![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সৌদি সরকার পবিত্র কুরআনের নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে যেয়ে প্রায়শই কিসাসের (শিরোচ্ছেদ) মাধ্যমে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করেন। আপাতঃ দৃষ্টিতে ইসলামী আইনটি অত্যন্ত কঠোর এবং মানবতা বিরোধী মনে হলেও বিশ্বমানবতার জন্যে এতে রয়েছে কল্যাণকর দিকনির্দেশনা এবং সুদূরপ্রসারী শান্তির পয়গাম।
ইসলামী আইন কী?
ইসলাম হচ্ছে একমাত্র জীবন ব্যবস্থা যা মানুষের ইহলৌকিক ও পারলৌকিক জীবনকে একই সূত্রে গেঁথে রেখেছে। ইসলাম একদিকে স্রষ্টার সাথে সৃষ্টির সম্পর্ক সমুন্নত করে, অন্যদিকে সৃষ্টির সাথে সৃষ্টির সম্পর্ক অটুট ও অব্যাহত রাখে। মানুষের এই দ্বিবিধ সম্পর্কের পরিগঠন ও পরিশীলনের জন্য ইসলামী শরী‘আতে যে সকল নিয়ম-কানুন ও নীতিমালা বিধৃত হয়েছে তা-ই ইসলামী আইন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়-মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নির্দেশমূলক বাক্যে আল¬¬াহ তা‘আলা বলেনঃ
“আমি তোমার প্রতি সত্যসহ কিতাব নাযিল করেছি যাতে তুমি আল¬¬াহ তোমাকে যা জানিয়েছেন সে অনুসারে মানুষের মধ্যে বিচার-মীমাংসা কর এবং বিশ্বাস ভঙ্গকারীদের সমর্থনে তর্ক করবে না”। (৪ : ১০৫)
ইসলামী আইনে কিসাস
সজ্ঞানে অন্যায়ভাবে কেহ কাউকে হত্যা করলে বিনিময়ে হত্যাকারীকে হত্যা করার যে বিধান ইসলামে রয়েছে তাকে ‘কিসাস’ বলে। মহান আল্লাহ বলেন, “হে মুমিনগণ! নিহতদের ব্যাপারে তোমাদের জন্য কিসাসের বিধান দেওয়া হয়েছে। স্বাধীন ব্যক্তির বদলে স্বাধীন ব্যক্তি, ক্রীতদাসের বদলে ক্রীতদাস, নারীর বদলে নারী।” (২ : ১৭৮) অন্যত্র বলা হয়েছে, “আল্ল¬াহ যার হত্যা নিষেধ করেছেন যথার্থ কারণ ব্যতীত তাকে হত্যা করো না। কেহ অন্যায়ভাবে নিহত হলে তার উত্তরাধিকারীকে তো আমি তার প্রতিকারের অধিকার দিয়েছি, অতএব হত্যার ব্যাপারে সে যেন বাড়াবাড়ি না করে।” (১৭ : ৩৩)
মানুষের যাবতীয় অপরাধের মধ্যে মানুষ হত্যার অপরাধ সবচাইতে বড় ও মারাত্মক। মানুষ যখন তারই অপর এক ভাইয়ের সাথে এই অপরাধ করে, তখন সে গোটা মানবতার সাথেই শত্র“তা করে। সে মানুষকে হত্যা করে আল¬¬াহর গঠিত মানব-বংশ প্রাসাদের ভিত্তিকে উৎপাটিত করে এবং আল¬াহর আধিপত্য ও কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করে। ফলে তা ভয়াবহ নাফরমানী ও আল¬াহদ্রোহিতার পর্যায়ে পড়ে। মনে হয়, সে নিজে মানুষ হয়ে তার ভাই অপর এক মানুষের জীবনের প্রতি চরম হিংসা পোষণ করে। এই কারণে ইসলামী শরীয়তে এই অপরাধের বিভৎসতা প্রকট করে তোলা হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে মানব মনে তীব্র ঘৃণা ও জাগাতে চেষ্টা করা হয়েছে আর সেই সাথে ইসলামী সমাজে সে জন্য নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে ন্যায় বিচার ভিত্তিক কঠিন শাস্তি। তবে খুনি ব্যক্তি অনুতপ্ত হয়ে যদি নিহত ব্যক্তির পরিবারের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং নিহত ব্যক্তির পরিবার তাকে ক্ষমা করে দেয় তাহলে খুনি ব্যক্তি সম্পূর্ন মুক্ত হয়ে যাবে। যদি নিহত ব্যক্তির উত্তরাধিকারী হত্যাকারীকে ক্ষমা করে হত্যাকারীর নিকট অর্থদন্ডের দাবী করে তাহলে হত্যাকারীকে উক্ত দাবি যথাযথভাবে পূর্ণ করতে হবে। আল¬াহ বলেন, “কিন্তু তার ভাইয়ের পক্ষ হতে কিছুটা ক্ষমা প্রদর্শন করা হলে যথাযথ বিধির অনুসরণ করা ও সততার সাথে তার দেয় আদায় বিধেয়।” (২ : ১৭৮)
মহান আল্ল¬াহ মানব জাতিকে এই কিসাসের শাস্তির বিধান অনুমোদন করে মানুষের জীবনের যে নিরাপত্তা দান করেছেন, তা অন্য কোন আইনে দেখা যায় না। মহান আল¬াহ বলেন, “নরহত্যা অথবা দুনিয়ায় ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ হেতু ব্যতীত কেউ কাউকে হত্যা করলে সে যেন দুনিয়ার সকল মানুষকেই হত্যা করল।” (৫ : ৩২)
বস্তুত মানুষের উন্নত আদর্শিক কার্যাদীই ইসলামের লক্ষ্য ও কাম্য এবং এই যোগ্যতাসম্পন্ন মানুষ তৈরী করার জন্যই দুনিয়ায় ইসলামের আগমন। এই কারণেই ইসলামী সমাজ সংস্থায় শরীয়তী আইন বিধান পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়িত করা ইসলামের প্রবল তাগিদ। ইসলামের দৃষ্টিতে মুসলিম ব্যক্তি মাত্রই অপরাধ করবেন এমন কথা নয়, তবে অপরাধ করলেও তার শাস্তি গ্রহণ করে অপরাধের কু প্রভাব থেকে আত্মরক্ষা করাও তার পক্ষে সম্ভব। অথবা এই শাস্তির কথা জানতে পেরে সে হয়ত আর অপরাধ করবেও না, চিরদিনই তা থেকে পূর্ণ সতর্কতার সাথে দূরে সরে থাকবে। এই কারণেই আল-কুরআনে ঘোষিত হয়েছে, “যে লোক কোন মু’মিন ব্যক্তিকে ইচ্ছা ও সংকল্প গ্রহণ পূর্বক হত্যা করবে, তার প্রতিফল হচ্ছে জাহান্নাম। সে চিরদিনই তথায় থাকবে। আল¬¬াহ তার প্রতি ক্রুদ্ধ, তার উপর অভিশাপ করেছেন এবং তার জন্য কঠিন আযাব প্রস্তুত করে রেখেছেন।” (৪ : ৯৩) মহানবী (সা.) বলেছেন, “মুমিন ব্যক্তি আল¬¬াহর নিকট অবস্থানকারী ফেরেস্তাদের চাইতেও অধিক সম্মানার্হ। অপর কোন মুমিন ব্যক্তির রক্তের বিনিময় ছাড়া তাকে হত্যা করা অপেক্ষা দুনিয়াটা ধ্বংস হয়ে যাওয়াটাও আল-াহর নিকট অনেক সহজ।”
শেষ কথা
ইচ্ছাপূর্বক নরহত্যা একটা সীমালংঘণমূলক অত্যন্ত বীভৎস কাজ। হত্যাকারী শরীয়তের সীমালংঘণকারী এবং তার কাজটা অত্যন্ত ভয়াবহ ও তার প্রভাব-প্রতিক্রিয়া অত্যন্ত সুদূর প্রসারী। আল¬¬াহর হক ও নিহতের হক -এর দিক দিয়েও তা অত্যন্ত বড় অপরাধ। শুধু তাই নয়, তাতে ইসলামী সমাজ তথা গোটা মানবতার হকও বিনষ্ট ও অস্বীকৃত হয়। এইরূপ হত্যাকারী জাহান্নামে চিরদিন থাকবে, তার উপর আল¬াহর গযব বর্ষিত হবে। মূলত কিসাসের বাস্তবায়নে ন্যায় বিচার বা ইনসাফের অভিব্যক্তিই প্রকাশিত হয়েছে। মহান আল¬াহর ঘোষণা, “হে বোধসম্পন্ন ব্যক্তিগণ! কিসাসের মধ্যে তোমাদের জন্য জীবন রয়েছে (কিসাসের বিধান অন্যায় হত্যা বন্ধ করে জীবনের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা প্রদান করেছে ), যাতে তোমরা সাবধান হতে পার।” (২ : ১৭৯)
©somewhere in net ltd.