নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রতিনিয়ত নিজেকে শেখার চেষ্টা করছি :)

আলামিন মোহাম্মদ

১৯৮৮ সালের বন্যার কথা বলছি। নভেম্বর মাস কিন্তু এখনো বন্যার পানি পুরোপুরি সরে যায়নি। বন্যায় রাস্তা ঘাট ভেঙ্গে গেছে। সেই সময় টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর গ্রামের চান মিয়া খুবই চিন্তিত হয়ে আছেন। বাড়িতে পুরুষ ব্যক্তি বলতে একমাত্র সে। তার অনেক দায়িত্ব কারণ তার ভাগনির সন্তান হবে যেকোন মুহুর্তে ব্যথা উঠে যেতে পারে। আশেপাশে কোথাও ডাক্তার নেই, দাই একমাত্র ভরসা। দাইকে খবর দিয়ে রাখা হয়েছে। তিনি একবার আকাশের দিকে তাকাচ্ছেন আরেকবার রাস্তার দিকে তাকাচ্ছেন যদি হাসপাতালে নিতে হয় তাহলে তো মহা বিপদ। ভাগনির স্বামীও সাথে নাই। ঢাকায় কাজে গেছে। দুপুর গড়িয়ে সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়ছে। এমন সময় রসুই ঘর থেকে একটি বাচ্চার কান্নার আওয়াজ আসলো। পুত্র সন্তান হয়েছে আজান দেয়া লাগবে। কিন্তু আলাদা করে আজান দেয়া লাগে নাই। আসরে নামাজের জন্য আহবান করা চারদিকের সকল মসজিদের আজান যেন নতুন ভুমিষ্ট শিশুকে বরণ করে নিল। চান মিয়া আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানালেন। সন্তানের পিতাকে খবর জানানো দরকার। ঢাকায় গিয়ে চান মিয়া সন্তানের বাবাকে খুঁজে পেলেন না। তিনি চিন্তিত হয়ে পড়লেন। বাড়ির প্রতিবেশীকে খবর দিয়ে রাখলেন যাতে বাড়িতে আসা মাত্র টাঙ্গাইলে চলে যায়। পুত্র সন্তান হয়েছে আর পিতা কিনা দূরে তা কি করে হয়? এক সপ্তাহ পর শিশুর পিতা বাড়িতে আসলো এবং পুত্র সন্তানের খবর শুনেই টাঙ্গাইলের পানে ছুটলেন। শিশু পুত্রকে দেখতে চাইলেন কিন্তু গ্রাম্য রেওয়াজ বাধা হয়ে দাঁড়ালো।স্বর্ণ দিয়ে শিশু পুত্রের মুখ দেখতে হবে। শিশুর পিতার তখন এত সামর্থ্য ছিল না স্বর্ণ কেনার। তাহলে কি উপায়? স্বর্ণ ও হলুদ একই ধরনের ধরা হয়। তখন একটি হলুদের টুকরো হাতে নিয়ে শিশুর হাতে দিলেন। সেটি ছিল শিশুর প্রথম উপহার। সেই উপহারটিকে যত্ন সহকারে তার নানী সিকায় তুলে রাখলেন। এভাবে চলে যেতে থাকলো দিন মাস বছর। এভাবে যখন শিশুর আঠারো বছর পূর্ণ হল তখন শিশুর নানী তার হাতে একটি শীর্ণ ও শুকিয়ে যাওয়া একটি হলুদ তুলে দিলেন এবং সেদিনের কথাগুলো পুনব্যক্ত করলেন। ১৮ বছর আগের প্রথম উপহার পাওয়া সেই হলুদ এখন সযত্নে আছে দেখে সেই কিশোরবালক অনেক পুলকিত হল। এরপর লজ্জা পেল যখন সে নানীর বাসনার কথা জানতে পারলো। বাসনা অনুযায়ী এই হলুদ দিয়েই নাতির গায়ে হলুদ দিতে চান। গত ১০ নভেম্বর ২০১২ সেই কিশোরবালক ২৪ বছর অতিক্রম করে ২৫ এ পা দেয়। আজো সেই কিশোরবালক তার নানীর ইচ্ছা পুরণ করতে পারে নাই। আর সেই কিশোরবালক হচ্ছে এই আলামিন মোহাম্মদ

আলামিন মোহাম্মদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাজি ! (শেষ অংশ)

৩০ শে এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১০:১০

আরিফ আর জিসান বসে আড্ডা দিচ্ছে এইসময়ে জুয়েল এসে হাজির। আরিফ কিছু বলার আগেই জুয়েল বলে উঠল-দোস্ত চা খাবি? জুয়েলের মুখে এই কথা শুনে আরিফ সাথে সাথে পশ্চিম দিকে তাকালো।

- কিরে পশ্চিম দিকে তাকিয়ে কি দেখিস?

- না আজ সূর্য কোন দিকে উঠেছে তা দেখছি।

- হা হা, আমি এক সম্পদ পেয়েছি এখন আমার সব সম্পদ বিলিয়ে দিলেও শেষ হবে না। এই এক নবায়নযোগ্য সম্পদ।

- তুই কি পেয়েছিস?

- আমি বাজিতে জিতে গেছি, এবার কেএফসিতে খাওয়ার বিল দে।

- বিশ্বাস করি না, নাম্বার দে কথা বলে দেখি? আর মেয়েটি কে?

- জানি বিশ্বাস করবি না, মেয়ের নাম যূথী। দাঁড়া ফোন দিচ্ছি।



জুয়েল যখন মুঠোফোন বের করছিল তখন জিসান বলে উঠল- তুমি ফোন দিলে তো হবে না। তুমিতো আগে থেকে কোন মেয়েকে ঠিক করে রাখতে পার অভিনয় করার জন্য। দাঁড়াও, আমার মোবাইল দিয়ে ফোন দিচ্ছি। অপরিচিত নাম্বার দিয়ে কথা বলে দেখি আসল না নকল।



জিসানের এই কথায় জুয়েল এক রহস্যময় হাসি দিল। যূথীকে যে সে তার মাধ্যমেই পেয়েছে সেটাতো আর আরিফ জানে না। জিসানের প্রস্তাবে আরিফ সায় দিলে বলল- জিসানের কথাই ঠিক। তুই টাকা দিয়ে মেয়ে ঠিক করে রেখেছিস। জিসান ওর মোবাইল দিয়ে ফোন দিবে। ও কথা বলবে এরপর আমি কথা বলব। যদি দেখি ঠিক আছে তাহলে টাকাও দিব আর আজকে ভালো রেস্তোরাঁয় তোদের খাওয়াবো।

- আচ্ছা, জিসান তুই ফোন দে

এরপর জিসান ওর মুঠোফোন থেকে যূথীর নাম্বার নিল। জিসান যখন যূথীর নাম্বার নিচ্ছিল তখন জুয়েল মনে মনে বলছিল-শালা, এই নাম্বার তোর কাছ থেকেই তো আমি পেয়েছি আর এখন তুমি ভালোই অভিনয় শুরু করে দিয়েছ।

জিসান তার মুঠোফোনে ফোন দিয়ে বেশ ভালোই আলাপ শুরু করেছে। এরপর আরিফের দিকে মুঠোফোন দিয়ে বলল- নে কথা বল।

আরিফ মুঠোফোন নিয়ে হ্যালো বলতেই ঐপাশ থেকে ভেসে এল,

- আসসালামু আলাইকুম আরিফ ভাইয়া

- অলাইকুম আসসালাম, ভাবীর কন্ঠ দেখি অনেক মিষ্টি

- ভাবী? আগে বিয়ে হোক তারপর ভাবী ডাকা শুরু করেন।

- হা হা, বিয়ের আগেই থেকেই ভাবী বলা চর্চা শুরু করছি। আমার এই কিপটা বন্ধুকে কিভাবে পছন্দ করে ফেললেন?

- হা হা, জীবনে বড় হতে হলে একটু কৃপণতা করতে হয়। তা বাজিতে হেরে আপনার কেমন লাগছে?

- কিছু পরাজয়ে আনন্দ আছে। আমার এই কিপটা বন্ধু এত সুন্দর কন্ঠের এক ভাবী পেয়েছে এরজন্য আমি অনেক খুশি। আসেন ভাবী একদিন দেখা করি। চা খেতে খেতে আপনার বদনখানা দেখি।

- হা হা, আসবো তবে দেখতে পারবেন না।

- দেখতে পারবো না মানে?

- আমি অসূর্যম্পর্শা

- আয় হায়, এটা কি বললেন, এই ধরনের মেয়ে আজকাল পাওয়া যায় জানতাম না?

- আবার এরজন্য ভাববেন না আমি প্রাচীনপন্থী! আমি বেশ আধুনিক। কবিতা আবৃতি করি, গান শুনি, ইন্টারনেট চালাই

- তা এই অসূর্যম্পর্শা হবার কারণ কি?

- খোলা চকোলেট আর প্যাকেটদ্বারা আবৃত চকোলেট এই দুইটা চকোলেট এর মধ্যে আপনি কোনটা খাবেন? আমার শরীরটাই শুধু পর্দা দিয়ে ঢাকা মনটা কিন্তু পর্দা দিয়ে ঢাকা নয়। আমার চিন্তার ক্ষেত্রে স্বাধীন। আমার পরিবার এই স্বাধীনতা দিয়েছে কিন্তু শুধু বলেছে পর্দার ভেতর থেকে করতে আর আমিও অনুভব করলাম পর্দার ভেতর থেকে চলাচল করলে বেশ নিরাপদ থাকা যায় এরমধ্যে নিজের ভেতর এক রহস্য সৃষ্টি হয়। আমি এই রহস্য নিয়ে খেলতে পছন্দ করি।

- ভাবী, মাথার উপর দিয়ে গেল কথাগুলো। এখন রাখি পরে কথা হবে।



আরিফ ফোন রেখেই বলে উঠল-ভালোই জিনিস জুটাইছো, এখন পর্যন্ত তারে দেখতেই পারো নাই। তা উপরের কালো কাপড় দেখে পছন্দ করে ফেললা নাকি?

- তোদের মধ্যে শুধু কুচিন্তা মাথায় আসে। তোদের কাছে সুন্দরমানে গাঁয়ের রঙ ফর্সা হতে হবে। আমি ওর কন্ঠ শুনে পাগল হয়েছি। সে আমার রেডিও। ওরে আমার দেখতে হবে না। আর বিয়ের পর তো দেখতেই পারবো।

জুয়েলের কথা শেষ হতেই আরিফ একটা গান ধরলো। আরিফের সাথে জিসানও সুর মিলালো



“এই পথে যখনই আমি যাই

মাঝে মাঝে একটা মেয়ে দেখতে পাই

আলতা রাঙ্গা পায়ে আবার নূপুর পরেছে

বুরকা পরা মেয়ে পাগল করেছে

একটা বুরকা পরা মেয়ে পাগল করেছে”



আরিফের গান এই পর্যন্ত আসতেই জুয়েল আরিফের পশ্চাৎদেশে কষে একটা লাথি বসালো এরপর বলে উঠলো-শালা মজা পরে নেও আগে বাজির টাকা দাও।



জুয়েল আর যূথীর প্রেম বেশ ভালোই চলছিল। তাদের প্রেমে শালীনতা ছিল। শুধু কথার মাধ্যমেই প্রেম। এই প্রেমে কোন শারীরিক চাহিদা নেই। যে প্রেম মনে মনে হয়, যে প্রেমে শরীরের আকর্ষণ থাকে না সেই প্রেম অনেক গাঢ় হয়। কিন্তু জুয়েলের সব বন্ধুরা যখন ডেটিং এর নামে ঠোঁটের উষ্ণতা নিয়ে আসছে তখন জুয়েল আর যূথী পূর্ণেন্দু পত্রীর কথোপকথন নিয়ে ব্যস্ত। শরীর বলেও তো কথা আছে। শুধু মনের মিলন হলেই তো হয় না,শরীরের মিলন এবার বাসনাও থাকে কিন্তু এর জন্য চাই বিয়ে নামক সামাজিক স্বীকৃতি। জুয়েল তার বন্ধুদের শারীরিক সুখ দেখে একদিন বিদ্রোহী হয়ে বলল- তোমাকে আমি দেখতে চাই?

- তোমার সাথে আমার বিয়ে জায়েজ। যাদের সাথে বিয়ে জায়েজ তাদের সামনে পর্দা উন্মুক্ত করা নিষেধ এটা কি তুমি জানো না?

- কল্পনাশক্তি ব্যবহার করে তোমার ছবি ভাসাতে ভাসাতে আমি ক্লান্ত। বৃষ্টিরসময় তোমার ছবি একরকম ভেসে আসে আবার জোছনা রাতে অন্যরকম ছবি ভেসে আছে। এই বহুরূপী যূথীকে আমি আর চোখের সামনে ভাসাতে চাই না। তুমি আমাকে দেখা দাও। একরূপী যূথীকে আমি দেখতে চাই।

- যতক্ষণ তুমি আমাকে দেখতে পারবে না ততক্ষণ তোমার ভালোবাসা আমার প্রতি থাকবে। ভালোবাসা একটি রহস্য, একটি মায়া। যতক্ষণ পর্দা ঢাকা রহস্য থাকবে, মায়া থাকবে ততক্ষণ ভালোবাসা থাকবে। আর রহস্য উন্মোচিত হয়ে গেল সেখানে কামুকতা ভর করবে। কামুকতা মানুষের পশুত্বকে জাগিয়ে তোলে। আমাকে দেখার পর তুমি কামুকতার জন্য পশু হয়ে উঠবে। আমি মানুষ জুয়েলকে ভালোবাসতে চাই।

- তাহলে তো তোমার সাথে আমার বিয়ে সম্ভব না।

- তা কেন বলছো?

- আচ্ছা, তোমাকে দেখতে হবে না, তোমার অন্তত স্থির ছবি আমাকে দেখাও। সেই ছবি দেখে আমার মনে যূথীর একরূপী ছবি দাঁড় করাই। বহুরূপী মানুষ ছলনা দেয় তাই তোমাকে নিয়ে ভয় পাই। যদি তুমি আমাকে ছলনা দাও।

- আচ্ছা, ঠিক আছে, তুমি আমাকে কসম কেটে বল তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে না। আমাকেই বিয়ে করবে। তাহলে তোমাকে ছবি দেখাতে পারি। আর এই ছবি শুধু তোমার কাছেই রাখবে আর অন্যকোন পুরুষ মানুষের কাছে যেন না যায়। আমি সেই ছোটবেলা থেকেই অসূর্যম্পর্শা। আমার এত দিনের সাধনা নষ্ট করে দিও না। আমার এই সাধনা আমার স্বামীর জন্য।

- তুমি যে স্বামীর জন্য এই সাধনা করছো আমিই সেই স্বামী হতে চাই। তোমাকে কথা দিলাম তোমাকে ছেড়ে যাব না।

- আচ্ছা, তোমার ইমেইলে আমি ছবি পাঠিয়ে দিচ্ছি



ইমেইলে যূথীর ছবি যখন সে উন্মুক্ত করতে যাচ্ছিল তখনই তার বুক ধুরু ধুরু করে উঠলো। কেমন হবে তার চেহারা? এতদিন যে ছবি হৃদয়ে এঁকেছে তার সাথে কি মিলবে? জুয়েলের শরীরে রক্ত চলাচল বেড়ে গেল। সে কম্পমান হাতে মাউস দিয়ে ছবির ফাইলে ক্লিক করলো আর সাথে সাথে ছবিটি বড় হয়ে পর্দায় হাজির হল। এক সেকেন্ড সেই মেয়েটিকে দেখতেই সাথে সাথে বিদ্যুৎ চলে গেল। জুয়েল শিট বলে নিজের চুল ছিড়তে লাগলো। বিদ্যু অফিসকে অনেক বিশ্রী গালাগাল দিল। এর পরক্ষণেই সে ভাসানোর চেষ্টা করলো যূথির চেহারা কিন্তু ভাসাতে পারছে না। তার ছটফটানি বেড়ে গেল। শরীর থেকে ঘাম বেয়ে পড়তে লাগলো। শরীরের উত্তেজনা কমাতে যখনই পানি খেতে গেল তখনই সে মাটিতে লুটে পড়লো। ডাক্তারের ভাষায় এটাকে বলে হার্ট এটাক।



হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে জুয়েল। তার পাশেই বসে আছে আরিফ আর জিসান। জুয়েলের এই অবস্থাতেও আরিফ টিপ্পনী করতে ছাড়লো না। সে বলে উঠলো- কিরে যূথীর সাথে মোবাইল সেক্স করতে গিয়েছিলি নাকি? এরপর মোবাইল সেক্সের উত্তেজনায় হার্ট এটাক! তোর তো রেডিও প্রেম। মোবাইল সেক্স ছাড়া কোন গতি নেই। বিয়ের আগে কিছুই দেখতে পারবি না।



বন্ধুর এই টিপ্পনীতে জুয়েল আরিফের পেটে একটা লাথির সাথে শালা ও অশ্লীল কিছু গালি দিল। প্রকৃত বন্ধু মানেতো তারাই যারা বন্ধুর দূরাবস্থার সময়েও বন্ধুকে নিয়ে টিপ্পনী কেটে বন্ধুর মুখে হাসি ফোটায়।

- ঐ দেখতে গিয়েই তো উত্তেজনা বশত হার্ট এটাক করে ফেললাম

- দেখতে গিয়ে হার্ট এটাক! কিরে দোস্ত, ভূত দেখলি নাকি? বোরকার ভেতর ভূত!

- ভূত না মনে হল পরী দেখেছি। এক সেকেন্ডও হবে না দেখতে পেরেছি এর মাঝেই বিদ্যুৎ চলে গেল। এরপর উত্তেজনা বেড়ে গেল,রক্তচাপ বেড়ে গেল। একসময় হার্ট এটাক করে বসলাম।

- বিদ্যুৎ চলে গেল মানে? সামনা সামনি দেখিসনি?

- না, ইমেইলে ছবি পাঠিয়েছিল তাও শর্ত দিয়েছে কাউকে দেখানো যাবে না।

- যূথীর সৌন্দর্য সইতে না পেরে বিদ্যুৎ ও ভয় পেয়ে চলে গেল। দেখিস আবার অন্ধ হয়ে যেন না যাস ঐ রূপের সৌন্দর্য সইতে না পেরে।

- তোরা সব বিষয়ে মজা করিস।

- যূথীকে জানিয়েছিস তুই যে হাসপাতালে?

- না ওরে জানাবো না, জানলে অনেক দুশ্চিন্তা করবে।



হাসপাতাল থেকে ফিরে এসে জুয়েল দরজা বন্ধ করে আবার সেই ছবিটি উন্মুক্ত করলো। এবারও আগেরমত উত্তেজনা। মনে মনে প্রার্থণা করছে বিদ্যুৎ যেন না যায়। তবে এবার আর বিদ্যুৎ ছলনা করেনি। সে অবশেষে যূথীকে দুই নয়নে দেখতে পেল। অবচেতন মনেই তার মুখ দিয়ে সুর হয়ে বের হল- তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি প্রিয় সেকি মোর অপরাধ? চাঁদেরে হেরিয়া কাঁদে চকোরিণী বলে না তো কিছু চাঁদ।। চেয়ে' চেয়ে' দেখি ফোটে যবে ফুল ফুল বলে না তো সে আমার ভুল মেঘ হেরি' ঝুরে' চাতকিনী মেঘ করে না তো প্রতিবাদ।।



জুয়েলের এই গান গাওয়া অবস্থায় যূথী ফোন দিয়ে বসল। সে ফোন রিসিভ করেই হ্যালো না বলেই তার মত গান গেয়ে যেতে লাগলো।

- আমি জানতাম জুয়েল সাহেব শুধু কবিতা আবৃতি করতে পারে আজ জানলাম তিনি একজন গায়ক বটে।

- আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি যূথী। তুমি আমার কল্পনার চাইতেও সুন্দর। বলো তুমি আমাকে ছেড়ে যাবে না?

- এই কথা আমিই তোমাকে জিজ্ঞেস করতাম। বাসায় বিয়ের কথা চলছে। আব্বা হয়ত তার পছন্দের ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে দিবে।

- এখন উপায়?

- বাসার পরিস্থিতি দেখি কেমন? পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসলে কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে করে ফেলতে হবে। তুমি পারবে কাজী অফিসে গিয়ে আমাকে বিয়ে করতে?

- এখনই বিয়ে?

- হুম, যদি বাসায় রাজি না করাতে পারি।

- আচ্ছা, আমি প্রস্তুত আছি।

- তুমি কিসের প্রস্তুত আছো? বিয়ের জন্য সাক্ষী দরকার। এরপর দেনমোহর এর বিষয় আছে। সেটা কিন্তু বিয়ের সাথে সাথেই পরিশোধ করতে হবে। দেনমোহর পরিশোধ না করলে তোমার আর আমার মিলন ব্যাভিচার হিসেবে গণ্য হবে। আমি গোনাহের ভাগিদার হতে পারবো না।

- দেনমোহর কত হবে?

- তোমার সামর্থ্য অনুযায়ী হবে তবে পারিবারিক রীতি বলে একটা কথা আছে। আমাদের পরিবারে দুই লাখের কমে কোন দেনমোহর হয় না।

- দুই লাখ!

- হুম, বিয়ে আজ হোক কাল হোক করতেই হবে। তুমি প্রস্তুতি নিয়ে রাখ।

- আচ্ছা। আমার যূথী ফুল, তোমার ঠোঁটদুইটি অনেক সুন্দর। ঐ ঠোঁটে ঠোঁট রাখতে আমার ঠোঁট ব্যাকুল হয়ে আছে। তুমি অন্তত তোমার মোবাইলে একটু ঠোঁট লাগিয়ে চুমু দাও।

- ছি, ছি জুয়েল। তোমাকে ছবি দিয়েছি কি আমাকে কামুকতার চোখে দেখার জন্য না ভালোবাসার চোখে দেখার জন্য।

- দুইদিন পর তো আমাদের বিয়ে হবেই। এখন একটু করলে সমস্যা কি?

- ধৈর্য্যের ফল সুমিষ্ট হয়। আরেকটু ধৈর্য্যে ধর। বিয়ের পরেই সব হবে।

- ধৈর্য্যের বাঁধ যে ভেঙ্গে যাচ্ছে

- হা হা, আমি রাখছি



যূথী মোবাইল রাখার সাথে সাথে জুয়েল ধ্যাৎ বলে উঠলো। পরক্ষণেই তাদের বিয়ের প্রস্তুতির কথা মনে পড়লো। যূথীকে সে হারাতে পারবে না। তার বাসায় বিয়ে নিয়ে কোন সমস্যা হবে না। সে আরিফকে ফোন দিল তার সাথে এক্ষুণি দেখা করার জন্য। এই বিয়ের প্রস্তুতি বিষয়ে তার সাথে আলাপ করতে হবে। আরিফ আর জিসানকে বিয়ের সাক্ষী হতে হবে।



এভাবে কিছুদিন যাবার পর একদিন যূথী ফোন দিয়ে জানালো- এই মুহুর্তে কাজী অফিসে চল। আজ সন্ধ্যায় ছেলে পক্ষ আমাকে দেখতে আসবে। তার আগেই আমরা বিয়ে করে ফেলতে চাই।



জুয়েল সাথে সাথেই আরিফকে ফোন দিল এক্ষুণি কাজী অফিসে চলে যেতে কিন্তু জিসানকে ফোন দিয়ে জানতে পারলো সে সকালে ঢাকার বাহিরে গেছে। জুয়েল পড়ে গেল বিরাট সমস্যায়। এই মুহুর্তে আরেকজন সাক্ষী সে কোথায় পাবে? এরপর সে আবার আরিফকে ফোন দিল আরেকজন সাক্ষীকে ব্যবস্থা করার জন্য। আরিফ জানালো-সাক্ষী ব্যবস্থা করা কোন ব্যাপার না। জুয়েল হাফ ছেড়ে বাঁচল। দোস্ত, তুই আর জিসান আসলেই আমার অনেক ভালো বন্ধু। আরিফ একটা বিগলিত হাসি দিয়ে বলল- হয়েছে আর তেল দিতে হবে না। বিয়েতে অন্তত কার্পণ্য কইরো না। কেএফসিতে আমাদের খাওয়াইও।

- দোস্ত, কেএফসিতে? এমনিতেই দেনমোহর এর টাকা যোগার করতেই আমার জান শেষ।

- আচ্ছা, তাহলে অন্তত পুরান ঢাকার ভালো বিরিয়ানি খাওয়াইও

- আচ্ছা, যা খাওয়াবো।



কাজী অফিসে বিয়ে নামক অধ্যায় বেশ সুন্দর ঝামেলা ছাড়াই শেষ হল। বিয়ের সাথে সাথেই দেনমোহর পরিশোধিত হল। এরপর তারা চলে গেল পুরান ঢাকার হাজীর বিরিয়ানি রেস্তোরাঁয়। সেখান পেট ভরে বিরিয়ানি খাওয়া শেষে আরিফ জুয়েলের পকেটে কিছু কনডমের প্যাকেট গুঁজে দিয়ে চুপিসারে বলল- বাসর এর কাজ শেষ করতে আর দেরি করবি কেন? কোন এক হোটেলেই চলে যা।

জুয়েল আবার বন্ধুর পশ্চাতদেশে লাথি দিয়ে বলল- বাসর নিয়ে তোদের চিন্তা দেখি অনেক বেশি।



আরিফ বসে আছে হোটেলের রুমের বাহিরে। তার মন বেশ খারাপ। তার এই কৃপণ বন্ধু আজ বিয়ে করে পর হয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন রাতে মজা করে ঘুমাবে তার কি হবে?

এদিকে দীর্ঘদিন না খেয়ে থাকা ক্ষুধার্ত বাঘের ক্ষুধার মত জুয়েলের কামুকতা জেগে উঠলো। কামুকতার উত্তেজনায় সে নিজেই আগেই দিগম্বর হয়ে নিল। এরপর বোরকা দ্বারা আবৃত যূথীকে বলল- এই যে দেখ, আমি দিগম্বর হয়েছি। আমার লজ্জা করছে না। তুমিও লজ্জায় থেকো না। বস্ত্র খুলে ফেলো নিজের।

যূথী লজ্জায় মাথা নাড়ল। যূথীর দেরি দেখে সে নিজে গিয়েই যখন বোরকার মুখ উন্মুক্ত করবে তখনই সে যেন ১০০০ ভোল্টের ইলেক্ট্রিক শক খেল। প্রচন্ড ভয়ে সে ও মাগো বলে চিৎকার দিল। সে ভয় পেয়ে সেই দিগম্বর অবস্থায় দরজা খুলে বের হল।



বন্ধুর চিৎকারে আরিফ ছুটে গিয়ে দেখে জুয়েল ন্যাংটা অবস্থায় রুম থেকে বের হয়েছে। সে কি হয়েছে বলতেই জুয়েল তাকে জড়িয়ে ধরে বলছে-ভূত! ভূত!!

- কোথায় ভূত? চল দেখি।

আরিফ যখন জুয়েলকে নিয়ে আবার রুমে ঢুকলো সেও যেন ভূত দেখার মত আতকে উঠলো। জিসান তুই? এখানে কিভাবে ?

জিসান তার পকেট থেকে দেনমোহর এর দুইলাখ টাকা বের কর বলল- দোস্ত আরিফ, তোর মনে আছে, তোর সাথে বাজি ধরেছিলাম? জুয়েলের কাছ থেকে দুইলাখ টাকা খোয়াবো এই ছিল আমাদের বাজি। আজ আমি বাজিতে জিতেছি।

- বাজিতে জেতার জন্য তুই এই কাজ করবি? তুই কি সাইকো?

- এছাড়া আর কোন ভাবেই বাজিতে জেতার উপায় ছিল না দোস্ত। জুয়েল যখন আমার কাছে এসে একটি মেয়ের নাম্বার চাইলো তখনই ঠিক করেছিলাম এইতো সুযোগ। আমি মেয়েলি ভাষায় কথা বলতে পারি এটা তোরা জানিস কিন্তু তোদের মাথায় একবারও আসেনি। মনে নেই কলেজে থাকতে একটি ছেলের কাছ থেকে মেয়ে সেজে প্রেম করে মোবাইল উপহার নিলাম।

জিসান কথা শেষ করতে পারেনি এর আগেই জুয়েল ওর উপর সেই দিগম্বর অবস্থায় হামলে পড়লো। জিসান আর্ত চিৎকার দিয়ে বলল- আমি সমকামী না, তুই কি আমার ইজ্জত লুটে নিবি নাকি?



জুয়েল কাঁদো কাঁদো চোখে বলল- কেন তুই আমার ইমোশোন নিয়ে খেললি? আমিতো সত্যি সত্যি যূথীকে ভালোবাসতাম। আমার ভালোবাসায় কোন প্রতারণা ছিল না তাহলে কেন আমি প্রতারণার শিকার হলাম? আজ আমি তোকে মেরেই ফেলবো। তোর আসলেই ইজ্জত মারা উচিত যাতে তোর লজ্জা হয়।



এরপর জুয়েল জিসানের গায়ে উপুর্যপরি কিছু লাথি দিয়ে সে নিজেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল। তার হাউমাউ কান্নায় আরিফ জিসানের গালে কষে একটা চড় মারলো। তুই কাজটা আসলেই খারাপ করেছিস।



এরপর জিসান খাট থেকে নেমে জুয়েলের কাছ এসে বলল- উঠ, জামা কাপড় পড়। যূথী নামে মেয়ে আসলেই আছে। সে তোকে আসলেই ভালোবাসে। আমিতো শুধু বাজিতে জেতার জন্য তোদের ভালোবাসার গল্পে ঢুকে গেছি। ইমেইলে যে মেয়েকে দেখেছিস সে আমারই ছোট বোন। পূর্ণেন্দুপত্রী আর আপাদমস্তক পর্দা এর কোনটাই মিথ্যা না। তুই একদিন আমার বাসায় এসেছিলি তখন আমার ছোট বোন পর্দার আড়ালে তোকে দেখে আর দেখেই তোকে ভালো লেগে যায়। সে আমাকে তার ভালো লাগার কথা খুলে বলে এরপর আমি এইসব ঘটনা সাজাই। দোস্ত, আমার বোনটাকে সুখে রাখিস তাকে কষ্ট দিস না।



সাথে সাথে আরিফ জিসানের পক্ষ নিয়ে বলল- উঠ, আর কাঁদিস না। আর শালা তুমি শিশ্নে আগেই কনডম পরে ফেলেছো। তুই ধর্ষণ করতে এসেছিস না বাসর করতে এসেছিস? জামা কাপড় পর আর ঐটা ঐখান থেকে খুলে ফেল। তুই যে কৃপণ ঐ কনডমই মনে হয় আবার ব্যবহার করবি।



জুয়েল কাঁদো মুখে হাসি এনে আরিফের পশ্চাৎ দেশে আবার লাথি দিয়ে বলল- শালা, তোরা সব বিষয়ে মজা নিস।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১০:৩৩

আজীব ০০৭ বলেছেন: হা হা প গে...............ভালোই লিখেছেন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.