কথা ছড়াবেন না। আপনার মত মানুষকে বিয়াই বানানোর কোন ইচ্ছাই আমার নেই। আমি কথা দিচ্ছি আমার ছেলেকে আমি আটকে রাখবো।

আওয়াল সাহেব নিজের বুদ্ধির প্রশংসা নিজেই করলেন। যাক তার বুদ্ধি কাজে দিয়েছে।



খলনায়ক তোরজোড় শুরু করলে নায়ক যে বসে থাকবে তা নয়। কামাল বাসা থেকে পালিয়ে গেলেও সে মিথির ছোট বোনদের সাথে ঠিকই যোগাযোগ রাখত। তাদের মাধ্যমেই সে জানতে পারলো মিথির বিয়ে ঠিক হয়েছে। কিন্তু কামাল চিন্তায় পড়ে গেছে এর আগেরবার বাসা থেকে পালানোর কিছুক্ষণ পরেই তাকে খোঁজার জন্য তোরজোর শুরু হয়ে গিয়েছিল কিন্তু এবার দেখি কোন খবর নেই। এই কাজে তার বাবার সাপোর্ট দরকার। তার বাবা তাকে অনেক ভালোবাসে। তার কোন আবদারই ফেলে দেয় না তবে এরজন্য মাঝেমাঝে আঙুল একটু বাঁকা করতে হয়। আজ সন্ধ্যায় মিথি হাসপাতাল থেকে বাসায় আসবে। মেয়েটি তাকে কত ভালোবাসে। তার জন্য সাতটা ঘুমের বড়ি খেতেও পিছপা হয়নি। ওকে যে করেই হোক বিয়ে করতে হবে। দরকার হলে পালিয়ে বিয়ে করতে হবে। বাসা থেকে কামালের খোঁজ কেউ না নিলেও সেই যেচে বাসায় ঢুকলো। তার উদ্দেশ্য যে করেই হোক মিথির সাথে দেখা করতে হবে।



কামাল যখন বাসায় ঢুকলো তখন বাসার সবাই নিরব দর্শক হয়ে রইল। সে তার বাবার সামনে দাঁড়িয়ে বলল- মিথিকে দরকার হলে তুলে নিয়ে আসবো, তবুও মিথিকে আমার চাই

তার এই কথা শুনে জামাল সাহেব কখনো যে কাজ করেন না, সেই কাজ করে বসলেন। ছেলের গালে বিরাট এক চড় মেরে বসলেন।

কামালও কম যায় না। সে সাথে সাথে তার ঘরে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল। এই দেখে কামালের মায়ের বুকে চিলিক মেরে উঠলো। অজানা আতঙ্কে তিনি ছুটে গেলেন। দরজার ফোকর দিয়ে তিনি খেয়াল করলেন কামাল ফ্যানের সাথে দড়ি পেচাচ্ছে। তিনি কামাল কামাল বলে চিৎকার করছেন আর কামালের বাবাকে বলছেন- ওগো, কামালকে আটকাও, সে গলায় ফাঁস দিতে যাচ্ছে।

কামালের মায়ের এই আকুতিতে জামাল সাহেবের কোন ভাবান্তর হল না। তিনি দৃঢ় গলায় বললেন- মরে যেতে দাও, এমন কুলাঙ্গার ছেলে আমার দরকার নেই যে বাপের সম্মান রক্ষা করতে জানে না। ওরে আমি ত্যাজ্য পুত্র করবো।



পিতার এই কঠিন কথায় কামালের মন ভেঙ্গে টুকরা টুকরা হয়ে গেল। সে গলায় দড়ি পেঁচিয়ে মরে যাবার জন্যই তৈরি হতে লাগলো কিন্তু তখনই দরজায় সজোরে লাথির শব্দ শুনতে পেল। কামালের ভাই মামুন, ভাইয়ের পক্ষ নিয়ে দরজায় সজোরে লাথি দিয়েই যাচ্ছে। মামুন, তার মায়ের কথা ভেবে কামাল আর ফাঁসি নেবার সাহস করতে পারেনি। সে দরজা খুলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো। এক নাগাড়ে কেঁদে যেতে লাগলো। কান্না হচ্ছে সংক্রামক। কামালের কান্না মামুন থেকে শুরু করে জামাল সাহেব পর্যন্ত স্পর্শ করলো। তিনি কাঁদো গলায় বললেন- জীবনের এখনো অনেক পথ বাকী। অনেক ভালো ভালো মেয়ে তোর জন্য অপেক্ষা করে আছে। মিথিকে ভুলে গিয়ে নতুনভাবে জীবন শুরু কর।

এই কথা শুনে কামালের কান্না দ্বিগুণ থেকে দ্বিগুণতর হল। যাকে মন প্রাণ উজাড় করে ভালবেসেছে তাকে কিভাবে সে ভুলে যাবে?



সেদিন রাতেও পূর্ণিমা ছিল। এইরকম এক পূর্ণিমা রাতে মিথির সাথে ছাদে বসে সুন্দর কিছু সময় কাটিয়েছিল কিন্তু সেই সময় কাটানোর পর থেকেই তাদের প্রেমে ঝড় বইতে শুরু করে। সেই ঝড় এখনো বয়ে চলেছে। মিথির সাথে কোনভাবে যোগাযোগ করতে না পারলে কামালের মন বলছে মিথি আজ ছাদে আসবেই। সে পূর্ণিমাকে অনেক পছন্দ করে। এই চাঁদ দেখে সে ঘরে বসে থাকতে পারবে না। তাই কামাল তার মনের টানে ছাদে গিয়ে চাঁদ দেখতে রইলো। চাঁদের দিকে তাকিয়ে সে মনে মনে কথা বলতে লাগলো

- আচ্ছা ভালোবাসলেই কি বিয়ে করতে হয়? কাছাকাছি থাকতে হয়? কিন্তু তুমি আমার জীবনের চাঁদ। তুমি ছাড়া আমার জীবন অমাবস্যায় ভড়ে যাবে।

তার এই প্রশ্নে চাঁদ যেন কথা বলে উঠলো। কামালের কানে উত্তর বেজে উঠলো। চাঁদ যেন বলছে

- চাঁদ দূর থেকেই সুন্দর। চাঁদকে কাছে টেনে নিয়ে আসলে মহা প্রলয় ঘটে যাবে। এরচেয়ে তুমি দূর থেকেই চাঁদকে দেখে যেও আর এভাবেই আমার সাথে কথা বলো।



কামাল যখন চাঁদের সাথে মনে মনে কথা বলছে তখন একটি ছায়া তার পাশে এসে দাঁড়াল। কামাল ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে তার মনের ধারণাই ঠিক। মিথি পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। সে এক লাফে মিথিদের ছাদে চলে গেল। দুইজন দুইজনকে জড়িয়ে আলিঙ্গন করলো। সেই চাঁদনি রাতে তাদের এই আলিঙ্গণ মধু চন্দ্রিমায় রূপ নিল। বিদায় এর সময় কামাল মিথিকে শুধু একটাই কথা বলল- আজ তোমাকে যে জীবন্ত উপহার দিলাম তাকে আমার স্মৃতি হিসেবে আগলে রেখো।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১:২৯

একজন ঘূণপোকা বলেছেন:
খাইসে এত বড়। চিহ্ন দিয়ে গেলাম। পরে পড়ব

২| ১১ ই এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১২:১৩

আলামিন মোহাম্মদ বলেছেন: পড়ে কেমন লাগলো জানাইয়েন :)

৩| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১০:৫৮

আজীব ০০৭ বলেছেন: ভালোই লিখেছেন................।


চলুক.............

২১ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১১:৫১

আলামিন মোহাম্মদ বলেছেন: ধন্যবাদ, চলুক :)

৪| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১১:২২

নীল জোসনা বলেছেন: কাহিনি তো প্যাচ লাইগা গেছে । :P :P :P

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.