![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১৯৮৮ সালের বন্যার কথা বলছি। নভেম্বর মাস কিন্তু এখনো বন্যার পানি পুরোপুরি সরে যায়নি। বন্যায় রাস্তা ঘাট ভেঙ্গে গেছে। সেই সময় টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর গ্রামের চান মিয়া খুবই চিন্তিত হয়ে আছেন। বাড়িতে পুরুষ ব্যক্তি বলতে একমাত্র সে। তার অনেক দায়িত্ব কারণ তার ভাগনির সন্তান হবে যেকোন মুহুর্তে ব্যথা উঠে যেতে পারে। আশেপাশে কোথাও ডাক্তার নেই, দাই একমাত্র ভরসা। দাইকে খবর দিয়ে রাখা হয়েছে। তিনি একবার আকাশের দিকে তাকাচ্ছেন আরেকবার রাস্তার দিকে তাকাচ্ছেন যদি হাসপাতালে নিতে হয় তাহলে তো মহা বিপদ। ভাগনির স্বামীও সাথে নাই। ঢাকায় কাজে গেছে। দুপুর গড়িয়ে সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়ছে। এমন সময় রসুই ঘর থেকে একটি বাচ্চার কান্নার আওয়াজ আসলো। পুত্র সন্তান হয়েছে আজান দেয়া লাগবে। কিন্তু আলাদা করে আজান দেয়া লাগে নাই। আসরে নামাজের জন্য আহবান করা চারদিকের সকল মসজিদের আজান যেন নতুন ভুমিষ্ট শিশুকে বরণ করে নিল। চান মিয়া আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানালেন। সন্তানের পিতাকে খবর জানানো দরকার। ঢাকায় গিয়ে চান মিয়া সন্তানের বাবাকে খুঁজে পেলেন না। তিনি চিন্তিত হয়ে পড়লেন। বাড়ির প্রতিবেশীকে খবর দিয়ে রাখলেন যাতে বাড়িতে আসা মাত্র টাঙ্গাইলে চলে যায়। পুত্র সন্তান হয়েছে আর পিতা কিনা দূরে তা কি করে হয়? এক সপ্তাহ পর শিশুর পিতা বাড়িতে আসলো এবং পুত্র সন্তানের খবর শুনেই টাঙ্গাইলের পানে ছুটলেন। শিশু পুত্রকে দেখতে চাইলেন কিন্তু গ্রাম্য রেওয়াজ বাধা হয়ে দাঁড়ালো।স্বর্ণ দিয়ে শিশু পুত্রের মুখ দেখতে হবে। শিশুর পিতার তখন এত সামর্থ্য ছিল না স্বর্ণ কেনার। তাহলে কি উপায়? স্বর্ণ ও হলুদ একই ধরনের ধরা হয়। তখন একটি হলুদের টুকরো হাতে নিয়ে শিশুর হাতে দিলেন। সেটি ছিল শিশুর প্রথম উপহার। সেই উপহারটিকে যত্ন সহকারে তার নানী সিকায় তুলে রাখলেন। এভাবে চলে যেতে থাকলো দিন মাস বছর। এভাবে যখন শিশুর আঠারো বছর পূর্ণ হল তখন শিশুর নানী তার হাতে একটি শীর্ণ ও শুকিয়ে যাওয়া একটি হলুদ তুলে দিলেন এবং সেদিনের কথাগুলো পুনব্যক্ত করলেন। ১৮ বছর আগের প্রথম উপহার পাওয়া সেই হলুদ এখন সযত্নে আছে দেখে সেই কিশোরবালক অনেক পুলকিত হল। এরপর লজ্জা পেল যখন সে নানীর বাসনার কথা জানতে পারলো। বাসনা অনুযায়ী এই হলুদ দিয়েই নাতির গায়ে হলুদ দিতে চান। গত ১০ নভেম্বর ২০১২ সেই কিশোরবালক ২৪ বছর অতিক্রম করে ২৫ এ পা দেয়। আজো সেই কিশোরবালক তার নানীর ইচ্ছা পুরণ করতে পারে নাই। আর সেই কিশোরবালক হচ্ছে এই আলামিন মোহাম্মদ
- দোস্ত, এক কাপ চা খাওয়া?
- এই গরমের মধ্যে চা খাবি? এরচেয়ে এক গ্লাস পানি খা শরীর ঠান্ডা হয়ে যাবে
- গরমে তো গরমই খাওয়া উচিত, শুনিসনি, কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা, গরম দিয়ে গরম তোলা
- এটা প্রতিশোধ স্পৃহার মত কথা হয়ে গেল
- প্রতিশোধ হোক আর যাইহোক তুই এক কাপ চা খাওয়া
- না দোস্ত, আমার ধাচে প্রতিশোধ নেই, আমি ভালোবাসা দিয়ে সব জয় করতে চাই। তোর এই গরমে চা খেতে মনে চাইলে তোর নিজের টাকায় খা
- আচ্ছা ঠিক আছে, তোর কথাই মানলাম। কাঁটা দিয়ে কাঁটা না তুলে সুঁচ দিয়ে কাঁটা তুলছি, গরম দিয়ে গরম না তুলে ঠান্ডা দিয়েই গরম তুলছি। তুই আমাকে এক বোতল ঠান্ডা মিরিন্ডা খাওয়া
- মিরিন্ডা গ্যাসে ভরপুর। এগুলো খেলে পেট ফুলে যাবে। বন্ধু হয়ে বন্ধুর এত বড় অপকার করতে পারবো না।
- তুই বন্ধুদের কথা ভাবিস তাহলে?
- ভাববো না কেন? তোদের স্বাস্থ্যের ভালোর কথা ভাববো না?
- স্বাস্থ্যের কথা যখন তুললি তাহলে একটা বাটার বন খাওয়া। কোন সমস্যা নেই, স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ভালো
- রাত হয়ে গেছে, একটু পর বাসায় গিয়ে ভাত খাবি আর এখন বাটার বন খেয়ে ক্ষুধা নষ্ট করবি?
- না দোস্ত, আসলেই ক্ষুধা লাগছে, একটা বাটার বন খাওয়া
- আন্টি এত কষ্ট করে রান্না করেছে, সেটা ভালো মত খা, এখন বাটার বন খেলে বাসায় গিয়ে কিছুই খেতে পারবি না
- ভাত খেতে দেরি আছে, এখন ক্ষুধা লেগেছে তুই একটা বাটার বন খাওয়া
- ক্ষুধা লাগলে চল বাসায় চলে যাই, বাসায় গিয়ে ভাত খেয়ে নিস
- তুই আসলেই একটা হাড় কিপটা। তোর কাছ থেকে আজ পর্যন্ত কিছুই খেতে পারলাম না
- দোস্ত তুই এটা বলতে পারলি? গত বছর না তোকে ফুচকা কিনে খাওয়ালাম
- কোন আদি কালে খাওয়াইছো, ঐ এক সুর আর তুইলো না
- গত বছর আদি কাল হয়ে গেল?
- হইছে আর বলা লাগবে না, তোমার এই রকম কিপটামির অভ্যাস থাকলে গার্ল ফ্রেন্ড জীবনেও জুটবে না
- আমার মত এই রকম সুদর্শন ছেলে গার্ল ফ্রেন্ড পাবে না এটা কোন কথা বললি?
- শোন দোস্ত, শুধু চেহারা থাকলেই হয় না এর সাথে টেহারাও লাগে
- এই টেহারা আবার কি?
- টেহারা বুঝবা কেমনে? গার্ল ফ্রেন্ড জীবনেও তো জুটে নাই
- জুটে নাই আবার কি? বল পাত্তা দেই নাই। এবার বল টেহারা মানে কি?
- টেহারা মানে টাকা হারানো। গার্ল ফ্রেন্ড এর পিছনে টাকা হারাতে হবে মানে খসাতে হবে
- দোস্ত, টাকা খসানোই কি সব? প্রেম বলে কি কিছুই নেই?
- বুঝবা, যখন প্রেম করবা, এখনো প্রেমে মজো নাই তাই বুঝো না। কথায় আছে না, ছেলেটি বাদাম ছিলিতে ছিল মেয়েটি বাদাম চিবাতে ছিল, ছেলেটির বাদাম ফুরিল আর মেয়েটি নিরুদ্দেশ হল।
- শুধু বাদাম খাইয়ে প্রেম, বাদাম তো সস্তা জিনিস এতে আর কতই বা টাকা খরচ হবে
- সেই বাদাম দিয়েই শুরু কর না, বয়স তো কম হলো না, একটা প্রেম শুরু কর
- হুম, দোস্ত, আসলেই শুরু করা উচিত
- তবে আমি বাজি ধরে বলতে পারি তোর গার্ল ফ্রেন্ড সাত দিনের বেশি থাকবে না
- তুই বাজির কথা বললি? আমি পছন্দের মত মেয়ে পাই না দেখে প্রেম করছি না। আজাইরা অনেক মেয়ের সাথেই কথা তো বলতে পারি কিন্তু শুধু শুধু সময় নষ্ট।
- তা শুনি তোর কেমন মেয়ে পছন্দ?
- আমার মেয়েদের কন্ঠের প্রতি আলাদা আকর্ষণ আছে, মেয়ের কন্ঠ হতে হবে মোলায়েম, কন্ঠে একটু ন্যাকামীপোনা থাকবে। মেয়েকে পর্দাশীল হতে হবে। অহেতুক অপচয়ী যাতে না হয়।
- হুম বুঝলাম, এবার তোর সাথে বাজি ধরছি এই রকম মেয়ে তুই জীবনেও পাবি না
- তুই আমার সাথে বাজি ধরছিস?
- হুম ধরছি, পারলে বাজিতে জিতে দেখা
- আচ্ছা ঠিক আছে, আগামী এক মাসের মধ্যে এইরকম মেয়ে আমি পেয়ে দেখাবো
- আচ্ছা যদি বাজিতে হারিস তাহলে কি খাওয়াবি?
- তুই বল
- কেএফসিতে খাওয়াতে হবে
- ঠিক আছে তবে আমি যদি বাজিতে জিতি তাহলে আমাকে খাওয়া না টাকা দিতে হবে
- তুমি শালা, টাকাই চিনে গেলা, এই বন্ধুদের পিছনে একটুও খরচ করলা না। দোস্ত তোর সাথে কথা বলতে বলতে ক্লান্ত হয়ে গেছি, একটা বাটার বন খাওয়া?
- এইত আবার শুরু করলি পুরানো প্যাচাল, তুই কি খাবার ছাড়া কিছুই বুঝিস না, বাজিতেও খাবার চাস, সব কিছুতেই খাবার চাস
- শালার কিপটা
- হইছে, চল বাসায় যাই, রাত হয়েছে। আন্টি খাবার নিয়ে বসে আছে। বাসায় গিয়ে খা।
জুয়েল বন্ধুদের কাছে কিপটা জুয়েল নামেই পরিচিত। ওর কাছ থেকে কেউ কোন কিছু খেতে পেরেছে কিনা তা মনে করে বলতে হবে। বন্ধুমহলে জুয়েলের মত কিপটা কিছু বন্ধু থাকে। এইসব বন্ধুদের দেখলে প্রথম দেখাতেই খাবার খাওয়ার প্রসঙ্গ তোলা হয় আর তখন কৃপণ বন্ধু তার উপস্থিত বুদ্ধি দিয়ে তা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে। কিন্তু বন্ধুরাও কম যায় না তারাও মানসিক ভাবে জর্জরিত করে। এই মানসিক আঘাতে জর্জরিত হয়ে তখন কৃপণ বন্ধু অধিকাংশ সময়ে প্রতিশ্রুতির আশ্রয় নেয়। অমুক কাজে সফলতা এলে তখন খাওয়াবে। বন্ধুরা যতই বলে এখন খাওয়া তখন কৃপণ বন্ধু বলে অমুক কাজে সফলতা এলে তারপরই খাওয়াবে। এরপর শুরু হয় বন্ধুদের অপেক্ষার পালা। এই অপেক্ষা আর শেষ হয় না। অনেকদিন পর আবার যখন খাওয়ার প্রসঙ্গ তুলে মানসিক ভাবে আঘাত করা হয় তখন আবার নতুন প্রতিশ্রুতি আসে।
তবে জুয়েল এই রকম হলেও একটা বিষয়ে আলাদা। জুয়েল চেতন মনেই হোক আর অবচেতন মনেই হোক বাজি ধরতে অনেক পছন্দ করে। জুয়েলের বন্ধুরাও বুঝে গেছে ওর কাছ থেকে কিভাবে খাবার আদায় করতে হবে। ওরে কথার চালে বাজিতে ফেলতে হবে এরপরই বাজির মাধ্যমে খাবার পাওয়া যাবে।
আজ রাতে জুয়েলের কৃপণতা সহ্য করেও টিকে থাকা বন্ধু আরিফ ওর সাথে বাজি ধরে। আগামী একমাসের মধ্যে জুয়েল তার পছন্দের মত মেয়ে খুঁজে না পেলে তাকে কেএফসিতে খাওয়াবে আর পেলে তাকে খাবার বিল টাকাতে দিয়ে দিতে হবে। আরিফ জানে জুয়েল এই বাজিতে হেরে যাবে। কারণ একটি মেয়েকে পটাতে হলে তার সাথে মোবাইলে কথা বলতে হয় আর এই কাজ জুয়েলের মত কৃপণ যে মিসকল দিয়ে যোগাযোগ করে সে কখনোই পারবে না। আরিফ তাই অপেক্ষায় আছে কবে আসবে সেদিন যেদিন জুয়েল তাকে কেএফসিতে খাওয়াবে। আরিফ দিবাস্বপ্নের জগতে চলে গেল সেখানে সে মুরগির হাড় চিবাচ্ছে আর চিবাচ্ছে আর জুয়েল চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে আর ঢোক গিলছে।
জুয়েলের সব বন্ধুদের গার্ল ফ্রেন্ড আছে শুধু তার নেই। রাত যত গভীর হয় তার বন্ধুরাও তত গভীর ভালোবাসায় আচ্ছন্ন হয়। সেই সময় সব বন্ধুদের মোবাইল ব্যস্ত থাকে। এত রসালো আর প্রেমের কথা বলায় তারা ব্যস্ত থাকে যেন মোবাইলেই সব করে ফেলবে। জুয়েলের একটু মন খারাপ হয়। বর্তমানের ভালোবাসা কেমন যেন বানিজ্যিক হয়ে গেছে। মোবাইল কেন্দ্রিক ভালোবাসা। এই মোবাইল বিলের পিছনেই মাসে হাজার টাকা খরচ হয়ে যায়। জুয়েল মাঝে মাঝে অবাক হয় মানুষ কিভাবে পারে?
ঐদিন জিসান নামে এক বন্ধুর সাথে দেখা। ওর সাথে কথা প্রসঙ্গে এক ভয়ংকর জিনিস সম্পর্কে জানতে পারে সে। দিনে দিনে মানুষের কত উন্নতি হচ্ছে। জিসান এক মেয়ের সাথে কথা বলে। তারা জাস্ট ফ্রেন্ড। ভালো কথা কিন্তু যেটা শুনে জুয়েল অবিশ্বাস্য এর চোখে তাকিয়েছে সেটা হল তারা মোবাইল সেক্স করে। মোবাইল সেক্স শব্দটি জুয়েলের কাছে নতুন লাগে। সে কৌতুহলের সাথে জিজ্ঞেস করে এটা কি?
এরপর জিসান ওর কৃপণতা নিয়ে একটু ভৎসর্না করে বলে- তুমি মামা টাকা খরচের ভয়ে মোবাইলেই কথা বলো না, তুমি এগুলা জানবা কি করে?
- আচ্ছা বাদ দে, আগে খুলে বল। তোরা দুই দিন পর পর কি নতুন জিনিস আবিষ্কার করিস।
- হা হা, শুনো, মোবাইল সেক্স হল মোবাইলে কথা বলার মাধ্যমে সেক্স করা।
- কথার মাধ্যমে সেক্স! কিভাবে সম্ভব?
- আরে মামা, রসালো চটির কথা। এই সেক্স করার জন্য তোমার কল্পনার শক্তি প্রবল হতে হবে। এমনভাবে বর্ণনা করা হবে যেন তুমি চোখের সামনে ভাসাতে পারো সেই দৃশ্যটি সাথে একটু আওয়াজও থাকবে।
- তোরা পারিসও বটে, এতে মজা পাস?
- মজা মানে অনেক মজা। এই দৃশ্যকল্প বর্ণনা যে করে সে কত বড় সাহিত্যিক তুই বুঝতে পারছিস? আমি তিনজন বান্ধবীর সাথে করি এর মধ্যে লিসা মেয়েটি অনেক ভালো বর্ণনা করতে পারে। সে এত মধুরভাবে বর্ণনা করে যেন মনে হবে তুই স্বপ্ন দেখতেছিস আর ঐটা করতেছিস। সে কথা বলে পাঁচ মিনিটের ভেতরই তোকে বীর্যপাত করে ফেলবে। কিরে কথা বলবি নাকি? লিসা বড়লোক আছে, আমি বলে দিলে সেই তোকে ফোন দিবে।
- নারে ভাই, মাফও চাই দোয়াও চাই। তোর কাছে ভালো মেয়ে নাই? যার সাথে চাঁদ নিয়ে কথা বলা যাবে, আকাশ নিয়ে কথা বলা যাবে।
- কিরে মামা, তুমি হঠাৎ মেয়ের খোঁজ করছো। কাহিনী কি মামা?
- দোস্ত তোরে খুলে বলি, জানিস দোস্ত আমার বাজির প্রতি নেশা আছে। আমি বাজি ধরলে সেটা করেই ছাড়ি। আরিফের সাথে বাজি ধরেছি। আগামী এক মাসের মধ্যে আমি গার্ল ফ্রেন্ড খুঁজে বের করবো।
- শালা, গার্ল ফ্রেন্ড বাজারের সওদা নাকি যে দোকান থেকে খুঁজে বের করলি আর টাকা দিয়ে কিনে নিয়ে আসলি।
- সেটাতো বুঝি দোস্ত, গার্ল ফ্রেন্ডকে অর্জন করে নিতে হয় টাকা দিয়ে কিনতে পাওয়া যায় না।
- হুম, তাহলে?
- বুঝিসই তো, বয়স ২৫ হয়ে গেল আর এখনো গার্ল ফ্রেন্ড পেলাম না। আবার বাজি ধরেছি। তোর জানাশোনা ভালো কোন মেয়ে থাকলে তার কাছে প্রেমের পরীক্ষা দিতাম
- হা হা, প্রেমের পরীক্ষা! প্রেমের পরীক্ষা যে দিবা, পরীক্ষার ফি কত তুমি জানো? সেই ফি দিতে পারবা?
- পরীক্ষার ফি কত?
- প্রতিদিন রাতে ৫০ টাকার কথা বলা, সপ্তাহে একদিন ডেটিং যদি করিস তাহলে ঐখানে খরচ হবে কমপক্ষে ৩০০ টাকা। মাসে চারদিন দেখা করলে খরচ হবে ১২০০ টাকা আর মোবাইল বিল ১৫০০ টাকা সব মিলিয়ে ২৭০০ টাকা খরচ হবে। পারবি এই পরীক্ষার ফি দিতে?
- শালার সব জিনিস বানিজ্যিক হয়ে গেছে। ভালোবাসাও আজকাল টাকায় পরিমাপ করা যায়। নারে দোস্ত, আমি যেমন মেয়ে পছন্দ করি দেখ এমন মেয়ে পাস কিনা।
- কেমন মেয়ে চাই তোমার?
- মেয়ের কন্ঠ হবে মোলায়েম, একটু ন্যাকামী পোনা থাকবে। সে পর্দাশীল হবে আর টাকার চাইতে ভালোবাসাকেই বেশি প্রাধান্য দিবে। মোবাইলে কথা বলার চেয়ে সামনাসামনি কথা বলাকেই প্রাধান্য দিবে।
- হুম জানতাম তুই এটাই বলবি। চিন্তা করিস না, এমন মেয়ে আছে। আচ্ছা যা তুই বাজিতে জিতে গেছিস।
- তুই যে আমাকে গার্ল ফ্রেন্ড খুঁজে দিতে সাহায্য করছিস এটা আবার আরিফকে বলিস না।
- যা শালা, কোন ক্রেডিট দিবি না?
- হুম দিবো, আগে বিয়ে পর্যন্ত সম্পর্ক গড়াক
- গার্ল ফ্রেন্ড হবার আগে বিয়ে পর্যন্ত চিন্তা করে ফেলেছিস? তুই পারিসও বটে। এই সুযোগে আরিফের সাথে ভাবছি একটা বাজি ধরে ফেলবো।
- কিসের বাজি? আর আমি সম্পর্ক নিয়ে সিরিয়াস। শুধু বাজিতে জিততে না প্রেমের পরীক্ষায় জিতে তাকে বউ করে ঘরে আনতে চাই। বয়স তো ২৫ পাড় হয়ে গেল।
- আরিফের সাথে বাজি সময় হলেই জানতে পারবি, আর তুই চিন্তা করিস না তুই ধরে নে তুই বাজিতে জিতে গেছিস। এক মাসের আগেই পছন্দমত মেয়ে পেয়ে যাবি।
- আমি জানতাম দোস্ত, তুই পারবি। আমার বন্ধুদের মধ্যে একমাত্র তোরই সব বিষয়ে জানাশোনা আছে।
- হয়েছে এত তেল দিও না, বিয়ের সময় অন্তত দাওয়াত দিও আবার ঐখানে কিপটামি কইরো না।
- না দোস্ত, তোরে এখনই দাওয়াত দিয়ে রাখলাম
- দোস্ত, এক কাপ চা খাওয়া?
- চা, মানে এই গরমে চা খাবি?
- শালার কিপটা
- তোরা শুধু শুধু আমাকে কিপটা বলিস যেন তোদের খাওয়াই না, আচ্ছা ঠিক আছে চা খা
- হা হা
জুয়েলের এর আগে কখনো প্রেম করার অভিজ্ঞতা নেই। কিভাবে একটি নারীর মন জয় করা যায় তা নিয়ে সে ছিল খুব চিন্তিত। নারীর মন কিভাবে জয় করা যায় এটা লিখে সে যখন গুগলে সার্চ দিলো সাথে সাথে নারীর মন জয় করার ১০ টি কৌশল সম্বলিত অনেক লিঙ্ক পেল। সেই লিঙ্কে গিয়ে সে কৌশলগুলো পড়লো কিন্তু কোন কৌশল প্রয়োগ করবে তা নিয়ে সে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছিল। কোন উপায় খুঁজে না পেয়ে সে জিসানের শরণাপন্ন হল। এই জিসান তাদের বন্ধু মহলে রোমিও হিসেবে পরিচিত। একসাথে তিন চারটি মেয়েদের সাথে লাইন মারতে পারে। সে যদি দক্ষই না হবে তাহলে মেয়েদের মোবাইল সেক্স করানোর জন্য রাজি করাতে পারে? তাই সে জিসানের কাছে গিয়ে বলল,
- দোস্ত, কিভাবে শুরু করবো?
- আশ্চর্য! তুই এখনো যোগাযোগ করিসনি?
- না, মানে কিভাবে কথা শুরু করবো তা ঠিক করতে পারছিলাম না। গুগল করলাম, ইউটিউবে টিউটোরিয়াল খুঁজলাম কিন্তু পছন্দ হচ্ছে না।
- হায়রে বুদ্ধু! তোমাকে তিনদিন হয়ে গেল এক মেয়ের নাম্বার দিলাম আর তুমি তার সাথে যোগাযোগ করতে পারলা না। আর প্রেম কি কোন পাঠ্য বিষয় যে তুমি বই পড়ে শিখবে? আর তুমি চাইছো বাজিতে জিততে?
- না, মানে বুঝতেছি না কি করবো, বাজির মেয়াদ শেষ হতে আর এক সপ্তাহ বাকী। যা করতে হবে এই সপ্তাহেই করতে হবে।
- ডেল কার্নেগীর নাম শুনেছো? ওনার একটা উক্তি তোমারে শোনাই। তিনি বলেছেন-‘আমি চাইতাম বিখ্যাত ব্যক্তিদের মতো সফল হতে; এর জন্য আমি অনেক পরিশ্রমও করেছি কিন্তু আমি কোনভাবেই সফল হইনি, অবশেষে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম- অন্যের মতো নয়- বরং আমি হবো “ডেল কার্নেগী”
- উক্তিটি সুন্দর, কিন্তু এর সাথে প্রেমের সম্পর্ক কি?
- তুই আসলেই একটা মাথা মোটা। ভালোবাসার ক্ষেত্রে অন্যকে অনুকরণ না করে নিজের মত ভালোবাসো। নিজের স্টাইল তৈরি কর। মেয়েরা সেটাই পছন্দ করে।
জিসানের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে জুয়েল চিন্তায় ডুবে গেল তার নিজের স্টাইল কেমন হবে? জিসান তিন দিন আগে তাকে একটা মুঠোফোনের নাম্বার ধরিয়ে দিয়ে বলেছিল- এই মেয়ের নাম যূথী। আমার এক বন্ধুর বন্ধু সে। বেশ পর্দা মেনে চলে। সাহিত্যমনা। ঐ বন্ধুর মুখেই শুনলাম সুন্দরী আর কণ্ঠও বেশ মিষ্টি আর সুরেলা। তোর পছন্দ হবে।
এরপর জিসান টিপ্পনী কেটে যে কথা সে বলল তা শুনে তার মন খারাপ হয়ে গেল। জিসান বলল- যূথী মেয়েটা তোর মতই কৃপণ। আমার বান্ধবীকে সচরাচর কিছুই খাওয়ায় না। কিন্তু দোস্ত, এর চেয়ে ভালো মেয়ে আর পেলাম না। কিপটা কিপটা মিলবে ভালো।
বন্ধুর এই টিপ্পনী তার গায়ে লাগলো। সে ঠিক করলো অন্তত এই যূথী মেয়েটির কাছে সে কৃপণতা প্রকাশ করবে না। প্রেমের পরীক্ষার যে ফি ২৭০০ টাকা সে ঠিক মত পরিশোধ করবে। বকেয়া রাখবে না। তার বাজিতে জিততেই হবে। বাজিতে জেতার মধ্যে এক ধরনের আনন্দ আছে। এর পিছনে একটু টাকা খরচ হলে সমস্যা কোথায়? কিন্তু কিভাবে যূথী মেয়েটির সাথে কথা শুরু করবে? জিসান বলেছে সে সাহিত্যমনা। যারা সাহিত্যমনা তারা কবিতা পছন্দ করে। কবিতা আর যূথী এই নিয়ে সে যখন চিন্তায় মগ্ন তখন তার মুখ দিয়ে বেড়িয়ে এল পূর্নেন্দু পত্রী।
“আকাশে বাতাসে তুমুল দ্বন্দ্ব
কে আগে কাড়বে যূথীর গন্ধ
কার হাতে বড় নখ।
স্বর্গে মর্তে যে যার গর্তে
যূথীকে গলার মালায় পরতে
ভীষণ উত্তেজক’’
এই কবিতার চরণ ক্ষুদেবার্তা করে পাঠানোর পরেই জুয়েলের বুক ধুরু ধুরু করে কাঁপছে। উত্তর কি সে পাবে? জুয়েল চোখ বন্ধ করে বসে আছে আর মনে মনে প্রার্থণা করছে যেন একটা উত্তর অন্তত আসে। তার ধুরু ধুরু বুকে আরও কাঁপন এনে দিলে মোবাইলে ক্ষুদেবার্তা আসার শব্দে। চোখ মেলে তাকাতেই দেখে যূথীর উত্তর। সাথেই সাথেই তার চোখ মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠলো। যূথী লিখেছে- আপনি কি করে জানলেন এই কবিতাটি আমার প্রিয়? আর আপনি কে?
জুয়েল ইয়েস বলে হাত উপর উঠিয়ে নিচে নামালো। দুটি প্রশ্ন করেছে মানে কথা শুরু করার একটা ইশারা। সে চিন্তার জগতে ডুবে গেল। কি লিখে উত্তর দেয়া যায়? এমনভাবে উত্তর দিতে হবে যেন ঐপাশ থেকে প্রশ্ন দিয়ে উত্তর আসে। প্রশ্ন থাকা মানেই কথোপকথন চালিয়ে যাবার একটা ইশারা।
‘আমি পূর্নেন্দু পত্রীর একজন ভক্ত বলতে পারেন। আর পূর্নেন্দু পত্রীর ভক্তরা তার অন্যান্য ভক্তদের সাথে যোগাযোগ করতে ভালোবাসে’
এটা উত্তরে লিখে আবার শুরু হল চোখ বন্ধ করে অপেক্ষার পালা তবে এবার আর বেশি আর অপেক্ষা করতে হল না তাড়াতাড়িই উত্তর এল।
‘হা হা, তবে আমি কিন্তু শুধু ভক্ত না একদম অন্ধভক্ত বলতে পারেন। ওনার অধিকাংশ কবিতাই আমার মুখস্থ বলতে পারেন। আচ্ছা আপনি আমার নাম্বার পেলেন কোথা থেকে?’
‘আপনার প্রিয় কবির একজন ভক্তকে খুঁজে পেয়েছেন এটাই কি বড় বিষয় নয়? কোথায় আপনাকে খুঁজে পেলাম সেটা অন্যসময়ের জন্য তোলা থাক যখন আপনি কথা বলার বিষয় খুঁজে পাবেন না তখন জিজ্ঞেস করেন’
‘হা হা, আপনি অনেক সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলেন। এখন বিদায় নিতে হচ্ছে। এখন ঘুমিয়ে না পড়লে ফজরের নামাজে উঠতে পারবো না। নামাজ পড়েন তো?’
‘মাঝে মাঝে মিস হয়ে যায়। আপনি যদি একটু মিসকল দিয়ে ঘুম ভাঙ্গিয়ে দিতেন তাহলে আর মিস হত না’
‘হা হা, মিসকল না, কলই দিবো, শুভ রাত্রি’
‘তাই? সেই অপেক্ষাতেই রইলাম। আপনাকেও শুভরাত্রি’
এটাকেই তো বলে শালীন আর বিশুদ্ধ প্রেমালাপ। মানুষ কি সব রসের কথা বলে। আসলেই নামাজ অনেকদিন ধরে পড়া হচ্ছে না। এখন যূথীর কারণে যদি নামাজ পড়া হয় তাহলে মন্দ কি? আজ ফজরের নামাজ পড়েই আল্লাহর কাছে প্রার্থণা করতে হবে- আল্লাহ তুমি যূথীর সাথে বিয়ের ব্যবস্থা করে দাও। যে মেয়ে এত সুন্দর করে গুছিয়ে উত্তর দেয় সেই মেয়ে অবশ্যই ভালো হবে। এই মেয়েকে না দেখেই ভালোবেসে ফেলা যায়।
যূথীর ফোনের অপেক্ষাতেই জুয়েলের রাতের ঘুম উধাও হয়ে গেল। বিছানায় ঘুমাতে যাবার পর তার মনে হচ্ছে যূথী বুঝি এই ফোন দিল। তার বারবার মনে হচ্ছে যূথী ফোন দিয়েই যাবে আর সে তার ঘুমের কারণে ফোন ধরতে পারবে না। আজ প্রথম সে যূথীর গলার আওয়াজ শুনবে। আচ্ছা তার গলার স্বর কেমন হবে? অনেক মেয়ের গলার স্বর কেমন যেন পুরুষালি তার গলার স্বর এমন হবে নাতো? এই স্বর তার একদম পছন্দ না। তার পছন্দ মিষ্টি সুরেলা কন্ঠস্বর। উত্তেজনায় জুয়েলের আর ঘুমই হচ্ছে না। সে একটু পর পর ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে আর সময় দেখছে। ফজরের সময় হয় না কেন?
সকালের সূর্য উঠতে আরও ত্রিশ মিনিট বাকী কিন্তু এখনো যূথী ফোন দেয়নি। জুয়েলও বুঝে উঠছে না সে ফোন দিবে কিনা? যূথীর তো ফোন দেবার কথা ছিল তবে কি সে নিজেই ঘুম থেকে উঠতে পারলো না? অনেক সাহস যোগার করে জুয়েল নিজে যেচেই প্রথম ফোন দিল। দুইবার রিং হচ্ছে কিন্তু কেউ ধরছে না। তিনবার রিং হতেই একজন ঘুমন্ত মানুষের কন্ঠস্বর শুনতে পেল। ঐপাশ থেকে হ্যালো শুনতেই জুয়েল বলে উঠলো,
- আমি জুয়েল বলছি
- কোন জুয়েল?
- পূর্নেন্দু পত্রীর ভক্ত
- ও, মনে পড়েছে। আপনার নাম তখন জিজ্ঞেস করা হয়নি তাই চিনতে পারিনি।
- ফজরের নামাজ পড়বেন না?
- ইস! আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আপনাকে আমার ফোন দিয়ে জাগিয়ে দেয়ার কথা ছিল অথচ আপনিই আমাকে উল্টো ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলছেন।
- না সমস্যা নেই। আমি ভাবলাম আপনার কোন সমস্যা হল কিনা?
- না সমস্যা তেমন কিছু না। গতকাল রাতে পানিভাত গরুর মাংশের ভুনা দিয়ে খেয়েছিলাম আর তাতেই ঘুম জেকে বসেছে। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলার জন্য। আমি এখনই নামাজ পড়ছি আর আপনিও পড়ে নিন।
- না, না ধন্যবাদ দেবার কিছু নেই। রাখি তাহলে
জীবনের প্রথম কোন অপরিচিত মেয়ের সাথে প্রথম মোবাইলে কথা বলা। মানুষ চাইলে কত কিছুই না পারে। যূথীর কন্ঠ মোটেই পুরুষালি নয়। বেশ মোলায়েম আর আন্তরিক। মেয়েদের সাথে কথা বলায় এত আনন্দ জুয়েল আগে বুঝেনি। আগে জানলে জীবনের পঁচিশটি বছর এভাবে একাকী কাটত না। অনেক আগেই জুটিয়ে ফেলত। সে মনে মনে জিসানকে ধন্যবাদ দিল। জিসান আসলেই একজন ভালো মেয়ের সন্ধান তাকে দিয়েছে।
পরের দিন জুয়েল আবার পূর্নেন্দু পত্রীর কবিতার চরণ ক্ষুদে বার্তা করে পাঠালো। এবার উত্তর সরাসরি ফোনের মাধ্যমেই সে পেল। যূথী তাকে ফোন দিয়েছে। জুয়েল হাসিমুখে হ্যালো বলে উঠলো।
- আপনার সাথে সকালবেলা ভালোমত কথা বলতে পারিনি। তাই ফোন দিলাম
- ফোন দিয়েছেন দেখে ভালো লাগলো আর আপনার সাথে পরিচিত হয়েও ভালো লাগলো
- আমার বন্ধু মহলে পুর্নেন্দু পত্রীর কোন ভক্ত ছিল না। আমি একাই ওনার ভক্ত ছিলাম তাই একটু একা লাগত। আপনাকে পেয়ে ভালো লাগলো।
- যেহেতু আমরা দুইজনেই পুর্নেন্দু পত্রীর ভক্ত। আমাদের মাঝে এই মিলটা আছে তবে আর আপনি কেন? শুধু তুমি দিয়েই শুরু হয়ে যাক
- হা হা, মিল থাকলেই তুমি বলতে হয় বুঝি? তবে আমার আপত্তি নেই। আপনি প্রথমেই শুরু করুন না?
- যূথী ফুলের সুবাস অনেক সুন্দর। তুমি যূথী ফুল দেখেছো?
- হা হা, তুমি ভালো প্রশ্ন করেছো। চুলে খোপা করলে আমি যূথীর মালা পড়ি মাঝে মাঝে কিন্তু ঢাকা শহরে যূথীর মালা সহজে পাওয়া যায় না।
- পদ্ম হতে আমি গাঁথিয়া এনেছি সিক্ত যূথীর মালা
- বাহ, বেশ সুন্দর। আচ্ছা তোমার কাছে পূর্ণেন্দু পত্রী পরিচালিত ‘স্ত্রীর পত্র’ সিনেমাটি আছে?
- হুম, আছে। তোমার লাগবে?
- সিনেমাটি দেখার খুব ইচ্ছা কিন্তু জোগাড় করতে পারছি না।
- তাহলে কাল বিকালে আসো চারুকলার ছবির হাটে। এখানে ভালো গুড়ের চা পাওয়া যায়। গুড়ের চা খেতে খেতে ‘স্ত্রীর পত্র’ আদান প্রদান করা যাবে।
- কাল বিকালে? আচ্ছা ঠিক আছে।
ফোন রেখেই জুয়েল ইয়েস বলে উঠলো। সে ধীরে ধীরে সফল হচ্ছে। প্রথমে পরিচয় এরপর আপনি থেকে তুমি আর এখন প্রথম দেখা। সে তাহলে বাজিতে জিতেই যাচ্ছে। আরিফকে ধরতে হবে কেএফসিতে খাওয়ানো বিলের টাকার জন্য। বাজি জেতার ভাবী আনন্দে জুয়েলের মন আনন্দ খেলে গেল। সে নিজের মনেই বলে উঠলো- জীবনটাই আসলেই অনেক সুখের যদি মনের মত সঙ্গী পাওয়া যায়।
আইনস্টাইন বলেছেন- জ্ঞানের চাইতে কল্পনাশক্তি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। জুয়েল তার সেই গুরুত্বপূর্ণ জিনিসটিকে কাজে লাগাচ্ছে। সে কল্পনায় যূথীর ছবি আঁকছে মনে মনে। আচ্ছা যূথীর নাক কেমন হবে? তার নাক কি ঘামায়? যাদের নাক ঘামায় সেসব মেয়েদের স্বামী অনেক আদর করে। যূথী কি এই কথা জানে? তাকে জিজ্ঞেস করতে হবে। আচ্ছা যূথীর চুল কেমন? সেটা কি কোঁকড়ানো না দীঘল কালো চুল? এইভাবে সব অঙ্গ প্রত্যঙ্গ নিয়ে সে তার কল্পনাশক্তি দিয়ে একটি ছবি দাঁড় করালো। আজ তাদের প্রথম দেখা হবে। প্রথম দেখাতে কি তাকে ভালো লাগবে?
জুয়েল মুখ ফসকে বলে ফেলেছিল তার কাছে ‘স্ত্রীর পত্র’ সিনেমাটি আছে। তার কাছে এই সিনেমাটি নেই। মানুষ প্রেমে পড়লে কত কিছুই না করতে পারে? কৃপণ জুয়েল যে এক কাপ চা খাওয়াতে দশবার গড়িমসি করত সেই জুয়েল আজ সিএনজি চালিত অটোরিকশা ভাড়া করে ঢাকা শহরের এই মাথা থেকে ঐ মাথা ‘স্ত্রীর পত্র’ সিনেমাটি তন্ন করে খুঁজে হয়রান হল। সিনেমাটি সেই ১৯৭২ সালের নির্মিত সহজেই পাওয়া যায় না। ঢাকার এই মাথা ঐ মাথা খুঁজে অবশেষে ছবিরহাটের খুব কাছেই আজিজ সুপার মার্কেটে সেই কাঙ্ক্ষিত সিনেমার সিডি পাওয়া গেল। সিডিখানা পেয়ে জুয়েলের মন হল-আমি পাইলাম, ইহাকে পাইলাম।
ছবির হাটে এই মুহুর্তে পাঁচজন মেয়ে বসে আছে। জুয়েল একনজর দেখার মত করে সবার দিকে ভালো করে তাকালো। নিজের মনেই অভু দশ,বিশ, ত্রিশ... এভাবে গুণতে লাগলো। এভাবে গুণতে গিয়ে একশ যে মেয়ের দিকে এসে শেষ হল সে মেয়েটি একটু মোটা তবে চুলগুলো বেশ লম্বা। কপালে বেশ বড় লাল টিপ। হাতকাটা জামা পড়েছে দেখে তার মোটা দেহ বেশি নজরে আসছে না তার আগেই তার নগ্ন হাতের দিকে নজর চলে যাচ্ছে। এই মেয়ে কিছুতেই যূথী হতে পারে না। সে মনে মনে আবার অভু দশ, বিশ গোনার সিদ্ধান্ত নিল কিন্তু তার আগেই তার মোবাইল বেজে উঠলো। মোবাইল হাতে নিতেই সে দেখে যূথীর ফোন। সে আবার ঐ পাঁচটি মেয়ের দিকে তাকালো কিন্তু কেউ তাকে ফোন দিচ্ছে না। সে একটু আশাহত হয়ে ফোনটি ধরলো। ফোনে হ্যালো বলতেই ঐপাশ থেক যূথী বলে উঠলো,
- কতক্ষণ ধরে বসে আছি, তুমি এখন কোথায়?
- আমিতো ছবির হাটে তুমি কোথায়?
- আমিও তো ছবির হাটে
- দেখ কালো বোরকা পরে একদম কোনায় বসে আছি
কালো বোরকা শুনতেই সে দেখতে পেল একদম কোনায় বোরকা পরা এক নারী বসে আছে। সে এসেই খেয়াল করেছিল সেই বোরকা পরা নারীটিকে কিন্তু তাকে বিবাহিত মহিলা ভেবে তাকে গোনার মধ্যে ধরেনি। এখন সেই বোরকা পরা মেয়েটিই যূথী! জুয়েল সেই বোরকা পরা মেয়েকে দেখে বেশ হতচকিয়ে গেল। জিসান বলেছিল যূথী পর্দাশীল কিন্তু এমন পর্দাশীল হবে যে চোখ ছাড়া আর কোন কিছুই উন্মুক্ত করবে না। এই কোন পর্দাশীলের পাল্লায় সে পড়ল? সেখান থেকে পালিয়ে যাওয়া অভদ্রতা তাই সে ভদ্রতা করেই যূথীর কাছে গেল। এই বোরকা পরা মেয়েকে দেখে তার মুখ দিয়ে প্রথমে তুমি ডাক এলো না, সে মুখ ফসকে বলে ফেললো-আপনি কখন এলেন মানে তুমি কখন এলে?
- আমাকে দেখে বেশ চমকিয়ে গেলে মনে হয়?
- না মানে, কিছুটা। শুধু চোখ দেখতে পাবো এটা আশাকরিনি।
- কথা বলার জন্য কি মুখ দেখা জরুরি? রেডিওতে আরজেদের সাথে কথা বল তখনতো শুধু তাদের কথা শুনতে পাও, তাদেরতো দেখা যায় না এখন আরজেদের সাথে মানুষ বন্ধুত্ব করছে না?
- হা হা, তোমার মত এক রেডিওকে কাছে পেয়ে এবং পরিচিত হয়ে বেশ ভালো লাগলো।
- ভালো লাগলো এটা মন থেকে বলেতেছো? আমার এই চোখ ছাড়া আর কোন কিছুই কিন্তু দেখতে পাবে না কিন্তু। কি এই বোরকা পরা মেয়ের সাথে কথা বলবে? না ঐ হাতাকাটা সুন্দরী মেয়ের সাথে কথা বলবে?
- হা হা, ও ভালো কথা এই নাও তোমার সেই ‘স্ত্রীর পত্র’
- এই সিনেমাটি দেখার খুব ইচ্ছা ছিল। পূর্ণেন্দু পত্রীর বানানো এটাই হচ্ছে সবচেয়ে ভালো সিনেমা।
- পূর্ণেন্দু পত্রী! ওনাকে নিয়ে আমি একটা মজার কাহিনী বলি। ওনার কবিতার সাথে আমার পরিচয় ঘটে ‘কথোপকথন’ কবিতা দিয়ে। এই কবিতা পড়ে বেশ ভালো লেগে যায় তখন কবির নামটা খেয়াল করি। এত সুন্দর রোমান্টিক কবিতা আমি আর দেখিনি। ঐ কবিতা পড়ে আমি ওনার প্রেমে পড়ে যাই। ঠিক করি তিনি যদি এখনো জীবিত থাকেন তাহলে ওনাকে বিয়ে করার চেষ্টা করবো। এভাবে দীর্ঘদিন পূর্ণেন্দু পত্রীর সাথে মনে মনে ভালোবাসা চলতে লাগলো। একদিন পত্রিকা একজন কবির ছবিসহ কবিতা প্রকাশ করে। কবির নামটা খেয়াল করতেই দেখি পূর্ণেন্দু পত্রী কিন্তু ছবির দিকে খেয়াল করতেই আমি যেন ইলেক্ট্রিক শক খেলাম। আমি জানতাম পূর্ণেন্দু পত্রী মেয়ে এখন দেখি তিনি পুরুষ! এতদিন আমি একজন পুরুষ কবিকে ভালোবেসে এসেছি?
- হা হা, হি হি আর বইলো না। পেটে খিল ধরে গেল
যূথীর হাসি শব্দে আশেপাশের মানুষ তাদের দিকে তাকালো। তারা দেখলো একজন আপাদমস্তক পর্দা দিয়ে ঢাকা এক মহিলা এক চ্যাংড়া ছেলের সাথে বসে বসে গল্প করছে। জুয়েল একটু বিব্রত হল। পাশের সঙ্গী পর্দাহীন অনেক সুন্দরী হলেও সমস্যা আবার আপাদমস্তক পর্দা দিয়ে ঢাকা থাকলেও সমস্যা। সবাই খেয়াল করতে থাকে।
হাসি থামিয়ে যূথী বলে উঠলো আচ্ছা তুমি কথোপকথন কবিতা আবৃতি করতে পারো?
- কিছুটা, মাঝে মাঝে আঁটকে যাই।
- আমার খুব ইচ্ছা, আমি আমার স্বামীর সাথে কথোপকথন কবিতা আবৃতি করবো। আমাকে যে বিয়ে করবে তার প্রধান গুণ হতে হবে ‘কথোপকথন’ কবিতা আবৃতি করতে পারা। আচ্ছা দেখি তুমি কেমন পারো? আমি শুরু করলাম।
- এতো দেরী করলে কেন? সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছি।
- কি করবো বলুন ম্যাডাম? টিউশনি শেষ করে বাইরে তখন ঝুম বৃষ্টি। আমার জন্যে তো আর গেইটের বাইরে মার্সিডিজ দাঁড়িয়ে থাকে না যে ড্রাইভারের কুর্নিশ নিতে নিতে হুট করে ঢুকে পড়বো। তাই ঝুম বৃষ্টি মাথায় নিয়ে, কাদা-জল ভেঙ্গে, গরীবের গাড়ি মানে দু’পায়ের উপর ভরসা করেই আসতে হয় আপনার আমন্ত্রণ রক্ষা করতে। তবে আজ রিক্সায় করে এসেছি নইলে একেবারে কাকভেজা হয়ে যেতাম। রিক্সা খুঁজে পেতেই যা দেরী হলো।
- ইস্ বেশ ভিজে গেছো দেখছি। কাছে এসো তো, রুমাল দিয়ে মুছে দিই।
- ওহো, আমি তো ভেবেছিলাম তোমার শাড়ির আঁচল দিয়ে মুছিয়ে দেবে। ঠিক আছে, রুমালই সই।
- না মিস্টার, ওটা ভবিষ্যতের জন্য জমা থাকুক। যখন তোমার বউ হবো তখন ইচ্ছেটা পূরণ হবে।
- আচ্ছা। আর যদি তা না হও, তবে আমি বুড়ো বয়েসে পান চিবোতে চিবোতে কোন এক বাদলঘন দিনে বসে বসে রোমন্থন করবো আজকের এই রুমালি ভালোবাসাময় সময়টাকে। নাতিপুতিকে তখন প্রথম প্রেমিকা আর এই রুমালটার গল্প শোনাবো।
- প্লিজ, এভাবে বলো না। কেন আমি তোমাকে পাবো না? তুমি কি আমাকে চাও না? আমাকে ভালোবাসো না?
যূথীর শেষ লাইনটা তার হৃদয়ে বেশ কড়াভাবে বেজে উঠলো। এই কবিতা জুয়েলের আগেই মুখস্থ ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের বসন্তবরণ উৎসবে এই কবিতা সে আবৃতি করেছিল। আজ এক বোরকা পরা মেয়ের সাথে এই কবিতা আবৃতি করে সে অন্যধরনের সুখ পেল। কবিতা আবৃতির মাঝে আসলেই অনেক সুখ আছে। যূথী দেখতে যেমনই হোক সে তাকেই ভালোবাসবে। তার কন্ঠস্বর সুন্দর। সে ভালো কবিতা আবৃতি করতে পারে। সে যেমন পর্দাকরে তাকে বিয়ে করলে অন্তত পরকীয়ার সুযোগ নেই। জুয়েল নিজের মনে হেসে উঠলো।
- কি ব্যাপার কবিতার চরণ ভুলে গেছ নাকি? হাসতেছ কেন মনে মনে ?
- না মানে, তোমার কবিতার সেই প্রশ্ন সত্যি হিসেবে ধরে নিয়েছিলাম। মনে হচ্ছিল সত্যি তুমি আমাকে জিজ্ঞেস করছো।
- হা হা, যদি সত্যি জিজ্ঞেস করি। তোমার উত্তর কি হবে?
- আমি তো এক পায়ে খাড়া
- হা হা, তুমি পঙ্গু নাকি? এক পায়ে খাড়া কেন? আর আমাকে কিন্তু বিয়ের আগ পর্যন্ত দেখতে পারবে না। আমরা দেখা করবো, গল্প করবো কিন্তু প্রচলিত ঐ ডেটিং এর নামে কোন কিছু করার সুযোগ পাবে না। আর নিয়মিত নামাজ পড়তে হবে। দেখ এখনো এক পায়ে খাড়া থাকবা কিনা ?
- হা হা, কোন সমস্যা নেই। আমিতো এটাই চাই। নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে। আমার কাছে খুব অবাক লাগছে এত সুন্দর করে আর এত সহজে আমাদের ভালোবাসা হয়ে গেল? আমি বাজিতে জিতে গেলাম?
- বাজি! মানে?
- ও তোমাকে বলা হয়নি। তার আগে বলে রাখি তোমাকে ইতিবাচক হিসেবে চিন্তা করতে হবে। খারাপভাবে বিষয়টা নিবে না।
- আচ্ছা তুমি আগে খুলে বল।
- আমি একটু হিসেবী। বন্ধুদের খাওয়াতে গরিমসি করি। তাই একদিন আমার বন্ধু আরিফ আমার সাথে বাজি ধরে বলেছিল আমার মত কৃপণ ছেলে জীবনেও গার্ল ফ্রেন্ড পাবে না। তখন আমি ওর সাথে বাজি ধরে বলেছিলাম আগামী এক মাসের মধ্যে আমি গার্ল ফ্রেন্ড খুঁজে দেখাবো।
- কিন্তু বাজি ধরতে গিয়ে আমি এত বড় ঐশ্বর্য খুঁজে পাবো তা জানতাম না।
- তুমি কৃপণ! বাদাম অন্তত খাওয়াবে তো দেখা হলে?
- হা হা, তোমাকে পেয়ে আমি নবায়নযোগ্য সম্পদ পেয়েছি। এই সম্পদ কখনো নিঃশেষ হবে না। আজ থেকে কৃপণতা ছেড়ে দিলাম।
- বেশ গুছিয়ে কথা বলা শিখেছ দেখি। কৃপণতা ছাড়ার দরকার নেই। আমাদের ভবিষ্যৎ সংসার এর জন্য এখন থেকেই সঞ্চয় করতে হবে।
- ভবিষ্যৎ সংসার! হাসি পেল অনেক। বসো একটু হেসে নেই।
- হাসির কি বললাম?
- সম্পর্ক হল এখনো পাঁচ মিনিট অতিক্রম হলো না আর তুমি এখনই সংসার এর চিন্তা মাথায় নিয়ে এসেছো। সংসার সেটা ঢের দেরি এর আগে চলো আমরা রোমান্স করি।
- রোমান্স! ছি ছি তুমি এত খারাপ?
- সরি, মুখ ফসকে বলে ফেলেছি। সব রোমান্স বিয়ের পরেই হবে। আপাতত চলো পূর্ণেন্দু পত্রীর কথোপকথনে চলে যাই।
(চলবে)
©somewhere in net ltd.