নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রতিনিয়ত নিজেকে শেখার চেষ্টা করছি :)

আলামিন মোহাম্মদ

১৯৮৮ সালের বন্যার কথা বলছি। নভেম্বর মাস কিন্তু এখনো বন্যার পানি পুরোপুরি সরে যায়নি। বন্যায় রাস্তা ঘাট ভেঙ্গে গেছে। সেই সময় টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর গ্রামের চান মিয়া খুবই চিন্তিত হয়ে আছেন। বাড়িতে পুরুষ ব্যক্তি বলতে একমাত্র সে। তার অনেক দায়িত্ব কারণ তার ভাগনির সন্তান হবে যেকোন মুহুর্তে ব্যথা উঠে যেতে পারে। আশেপাশে কোথাও ডাক্তার নেই, দাই একমাত্র ভরসা। দাইকে খবর দিয়ে রাখা হয়েছে। তিনি একবার আকাশের দিকে তাকাচ্ছেন আরেকবার রাস্তার দিকে তাকাচ্ছেন যদি হাসপাতালে নিতে হয় তাহলে তো মহা বিপদ। ভাগনির স্বামীও সাথে নাই। ঢাকায় কাজে গেছে। দুপুর গড়িয়ে সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়ছে। এমন সময় রসুই ঘর থেকে একটি বাচ্চার কান্নার আওয়াজ আসলো। পুত্র সন্তান হয়েছে আজান দেয়া লাগবে। কিন্তু আলাদা করে আজান দেয়া লাগে নাই। আসরে নামাজের জন্য আহবান করা চারদিকের সকল মসজিদের আজান যেন নতুন ভুমিষ্ট শিশুকে বরণ করে নিল। চান মিয়া আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানালেন। সন্তানের পিতাকে খবর জানানো দরকার। ঢাকায় গিয়ে চান মিয়া সন্তানের বাবাকে খুঁজে পেলেন না। তিনি চিন্তিত হয়ে পড়লেন। বাড়ির প্রতিবেশীকে খবর দিয়ে রাখলেন যাতে বাড়িতে আসা মাত্র টাঙ্গাইলে চলে যায়। পুত্র সন্তান হয়েছে আর পিতা কিনা দূরে তা কি করে হয়? এক সপ্তাহ পর শিশুর পিতা বাড়িতে আসলো এবং পুত্র সন্তানের খবর শুনেই টাঙ্গাইলের পানে ছুটলেন। শিশু পুত্রকে দেখতে চাইলেন কিন্তু গ্রাম্য রেওয়াজ বাধা হয়ে দাঁড়ালো।স্বর্ণ দিয়ে শিশু পুত্রের মুখ দেখতে হবে। শিশুর পিতার তখন এত সামর্থ্য ছিল না স্বর্ণ কেনার। তাহলে কি উপায়? স্বর্ণ ও হলুদ একই ধরনের ধরা হয়। তখন একটি হলুদের টুকরো হাতে নিয়ে শিশুর হাতে দিলেন। সেটি ছিল শিশুর প্রথম উপহার। সেই উপহারটিকে যত্ন সহকারে তার নানী সিকায় তুলে রাখলেন। এভাবে চলে যেতে থাকলো দিন মাস বছর। এভাবে যখন শিশুর আঠারো বছর পূর্ণ হল তখন শিশুর নানী তার হাতে একটি শীর্ণ ও শুকিয়ে যাওয়া একটি হলুদ তুলে দিলেন এবং সেদিনের কথাগুলো পুনব্যক্ত করলেন। ১৮ বছর আগের প্রথম উপহার পাওয়া সেই হলুদ এখন সযত্নে আছে দেখে সেই কিশোরবালক অনেক পুলকিত হল। এরপর লজ্জা পেল যখন সে নানীর বাসনার কথা জানতে পারলো। বাসনা অনুযায়ী এই হলুদ দিয়েই নাতির গায়ে হলুদ দিতে চান। গত ১০ নভেম্বর ২০১২ সেই কিশোরবালক ২৪ বছর অতিক্রম করে ২৫ এ পা দেয়। আজো সেই কিশোরবালক তার নানীর ইচ্ছা পুরণ করতে পারে নাই। আর সেই কিশোরবালক হচ্ছে এই আলামিন মোহাম্মদ

আলামিন মোহাম্মদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

গুম বাবা !

০৪ ঠা মে, ২০১৪ বিকাল ৩:১৭

পরিস্কার কথাঃ এই গল্পটি একটি কাল্পনিক গল্প। এই গল্পের সকল চরিত্র কাল্পনিক। গল্পের চরিত্র এর সাথে জীবিত বা মৃত কোন ব্যক্তির সাথে মিল খুঁজে পেলে তা হবে কাকতালীয় মাত্র।



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিকাল সাইকোলজী বিভাগের প্রবীণ অধ্যাপক ডঃ বায়েজীদ সর্দারকে সবাই এক নামে চিনে। দেশের নামকরা একটি পত্রিকায় ওনার কাউন্সেলিং নিয়ে প্রশ্ন ও জিজ্ঞাসা প্রকাশিত হয়। অতি সম্প্রতি ওনার কদর অনেক বেড়ে গেছে কারণ তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে কাউন্সেলিং দেয়া শুরু করেছেন।



মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একজন ক্লিনিকাল সাইকোলজী এর কাছ থেকে কাউন্সেলিং নিচ্ছে এই ইস্যুতে বিরোধীদল প্রচার শুরু করতে লাগলো যে, প্রধানমন্ত্রী দেশ চালাতে চালাতে উন্মাদ হয়ে যাচ্ছে এখন ওনার কাউন্সেলিং নেয়া লাগে। একজন উন্মাদের হাত থেকে দেশকে বাঁচাও এই শিরোনামে তারা মানব বন্ধনও করে ফেলেছে।



আমরা হুজুগে বাঙালি বিরোধীদলের কথায় কান দিয়ে বিশ্বাস করে নিলাম মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উন্মাদ হয়ে যাচ্ছেন। ওনার এখন বিশ্রাম নেয়া উচিত। টেলিভিশনে এই নিয়ে অনেক আলোচনা। দেশে হঠাৎ করে গুম হয়ে যাওয়া বেড়ে গেছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সর্বাত্মক চেষ্টা করেও গুম এর রহস্য উদঘাটন করতে পারছে না। প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদলকে দায়ী করছেন এই গুমের পিছনে আর বিরোধীদল সরকারীদলকে দায়ী করছে। তাদের এই পারস্পরিক কাঁদা ছোঁড়াছুড়ি চলছেই কিন্তু কিছুতেই গুমের আতঙ্ক বন্ধ হচ্ছে না।



দেশের সুশীল সমাজ কড়া ভাষায় এর প্রতিবাদ জানাচ্ছে। দেশ প্রতিনিয়ত গুমের প্রতিবাদে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। প্রধানমন্ত্রী রাতে ঘুমাতে পারছেন না। দেশ এক চরম সঙ্কটময় মুহুর্ত পাড় করছে। এই অবস্থায় কিভাবে মাথা ঠান্ডা রেখে দেশ পরিচালনা করা যায় এরজন্য তিনি ক্লিনিকাল সাইকোলজী এর পরামর্শ নিচ্ছেন। তাঁর কাছ থেকে নিজেকে শান্ত রাখার কিছুর ব্যায়াম শিখে নিচ্ছেন কিন্তু বিরোধীদল এই বিষয়টিকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করে প্রধানমন্ত্রীকে উন্মাদ বানিয়ে ফেলছে।



অবস্থা বেগতিক দেখে ডঃ বায়েজীদ সর্দার পত্রিকায় একটি কলাম লিখে ফেলেন। কাউন্সেলিং নিলেই কেউ উন্মাদ হয়ে যায় না। নিজের মানসিক চাপ কমাতে সবারই উচিত কাউন্সেলিং করা। অতীতের বিভিন্ন রাজা থেকে শুরু করে বর্তমানের অনেক দেশের রাষ্ট্রপ্রধান কাউন্সেলিং নিয়ে থাকেন এই উদাহরণ দিয়ে তিনি বেশ তথ্যবহুল একটি কলাম লেখেন। এই কলাম প্রকাশিত হলে বিরোধীদলের উন্মাদ ইস্যু স্থিমিত হয়ে গেলেও গুম এর ইস্যু তখনো স্থিমিত হয়ে যায়নি।



আমাদের আপামর জনসাধারণের একটা ধারণা আছে যারা দেশ চালায় তারা কতই না সুখে আছে। তারা আরাম আয়েশ করে দিন কাটান। কিন্তু ডঃ বায়েজীদ সর্দার একটি গল্পের উপস্থাপনের মাধ্যমে তুলে ধরেন যে যাঁরা দেশ পরিচালনা করেন তারা কতই না মানসিক চাপে থাকেন। ডঃ বায়েজীদ সর্দার এর কলাম প্রকাশের পর সবাই বুঝলো দেশ পরিচালনা করা আসলেই অনেক কঠিন। ডঃ বায়েজীদ সর্দার এর গল্পটি এইরকম।



এক রাজার দরবারে গিয়ে এক প্রজা বলল- দেশ পরিচালনা এমন কঠিন আর কি? আপনি এত সহজ কাজের জন্য কত বিলাসিতা ভোগ করেন। রাজা মহাশয় প্রজার এই বক্তব্যে মনে মনে রাগান্বিত হলেও তিনি তা প্রকাশ করলেন না। তিনি প্রজাকে বললেন- ঠিক আছে তোমাকে একদিনের জন্য সিংহাসনে বসতে দেয়া হবে তবে শর্ত একটা তোমার মাথার উপর একটা চিকন সুতা দিয়ে তরবারি ঝুলিয়ে দেয়া হবে। প্রজা হাসি মনেই শর্তে রাজি হয়ে গেল। সে সিংহাসনে বসলো আর তার মাথার উপর একটি চিকন সুতা দিয়ে বাঁধা তরবারি ঝুলিয়ে দেয়া হল। ঐ প্রজা সিংহাসনে বসার পর রাজ কাজে মনোযোগ দিতে পারলো না। সে একটু পর পর মাথার উপর তাকাচ্ছে। কখন না জানি সুতা ছিড়ে তরবারিটা তার মাথায় পড়ে মাথা দ্বিখন্ডিত হয়ে যায়।



একদিনের রাজা যখন রাজ ভোজসভায় গেল তখন রাজভোজ সভার দামী দামী খাবার দেখে তার জিভে জল চলে আসল কিন্তু এত দামী খাবার হাতের কাছে পেয়েও সে খেতে পারলো না কারণ তার মন পরে আছে তার মাথার উপরে বাঁধা তরবারির দিকে। যখনই সে খাওয়ায় মনোযোগ দিতে যায় তখনই তার মনে হয় এই বুঝি তার মাথায় তরবারিটা সুতা ছিড়ে মাথায় এসে পড়ল। সে ঠিক মত খেতেই পারলো না।



এরপর একদিনের রাজা তুলতুলে বিছানায় যখন ঘুমাতে গেল তখন সেই নরম বিছানা দেখে সে গা এলিয়ে শুয়ে পড়ল কিন্তু উপরের দিকে তাকিয়ে দেখে এখানেও মাথার উপর চিকন সুতা দিয়ে তরবারি বাঁধা। তার ঘুম তখনই চলে গেল। সে শান্তিমত ঘুমাতে পারলো না।

এর পরের দিন রাজা যখন প্রজাকে জিজ্ঞেস করলেন- রাজ প্রাসাদ কেমন লাগলো?

- এই রাজ প্রাসাদের চেয়ে আমার কুড়ে ঘরই উত্তম। সেখানে আমি শান্তিমত থাকতে পারি।

- এবার বুঝতে পেরেছ। দেশ পরিচালনা করা কত কঠিন! সব সময়ে একটা আতঙ্কে থাকতে হয় এই বুঝি বহিঃদেশ আক্রমণ করে বসলো। রাজ্যের বিভিন্ন ঝামেলা নিয়ে চিন্তা হয় আর সেই চিন্তায় শান্তিতে ঘুমাতে পারি না। মনে হয় সবসময় মাথার উপর একটি তরবারি বাঁধা আছে।

- জাহাপনা, আমার ভুল হয়ে গেছে। আমাকে ক্ষমা করবেন। রাজ্য পরিচালনা করা আসলেই কঠিন কাজ।



গত একমাসে ত্রিশজন গুম হয়েছে। অর্থাৎ প্রতিদিনই একজন করে গুম হচ্ছে। এই ত্রিশজনের মধ্যে সাত জনের লাশ নদীতে পাওয়া গেছে। এই নিয়ে দেশ উত্তাল হয়ে আছে। আর বাকী তেইশজনের হদিছ এখনো পাওয়াই যায়নি। এই তেইশজনের ভাগ্য কি ঘটে তা নিয়ে গনমাধ্যমে তুমুল আলোচনা হচ্ছে। বেশ রহস্যময় ভাবে এই ত্রিশজন গুম হয়েছে। এই ত্রিশজনের মধ্যে ব্যবসায়ী, আইনজীবী, চিকিৎসক, রাজনীতিবিদ, ছাত্র সবাই আছে।

গনভবনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইজি চেয়ারে বসে আছেন। তিনি মাথা ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করছেন কিন্তু বিরোধীদলের লাগামহীন বক্তব্য শুনে তাঁর মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে এর উপর যারা গুম হয়ে যাচ্ছে তাদের আত্মীয়স্বজনদের আর্তচিৎকার তাঁর কানে বারবার বেজে উঠছে। তাঁর সামনে বসে আছেন ডঃ বায়েজীদ সর্দার। তিনি প্রধানমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে আছেন। একজন প্রধানমন্ত্রীকে কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য এর আগে কখনো ডঃ বায়েজীদ সর্দার এর হয়নি। তিনি এক নাগারেই তাকিয়ে আছেন।

- আপনি আমার দিকে তাকিয়ে কি দেখছেন?

- স্যার একদম নড়বেন না। চেয়ারেই শুয়ে থাকুন। এই মুহুর্তে আপনার বিশ্রাম দরকার।

- প্রফেসর, এত সহজেই কি ঘুম আসে। আট বছর ধরে দেশ চালাচ্ছি কখনো এই ধরনের সমস্যায় পড়ি নাই। কি অভিনবভাবে প্রতিদিন একেকজন করে গুম হয়ে যাচ্ছে। মাথা ঠান্ডা রাখা দায়।

- স্যার, এই মুহুর্তে আপনাকে মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে। উত্তেজিত হলে চলবে না।

- আচ্ছা, আপনি আমার দিকে তাকিয়ে কি দেখছিলেন?

- লিপ রিডিং করার চেষ্টা করছিলাম।

- আপনি লিপ রিডিং পারেন?

- হা হা, জ্বি স্যার পারি

- আচ্ছা করে দেখান তো

- তার আগে আপনাকে শান্ত হতে হবে। এরজন্য আমি আপনাকে যা করতে বলবো আপনি এখন তাই চিন্তা করবেন।

- আচ্ছা, আমাকে একটু শান্ত করে তুলুন। ঐ বিরোধীদলের ষড়যন্ত্রে নিজেকে শান্ত রাখা কষ্ট হয়ে যাচ্ছে।



মে মাসের এক তারিখ থেকে গুম হওয়া শুরু হয়েছে। মে মাসের ত্রিশ তারিখ পর্যন্ত প্রতিদিনই একেকজন করে গুম হচ্ছে। প্রতিদিনই বিভিন্ন পেশার মানুষ গুম হচ্ছে। পত্রিকা এবং চ্যানেলের প্রধান শিরোনাম থাকে-আজ গুম হলেন একজন রাজনীতিবিদ বা ব্যবসায়ী বা চিকিৎসক বা আইনজীবী। দেশের মানুষ প্রতিদিন টিভি- পত্রিকা খুলে দেখার চেষ্টা করে আজ কোন পেশার মানুষ গুম হচ্ছে। কিন্তু মে মাসের ৩১ তারিখ এর শিরোনাম দেখে দেশের সবাই অবাক হয়ে গেল। তারা চিন্তাও করতে পারলো না এই কাজ কিভাবে ঘটে যেতে পারে। মে মাসের ৩১ তারিখ দেশের সব চ্যানেল পত্রিকার শিরোনাম হয়ে গেল- দেশের প্রধানমন্ত্রী গুম হয়েছেন!



বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী গুম হয়েছেন এটা সাথে সাথে সকল দেশী এবং আন্তর্জাতিক চ্যানেলে ফলাও করে প্রচারিত হল। কিভাবে সম্ভব এই কাজ? এত নিরাপত্তার মধ্যেও প্রধানমন্ত্রী গুম হয়ে গেলেন কিভাবে? গনভবনের প্রধানফটকে ক্যামেরা ফিট করা সেখানেও কোন কিছু ধরা পড়েনি। তাহলে ওনাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না কেন?

প্রধানমন্ত্রীর গৃহপরিচারিকা জানালেন-রাতের খাবার খেয়ে প্রধানমন্ত্রী তাঁর শয়নকক্ষে চলে যান এরপর সকালে তাঁর শয়নকক্ষে গিয়ে তাঁর বিছানায় তাকে পাওয়া যায়নি। সব জায়গায় খুঁজেও তাকে পাওয়া যাচ্ছে না।

আইন শৃঙ্খলা বাহিনীও কোন ক্লু খুঁজে পাচ্ছে না। তারা কিভাবে অগ্রসর হবে ধরতে পারছে না। দেশের ক্রান্তিলগ্ন সময় চলছে। দীর্ঘ একমাস ধরে চলে আসা ধারাবাহিক গুমের সর্বশেষ শিকার হলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী। নানান ধরনের গুজব বাতাসে ছড়াতে লাগলো। কেউ বলতে লাগলো- ভারতের কাছে দেশ বিক্রি করে প্রধানমন্ত্রী সুড়ঙ্গ পথে ভারত চলে গেছেন। আবার কেউ বলতে লাগলো- প্রধানমন্ত্রী যেহেতু সুদর্শন তাই পরীরা তাদের রাজ্যে কোহেকাফে নিয়ে গেছে। এখন থেকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ত কোহেকাফের প্রধানমন্ত্রী হয়ে যাবেন। এটাও বাতাসে ছড়াতে লাগলো- দেশ পরিচালনায় ব্যর্থ হয়ে প্রধানমন্ত্রী গা ঢাকা দিয়েছেন।



দেশের সব কিছু থেমে আছে। সবাই টেলিভিশনের সামনে বসে আছে। কি ঘটতে যাচ্ছে সামনে তা জানার জন্যেই সবার আগ্রহ। দেশের এই থমথমে পরিস্থিতে আরেকটি খবর সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করলো। দেশের বাঘা বাঘা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য যখন মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে তখন এক লোক মিডিয়ার সামনে জানালো এক আধ্যাত্মিক ক্ষমতা সম্পন্ন বাবা প্রধানমন্ত্রীকে খুঁজে বের করে দিতে পারবেন। তিনি নিখোঁজ ব্যক্তি ও বস্তু খুঁজে এনে দেন এরজন্য সবাই তাকে গুম বাবা বলে ডাকে। প্রধানমন্ত্রীকে খুঁজে এনে দেয়ার হাদিয়া বাবদ ১০০০ কোটি টাকা দিতে হবে।

কে এই গুম বাবা? যিনি এত নিশ্চয়তার সাথে বললেন-তিনি প্রধানমন্ত্রীকে খুঁজে এনে দিবেন। মিডিয়ার লোকরা গুম বাবার সেই সাগরেদ এর কাছ ভিড় জমালো। বিভিন্ন প্রশ্নবানে তাকে বিদ্ধ করলো। তারা গুম বাবাকে দেখতে চাইলো। কিন্তু সাগরেদ জানালো-গুম বাবা সারাদিন ঘুমিয়ে তপস্যা করেন। তিনি জনসম্মুখে আসেন না। এমনকি তার ভক্তরাও তাকে দেখতে পারেন না। একটি পর্দার আড়ালে তিনি থাকেন।

মিডিয়াতে সরাসরি প্রচারের কারণে গুম বাবার নাম আন্তর্জাতিক মন্ডলে অতি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধার এর জন্য ১০০০ কোটি টাকা! এটাই হচ্ছে সমস্যা।

বিরোধীদল এত টাকা খরচ করে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধার এর জন্য ঘোর প্রতিবাদ জানালো। দেশের এত টাকা একজন মানুষের পিছনে খরচের কোন মানে হয় না। বিরোধীদল পরামর্শ দিলো এই এক হাজার কোটি টাকা দিয়ে দেশের নির্বাচন পরিচালনা করার জন্য খরচ করা হোক। প্রধানমন্ত্রীকে না খুঁজে দেশে আবার নির্বাচন দিন।

বিরোধীদলের এমন প্রস্তাবে সরকারীদল তীব্র প্রতিবাদ জানালো। প্রধানমন্ত্রী দেশের সম্পদ। দেশের সম্পদ রক্ষায় আমাদের একসাথে কাজ করা উচিত। সরকারীদল আর বিরোধীদলের এমন কাঁদা ছোড়াছুড়ির প্রেক্ষিতে দেশের রাষ্ট্রপতি অভিভাবক হয়ে এগিয়ে এলেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধার এর পিছনে ১০০০ কোটি টাকা খরচের জন্য অনুমতি দিয়ে দিলেন।



নতুন চকচকে ছাপানো ১০০০ কোটি টাকা হাদিয়া হিসেবে গুম বাবার আস্তানায় পৌছানো হল। গুম বাবা সেই নতুন চকচকে ১০০০ কোটি টাকার ঘ্রাণ নিয়ে স্বল্প সময়ের জন্য ঘুম দিলেন। ঘুম থেকে উঠে তিনি পর্দার আড়াল থেকে জানালেন তিনি প্রধানমন্ত্রীকে খুঁজে পেয়েছেন।

সবার মধ্যে একটা শোরগোল শুরু হয়ে গেল। প্রধানমন্ত্রীকে খুঁজে পাওয়া গেছে। তিনি কত বড় কামেল ব্যক্তি! সবাই জিজ্ঞেস করতে লাগলো কোথায়? তিনি কি জীবিত আছেন? তিনি কিভাবে গুম হলেন? সবার মধ্যে হট্টগোল বেঁধে গেল। এত আওয়াজ হওয়াতে গুম বাবার সাগরেদ হাতের ইশারায় সবাইকে থামতে বললেন। এত আওয়াজ করলে গুম বাবা নাখোশ হবেন।



গুম বাবার আস্তানায় দেশী বিদেশি সকল টিভি পত্রিকার সাংবাদিকরা অধীর আগ্রহে বসে আছে। সাগরেদের হাতের ইশারায় তারা চুপ হয়ে গেল। সবার মধ্যে পিনপতন নিরবতা। সাগরেদ পর্দার কাছাকাছি গিয়ে গুম বাবাকে চুপিচুপি কি যেন জিজ্ঞেস করলো। কিছুক্ষণ পর সাগরেদ আবার সাংবাদিকদের সামনে আসলো।

- গুম বাবা আপনাদের উপর নাখোশ হয়েছেন

সবাই সমস্বরে জিজ্ঞেস করলো- আমরা কি করলাম?

- এই যে আবারও আওয়াজ করেছেন। গুম বাবা আওয়াজ পছন্দ করেন না। এতে তার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। তিনি সবাইকে বলেছেন এই আস্তানা ছেড়ে বাইরে যেতে। সবাই বাইরে গেলে তবেই তিনি বলবেন-প্রধানমন্ত্রী এখন কোথায়?

এখন গুম বাবার শাসন চলছে। সবাই তার কথা মত তাঁর আস্তানা থেকে চলে আসলো। সবাই বাইরে অপেক্ষা করছে। এই বুঝি গুম বাবার সাগরেদ কোন খবর নিয়ে আসে।



দীর্ঘ অপেক্ষা শেষ গুম বাবার সাগরেদ এসে জানালো -প্রধানমন্ত্রী গনভবনেই আছে। তিনি কোথাও গুম হননি।

সবার মধ্যে আবার শোরগোল শুরু হয়ে গেল। কিভাবে সম্ভব? তিনি গনভবনে হঠাৎ করে কিভাবে এলেন? তিনি গুম না হলে কোথায় ছিলেন? আর গুম হলে কে তাকে গুম করেছে? সাংবাদিকদের অজস্র প্রশ্নের উত্তরে সাগরেদ একটা কথা বলেই সেখান থেকে চলে গেল

- গুম বাবা আমাকে এর বেশি কিছুই জানাননি। আপনারা গনভবনে গিয়েই খোঁজ নেন। তিনি গনভবনেই আছেন।



সাংবাদিকদের মধ্যে সাগরেদের এই কথা বিস্ফোরণের মত বেজে উঠল। এটা কি করে সম্ভব? প্রধানমন্ত্রী গনভবনেই ছিলেন আর তিনি কোথাও গুম হননি? সকল সাংবাদিক গনভবনে ছুটে চলল। গণভবনে গিয়ে তারা জানতে পারল- প্রধানমন্ত্রীকে খুঁজে পাওয়া গেছে। তিনি ঘুমের বড়ি খেয়ে ঘুমাচ্ছিলেন।



- তিনি ঘুমাচ্ছিলেন ভালো কথা কিন্তু ওনাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি কেন?

- নরম বিছানায় ওনার ঘুম আসছিলো না দেখে তিনি খাটের নিচে শক্ত মেঝেতে শুয়ে ছিলেন। তিনি খাটের নিচে থাকবে তা কেউ কল্পনাও করেনি তাই খাটের নিচে খোঁজা হয়নি।



যাক প্রধানমন্ত্রীকে খুঁজে পাওয়া গেছে। সবার মধ্যে একটা আনন্দের বন্যা বয়ে গেল। এতদিনের গুমের ঘটনার পর গুম বাবার কারণে প্রধানমন্ত্রীকে খুঁজে পাওয়া গেল। সবাই গুম বাবার প্রশংসা করতে লাগলো।

কিন্তু দেশ থেকে গুম তখনো থামলো না। জুন মাসের এক তারিখ সকল পত্রিকায় প্রধানমন্ত্রী উদ্ধার এর খবর প্রধান শিরোনাম হলেও এর সাথে আরেকটি খবর গুরুত্বের সাথে প্রকাশিত হল



“ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণ অধ্যাপক ডঃ বায়েজীদ সর্দার গুম”



ক্লিনিক্যাল সাইকোলজী বিভাগের প্রবীণ অধ্যাপক ডঃ বায়েজীদ সর্দার গুম হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী গুম ইস্যুর পর তিনি এবার গুম হলেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে কাউন্সেলিং করাতেন। গতকালকের ঘটনার সাথে ওনার গুম হবার কোন সূত্র আছে কিনা তা এক রহস্য। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস শেষে তিনি তাঁর গাড়িতে চড়ে বাড়ি ফিরছিলেন কিন্তু তিনি আর বাড়িতে ফিরে যাননি পথিমধ্যে তাঁর গাড়িটি উদ্ধার করা হয়। কে বা কারা তাকে গুম করেছে তা এখনো জানা যায়নি। এখন পর্যন্ত কেউ মুক্তিপণও দাবি করেনি।



ডঃ বায়েজীদ সর্দার স্কটল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হিপনোটিজম বিষয়ে তাঁর পিএইচডি করেন। তিনি দেশের একমাত্র ব্যক্তি যিনি হিপনোটিজম বিষয়ে পিএইচডি করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি দীর্ঘকাল ধরে সুনামের সাথে অধ্যাপনা করে যাচ্ছেন। তাঁর পরিবার এর সাথে কথা বলে জানা গেছে তাঁর কোন পূর্ব শত্রু ছিল না। তাহলে কে বা কারা তাকে গুম করলো তা এক রহস্য। তাকে উদ্ধার এর পিছনে গুম বাবার সহযোগিতা চাওয়া হবে কিনা তা এখনো জানা যায়নি।



ডঃ বায়েজীদ সর্দার গুম হবার পরের দিন আরেকটি খবর পত্রিকায় প্রধান শিরোনাম হল। সেই শিরোনাম দেখে সবাই আঁতকে উঠলো। সবাই একটি কথাই বললো- দেশে এইসব কি শুরু হয়েছে? হে আল্লাহ, দেশকে গুমের হাত থেকে রক্ষা কর। তবে জুন মাসের দুই তারিখ যার গুমের খবর প্রধান শিরোনাম হয়েছিল সেই ঘটনার পর আর গুমের ঘটনা ঘটেনি। আর কেন গুম ঘটেনি সেটাও দেশবাসীর কাছে এক রহস্য। ডঃ বায়েজীদ সর্দার গুমের পর টিভি চ্যানেল ও পত্রিকাগুলো আরেকজনের গুমের খবর ফলাও করে প্রচার করে।

“গুম বাবা নিজেই গুম হয়েছেন!”

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.