নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অাল- হেলাল ৭৩

ড.েমাহাম্মদ অাতীকু রহমান

মোহাম্মদ আতীকুর রহমান

ড.েমাহাম্মদ অাতীকু রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইসলামের দৃষ্টিতে শ্রম ও শ্রমিক

০১ লা মে, ২০১৫ সকাল ৯:৩৭

পৃথিবীর সবচেয়ে নির্যাতিত শ্রেণী হল শ্রমিক শ্রেণী। মহানবী (সা:) আগমন পূর্ব যুগের সভ্য সমাজসমূহে শ্রমিক যেমন মালিক শ্রেণীর হাতে নির্যাতিত হতো, আজও তেমনি তারা চরমভাবে নিস্পেষিত হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদী-পুঁজিপতিদের হাতে। ইসলাম একটি পুর্ণাঙ্গ জীবন বিধান হিসেবে শ্রমজীবীদের সকল সমস্যার সঠিক ও ন্যায়ানুগ সমাধান দিয়েছে। মহানবী (সা:) এমন একটি সমাজ ব্যবস্থা কায়েমের ধারণা দিয়েছেন যেখানে থাকবে না যুলুম শোষণ, থাকবে না দুর্বলকে নিষ্পেষিত করার মত ঘৃণ্য প্রবনতা। মহানবী শিখিয়েছেন, শ্রমিকও মানুষ, এদেরও বাঁচার অধিকার আছে। এরা তোমাদের ভাই। মালিক পক্ষের উচিত মহান আল¬¬াহ তাদের প্রতি যেভাবে অনুগ্রহ করেছেন, তার কৃতজ্ঞতা স্বরূপ শ্রমিকদের যথার্থ পাওনা পরিশোধ করা। মহানবী (সা.) বলেছেন, “সাবধান! মজুরের শরীরের ঘাম শুকাবার পূর্বেই তার মজুরি মিটিয়ে দাও” (তিরমিযী)।
ইসলামের দৃষ্টিতে শ্রম ও শ্রমিক
শ্রম ও শ্রমিক পরষ্পর ওতপ্রোতভাবে জড়িত। শ্রম হলো, শারীরিক ও মানসিক কসরতের মাধ্যমে কোন কাজ অঞ্জাম দেয়া। যিনি কাজটি আঞ্জাম দেন তিনি শ্রমিক এবং যে কাজটি সম্পন্ন করা হয় তা ঢ়ৎড়ফঁপঃরড়হ বা উৎপাদন। সাধারণত পুঁজিহীন মানুষ, যারা তাদের পুঁজি বিনিয়োগের উপায় না থাকায় নিজেদের গতর খেটে পেট চালান, তাদেরকে শ্রমিক ও তাদের কাজটিকে শ্রম বলা হয়। শ্রমিক পুঁজিহীন, দ্ররিদ্র শ্রেণীর লোক বলে তাদের মধ্যে কোনরূপ লজ্জাজনক অনুভূতি ইসলাম সমর্থন করে না। ইসলামের দৃষ্টিতে হালাল কাজে ও হালাল পথে শ্রম বিনিয়োগ কিছুমাত্রও লজ্জার ব্যাপার নয়। বরং এ হচ্ছে নবী-রাসূলগণের সুন্নাত। প্রত্যেক নবী-রাসূলই দৈহিক পরিশ্রম করে উপার্জন করেছেন বলে হাদীসে উলে¬খ রয়েছে।
উপার্জনের প্রতি উৎসাহিত করতে যেয়ে স্বয়ং মহান আল¬¬াহ বলেন, “যখন তোমাদের সালাত শেষ হয়ে যাবে, তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় আর আল¬¬াহর অনুগ্রহ (রিযক) অন্বেষণে ব্যাপৃত হয়ে যাও” (সূরা জুম‘আ : ১০)।
ইসলাম সৎ উপার্জনের দিকে যেমন উৎসাহিত করেছে, তেমনি উৎসাহিত করেছে শ্রমের প্রতি। পক্ষান্তরে শ্রম না দিয়ে অলস ও বেকার বসে থাকা ইসলামের দৃষ্টিতে অত্যন্ত ঘৃণ্য কাজ। হযরত আবদুল¬াহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, “কাউকে বেকার বসে থাকতে দেখলে আমার অসহ্য লাগে, জাগতিক কোন কাজও করে না অপরদিকে পরকালের নাজাতের জন্যও কোন প্রয়াস চালায় না”।
প্রসঙ্গত এখানে এটা প্রণিধানযোগ্য যে, আধুনিক অর্থনৈতিক মতাদর্শ শ্রমকে কেবল মানুষের পার্থিব জীবন ও তার উপায় উপকরণের তুলাদণ্ডে বিচার করেছে। তারা শ্রম দ্বারা মানুষের সেই মেধাগত ও শারীরিক অনুসন্ধানকেই কেবল উদ্দেশ্য করেছে যার বিনিময়ে সে শুধু পয়সাই পায়। কিন্তু মহানবী (সা:)-এর অর্থনৈতিক মতাদর্শের আলোকে শ্রম হলো পার্থিব জীবনে মেহনত করে পরকালীন জীবনকেও এর দ্বারা নির্মান করা। সুতরাং একজন মুসলমান শারীরিক বা মেধাগত যেকোন বৃত্তেই শ্রম ব্যয় করুক সে এর প্রতিদান দুনিয়াতে পয়সার বিনিময়ে এবং আখিরাতে সওয়াব ও জান্নাতের বিনিময়ে পাবে। তাই মহানবী (সা:)-এর আদর্শের আলোকে নির্দেশিত অর্থনীতির ভিত্তিতে শ্রমের সংজ্ঞা এভাবে দেয়া যায় যে, “শ্রম প্রত্যেক ঐ মেধাগত ও শারীরিক কর্মবৃত্তির নাম, যার বিনিময়ে এই পার্থিব জীবনে এমন বস্তুগত প্রতিদান অর্জিত হয়, যার দ্বারা মানুষ তার নিজের, তার নিকটজনের এবং সমাজের অভাবী লোকদের প্রয়োজনাদী পূর্ণ করতে পারে এবং জীবিকা ও অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দতা নিশ্চিত হয় অথবা এর বিনিময়ে পূণ্য অর্জিত হয়, যা দুনিয়া ও আখিরাত উভয় স্থানের জন্যই সফলতা ও স্বাচ্ছন্দতার মাধ্যম হয়।”
শ্রমিকের গুণাবলী
শ্রমিকের এমন কতিপয় গুণাবলী থাকা প্রয়োজন যা শ্রমিক-মালিক সম্পর্ক অটুট রাখার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। ইসলাম মালিকদের উপর অনেক দায়িত্ব যেমন অর্পণ করেছে তদ্রƒপ শ্রমকের উপরও আরোপ করেছে কিছু আবশ্যক ন্যায়নীতি। যেমন ঃ
১. আমানতদারিতা ঃ শ্রমিকের উপর অর্পিত দায়িত্ব অবশ্যই আমানতদারিতার সাথে সম্পন্ন করতে হবে। অন্যথায় তাকে মহান আল¬¬াহর দরবারে জবাবদিহী করতে হবে। আল¬¬াহ বলেন, “সর্বোত্তম শ্রমিক সেই ব্যক্তি যে শক্তিশালী ও আমানতদার (দায়িত্বশীল) হয়” (সূরা কাসাস : ২৬)।
২. সংশি¬ষ্ট কাজের দক্ষতা ও যোগ্যতা ঃ দায়িত্বপ্রাপ্ত কাজের জ্ঞান, যোগ্যতা ও দক্ষতা তার থাকতে হবে। শারীরিক ও জ্ঞানগত উভয় দিক থেকেই তাকে কর্মক্ষম হতে হবে।
৩. কাজে গাফলতি না করা ঃ ইসলাম কাজে গাফলতিকে কোনমতেই সমর্থন করে না। আল¬¬াহ বলেন, “দুর্ভোগ তাদের জন্য যারা মাপে কম দেয়, যারা লোকের নিকট থেকে মেপে নেয়ার সময় পূর্ণ মাত্রায় গ্রহণ করে আর যখন তাদের জন্য মেপে অথবা ওজন করে দেয়, তখন কম দেয়” (সূরা মোতাফফিফীন : ১-৩)। আয়াতের অর্থ হলো, নিজে নেয়ার সময় কড়ায় গণ্ডায় আদায় করে নেয়। কিন্তু অন্যকে মেপে দিতে গেলে কম দেয়। ফকীহগণের মতে, এখানে তাওফীফ বা মাপে কম বেশী করার অর্থ হলো, পারিশ্রমিক পুরোপুরি আদায় করে নিয়েও কাজে গাফলতি করা। অর্থাৎ আয়াতে ঐসব শ্রমিকও শামিল যারা মজুরি নিতে কমতি না করলেও কাজে গাফলতি করে; কাজে ফাকি দিয়ে ঐ সময় অন্য কাজে লিপ্ত হয় বা সময়টা অলস কাটিয়ে দেয়। তাদেরকে কঠোর শাস্তির হুমকি দেয়া হয়েছে।
৪. নিজের কাজ হিসেবে করা ঃ কাজে নিয়োগ পাবার পর শ্রমিক কাজকে নিজের মনে করে সম্পন্ন করবে। অর্থাৎ পূর্ণ দায়িত্বশীলতার সাথে স্বতঃস্ফূর্ততার সাথে কাজটি সম্পাদন করে দেয়া তার দায়িত্ব হয়ে যায়।
৫. আখিরাতের সফলতার জন্য কাজ করা ঃ একজন শ্রমিক তার শ্রমের মাধ্যমে যে অর্থ উপার্জন করবে তা যেন হালাল হয় এবং এর বিনিময়ে পরকালীন সফলতা লাভে ধন্য হয় তার প্রতি লক্ষ্য রাখবে। সেবার মানসিকতা নিয়ে পরম আগ্রহ ও আনন্দের সাথে কাজটি সম্পন্ন করাই হবে শ্রমিকের নৈতিক দায়িত্ব।
শ্রমিকদের মর্যাদা
ইসলাম শ্রমিকদের যে মর্যাদা দেয় পৃথিবীর যে কোন ইতিহাসের যে কোন অধ্যায়ের সমাজ ব্যবস্থায় তা নযীরবিহীন। মহানবী (সা:) ইরশাদ করেছেন, “অধীনস্থদের সাথে অসদাচরণকারী বেহেস্তে যেতে পারবে না” (তিরমিযী)।
মহানবী (সা:) শ্রমজীবীদের সম্পর্কে বলেছেন, “আপন সন্তান সন্ততির ন্যায় তাদের মান সম্মানের সাথে তত্ত্বাবধান কর আর তাদের খেতে দেবে, যা তোমরা নিজেরা খেয়ে থাক” (মিশকাত, ইবনে মাজাহ)।
কেউ যদি শ্রমিকের মজুরী না দেয় অথবা দিতে গড়িমসি করে, তার বিষয়ে বলতে গিয়ে তিনি ইরশাদ করেছেন, “কিয়ামতের দিন যে তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে আমার অভিযোগ থাকবে, তাদের একজন হলো, এমন লোক যে কাউকে শ্রমিক নিয়োগ করে কাজ পুরোপুরি আদায় করে নিলো অথচ মজুরী দিলো না” (বুখারী শরীফ)।
মজুরী না দেয়ার অর্থ কেবল মজুরী না দিয়ে তা মেরে খাওয়া নয়, বরং যে পরিমাণ মজুরী প্রাপ্য, তা ষোল আনায় না দেয়া আর তার সরলতার সুযোগে কাজ করিয়ে নিয়ে সামান্য মজুরী দেয়া।
উপসংহার ঃ বিশ্বমানবতার মুক্তির দিশারী মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) শ্রমজীবী মানুষ ও খেটে খাওয়া অসহায় ক্ষুধার্থ শ্রেণীর প্রতি কেমন সযতœ দৃষ্টি রাখতেন, তাঁর ভালবাসার আধারী হৃদয় জুড়ে এই দুর্বল সহায়হীন শ্রেণীর স্থান কতটুকু ছিল, কতটুকু মমতা তিনি তাদের জন্য লালন করতেন উপরোক্ত আলোচনা থেকে তা খুব ভালো ভাবেই উপলব্ধি করা যায়। জাহেলী যুগের অমানবিক শ্রমিক নির্যাতন ও বন্দীত্ব দশা থেকে মুক্ত করে তাকে মালিক শ্রেণীর সমকক্ষ মর্যাদা ও সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা প্রদান করেছেন মহানবী (সা:)। তিনি মালিক ও শ্রমিককে পরস্পর ভাই ভাই হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি যখন এই পার্থিব জীবনের সকল সম্পর্ক ঘুচিয়ে মহান আল্ল¬¬াহর সান্নিধ্যে যাত্রা করেছিলেন, সেই অন্তিম মুহূর্তে তাঁর পবিত্র মুখে যে শেষ শব্দটি ধ্বনিত হয়েছিল, সেটাও ছিল এই শ্রমিক শ্রেণীর প্রতি তাঁর সযতœ দৃষ্টি ও সহমর্মিতার সৌহার্দ্যপূর্ণ আশ্বাস। তিনি তখন বলেছিলেন, “তোমরা সব সময় তোমাদের নামায ও তোমাদের অধীনস্তদের প্রতি সহমর্মিতা ও দায়িত্বপূর্ণ দৃষ্টি রাখবে” (আল আদাবুল মুফরাদ)।



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.